Sudipta Mukherjee's Blog

Sunday, May 19, 2019

রবীন্দ্রনাথের আদি নিবাস >

রবীন্দ্রনাথের আদি নিবাস.....





পুরোনো কলকাতার গল্পে কলকাতার নানারকম কাহিনীর কথা বলা হয়। সেইসব কাহিনীর বেশিরভাগই কলকাতার স্থাপত্যের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। কলকাতার ঐতিহ্য শুধুই তার স্থাপত্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেই সময়কার কলকাতার পরিবহন, রাস্তাঘাট এবং কলকাতাবাসীদের জীবনধারণ, খ্যাদ্যাভাস সবই এই ইতিহাসের সামিল হয়ে আছে। কলকাতার আদি যুগে প্রচুর বর্ধিষ্ণু পরিবার এখানে বসবাস করত। তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্য তাঁরা স্বতন্ত্রভাবে বজায় করে চলত। এইরকমই এক ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিখ্যাত  পরিবারের আদি নিবাসের কথা আজ  বলব। আমার এক বন্ধুর অনুরোধে এই বিষয় নিয়ে লেখা। এই কাহিনী হয়তো বেশিরভাগ মানুষের জানা আছে,  মবে হয়  কিছু মানুষের বা বর্তমান প্রজন্মের জানা নেই। তাই আজ আমার লেখার বিষয়বস্তু উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের আদি নিবাস নিয়ে।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি সর্বজন পরিচিত এক ঐতিহ্যশালী বাড়ি। এই ঠাকুর পরিবারের সন্তান দর্পনারায়ণ ঠাকুর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বিশ্বজোড়া। এই পরিবারের ইতিহাস প্রায় তিনশো বছরের ইতিহাস। বাংলার নবজাগরণে এই পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গভীর ছিল। সাহিত্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজ-সংস্কার, শিল্পকলা ও সংগীতে এই পরিবারের নাম বাংলার ইতিহাসে প্রথম সারিতে রয়েছে। ঠাকুর পরিবারের আদি নিবাস কিন্তু জোড়াসাঁকো বা পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলে ছিল না। তাঁদের পূর্ব পুরুষদের পদবিও ঠাকুর ছিল না।

এই ঠাকুর পরিবারের আদি নিবাস সম্বন্ধে নানাজনের নানা মত রয়েছে। কেউ বলেন বর্ধমান জেলার কুশগ্রামে আদি নিবাস ছিল, কেউ বলেন অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার পিঠভোগ গ্রামে ছিল। আবার কেউ বলেন যশোর জেলা থেকেই এই পরিবারের উদ্ভব।  ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল বর্ধমানের কুশগ্রাম থেকেই এই বংশের পদবি "কুশারী" হয়েছিল।  বর্ধমানের কুশগ্রামের কুশারীরাই বাংলাদেশের খুলনা ও যশোরে এসে বসবাস শুরু করে।  এই বংশের আদি পুরুষ ছিলেন জগন্নাথ কুশারী। তিনি খুলনা  থেকে যশোরে এসে বাস করেন। তিনি যশোরের পিরালী ব্রাহ্মণ শুকদেব রায়চৌধুরীর কন্যাকে তিনি বিবাহ করেন। জগন্নাথের পুত্র পুরুষোত্তম ও প্রপৌত্র ছিলেন পঞ্চানন কুশারী। এই পঞ্চানন কুশারী ভাগ্য অন্নেষণে গোবিন্দপুর গ্রামে এসে গঙ্গা তীরবর্তী স্থানে বসবাস শুরু করেন।  সেই আমলে যারা ভাগ্য অন্নেষণে কলকাতা, সুতানুটি বা গোবিন্দপুরে আসতেন, তারা বেশিরভাগই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কেউ কেউ আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে লিপ্ত হতেন। পঞ্চানন কুশারী কিন্তু ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন।  তিনি কোম্পানির জাহাজের ক্যাপ্টেন ও খালাসীদের বিভিন্নরকম মাল সরবরাহ করতেন। জাহাজে মাল ওঠানো-নামানোর কাজও তিনি করতেন।

 আমাদের দেশে বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্রাহ্মণ সন্তানদের "ঠাকুরমশাই" বলে সম্বোধন করা হতো। ইংরেজরা এই ঠাকুর কথাটিকে বিকৃত করে টেগোর বলতো। ঠাকুর মশাই খেতাবের আড়ালে তাদের আসল পদবি  হারিয়ে যেতে দেখা যেত। পঞ্চানন কুশারীকে ইংরেজরা পঞ্চানন টেগোর  বলে ডাকত। ব্যবসার কাজে যেসব নীচু শ্রেণীর মানুষের সাহায্য তিনি নিতেন, তারাও তাঁকে ঠাকুরমশাই বলে সম্বোধন করত। এইভাবে পঞ্চানন কুশারীও ধীরে ধীরে পঞ্চানন ঠাকুর হয়ে যান। ইংরেজরাও তাদের নথিপত্রে কুশারী পদবিটা পাল্টে ঠাকুর পদবি লেখা শুরু করে। এই পরিবার এইভাবে  কুশারী পরিবার থেকে  ঠাকুর পরিবারে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

পঞ্চানন ঠাকুরের দুই  পুত্র ছিল।  তাঁদের নাম জয়রাম,  রামসন্তোষ। পঞ্চানন তাঁর জীবদ্দশায় ইংরেজ কালেক্টর রালফ শেলডন সাহেবকে ধরে তাঁর দুই পুত্র জয়রাম ও রামসন্তোষকে  কোম্পানিতে আমিনের চাকরি করে দেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে আমিনের কাজ করেছিলেন। তাঁরা তখন গোবিন্দপুর নিবাসী ছিলেন। পরবর্তীকালে কোম্পানি গোবিন্দপুরে একটা দুর্গ নির্মাণের পরিকল্পনা করে। এই দুর্গই বর্তমানের ফোর্ড উইলিয়াম দুর্গ।  এই দুর্গ নির্মাণের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন হয়ে পরে। কোম্পানি গোবিন্দপুরে বসবাসকারীদের এখানকার জমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। তখন জয়রামদের  এই জমির মায়া ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছিল। তাঁরা সেই সময় পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলে চলে আসেন। জয়রামের চার পুত্র ছিল তাঁরা হলেন আনন্দরাম , দর্পনারায়ণ, নীলমনি ও গোবিন্দরাম। ১৭৫৬ সালে জয়রামের মৃত্যু হয়।  তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র আনন্দরাম অকালে মারা যান। জয়রাম ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র গোবিন্দরাম নিঃসন্তান ছিলেন। চারজনের মধ্যে সুযোগ্য পুত্র ছিলেন দর্পনারায়ণ ও নীলমনি। দর্পনারায়ণ ব্যবসায়ী ছিলেন। দর্পনারায়ণ ঠাকুরই ঠাকুর বংশের প্রথম পুরুষ হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। নীলমনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে সেরেস্তার কাজ করতেন। তাঁরা পাথুরিয়াঘাটাতে একটা বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে পারিবারিক বিবাদ শুরু হয়।। এই বিবাদের ফলে নীলমনি ঠাকুর পাথুরিয়াঘাটার বাড়ি ত্যাগ করেন। তাঁরা এক সালিশি সভা করে ঠিক করেন দর্পনারায়ণ নীলমনিকে এক লক্ষ টাকা প্রদান করবেন এবং গৃহদেবতা লক্ষীনারায়ানের ভার নীলমনিকে নিতে হবে। দর্পনারায়ানকে পাথুরিয়াঘাটার বাড়ি দিয়ে নীলমনি তাঁদের গৃহদেবতা লক্ষীনারায়ণ ও এক লক্ষ টাকা নিয়ে পাথুরিঘাটার বাড়ি ত্যাগ করেন।। এই সময় বৈষ্ণবদাস শেঠ নামে এক ব্যবসায়ী নীলমনিকে চিৎপুরের মেছোবাজারে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য কয়েক বিঘা জমি প্রদান করেন। নীলমনি ওই জমির উপর আলাদাভাবে নিজের বসতবাড়ি গড়ে তুললেন। নীলমনি ঠাকুরের তৈরী এই বাড়িই হলো আজকের জগৎবিখ্যাত "জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি"। মেছোবাজার অঞ্চলটি পরবর্তীকালে জোড়াসাঁকো নাম হয়েছিল। নীলমনি ঠাকুরের পুত্র দ্বারকানাথ। তিনি প্রথমে ল এজেন্ট ও.পরবর্তীকালে তিনি চব্বিশ পরগনার জেলার কালেক্টর ছিলেন। দ্বারাকানাথ পরবর্তীকালে রাজসাহীর কালিগ্রামের বিশাল জমিদারি কিনে জমিদার হয়ে যান। দ্বারকানাথের হাত ধরেই ঠাকুর পরিবারের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল। তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।  বাঙালি সমাজ থেকে ইংরেজি সমাজ সর্বত্রই তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। ঠাকুর পরিবার জমিদার পরিবারে পরিণত হয়। প্রিন্স দ্বারকানাথের পাঁচ পুত্র ছিল যথাক্রমে দেবেন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ, গিরীন্দ্রনাথ, ভূপেন্দ্রনাথ এবং নগেন্দ্রনাথ। দেবেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকোর এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন  কবি, সংগীতজ্ঞ, সাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী ও সমাজ-সংস্কারক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।  তাঁর প্রতিভা বিশ্বময় স্বীকৃত।

এইভাবেই খুলনা থেকে গোবিন্দপুর, গোবিন্দপুর থেকে পাথুরিয়াঘাটা  হয়ে ঠাকুর পরিবার  জোড়াসাঁকোয় চলে আসেন। বিশ্ববিখ্যাত ঠাকুরবাড়ি তৈরী হয়।  কুশারী পদবি থেকে তাঁরা  ঠাকুর পদবি লাভ করে।

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


Tuesday, May 14, 2019

ব্যারাকপুর ভ্রমণ>

ঝটিকা সফরে ঐতিহাসিক শহরে


ব্যারাকপুর পশ্চিমবঙ্গের  এক সুপ্রাচীন শহর।  ব্যারাকপুরকে সাধারণত শিল্প নগর  বলা হয় কিন্তু এই নগরের নামের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলা তথা ভারতের ইতিহাস। জড়িয়ে আছে সেই প্রাচীন লাটসাহেবের বাংলো, এশিয়ার প্রথম চিড়িয়াখানা, বিখ্যাত ঘোড়দৌড়ের বিলুপ্ত ইতিহাস। যে মাটিতে ইংরেজরা  তাদের  ভারী বুটের আস্ফালন দেখিয়েছিল। সিপাহী মঙ্গল পান্ডে যে আস্ফালন সহ্য করতে পারেননি। মহিয়সী নারী লর্ড ক্যানিংয়ের ভালোবাসার শহর ছিল এই ব্যারাকপুর। শহরটি  উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গঙ্গা তীরবর্তী এক মহকুমা শহর। ভারতবর্ষের ইতিহাসে ব্যারাকপুরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। এই শহরেই দেশের প্রাচীনতম  বিমানঘাঁটি রয়েছে।  রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, সীমান্ত গান্ধী বাদশা খান, ও ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের পদধুলিমাখা শহর হল ব্যারাকপুর।

 ব্যারাকপুরের ইতিহাস :

ব্যারাকপুরের ইতিহাস জানা থাকলে আমার ধারণা এই সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক শহর ভ্রমণের আনন্দ লাভ করা যাবে। তাই আমি প্রথমে আমি ব্যারাকপুরের ইতিহাসকে সংক্ষিপ্ত আকারে একটু ধরার চেষ্টা করছি।

