Sudipta Mukherjee's Blog

Tuesday, October 4, 2022

নেতাজীর পৈতৃক বাড়ির দুর্গাপূজা

নেতাজীর পৈতৃক বাড়ির দুর্গাপূজা 


- সুদীপ্ত মুখার্জী 


দেবী মূর্তি 



দুর্গাপূজা বাঙালির জীবনের সবচেয়ে প্রিয় উৎসব। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষভাবে বাঙালির সংস্কৃতিতে উৎসবটি এক বিশেষ স্থান লাভ করে আছে।  বাংলায় দুর্গাপূজা কবে প্রচলিত হয়েছিল, এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত  রয়েছে। সেই মতামত যাই থাকুক সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। বাংলায় যে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে থাকে তা মূলত মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা। বর্তমানে বঙ্গীয় শারদীয়া মহাপূজা একটি জাতীয় উৎসব হিসেবে মহান ঐতিহ্যের আধার হয়ে উঠেছে। সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের সাংস্কৃতিক (উনেস্কো)  বিবেচনায়  দুর্গোৎসব আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।  

বাংলায় দুর্গাপূজার ঐতিহ্যতে বারোয়ারি পূজার রমরমার সাথে সমান্তরালভাবে পরিবার কেন্দ্রিক পূজাগুলোও স্থান করে নিয়েছে।  যদিও পারিবারিক পূজাগুলো আগে শুরু হয়েছিল, তার অনেক পরে  বারোয়ারি পূজার প্রচলন হয়েছিল। পারিবারিক পূজাগুলোকে বনেদি বাড়ির পূজা বলেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। সেরকম একটি পরিবারের পূজার আজ কথা  আমার কলমে ধরার চেষ্টা করলাম। 

ঠাকুরদালান 


পরিবারটি হল ভারতবর্ষের অন্যতম  ঐতিহ্যপূর্ণ পরিবার। পরিবারের সুভাষচন্দ্র বসু, শরৎচন্দ্র বসু, জানকীনাথ বসুর নাম ভারতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বরাবর গণ্য হয়ে এসেছে।  বসু বংশের আদিপুরুষ হলেন দশরথ বসু। তাঁর অধস্তন গোপীনাথ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পুরবন্দর  নামক একটা জায়গা জায়গীর হিসেবে পান। পুরবন্দর থেকে সামান্য দূরে মাহীনগর গ্রামে তাঁরা বাস করতেন। মাহীনগরে মহামারী দেখা দিলে ওই গ্রাম পরিত্যাগ করে বসু পরিবার কোদালিয়ায় বসতি গড়ে তোলেন। বংশের সুসন্তান যাদবেন্দ্রনাথ ১৮২০ সালে কোদালিয়ায় দুর্গাপূজা শুরু করেন। পরবর্তীকালে তাঁর উত্তরপুরুষ রামহরির পৌত্র হরনাথ বেশ জাঁকজমকের সাথে পূজাটি পরিচালনা করেন। তিনি বেশ কিছু বছর পূজার দায়িত্বে ছিলেন।  তারপর হরনাথের পুত্র জানকীনাথের উপর পূজা পরিচালনার  দায়িত্ব পড়ে।

বসত বাড়ির একাংশ 


তিনি যখন কটকে আইন ব্যবসায় নিযুক্ত হন তখন তাঁর  বড়ভাই যদুনাথ পূজার কাজ চালাতেন। তাঁর অর্থাৎ জানকীনাথের মৃত্যুর পর নেতাজীর মাতা প্রভাবতী দেবী পূজার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  প্রায় প্রতিবছর সুভাষচন্দ্র পূজার সময় এখানে আসতেন। তিনি করজোড়ে দুর্গাদালানে বসে থাকতেন। একাগ্রচিত্তে চন্ডীপাঠ শুনতেন। দেবীর চরণে অঞ্জলি প্রদান করতেন বলে পরিবারের এক সদস্যের কাছ থেকে জানতে পারলাম।   তিনি আরো জানালেন যে ১৯৩৯ সালে নেতাজী  শেষবারের মত এই বাড়িতে এসেছিলেন। 

গ্রামবাসী শ্রী দেবজিৎ রায় জানালেন পরিবারের পূজার জৌলুস পূর্বের মত  আজ অমলিন।  পূজার নিয়ম যতটা সম্ভব পূর্বের মত  পালন করার চেষ্টা করা হয়। আগে পূজার কটাদিন সমগ্র গ্রামবাসী একসাথে খাওয়া-দাওয়া করতো। নারকেল নাড়ু বিলানো হত। বর্তমানে একসঙ্গে আর খাওয়া-দাওয়া হয় না তবে ভোগ বিলানো হয়। এছাড়া দরিদ্রনারায়ণ সেবা করানো হয়। সাবেকি দিনের একচালা প্রতিমা। দেবীর অঙ্গসজ্জা সেরকম নেই। 

আজও  অষ্টমীর অঞ্জলি ও সন্ধিপূজার বেশ ঘটা করে করা হয়। এইদিন এখানে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে বহু আত্মীয় আজও  সমবেত হয়।  তাঁদের অনেকেই সন্ধিপূজার সময় উপস্থিত থাকেন। 

পারিবারিক রীতি মেনে পুরানো কাঠামোতে একচালা দেবী মূর্তি তৈরী করা হয়। কাঠামোটিকে বিসর্জনের পর ঠাকুরদালানে রেখে দেওয়া হয়। পূজাটি বসু বাড়ির ঠাকুর দালানেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত  হয়ে থাকে। ঠাকুর দালানের সামান্য দূরে রয়েছে পরিবারের আদি বাড়িটি। বর্তমানে বাড়িটি কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে।  এখানে তারা একটা সংগ্রহশালা নির্মাণ করবে বলে জানতে পারলাম।  

বসু বাড়ির পূজাতে অন্যান্য বনেদি বাড়ির মত চাকচিক্য হয়তো দেখতে পাবেন না কিন্তু পূজাটি বেশ  নিষ্ঠার সাথে আজও অনুষ্ঠিত হতে দেখলাম। প্রচুর গ্রামবাসীকে  এখানে অঞ্জলি দিতে দেখলাম। 



তারিখ :-০৪-১০-২০২২

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 






No comments:

Post a Comment