দূর্গা হলেন একজন জনপ্রিয় হিন্দু দেবী। হিন্দুরা তাঁকে মহাশক্তির একটি উগ্র রূপ হিসেবে মনে করেন। পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী তিনি মহাদেবের স্ত্রী পার্বতী এবং কালীর অন্যরূপ। দুর্গাপূজা বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ পূজা। দেবী দুর্গা আবির্ভূত হন শক্তিরূপে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মন্দ দেবতাদের ধ্বংস করার জন্যই তিনি আবির্ভূত হন এবং মন্দ দেবতাদের প্রধান মহিষাসুরকে বধ করেন। স্কন্দ পূরাণে আছে রুরু দৈত্যের পুত্র দুর্গাসুরকে বধ করে দেবী জগতে দুর্গা নামে পরিচিত হন। আবার শ্রী শ্রী চণ্ডীতে আছে দুর্গম নামক মহাসুরকে বধ করে দুর্গা নামে প্রতিষ্ঠিত হন। বেশিরভাগ জায়গায় দেবী দূর্গা "মহিষাসুরমর্দিনী" নামে পূজিতা হন। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী দুর্গা শব্দের আক্ষরিক ব্যাখ্যা হল -
'দ' হল = দৈত্যনাশক
'উ '-কার হল = বিঘ্ননাশক
'রেফ' = রোগ ক্ষয়ের অর্থ বহন করে
'গ' হল = পাপনাশক
'আ' হল = শত্রূর বিনাশ
সকল বিঘ্ন, রোগ, ভয়, শত্রূ হতে যিনি আমাদের রক্ষা করেন, তিনিই হলেন দেবী 'দুৰ্গা'।
দেবী দুর্গা হিন্দু সমাজে নারীর প্রতিচ্ছবি। নারী শুধু মমতাময়ী মা, প্রেমময়ী স্ত্রী, স্নেহময়ী কন্যা নয়, নারীর ভিতরের যে শক্তি, যে তেজ, যে ক্ষমতা তারই বহিঃপ্রকাশ দেবী দুর্গার মধ্যে প্রকাশিত।
কখনও তিনি মহামায়া কখনও তিনি দুর্গতিনাশিনী আবার কখনও তিনি মহিষাসুরমর্দিনীরূপে মর্ত্যে পূজিত হন। বসন্তকালে বাসন্তীপূজা আর শরৎকালে অকালবোধন দুর্গাপুজো সাধারণত করা হয়ে থাকে। শরৎকালের পুজো সবচেয়ে জনপ্রিয়। সমস্ত অশুভশক্তিকে পরাজিত করে অশ্বিনের শারদপ্রাতে মর্ত্যলোকে আবির্ভূত হন।
.
দেবী দুর্গা হিন্দু সমাজে নারীর প্রতিচ্ছবি। নারী শুধু মমতাময়ী মা, প্রেমময়ী স্ত্রী, স্নেহময়ী কন্যা নয়, নারীর ভিতরের যে শক্তি, যে তেজ, যে ক্ষমতা তারই বহিঃপ্রকাশ দেবী দুর্গার মধ্যে প্রকাশিত।
কখনও তিনি মহামায়া কখনও তিনি দুর্গতিনাশিনী আবার কখনও তিনি মহিষাসুরমর্দিনীরূপে মর্ত্যে পূজিত হন। বসন্তকালে বাসন্তীপূজা আর শরৎকালে অকালবোধন দুর্গাপুজো সাধারণত করা হয়ে থাকে। শরৎকালের পুজো সবচেয়ে জনপ্রিয়। সমস্ত অশুভশক্তিকে পরাজিত করে অশ্বিনের শারদপ্রাতে মর্ত্যলোকে আবির্ভূত হন।
.
দেবীর সৃষ্টি
সকল দেবতার শরীর থেকে নির্গত তেজোরাশি একত্রিত হয়ে এক দশভুজা নারীমূর্তি ধারণ করে।
মহাদেবের তেজে তৈরী হয় দেবীমুখ
বরুণের তেজে জংঘা ও উরুদ্বয়
বিষ্ণুর তেজে বাহুসমূহ
যমের তেজে কেশপাশ
ইন্দ্রের তেজে শরীরের মধ্যভাগ
চন্দ্রের তেজে স্তনযুগল
পৃথিবীর তেজে নিতম্ব
ব্রম্ভার তেজে পদযুগল
সূর্যের তেজে পদ আঙ্গুলিসমূহ
অষ্টবসুর তেজে হাতের আঙ্গুলিসমূহ
কুবেরের তেজে নাসিকা,
সন্ধ্যাদেবীদ্বয়ের তেজে ভ্রূযুগল
সন্ধ্যাদেবীদ্বয়ের তেজে ভ্রূযুগল
বায়ুর তেজে কর্ণদ্বয়
এবং বিশ্বকর্মা ও অন্যান্য দেবতাগণের তেজঃপুঞ্জ থেকে দশভুজা দেবী দুর্গা সৃষ্টি হলেন।
এবং বিশ্বকর্মা ও অন্যান্য দেবতাগণের তেজঃপুঞ্জ থেকে দশভুজা দেবী দুর্গা সৃষ্টি হলেন।
অনন্তর সমস্ত তেজোরাশিসম্ভূত মহাদেবীকে দেখে মহিষাসুরপীড়িত অমরগণ আনন্দিত হলেন।
দেবীকে অস্ত্র প্রদান
দেবীকে অস্ত্র প্রদান
দেবতারা তাঁদের তেজরাশি দিয়ে দশভুজা নারীকে তৈরী করলেন, এবার তাঁকে অস্ত্র ও অলংকারে সজ্জিত করার পালা। দেবতারা দেবী দুর্গাকে নানারকম অস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সজ্জিত করলেন। ত্রিশূলধারী মহাদেব স্বীয় শুল থেকে শুলান্তর, বিষ্ণু স্বীয় সুদর্শনচক্র থেকে চক্রান্তর উৎপাদন করে দেবীকে দিলেন , বরুণদেব দিলেন শঙ্খ , অগ্নিদেব দিলেন শক্তি , পবনদেব দিলেন একটি ধনু ও দুটি বানপূর্ণ তূনীর, ইন্দ্র তাঁর বজ্র থেকে বজ্রান্তর এবং ঐরাবত নামক স্বর্গগজের গলদেশস্থ ঘন্টা থেকে ঘন্টান্তর উৎপাদন করে দিলেন, যমরাজ দিলেন কালদন্ড থেকে একটি দণ্ড, জলদেবতা বরুণ নিজের পাশ থেকে একটি পাশ, প্রজাপতি ব্রম্ভা রুদ্রাক্ষমালা থেকে একটি মালা ও কমণ্ডলু থেকে সৃষ্ট একটি কমণ্ডলু, নিমেষাদিকালাভিমানিনী দেবতা একটি প্রদীপ্ত খড়গ ও একটি ঢাল, ক্ষিরোদসমুদ্র দিলেন উজ্জ্বল মুক্তাহার, বজ্রযুগল ,দিব্যচূড়ামণি, দুইটি কুণ্ডল , হস্তসমূহের বলয়গুলি, শুভ্র ললাটভূষণ, সকল বাহুতে অঙ্গদ (বাজু), পায়ের নুপুর, কণ্ঠভূষণ ও অঙ্গুলিগুলির অঙ্গুরী, বিশ্বকর্মা দিলেন কুঠার, নানাপ্রকার অস্ত্র, অভেদ্য কবচ, সমুদ্র তাঁর শিরে অম্লান পদ্মের একটি মালা, বক্ষের একটি মালা ও হস্তে একটি পদ্ম দান করলেন ,গিরিরাজ হিমালয় দিলেন বাহনস্বরূপ সিংহ ও বিবিধ রত্ন, কুবের দিলেন পানপাত্র ,নাগরাজ বাসুকি মহামণিশোভিত একটি নাগাহার প্রদান করলেন। অন্যান্য দেবগন কর্তৃক অস্ত্র ও অলংকারে ভূষিত হয়ে জগন্মাতা দেবী দূর্গা বারংবার অট্টহাস্য ও হুঙ্কার করতে লাগলেন।
ক্রমবিকাশের পথে দেবী দূর্গা
আদিম যুগে শুধু ভারতবর্ষেই নয়, বিশ্বের প্রায় সকল দেশে প্রাণস্পন্দন ও প্রাণস্পন্দনহীন প্রাণী ও পদার্থের পূজা ও আরাধনার প্রচলন ছিল। আদিম ও অনুন্নত যুগে বিদেহী আত্মা, ভূত-প্রেত প্রভৃতি অপদেবতাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পূজার প্রচলন ছিল। প্রাচীনকালে বৃক্ষকে কল্পনা করা হতো সূর্যের আশ্রয়রূপে। আকাশের সাথে বৃক্ষের সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হত। যেসব বৃক্ষগুলি সুউচ্চ ও সুপ্রসারিত যেমন বট, অশ্বত্থ, বেল, নিঁম এগুলিকে আকাশ বা সূর্যের আশ্রয় বলা হত এবং পূজা করার রীতি চালু ছিল। বৃক্ষ পূজার পর এলো যূপ ও স্তুপ পূজা। এগুলো বৈদিক যাগযজ্ঞে ব্যৱহৃত হত। যূপ থেকেই ক্রমে শিবলিঙ্গের উৎপত্তি ও বিকাশ হয়েছে। যূপ ও বৃক্ষ পূজা আর্যসভ্যতার নিদর্শন। দেবী দুর্গার পূজা গোড়ার দিকে অশ্বত্থ, নিম, বেল প্রভৃতি বৃক্ষে করা হত। বিল্ল বৃক্ষকে সেখানে দেবী দূর্গা ভাবা হত। ষষ্ঠী তিথিতে বিল্ব বৃক্ষের পূজার পর সপ্তমীর প্রাতঃকালে বৃক্ষরূপিণী দেবী দুর্গার আরোহন করা হয়। শাঁখ, ঘন্টা, কাঁসর ও ঢাক বাজিয়ে সেই শাখাদেবীকে পূজামণ্ডপে আনা হয়। বৈদিক সম্প্রদায়ের অনুকরণে বৌদ্ধসম্প্রদায়ে মূর্তি পূজা প্রবর্তিত হয়েছিল বলে ধরা হয়। মূর্তিপূজা ভারতের সকল প্রদেশেই প্রচলিত আছে তবে পশ্চিমবাংলায় এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দুর্গার দ্বিভূজা, চতুর্ভূজা, অষ্টভুজা, দশভুজা, দ্বাদশভূজা ও অস্টাদশভূজা মূর্তির কথা পূরণে বলা আছে। এই সকল মূর্তির সমস্ত মূর্তিই সকল দেশে পূজ্য নহে, বাংলায় আমরা দশভুজা মূর্তি পূজা করে থাকি।
দেবী সরস্বতী - ভারতীয় পূরাণে দেবী সরস্বতী বহুমাত্রিক দেবী হিসেবে পরিচিত। দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞান, বুদ্ধি, শিল্পকলা ও বিদ্যার দেবী। শ্রী শ্রী চন্ডীতে মহাত্মা অম্ভুন ঋষির বিদুষী কন্যার নাম ছিল "বাক" এবং সেই "বাক" বিদ্যারূপিণী দেবী সরস্বতী নামে পরিচিত হয়েছিলেন। সরস্বতী নামের পৌরাণিক ব্যাখ্যায় "নদীরূপা" ও "দেবতারূপা" দু রকমই পাওয়া যায়। পদ্মপুরাণে তিনি দক্ষকন্যা এবং কশ্যপ পত্নী হিসাবে স্বীকৃত এবং ব্রম্ভবৈবত পুরান মতে তিনি নাযায়নের পত্নী। আদিতে তিনি উত্তর ভারতের সপ্তনদীর (গঙ্গা, যমুনা, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা, সরস্বতী ও শতদ্রু ) অন্যতম নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সরস্বতী দেবী দুর্গার বামদিকে অধিষ্ঠিত থাকেন। দেবীর বাহন শ্বেতহংস।
দেবী লক্ষ্মী - দেবী লক্ষ্মী হলেন ধনদেবী। তবে দেবী লক্ষ্মীর রূপ বা মূর্তি বর্তমানকালে যেভাবে কল্পনা করা হয় বৈদিক যুগে সেরকম ছিল না। তখন লক্ষ্মীকে কখনও শুভ, আবার কখনও অশুভদায়িনীরূপে পাওয়া যায়। দেবী মা দুর্গার দক্ষিণদিকে অধিষ্ঠিত থাকেন। দেবীর বাহন পেঁচা।
সিদ্ধিদাতা গণেশ - সিদ্ধিদাতা গণেশ হলেন আসলে মিত্রদেবতার (সূর্যের) একটি ভিন্নরূপ। সমস্ত পূজানুষ্ঠানে, ধর্মীয় ও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে সর্বাগ্রে গণেশের পূজা বিধেয়। দক্ষিনভারতে গণেশের সমাদর ও পূজা অধিকতর ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধিদাতা গণেশ মা দুর্গার ডানপাশে দেবী লক্ষ্মীর পরে অধিষ্ঠিত থাকেন। গণেশের বাহন ইঁদুর।
কার্তিকেয় - কার্তিক বা কার্তিকেয় সাধারণতভাবে দেব সেনাপতি হিসেবে পরিচিত। কার্তিকের অপর নাম স্কন্দ। কৃত্তিকা নক্ষত্রে কার্তিকের জন্ম। কৃত্তিকা নক্ষত্রমন্ডলীর ছয় কৃত্তিকার দ্বারা পুত্ররূপ গৃহীত ও প্রতিপালিত হওয়ায় তিনি কার্তিক বা কার্তিকেয় নামে অভিহিত হইয়াছেন। কার্তিকের অর্থ কৃত্তিকাতনয়। দেবী দুর্গার বামপাশে দেবী সরস্বতীর পরে অধিষ্ঠিত থাকেন। কার্তিকের বাহন ময়ূর।
আগমনী
স্বজন-পরিজন
দেবী দুর্গার স্বজন পরিজন বলতে সাধারণতভাবে তাঁর দুই পুত্র ও দুই কন্যাকে ধরা হয়। আমাদের দূর্গা প্রতিমায় মা দুর্গার দক্ষিণপাশে লক্ষ্মীর মূর্তি এবং বামপাশে সরস্বতীর মূর্তি থাকে। লক্ষ্মী মূর্তির উপরে গণেশ আর সরস্বতী মূর্তির উপরে কার্তিকের মূর্তি থাকে।
দেবী সরস্বতী - ভারতীয় পূরাণে দেবী সরস্বতী বহুমাত্রিক দেবী হিসেবে পরিচিত। দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞান, বুদ্ধি, শিল্পকলা ও বিদ্যার দেবী। শ্রী শ্রী চন্ডীতে মহাত্মা অম্ভুন ঋষির বিদুষী কন্যার নাম ছিল "বাক" এবং সেই "বাক" বিদ্যারূপিণী দেবী সরস্বতী নামে পরিচিত হয়েছিলেন। সরস্বতী নামের পৌরাণিক ব্যাখ্যায় "নদীরূপা" ও "দেবতারূপা" দু রকমই পাওয়া যায়। পদ্মপুরাণে তিনি দক্ষকন্যা এবং কশ্যপ পত্নী হিসাবে স্বীকৃত এবং ব্রম্ভবৈবত পুরান মতে তিনি নাযায়নের পত্নী। আদিতে তিনি উত্তর ভারতের সপ্তনদীর (গঙ্গা, যমুনা, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা, সরস্বতী ও শতদ্রু ) অন্যতম নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সরস্বতী দেবী দুর্গার বামদিকে অধিষ্ঠিত থাকেন। দেবীর বাহন শ্বেতহংস।
দেবী লক্ষ্মী - দেবী লক্ষ্মী হলেন ধনদেবী। তবে দেবী লক্ষ্মীর রূপ বা মূর্তি বর্তমানকালে যেভাবে কল্পনা করা হয় বৈদিক যুগে সেরকম ছিল না। তখন লক্ষ্মীকে কখনও শুভ, আবার কখনও অশুভদায়িনীরূপে পাওয়া যায়। দেবী মা দুর্গার দক্ষিণদিকে অধিষ্ঠিত থাকেন। দেবীর বাহন পেঁচা।