ব্যারাকপুরের একসময় নাম ছিল "চানক"। ১৪৯৫ সালে বিপ্রদাস পিপিলাই রচিত "মনসামঙ্গল কাব্যে" এই "চানক" নামটা প্রথম পাওয়া যায়।  ১৮৭১ সালে কবি দীনবন্ধু মিত্র তাঁর "সুরধূনী" কাব্যেও "চানক"  নামটি ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তীকালে ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ সৈন্যরা এখানে ব্যারাক অর্থাৎ সেনা ছাউনি তৈরী করে, সেই সময় ব্যারাক শব্দটি থেকেই চানক নামটা পরিবর্তিত হয়ে ব্যারাকপুর নামে পরিচিতি লাভ করে। কারো কারো মতে ব্যারাকপুর একসময় সপ্তগ্রাম পরগনার অধীনে ছিল।  সেই সময় এখানকার শাসনকর্তা ছিলেন রুকউদ্দিন বারবক শাহ। তাঁর স্মৃতিকে  স্মরণ করে লোকে  চানককে বরাবকপুর বলত। পরে অপভ্রংশ হয়ে ব্যারাকপুর হয়।   ১৭৬৫ সাল নাগাদ ব্রিটিশরা ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট তৈরী করেছিল।

২৫৪ বছর পূর্বে ব্যারাকপুরে যে ক্যান্টনমেন্ট তৈরী হয়েছিল সেটাই ভারতবর্ষের ৬২টা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে সর্বপ্রথম ক্যান্টনমেন্ট ছিল। ১৮৫৭ সালের ২৯শে মার্চ ব্রিটিশ অবিচারের বিরুদ্ধে ব্যারাকপুরে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। দাঁত দিয়ে কার্তুজ কাটা নিয়ে অসন্তোষের স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে শুরু হয়। এই স্ফুলিঙ্গের আগুন জ্বলতে জ্বলতে এক মহাবিদ্রোহের রূপ নেয়। এখানকার সিপাহীরা  প্রতিবাদে গর্জে ওঠে।  এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন ৩৪ নং রেজিমেন্টের ৫নং কোম্পানির সিপাহী মঙ্গল পান্ডে (সিপাহী নং ১৪৪৬)। ৩৪ নং রেজিমেন্টের দেশীয় বাহিনীর সার্জেন্ট মেজর হিউসন সাহেব জমাদার ঈশ্বরী পান্ডেকে হুকুম করেছিলেন বিদ্রোহী সিপাহীদের বন্দী করার জন্য।  ঈশ্বরী পান্ডে সেই হুকুম পালন করেননি। মঙ্গল পান্ডে সেই সময় লুকিয়ে হিউসন সাহেবকে লক্ষ্য করে বিদ্রোহের প্রথম গুলিটি চালিয়েছিলেন। যদিও গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। এই খবর পেয়ে ওই রেজিমেন্টের লেফটেনান্ট বি  এইচ বগ ঘোড়ায় চড়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। মঙ্গল পান্ডে তাকে লক্ষ্য করে দ্বিতীয় গুলি চালিয়েছিলেন। বগ ঘোড়া সমেত মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। মাটি থেকে উঠে তিনি  মঙ্গল পান্ডেকে গুলি করেছিলেন, কিন্তু সেই গুলিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। মঙ্গল পান্ডের  ভাই মাতাদিন  বাল্মীকি, ঈশ্বরী পান্ডের সাথে আরো বেশ কিছু সিপাহী এই মহাবিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে এই অংশগ্রহণ করেছিল। এইভাবে বেশ কিছুক্ষন প্যারেড গ্রাউন্ডে বন্দুক ও তরোয়ালের লড়াই চলেছিল। বেগতিক দেখে মঙ্গল পান্ডে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি সফল হতে পারেননি। তিনি ধরা পরে  গিয়েছিলেন।  ঈশ্বরী পান্ডেকেও সেইসময় ধরা হয়েছিল। অবশেষে ৮ই এপ্রিল ১৮৫৭ সালে মঙ্গল পান্ডে ও তাঁর ভাই মাতাদিন বাল্মীকিকে এখানকার ধোবি ঘাটে  ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

ব্যারাকপুর লাটভবন :
কলকাতার লাটভবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল ব্যারাকপুরের লাটভবনটিকে।  ১৮০১ সালে  লর্ড ওয়েলেসলি এই বিশাল  বাড়িটি  নির্মাণ শুরু করেছিলেন। বাড়িটি নির্মাণ করার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ হওয়ার জন্য বোর্ড অফ ডিরেক্টরস ওয়েলেসলিকে দেশে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। ১৮০৫ সালে ওয়েলেসলি বাড়িটি  অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে  গিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে যত গভর্নর এখানে এসেছিলেন সকলেই এই লাটভবন ও ব্যারাকপুর পার্কের উন্নতিসাধন করেছিলেন। সেই পার্কই আজকের মঙ্গল পান্ডে পার্ক।

এশিয়ার প্রথম চিড়িয়াখানা :
যখন বোর্ড অফ ডিরেক্টরস ওয়েলেসলিকে দেশে ফেরাবার জন্য করার ব্যবস্থা করছে, তখন ওয়েলেসলি একজন পরিবেশপ্রেমী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছিলেন।  তারই ফল স্বরূপ তিনি ১৮০০ সালে ব্যারাকপুরে তিনি এক পশুশালা তৈরী করেন। যেটা ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানা নামে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল। এই  চিড়িয়াখানায়  বাঘ, সিংহ, হরিণ, ভালুক, বানর, ক্যাঙ্গারু, গন্ডার ও  উট এইসব পশু ছিল বলে শোনা যায়। পরবর্তীকালে আলিপুর চিড়িয়াখানা তৈরী হওয়ার পর এইসব পশু ওখান থেকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরিত করা হয়।

