Sudipta Mukherjee's Blog

Monday, September 2, 2019

শহীদ মিনার >

কলকাতা

শহীদ মিনার 


শহীদ মিনার 


ময়দানের এক কোনে  মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে।  বয়স তার প্রায় দুই শতক হতে চলল। এখানে দাঁড়িয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে শহরের কত ইতিহাস, কত ঘটনাকে চাক্ষুষ করে চলেছে।  কত সুখ দুঃখের সাথী।  তারই পদতলে কত নেতা কত মিটিং করেছে বহুকাল ধরে।  সে যে আমাদের তিলোত্তমার হাটথ্রম, সে যে আমাদের প্রাণের মিনার, আমাদের শহীদ মিনার। 

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা। এই প্রাণকেন্দ্রের প্রাণবিন্দু হল অক্টালোরি মনুমেন্ট (Octerloney  Monument).বা শহীদদের  স্মরণে মিনার। দেখতে দেখতে প্রায় ১৯০ টা বছর পার হয়ে গেলো।  ১৫৮ ফুট উচ্চতা নিয়ে এখনো একপায়ে সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কলকাতার অন্যতম স্মৃতিস্তম্ভটি।  বিখ্যাত মার্কিন লেখক মার্ক টুইন তাঁর কলকাতা ভ্রমণের  সময়  বলে গিয়েছিলেন "Cloud Kissing Monument"

১৮০৪ সালে ইন্দো-নেপাল যুদ্ধে গোর্খাদের বিরুদ্ধে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিযা  কোম্পানির কমান্ডার মেজর জেনারেল স্যার ডেভিড অক্টালনি।  তিনি এই যুদ্ধে কোম্পানির পতাকাকে বিজয় পতাকাতে পরিণত করেছিলেন। তাঁর অক্লান্ত লড়াই ও কোম্পানি বাহিনীর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে ব্রিটিশ সরকার এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছিল।  সৌধটির নকশা তৈরী করে দিয়েছিলেন জে পি পার্কার। ১৯২৮ সালে সরকারি কোষাগারের অর্থ সাহায্যে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সৌধটি নির্মিত হয়েছিল। কলকাতা ময়দানের উত্তর-পূর্ব কোণে মিনারটি অবস্থিত।  সৌধটি উচ্চতায়  ১৫৮ ফুট, ভিতরে ২২৩ টি কুন্ডলি আকারের সিঁড়ি রয়েছে।গম্বুজটির ওপরে দুটি বারান্দা রয়েছে।  মিনারটির নিচের অংশ মিশরীয় স্থাপত্যে আর উপরের অংশটি সিরীয় এবং গম্বুজটি তুর্কি শৈলীতে তৈরী।  বার্ন এন্ড কোম্পানি মিনারটি নির্মাণ করেছিলেন।  মিনারটির দক্ষিণ দিকে একটা বিরাট মাঠ রয়েছে।  এককালে এই মাঠটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ও নানারকম মেলা আয়োজিত হতো। ১৯৩১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিজলি জেলে তরুণ বন্দিদের হত্যার প্রতিবাদে এই মাঠেই এক সভায় পৌরোহিত্য করেছিলেন।  ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে তদকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকার সৌধটিকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে উৎসর্গ করে, তখন তারা সৌধটির নাম পরিবর্তন করে "শহীদ মিনার" করে। ব্রিটিশ সরকারের এক অসাধারণ নিদর্শন।

শহীদ মিনারের মাঠ 


পূর্বে লন্ডন আইয়ের মতো মিনারটির উপরে উঠে তিলোত্তমার দৃশ্য দেখতে দেওয়া হতো।  বর্তমানে কলকাতা পুলিশ উপরে ওঠার আর অনুমতি দেয় না। ২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ  সরকার ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সৌধটির সংস্কারে হাত দিয়েছিল। সৌধটির ভিতর ও বাইরে সুন্দরভাবে আলোকিত করেছে।  সমগ্র সৌধটিকে নতুন রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে।  শোনা যাচ্ছে সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এও শোনা যাচ্ছে কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেলে দর্শকদের আবার উপরে ওঠার অনুমতি দিতে পারে। ডেভিড অক্টালোনি (১২ই ফেব্রুয়ারি ১৭৫৮-১৫ই জুলাই, ১৮২৫) ছিলেন একজন ব্রিটিশ সেনা আধিকারিক।  তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।  বিভিন্ন যুদ্ধে তার অসামান্য পারদর্শিতার জন্য তিনি মেজর জেনারেল পদে (১৮০৪ সালে) উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি দিল্লির রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৮০৩ সালে।  এই সময় তিনি যশোবন্ত রাও হোলকারের আক্রমণ, পিন্ডারী যুদ্ধে (১৮১৭-১৮১৮) দস্যু দমনে তিনি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।  তার হস্তক্ষেপে বিখ্যাত অমৃতসর চুক্তি সাক্ষর হয়েছিল।  পাঞ্জাব কেশরী রণজিৎ সিংকে তিনি ব্রিটিশদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য করেছিলেন।  ১৮১৬ সালে নেপাল যুদ্ধে (১৮১৪-১৮১৫) জয়লাভ করে তিনি খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেছিলেন। নেপাল যুদ্ধের স্মারক হিসেবে কলকাতায় প্রসিদ্ধ "অক্টালোনি মনুমেন্ট" নির্মিত হয়।

শহীদ মিনার কলকাতার একটা আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান, যার সাথে ইতিহাস ও রাজনীতি জড়িয়ে রয়েছে।  কলকাতা দর্শন করতে আসলে  অবশ্যই এই স্মৃতিস্তম্ভটি দর্শন করা উচিত।


ছবি ও  লেখার স্বত্ত  : সুদীপ্ত মুখার্জী 
তারিখ :০৩-০৯-২০১৯


যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০

 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 

1 comment: