Sudipta Mukherjee's Blog

Sunday, November 24, 2019

জীবন ও জীবিকা (প্রথম পর্ব)

জীবন ও জীবিকা (প্রথম পর্ব)
জীবন ও জীবিকা



 জীবনের বিচিত্র পথে ছুটে চলেছে জীবিকার গাড়ি 

মনুষ্য জীবন বড়ই বিচিত্র।  জন্মের মাধ্যমেই জীবন যুদ্ধের শুরু। জীবন থাকলেই হবে না তাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে হবে,  তবেই জীবনের সার্থকতা। জীবনের মৌলিক চাহিদার সাথে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার সম্পর্ক অনস্বীকার্য।  সাধারণভাবে জীবনের প্রথম কুড়ি - বাইশ বছর আমরা পড়াশোনার মাধ্যমে কাটিয়ে দিয়ে থাকি। ততদিন বেশিরভাগ ছাত্র বা ছাত্রীরা সমাজের কঠিনতার সাথে সেভাবে পরিচিত হয় না।  লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর শুরু হয় জীবন ও সমাজের  বাস্তবতার সংঘাত। ধীরে ধীরে তারা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়।  জীবনতরীকে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হয় সমাজের কঠিনতার  মোকাবিলা করে নিজের জীবনকে  সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য।  ভুলতে বসে বিকেলের সোনাঝরা ঝলমল করা রোদের আলোতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারার দিনগুলোকে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে জীবনের সংজ্ঞা ভিন্ন  হতে থাকে। কারো কারো কাছে জীবন শুধু নিরন্তর উপভোগের বিষয়, কারো কারো কাছে জীবন মানে নিঃস্বার্থভাবে অকাতরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, আবার কারো কাছে জীবন মানে ভোগ ছেড়ে নিজেকে গড়ে তোলা। সাধারণভাবে জীবনধারণের অর্থই হল জীবিকা। জীবিকার আর এক প্রতিশব্দ হল পেশা।  পেশা হচ্ছে কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর পরবর্তী জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকুরী বা অন্য কোনো বিত্তিপেশাকে গ্রহণ করা।  এই পেশার সাহায্যে তাঁরা আর্থিক উপার্জনের মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করে।  প্রতিটি মানুষ জীবিকা সংগ্রামের যুদ্ধে প্রতিনিয়ত সামিল থাকে। প্রতিদিন কেউ সস্তায়  নিজেকে আবার কেউ চড়া দামে নিজেকে বিক্রি করছে।  জীবন ও জীবিকা দুটোই চলমান।  জীবন চলে বয়সের তাগিদে আর জীবিকা চলে জীবনের তাগিদে। গতানুগতিক জীবনে হাজারো জীবিকার ভিড়ে মানুষ তার নিজস্ব জীবিকার সন্ধান খুঁজে পায়।  জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ কি না করে।  কারো জীবন সুখে-শান্তি ও আনন্দে ভরে থাকে আবার কারো জীবন বড়োই বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। 

 এখানে মানুষের বিচিত্র জীবিকার কথা ধীরে ধীরে  বিভিন্ন পর্বে  বলবো। আমি মাঝে মাঝে বিভিন্ন পেশাকে বা জীবিকাকে নিয়ে লিখবো। আজ তার প্রথম পর্ব। বাকি পর্বগুলোর  লেখাগুলোকে  নজর রাখবেন। 


 বিড়ি বাঁধাই 

(প্রথম পর্ব)




ধূমপানের ইতিহাস খুবই দীর্ঘ। এই ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি।  সুপ্রাচীন কালে  বিশ্বে তামাকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রথমদিকে ইউরোপের দেশ গুলোতে তামাক পাতার ব্যবহার শুরু হয়। ১৫৬০ সালে জঁ নিকোট ফ্রান্সে তামাক পাতাকে জনপ্রিয় করেন।  তাঁরই নাম থেকে নিকোটিন কথাটির উদ্ভব হয়েছে। প্রথমদিকে তামাক পাতা ঔষধ হিসেবে ব্যৱহৃত  হলেও ধীরে ধীরে তা নেশার সামগ্রী হয়ে ওঠে। এই শতকেই বিজ্ঞানীরা নিকোটিনের ক্ষতিকর দিকগুলো আবিষ্কার করেন।  ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে নিকোটিনের বিষ নিয়ে সারা বিশ্বে প্রচার শুরু হয়।


বিড়ি হচ্ছে একটা ধূমপানের সামগ্রী।  ধূমপানের জন্য তৈরী শুকনো তামাক পাতা দিয়ে পাকানো একটি ক্ষুদ্র শলাকা হচ্ছে  বিড়ি। প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামীণ এলাকাতে সিগারেটের বিকল্প হিসেবে বিড়ি খুবই জনপ্রিয়। ভারতবর্ষের বড় বড় তামাক কোম্পানির  পাশাপাশি বিড়ি শিল্পও অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  বিড়ি বাঁধা  আমাদের দেশের অন্যতম একটা কুটিরশিল্প। এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে রয়েছে জেলার অর্থনীতি।  গ্রামের বহু  মানুষের  জীবিকা হলো  এই বিড়ি বাঁধা।  বিড়ি বাঁধতে ব্যৱহৃত হয় তামাক, কেন্দুপাতা ও সুতো। এটি কুটিরশিল্প হলেও  পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার আওরঙ্গবাদ অঞ্চলে প্রায় ২০-৩০ টা  ছোট বড় বিড়ির কারখানা রয়েছে। এই সব কারখানাগুলো থেকে দৈনিক প্রায় ৩০-৩৫ কোটি  বিড়ি উৎপাদন হয়। বিড়ি বাঁধাই এই অঞ্চলের বহু পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এই আয়ে থেকেই পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। এই শিল্পের সাথে বেশ কয়েকলাখ শ্রমিক জড়িয়ে রয়েছে। সারা বিশ্বেই ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলোকে  নিয়ে প্রচারের মাধ্যমে  মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।  পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য রাজ্য সরকার ও ভারত সরকার একইভাবে সচেতন করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচার করে চলেছে।  তামাক বিক্রয়ের সাথে দেশের ও রাজ্যের বিরাট পরিমানের শুল্ক আমদানি হয়।  তাই এই শিল্প বন্ধ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।




ছবি ও  লেখার স্বত্ত  : সুদীপ্ত মুখার্জী 
তারিখ : ২৪-১১-২০১৯

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 

No comments:

Post a Comment