বিখ্যাত ঘোড়দৌড় :
১৮০৬ সালে ব্যারাকপুরে ঘোড়দৌড় শুরু হয়েছিল। ঘোড়  দৌড়ের মাঠ  সেই সময় জমজমাট ছিল।কলকাতা থেকেও জনপ্রিয় ছিল এই ঘোড় দৌড়। সেই সময় তৈরী করা হয়েছিল একটা নতুন স্টেডিয়াম। কলকাতা থেকে ঘোড়দৌড় দেখতে আসার সুবিধার জন্য ১৮২৭ সাল নাগাদ রেল লাইন পাতা হয়েছিল। সেনানিবাসের ভিতরেই একটা রেলওয়ে স্টেশনও তৈরী করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য এই ঘোড়দৌড় বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যারাকপুরের ইতিহাসের গল্পতো মোটামুটি জানালাম এবার আমার ঘোরার কথায় আসি। গত বছর লক্ষ্মী পুজোর পরের রবিবারে ফেসবুকের "সহযোগী" নামের  একটা গ্রুপের বিজয়া উপলক্ষে দুপুরে  এক মিলন উৎসব ব্যারাকপুরের গঙ্গার পাড়ের একটা বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই গ্রুপের কর্মকর্তা শ্রী বিশ্বজিৎ গুপ্তর অনুরোধে আমায় ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে ও পরে আমি ব্যারাকপুরের কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে নিয়েছিলাম। আজ সেইসব জায়গার কথা আপনাদের জানাব। ব্যারাকপুরের সব দর্শনীয় স্থানই  ইতিহাসের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ।  তা সে  আঠারো - উনিশ শতকের ইতিহাস হোক বা বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস হোক। ইতিহাসকে বাদ  দিয়ে এই  শহরের কথা বলা সম্ভব নয়। আমি শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে ব্যারাকপুর স্টেশনে এসে নামলাম।

ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৬২ সালে শিয়ালদহ থেকে অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেল লাইন পেতেছিল। ব্যারাকপুর স্টেশনটা সেই সময়ই চালু করা হয়েছিল। ১৮৬২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ব্যারাকপুরের উপর দিয়ে প্রথম ট্রেন চলেছিল। স্টেশনটা আজ দেখতে দেখতে  ১৫০ টা  বছর অতিক্রম করে ফেলেছে। স্টেশনটা সত্যিই দর্শনীয়। শুধু দর্শনীয় নয়, খুবই সুন্দর। পুরোনো আমলের বাড়ি, দেখলাম স্টেশনটিকে খুব সুন্দরভাবে রক্ষনাবেক্ষন করা হয়। স্টেশনের বাইরে রয়েছে অটো, টোটো ও রিক্সা স্ট্যান্ড রয়েছে। স্টেশন চত্বরেই একদিকে কয়েকটি লস্যির দোকান আর একদিকে ফার্স্ট ফুডের দোকান আছে।  এই স্ট্যান্ড থেকে একটু এগোলে হরেক রকমের দোকান আছে , তার মধ্যে মন হরণ করা বেশ কিছু খাবারের দোকানও রয়েছে দেখলাম। ব্যারাকপুরের বিখ্যাত দাদা-বৌদির বিরিয়ানির দোকানটাও একবার ভালো করে দেখে নিলাম। এইসব খাবারের দোকানের দিকে না তাকিয়ে মনটাকে  শক্ত করে আমি অটো স্ট্যান্ডে ফিরে এলাম। অন্নপূর্ণা মন্দির দর্শনের জন্য এখান থেকে একটা অটো রিক্সা ধরে প্রথমে তালপুকুরে এসে নামলাম।

শিবশক্তি অন্নপূর্ণা মন্দির :
অন্নপূর্ণা মন্দির 
এক মন্দিরটি খুবই প্রাচীন এক মন্দির। মন্দিরটি রানী রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বা দেবী ১৮৭৫ সালে তৈরী করেছিলেন। মন্দিরটি  অবিকল দক্ষিনেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের আদলে তৈরী। এই মন্দিরে দেবী অন্নপূর্ণা প্রতিষ্ঠিত আছেন। এছাড়া মহাদেবও গর্ভগৃহে বিরাজ করছেন। মন্দিরটির পিছনদিকে ৬ খানা ছোট আকারের শিবমন্দির রয়েছে। একটা সুন্দর নাটমন্দির ও নহবৎখানাও রয়েছে। মন্দিরের পিছনের দ্বার দিয়ে গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। ঘাটটিও খুব সুন্দর করে বাঁধানো। ঘাটটির নাম "রাসমনি ঘাট"। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব চারবার এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন।  ঠাকুরের পদধূলিমাখা মন্দিরটি খুবই সুন্দর। এটি বঙ্গীয় স্থাপত্য শৈলীতে তৈরী নবরত্ন মন্দির। এখানে বেশ শান্ত  ও নিরিবিলি পরিবেশ বজায় রয়েছে। মন্দিরটিতে ঢোকার জন্য একটা বিশাল প্রবেশদ্বার রয়েছে। প্রবেশদ্বারের উপরে একটা বিশাল সিংহের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরটি দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২.৩০ ও বিকেল ৪টা  থেকে রাত্রি ৮টা খোলা রাখা হয়। এখানে কিছুটা সময় কাটাতে মন্দ লাগলো না। তবে  দক্ষিনেশ্বরের মন্দিরের পরিবেশের সাথে এখানকার পরিবেশের  আসমান-জমিন ফারাক রয়েছে।


জগন্নাথ মন্দির 
জগন্নাথ মন্দির:  অন্নপূর্ণা মন্দির যাওয়ার পথে সুন্দর উজ্জ্বল কমলা রঙের একটা মন্দির দেখতে পেলাম। এই মন্দিরটি প্রভু জগন্নাথদেবের মন্দির। মন্দিরটির কারুকার্য খুবই আকর্ষণীয়। মন্দিরটির গেটের উপরে দেবী লক্ষ্মী ও বিষ্ণুর মূর্তি আর নীচের দিকে বিষ্ণুর দশাবতার মূর্তি স্থাপিত রয়েছে।  মন্দিরটির ভিতরে একটা নাটমন্দির ও গর্ভগৃহ রয়েছে। গর্ভগৃহে প্রভু জগন্নাথদেবের সাথে বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তিও  রয়েছে ।

শতবর্ষ অতিক্রান্ত  ব্যারাকপুর পুরসভা :
রিক্সা করে যেতে যেতে পথে পড়ল ব্যারাকপুরের আর এক ইতিহাসের সাক্ষর ব্যারাকপুর পুরভবন। এটা কোনো দ্রষ্টব্যস্থান নয়, তবে অবশ্যই  এক ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান।নবাবী আমলে ব্যারাকপুর ছিল সপ্তগ্রামের অধীন। ১৭৯১ সালে ইংরেজরা এখানে জমি কেনেন।  ১৮৬৯ সালে ব্যারাকপুরে দুটি  পৌরসভা (উত্তর ও দক্ষিণ) গঠিত হয়েছিল।  পরবর্তীকালে সাউথ ব্যারাকপুর পৌরসভা ভেঙে খড়দহ, পানিহাটি, টিটাগড় পৌরসভা গঠিত হয়েছিল। ১৯১৬ সালের ১লা এপ্রিল ব্যারাকপুর পুরসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যা আজ শতবর্ষ অতিক্রম করে গেছে। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও ব্যারাকপুরের মণিরামপুরে তাঁর পৈতৃক বাসভবনে দীর্ঘদিন বাস করেছিলেন। তিনি প্রায় ৩৪ বছর উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন। তিনি ১লা মে ১৯৮৯ সাল থেকে ১৫ই  অক্টবর, ১৯২১ সাল পর্যন্ত পুরপ্রধান ছিলেন। তারপর তাঁর পুত্র ভবশঙ্কর ব্যানার্জী ৫ই জুন ১৯২২ সাল থেকে ৩রা নভেম্বর ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এখানে পুরপ্রধান হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯২৫ সালের ৬ই আগস্ট রাষ্ট্রগুরু ব্যারাকপুরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। সেই কারণে ব্যারাকপুর পুরসভা খুবই ঐতিহ্যপূর্ণ এক পুরসভা।

বার্থোলোমিউ চার্চ : 
এই চার্চটি তৈরী করা হয়েছিল আঠারো শতকে। ১৮৩১ সালে চার্চটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৫৬ সালের ২৬শে আগস্ট ব্যারাকপুর ডায়োসিস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।  সেই সময় রোনাল্ড উইনস্টন ব্রায়ান বিশপরূপে এখানে  নিযুক্ত হন। তিনি চার্চটির প্রভূত উন্নতি করেন।  সেই সময় থেকেই এই চার্চটি ক্যাথিড্রাল চার্চ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীকালে এখানে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা থাকত। চার্চটি ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলে অবস্থিত। চার্চটির স্তাপত্যটিও  বেশ সুন্দর।

গান্ধী ঘাট :
গান্ধী ঘাটের প্রবেশদ্বার 
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত ঘাট হল এই গান্ধী ঘাট। যখন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ গুরুতর  অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন মহাত্মা গান্ধী তাঁকে দেখতে ১৯২৫ সালের ৬ই মে ব্যারাকপুরে আসেন। ১৯৪৮ সালের ৩০শে  জানুয়ারী যখন মহাত্মা গান্ধী নিহত হন, তখন শাস্ত্র অনুযায়ী ভারতবর্ষের বিভিন্ন নদীতে তাঁর চিতাভস্ম অর্পণ করা হয়েছিল। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী এই ঘাটে জাতির জনকের চিতাভস্ম অর্পণ করেছিলেন। ১৯৪৯ সালের ১৫ই জানুয়ারী তদকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এই ঘাটটির উদ্বোধন করেন। এখানকার দ্রষ্টব্য হল ক্যান্টিলিভার প্রজেকশন, মণ্ডপ ও বিখ্যাত ভাস্কর  সুনীল পালের তৈরী গান্ধী জীবন নিয়ে পোড়ামাটির আলেখ্যটি। ঢোকার মুখেই একটা সুন্দর দ্বার রয়েছে।  দ্বার দিয়ে প্রবেশ করার পর একটু এগোলেই
গান্ধী ঘাট 
গঙ্গার তীরে বেশ সুন্দর একটা মিনার করা আছে।  মিনারটির  সাথে আড়াআড়িভাবে একটা বেশ প্রশস্থ ছাদ রয়েছে।  মিনারটির থেকে ধাপে ধাপে গঙ্গায় যাওয়ার সিঁড়ি নেমে গেছে।  মিনারটি ও সামনের দ্বার দুটিই শ্বেত শুভ্র রঙে রাঙানো রয়েছে।  এই সুন্দর পরিবেশে বসে গঙ্গার মনোরম হাওয়া খেতে বেশ ভালো লাগলো। এখানে কিছুক্ষন বসে এবার জওহরলাল নেহেরুর নামাঙ্কিত পার্কটি দেখতে গেলাম।


জওহরকুঞ্জ  পার্ক :
এই পার্কটি গান্ধী ঘাটের পাশেই অবস্থিত। তিরিশ টাকা টিকিটের মিনিময়ে পার্কটিতে  ঢুকতে হলো। গঙ্গার একদম পাশে ছোট বড় নানারকম গাছে সজ্জিত পার্কটি বেশ নিরিবিলি। পার্কটির ভিতরে একটা ছোট পুকুর আছে। কোথাও উঁচু,  কোথাও নীচু এইভাবে রাস্তাটিকে তৈরী করা হয়েছে।  ভিতরে একটা পাহাড়ি পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করা হয়েছে। পার্কটিতে কয়েকটা ছাউনি দেওয়া বসার জায়গা রয়েছে। গঙ্গার ধারে এই রকম একটা বসার জায়গা পেয়ে গেলাম। নদীর মৃদু-মন্দ স্নিগ্ধ হাওয়া আর সাথে পাখিদের কলতানে  কিছুক্ষন বিশ্রাম করে নিলাম। পরিবেশটা বেশ ভালোই লাগছিল। এর পর মঙ্গল পান্ডের নামাঙ্কিত উদ্যানে যাবো।

