Sudipta Mukherjee's Blog

Sunday, June 28, 2020

জীবন ও জীবিকা (চতুর্থ পর্ব )>P

কুমোর  



"কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি"

- কবিগুরুর লেখা এই কথাগুলো  আজ  অতীত।  আজ আর মাটি দিয়ে তৈরী হতে দেখা যায় না বাসন-পত্র বা কলসি-হাঁড়ি  অর্থাৎ মাটির তৈরী  প্রয়োজনীয় সাংসারিক  জিনিসপত্র, যা এখন আর ব্যবহার হয় না।  তার পরিবর্তে ধাতু নির্মিত সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এসে গাছে।  তাই রবীন্দ্রনাথের উক্তিটি আজ আর প্রযোজ্য নয় বলা চলে।   পৃথিবীর সভ্যতা, বিজ্ঞান, জাতির কৃষ্টি কালচাররের উন্নতি যত বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে, তত অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু পুরোনো প্রথা, ঐতিহ্য ও নিদর্শন। 

মৃৎশিল্প হলো বিশেষ এঁটেলমাটি বা কাদামাটি অথবা চিনামাটি প্রভৃতির সাহায্যে হাঁড়ি -কলসী ও বিভিন্ন রকম নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র তৈরী করে তা উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়।  যারা এই কাজটি করে থাকে তাদেরকেই কুম্ভকার বা কুমোর বা মৃৎশিল্পী বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।  প্রথমে কাদাঁমাটিকে জিনিসের প্রয়োজন অনুযায়ী একটা রূপ দিতে হয় তারপর তা  আগুনে উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। পোড়ানোর পর বস্তুটি র কাঠিন্য ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায় ও একটা স্থায়ী পরিবর্ত ঘটে।  ইতিহাস বলে মানুষের প্রাচীনতম আবিষ্কারের মধ্যে একটি হল মৃৎশিল্প। শোনা যায় নব্যপ্রস্তরযুগে চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রাভেতিয়ান সভ্যতার ডলনে ভোসনিসের খ্রীষ্টপূর্ব ২৯০০০ - ২৫০০০ আব্দের ভেনাসের প্রস্তরমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছিল।  চীনের জিয়াংঝিতে মাটির পাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০০ আব্দের। নব্য প্রস্তরযুগের প্রথমদিকের শিল্পকর্ম জাপানের যেমন (খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০০). রাশিয়ার সর্ব পূর্বে (খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০০) সব-সাহারা দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া গেছে।  




কাদামাটি দিয়ে নির্মিত মৃৎশিল্পকে তিন ভাবে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।  মাটির পাত্র, পাথুরে পাত্র ও পোর্সেলিন। এগুলো নির্মাণ করার জন্য মাটি ও তাপমাত্রার হেরফের রয়েছে।  এই শিল্পে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।  সবচেয়ে বড়  ব্যাপার হলো প্রযুক্তির সাহায্যে উৎপাদনের সময়ে দূষণমুক্ত  করা হচ্ছে ও বিষাক্ত পদার্থকে নির্গমন করা হচ্ছে। 

পূর্বে মৃৎশিল্পীদের হাতে নিপুণভাবে তৈরী হত মাটির হাড়ি-কলসী, আবার কেউ কেউ ঘর সাজানোর পুতুল ইত্যাদি নানারকম জিনিস তৈরী করত।  সারা বছর মোটামুটিভাবে চললেও নববর্ষ, অক্ষয় তৃতীয়া, শারদোৎসব সহ অন্যান্য পূজা পার্বনের সময় এদের মাটির হাড়ি, মালসা, ছোট-বড় প্রতিমার একটা ভালো বিক্রি বরাবরই ছিল, যা  আজও  রয়েছে। 


তবে কি মৃৎশিল্পী বা কুমোর আজ আর সেভাবে দেখা যায় না। যেটুকু দেখা যায়  তারা প্রায় সবাই প্রতিমা শিল্পের সাথে যুক্ত। কিছু কিছু কুমোরকে আজও  মাটির চায়ের ভার ও কুঁজো নির্মাণ করতে দেখা যায়। আধুনিক সভ্যতার সংস্পর্শে এসে আমরা যত মাটির তৈরী বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার কমাচ্ছি তত কুমোরদের কপাল পুড়ছে। প্রতিমা নির্মাণে আজ মৃৎশিল্পীরা তাদের মুন্সিয়ানা দেখিয়ে চলেছে।  বংশপরম্পরায় তাদের এই কাজে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়।  

ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ :২৮-০৬-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০

 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।