কলকাতার চীনা কালী মন্দির
আমরা প্রায়ই চীনা খাবার খেতে ট্যাংরার চায়না টাউনে যাই, কিন্তু ভুলেও কেউ দেখতে যাই না ওই পাড়ার বিখ্যাত চীনা কালী মন্দিরটিকে। শহরবাসীর কাছে অঞ্চলটি শুধু পানশালা ও মনোরম চাইনিজ খাবারের জন্য বিখ্যাত। এই চীনা পাড়াতেই রয়েছে বহু প্রাচীন ও সুবিখ্যাত চীনা কালী মন্দির। এই মন্দিরে পূজিতা হন দেবী কালী, যা হিন্দুদের কাছে যেমন জাগ্রত ঠিক তেমন অঞ্চলের চীনা পরিবারগুলোর কাছেও সমানভাবে সমাদৃত।
আমরা জানি শহর কলকাতার কাছে বজবজে প্রথম চীন দেশ থেকে টং অছি নামে এক চীনা ভদ্রলোক একটা চিনি কল স্থাপন করেন। তিনি তার কলে উৎপাদিত চিনি বিক্রির উদ্দেশ্যে এই শহরে পাড়ি জমান। চিনি শিল্পের হাত ধরে তার আগমন ঘটলেও চীনারা পরবর্তী সময়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। তারা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিলে মিশে যায়। তারই ফলস্বরূপ এক চীনা অধিবাসী অধুনা চীনা পাড়ায় গড়ে তোলেন এই চীন কালী মন্দিরটি। যা আজ প্রায় ষাট বছর অতিক্রম করে গেছে।
বছর ষাটেক পূর্বে স্থানীয় অধিবাসীরা একটি নিম গাছের তলায় দুটি কালো পাথরে সিঁদুর মাখিয়ে পূজা করতো। পরবর্তীকালে অঞ্চলে একজন চীনা অধিবাসী সেটিকে অনুসরণ করতে থাকেন। তিনি জাতে ও ধর্মে ভিন্ন হলেও হিন্দু দেবতারূপে পাথরটিকে সমানভাবে মান্যতা দিতেন ও খুব নিষ্ঠা সহকারে পূজা করতেন। ধীরে ধীরে আরো কয়েকজন চীনা অধিবাসী তাকে অনুসরণ করতে লাগলো। সব কিছু দেখে পরবর্তীকালে জনৈক চীনা ভদ্রলোক সেই গাছকে ও কালো পাথর দুটিকে নিয়ে একটি ছোট্ট মন্দির নির্মাণ করে দেন।
কথিত রয়েছে এক চীনা দম্পতির সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন তারা ওই গাছের কালো পাথর দুটিকে ভক্তি ভরে আরাধনা করেছিলেন। সেই আরাধনার ফলে তাদের সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। সেই বিশ্বাসে তাঁরা এখানকার এই মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন ও মাটির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে দেন। পরবর্তীকালে আবশ্য সেই মাটির মূর্তিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুনভাবে মূর্তিকে অষ্টধাতুতে নির্মিত করা হয়েছে।
মন্দিরে অবস্থিত রয়েছেন দেবী কালিকা ও মহাদেব। সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হিন্দু ধর্ম মতে এখানে নিয়মিত পুজার্চ্চনা করা হয়ে থাকে। এখানকার দেবী আরাধনার দায়িত্বে রয়েছেন হিন্দু পুরোহিত। দীপাবলির দিন বহু চীনা ও বাঙালি ভক্তের সমাগম হতে দেখা যায়। সকলেই পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে থাকে। এখানকার ভোগ হিন্দু ও চাইনিজ সংস্কৃতির মিশ্রনে হয়ে থাকে। দেবীর নৈবেদ্যতে যেমন থাকে হিন্দুদের মতো খিচুড়ি, তরকারি, ফল, মিষ্টি তেমন চাউমিন ইত্যাদি কয়েকপ্রকার চাইনিজ খাবারও থাকে। শোনা যায় মন্দিরে যে ধূপ ব্যবহার করা হয় তা চীন দেশ থেকে নিয়ে আসা হয়।
আমাদের শহর বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো এই চীনা কালী মন্দিরটি। যা এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কলকাতার বুকে। মা সবার, সবার তাকে আরাধনা করার অধিকার রয়েছে।
তারিখ : ২২-১১-২০২০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
Beautuful
ReplyDelete