মঙ্গল পান্ডে উদ্যান :
মঙ্গল পান্ডে উদ্যানটি ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলে অবস্থিত। এই উদ্যানে ঢোকার জন্য প্রত্যেকের জন্য ১৫ টাকা আর ক্যামেরার জন্য ৫০ টাকা দিতে হয়।  আমি কড়কড়ে ৬৫টা টাকা গচ্চা দিয়ে উদ্যানটিতে ঢুকলাম। উদ্যানটি  সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যে ৬.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। ভ্রমণার্থীদের  জন্য একদম আদর্শ জায়গা।  উদ্যানটি বেশ সুন্দর।  পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো জায়গা। উদ্যানটির  মধ্যে কয়েকটি খাবারের স্টলও আছে। একটা বেশ বড় প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখলাম বেশ খোলা মেলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গাটা। উদ্যানের পুরো রাস্তাটি খুব সুন্দর করে বাঁধানো রয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে একটু এগোতেই দেখলাম মঙ্গল পান্ডের একটা মূর্তি বসানো আছে। এক জায়গায় দেখলাম দুটি জিরাফের মূর্তি আর এক জায়গায় দেখলাম বাচ্ছাদের জন্য স্লিপ, দোলনা ও আরো কয়েক রকম খেলনা আছে।  দোলনার উল্টোদিকে একটা কামান রাখা আছে।  গঙ্গার ধার বরাবর বেশ কয়েকটা চেয়ার পাতা রয়েছে।  ওই চেয়ারে  বসে কিছুক্ষন সময় কাটানো খুব স্বাদ ছিল, কিন্তু পূরণ হলো না।  সবকটা চেয়ারই  যুবক-যুবতীরা দখল করে রেখেছে। যাইহোক সবুজে মোড়া এক অসাধারণ উদ্যান দেখলাম, মন ভরে গেল।

গান্ধী স্মারক সংগ্রহশালা :
ব্যারাকপুর রিভার সাইড রোডে একদম গঙ্গার ধারে প্রায় আট-নয় বিঘা জায়গা নিয়ে সংগ্রহশালাটি তৈরী করা হয়েছে।  ১৯৬৬ সালের ৭ই মে এটির উদ্বোধন করা হয়েছিল। গান্ধীজি সম্পর্কিত প্রায় হাজার খানেক আলোকচিত্র, বেশ কিছু চিঠিপত্র আছে। সংগ্রহশালাটিতে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে বেশ বড় একটা দেওয়াল চিত্র রয়েছে, একটি কক্ষে গান্ধীজির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনাকে আলোকচিত্রের মাধ্যমে তুলে  ধরা হয়েছে, একটি কক্ষে গান্ধীজির ব্যৱহৃত বেশ কিছু সামগ্রী রয়েছে, একটি কক্ষে সুন্দর একটা গ্রন্থাগার আছে আর একটা কক্ষে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র রয়েছে দেখলাম। সংগ্রহশালাটি বেশ ফাঁকা। এখানকার এক কর্মচারী বললেন রবিবার সাধারণত একটু ফাঁকা থাকে, অন্যান্য দিন স্কুল -কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড় থাকে। রবিবার সাধারণত বাইরের দর্শনার্থীরা আসে।

যখন মানুষ রোজকার জীবনের যাতাকলে হাঁপিয়ে  ওঠে, তখন সে একটু মনের খোরাক খুঁজতে চায়।  মানুষভেদে মনের খোরাক বিভিন্ন হয়, তবুও বলবো এখানে একদিনের জন্য ঘুরতে  আসলে আপনার মন  অবশ্যই আনন্দে ভরে উঠবে, বিদ্রোহী সিপাহীদের জন্য  শ্রদ্ধায় মাথা নত  হবে।

কিভাবে যাবেন : 
 শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ব্যারাকপুরগামী ট্রেন ধরে সোজা ব্যারাকপুর স্টেশনে এসে নামুন।  স্টেশনের বাইরে অটো, টোটো ও রিকশার স্ট্যান্ড রয়েছে।  এই স্ট্যান্ড থেকে শহরের সবকটা  দ্রষ্টব্যস্থানগুলো ঘোরার  জন্য অটো বা অন্য কোনো গাড়ি ভাড়া করে নিন।  ভাড়া মোটামুটি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো লাগবে। এছাড়া কলকাতা থেকে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ধরে সড়কপথেও ব্যারাকপুর আসা যায়।

কোথায় থাকবেন :
যদিও কলকাতা থেকে এখানে ঘোরার জন্য রাত্রিবাসের কোনো প্রয়োজন নেই, তবুও আপনি যদি এখানে রাত্রিবাস করতে চান তাহলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের  মালঞ্চ অতিথি নিবাসে থাকতে পারেন। এই অতিথি নিবাসটি কলকাতা থেকে বুক করতে হবে।


তারিখ : ১৪-০৫-২০১৯

ছবি ও লেখার স্বত্ব : সুদীপ্ত মুখার্জী

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০



 আমার এই লেখাটি ও ছবিগুলো যদি আপনার ভালো  লাগে, তাহলে   অবশ্যই   আপনার  মূল্যবান  মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Thursday, May 9, 2019

নবাবহাট ১০৮ শিব মন্দির ভ্রমণ >

নবাবহাটে ২৩০ বছরের ইতিহাস 




পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক জেলা হল বর্ধমান জেলা।  এই জেলার প্রতিটি  ইটের গায়ে  জড়িয়ে আছে কত ইতিহাসের গল্প, রাজা-রানীদের নানান কীর্তি। জেলার নানান স্থানে নানারকম স্থাপত্যকীর্তি ছড়িয়ে আছে। এখনো তার কিছু নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়, আবার কিছু জরাজীর্ণ ও কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা সর্বমঙ্গলা। তবে রাজ পরিবারের শিব ঠাকুরের প্রতি একটা আলাদা মোহ ছিল। এই জেলাকে শিব ঠাকুরের জেলা বললে ভুল বলা হয় না। সমগ্র জেলাজুড়ে অসংখ্য  শিব মন্দির রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে  শিবঠাকুর বা মহাদেব পূজিত হয়ে থাকেন। কোথাও প্রতাপেশ্বর, কোথাও রাজেশ্বর, কোথাও পঞ্চানন, কোথাও বুড়োশিব, কোথাও বৈদ্যনাথ, কোথাও বুড়োরাজ নামে শিবঠাকুর পূজিত হন। শিবঠাকুরই এই জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতা বলে মনে হয়। বর্ধমান জেলার সবচেয়ে বড় শিব ঠাকুর রয়েছে আলমগঞ্জের মোটা শিব নামে। এই শিবলিঙ্গটিকে বর্ধমানেশ্বর  বলে অভিহিত করা হয়। এই শিব লিঙ্গটির উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট আর ওজন প্রায় ৩৬০ কিলোগ্রাম (৯ টন)।  শোনা যায় ১৯৭২ সালে মাটি খোঁড়ার সময় এই বিশালাকৃতি শিবলিঙ্গটি পাওয়া গিয়েছিল।

বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের খুব কাছের  একটা ছোট্ট গ্রাম  হল নবাবহাট।  নবাবহাট অঞ্চলেই মুঘলদের সাথে নবাবদের যুদ্ধ হয়েছিল। মুঘল আমলে বর্ধমানের নাম ছিল শরিফাবাদ। আবুল ফজলের  লেখা "আইন ই আকবরী" বইতে এই নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

বর্ধমান জেলা হল  ভারতবর্ষের একমাত্র জেলা যেখানে দু-দুটো ১০৮ শিব মন্দির রয়েছে। ভারতবর্ষের আর কোথাও এরকম শিব মন্দিরের সারিকে দেখা যায় না। বর্দ্ধমানের মহারানী বিষ্ণুকুমারীদেবী সর্বপ্রথম নবাবহাটে ১৭৮৮ সালে একটি ১০৮ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বর্ধমানের মহারাজ তেজবাহাদুর ১৮০৯ সালে জেলার কালনা শহরে আর একটা ১০৮ শিবমন্দির নির্মাণ করেন। কালনার এই শিবমন্দিরের সারিকে "নব-কৈলাশ শিবমন্দির" বলা হয়। আজ আমি নবাবহাটের শিবমন্দিরগুলোর কথা আপনাদের বলবো। প্রকৃতপক্ষে দুটি স্থানেই ১০৯ টি  করে শিবঠাকুরের মন্দির আছে।

একদা নাবাবহাট গ্রামে ভীষণ দুর্যোগ হয়, মন্বন্তরে  গ্রামটি প্রায় জনশূন্য হয়ে যায়। এই সময় মহারাজ তিলকচাঁদের মৃত্যু হয়। তাঁর পুত্র নাবালক থাকায় তিলকরাজের বিধবা পত্নী মহারানী বিষ্ণুকুমারীদেবী কিছুদিন রাজ সিংহাসনে বসেন। মহারানী বিষ্ণুকুমারীদেবীর সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ বাঁধে। ইংরেজরা রানীর বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র করতে থাকে। মহারানী বিষ্ণুকুমারীদেবীর অনুগ্রহে নাবাবহাট গ্রামটি মন্বন্তরের হাত থেকে রক্ষা পায়। তিনি সর্বতোভাবে গ্রামবাসীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এই সময় অর্থাৎ ১৭৮৮ সালে তিনি মহারাজ তেজপালের দাক্ষিণ্যে গ্রামবাসীদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে নাবাবাহাটে  একটা ১০৮ শিবমন্দির নির্মাণ শুরু করেন। নবাবহাটের মন্দিরগুলোর  নির্মাণ কাজ ১৭৯০ সালে শেষ হয়েছিল।

আমি যখন গতবছর  এই মন্দির দর্শনের জন্য গিয়েছিলাম তখন এরকমই মে মাসের এক ভীষণ গরমের দিন ছিল। মন্দিরের চাতালে পা দেওয়া যাচ্ছিল না। খালি পায়ে ওই গরম পাথরের চাতালেই হেঁটে মন্দিরগুলো দর্শন করতে হল।   মূল মন্দিরে প্রবেশের পূর্বে জুতো  রাখার লোহার একটা সুন্দর রেক রাখা আছে।  এই রেকে  জুতো রেখে তবে মূল মন্দিরে প্রবেশ করলাম।  এখানে জুতো রাখার জন্য সামান্য খরচা বহন করতে হয়।  জুতা রাখার পর একটা কল আছে সেখানে হাত ধুয়ে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হল। মন্দিরে প্রবেশ করার পর দেখলাম ডানদিকে একটা দোতলা বাড়ি আছে, এই বাড়িতে তীর্থযাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বাড়িটির এক তলায় একটা ছোট্ট অফিস ঘর রয়েছে। মন্দিরগুলোর বামদিকে একটা সুন্দর বাগান রয়েছে। সমগ্র মন্দির চত্বরটি সুন্দরভাবে ঘেরা রয়েছে। মন্দির চত্বরের পিছনদিকে পুবদিক ঘেঁষা একটা সুন্দর জলাশয় রয়েছে। জলাশয়ের জল অতটা  স্বচ্ছ বা  পরিষ্কার নয়, একটু হলদেটে ঘোলা জল। জলাশয়টির  জলে গাছপালা ও মন্দিরের প্রতিফলন পড়ছে দেখলাম। প্রতিফলনটা দেখতে মন্দ লাগলো না।  সমগ্র জলাশয়টি লোহার জাল  দিয়ে ঘেরা রয়েছে। সামনের দিকে শান বাঁধানো ঘাট রয়েছে। পুরো  জলাশয়টির  পাড় সুন্দর করে বাঁধানো আছে।  জলাশয়ে  প্রবেশ করার জন্য কয়েকটা লোহার গেট করা আছে। জলাশয়টি ঠিক  একদম গোলাকৃতি  নয়, একটু লম্বাটে ধরনের। জলাশয়টির গেটের পাশে একটা বিজ্ঞপ্তি লাগানো আছে "জল নেওয়ার প্রয়োজন হলে মালির কাছ থেকে চাবি আছে, চাবি চেয়ে নিয়ে জল নেবেন এবং চাবি যথাস্থানে ফেরত দেবেন"। দুটি সারিতে ১০৮টি ও আর একটা আলাদাভাবে শিব মন্দির রয়েছে। এখানে মোট ১০৯টি শিব মন্দির রয়েছে। একটা নাটমন্দিরও রয়েছে দেখলাম। একটা মন্দিরের সাথে আর একটা মন্দির গায়ে  লাগানো, দুটি মন্দিরের মধ্যে কোনো ফাঁক নেই।  সারা বছরই এখানে প্রচুর ভক্তের সমাগম হতে দেখা যায়।  মন্দির চত্বরের ভিতরে অফিস  ঘরের কাছে একটা জায়গায় লোহার ফ্রেমে ১০৮টি  ঘন্টা রাখা আছে। ঘণ্টাগুলো সম্পূর্ণ পিতলের তৈরী। ঘন্টাগুলি খুব বড় আকারের নয়, আবার একদম ছোটোও  নয়, মাঝারি মাপের।  সবাইকে দেখলাম  মন্দির দর্শন করার পর এখানে এসে এই  ঘণ্টাগুলো বাজাচ্ছে। ঘন্টা বাজনোয় অঞ্চলটিতে একটা মিষ্টি সুরেলা আবহাওয়া তৈরী করছে। কথিত আছে মন্দির দর্শনের পর এই ঘন্টা বাজালে নাকি মনস্কামনা পূরণ হয়।

কালনার নব কৈলাশ শিবমন্দিরের মতো এখানকার মন্দিরগুলো বৃত্তাকারে নয়, এখানে দুটি লম্বা সারিতে মন্দিরগুলোকে সাজানো হয়েছে। কালনার শিবমন্দিরগুলি যেন ফুলের মালায় ১০৮টি ফুলকে গেঁথে একটা মন্দিরমালা তৈরী করা হয়েছে। নবাবহাটের মন্দিরগুলো ঠিক ওইভাবে তৈরী নয়। এখানকার মন্দিরগুলো দুটি সারিতে সারিবদ্ধভাবে তৈরী করা হয়েছে।  মন্দিরগুলো আকারে বেশ ছোট। মন্দিরগুলোর উচ্চতা মোটামুটি পনেরো ফুটের মত হবে বলে আমার মনে হল। নাবাবাহাটের মন্দিরগুলি বাংলার আটচালা শিল্পরীতিতে তৈরী। সব কটা মন্দিরেই সামান্য টেরাকোটার কাজ রয়েছে। মন্দিরগুলির কোনোটাতে কোনো দরজা নেই। প্রত্যেকটা মন্দিরে শিব লিঙ্গ বিরাজ করছে। প্রতিটা শিবলিঙ্গই  কালো রঙের কোষ্ঠী পাথরের তৈরী।মন্দিরগুলো দেখলে বোঝা যায় সত্যিই  এক অসাধারণ শিল্পকীর্তি। মহারানী বিষ্ণুকুমারী দেবীর এক মহান কীর্তি এই শিবমন্দিরগুলো।  মন্দিরগুলো বর্ধমানের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।

 এককালে এই মন্দিরগুলো জরাজীর্ন অবস্থায় চলে গিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে বিড়লা জনকল্যাণ ট্রাস্টের আর্থিক সহযোগিতায় মন্দিরগুলোকে সংস্কার করা হয়েছে।  ১৯৭৪ সালে একটা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।  বর্তমানে মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষন থেকে নিত্যপূজা সবকিছুই এই ট্রাস্টিবোর্ড দেখাশোনা করে থাকে। প্রতিবছর শিবরাত্রি উপলক্ষে এখানে একটা বিশাল মেলা বসে।  সেই সময় এখানে নানান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে।  এই মেলায় প্রায় লাখ খানেক লোকের সমাগম হয়।

মন্দিরের প্রবেশদ্বারের পাশেই বাইরের দিকে কৃত্রিম পাহাড় তৈরী করা হয়েছে। এই  পাহাড়ের  উপর শিব-পার্বতী ও হনুমানজির মূর্তি রয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গনটি ভীষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।  আমি যখন এই মন্দির দর্শনে যাই তখন একজন পুরোহিত মহাশয়কে দেখছিলাম অনেক খুঁজেও অন্যান্য মন্দিরের মত  কোনো পান্ডাকে এখানে  দেখতে পাইনি। পুরোহিত মহাশয় অন্যের পুজোয় ব্যস্ত থাকায় নিজের পুজো নিজেকেই দিতে হয়েছিল। এখানকার পরিবেশ আমার খুবই ভালো লেগেছিল। আপনারা বর্ধমান স্টেশন থেকে মাত্র দু-তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরটি দেখে আসতে পারেন। আশাকরি আমার মতো আপনাদেরও ভালো লাগবে।  মন্দির দেখার পর অবশ্যই বর্ধমানের বিখ্যাত মিহিদানা-সীতাভোগ খাবেন। বর্ধমানের এই  স্বাদ নিতে  ভুলবেন না।

মন্দিরগুলো সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত আর দুপুর তিনটে থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের  জন্য খোলা থাকে। দেখছিলাম একটা বোর্ডে কিছু নিয়মকানুন লেখা আছে। মন্দিরের ভিতরে কোথাও বসবেন না। মন্দিরের ভিতরে বা আশপাশে কোনোরূপ অশালীন আচরন করবেন না বলে বোর্ডটিতে লেখা আছে। তবে কোথাও ছবি তোলায় কোনো বারণ আছে, এই ধরণের কোনো বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়লো না।  আমি তো ইচ্ছে-খুশী মতো এখানে ছবি তুলেছিলাম। মন্দিরগুলো ২৫০ বছর ধরে বর্ধমানের ঐতিহ্যকে  বহন করে চলেছে।


কিভাবে যাবেন :
হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে করে বর্ধমান স্টেশনে এসে নামুন। স্টেশনের বাইরে প্রচুর অটো ও টোটোগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে।  একটা গাড়ি বুক করে এখানে খুব সহজেই পৌঁছানো যাবে। গাড়ি করে আসলে বর্ধমান থেকে  জি টি রোড ধরে কিছুটাএগোলে ডানদিকে সিউড়ি রোড পড়বে।  এই সিউড়ি রোড ধরে সামান্য পথ এগোলেই এই মন্দিরগুলিকে দেখা যায়।




তারিখ : ১০-০৫-২০১৯

ছবি ও লেখার স্বত্ব : সুদীপ্ত মুখার্জী


যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


 আমার এই লেখাটি ও ছবিগুলো যদি আপনার ভালো  লাগে, তাহলে   অবশ্যই   আপনার  মূল্যবান  মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।