সিদ্ধিদাতা গণেশ - সিদ্ধিদাতা গণেশ হলেন আসলে মিত্রদেবতার (সূর্যের) একটি ভিন্নরূপ। সমস্ত পূজানুষ্ঠানে, ধর্মীয় ও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে সর্বাগ্রে গণেশের পূজা বিধেয়। দক্ষিনভারতে গণেশের সমাদর ও পূজা অধিকতর ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধিদাতা গণেশ মা দুর্গার ডানপাশে দেবী লক্ষ্মীর পরে অধিষ্ঠিত থাকেন। গণেশের বাহন ইঁদুর।
কার্তিকেয় - কার্তিক বা কার্তিকেয় সাধারণতভাবে দেব সেনাপতি হিসেবে পরিচিত। কার্তিকের অপর নাম স্কন্দ। কৃত্তিকা নক্ষত্রে কার্তিকের জন্ম। কৃত্তিকা নক্ষত্রমন্ডলীর ছয় কৃত্তিকার দ্বারা পুত্ররূপ গৃহীত ও প্রতিপালিত হওয়ায় তিনি কার্তিক বা কার্তিকেয় নামে অভিহিত হইয়াছেন। কার্তিকের অর্থ কৃত্তিকাতনয়। দেবী দুর্গার বামপাশে দেবী সরস্বতীর পরে অধিষ্ঠিত থাকেন। কার্তিকের বাহন ময়ূর।
মহালয়া
"বাজলো তোমার আলোর ধ্বনি"- এর সুর আর স্বর্গীয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বজ্র গম্ভীর কণ্ঠের "আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী" এই চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়েই মহালয়ার দিনটা শুরু হয়। শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়েই দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আবাহন জানানো হয়। শারদীয় দুর্গাপুজোর সাথে মহালয়ার কোনো সম্বন্ধ নেই। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে মহালয়ার পরের দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়। গঙ্গার ঘাটগুলোতে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পন করার জন্য মানুষের ঢল নামে। পুণ্যস্নান আর মন্ত্রচারণে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হয়।
পূজার পাঁচটা দিনের নিয়ম
মহাষষ্ঠী
মহাষষ্ঠী
মহাসপ্তমী
মহাঅষ্টমী
সন্ধিপূজা
সন্ধিপূজা হলো দুর্গাপূজার সবচেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ পূজা। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট আর নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট হল সন্ধিক্ষণ। এই সন্ধিক্ষণেই মা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। অসুরশক্তির বিনাশকালের এই শুভক্ষনেই সন্ধিপূজা করা হয়। এইদিন কোথাও কোথাও কুমারী পূজাও করা হয়। বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম কুমারী পূজা চালু করেছিলেন।
কুমারী পূজা
এক বছরের কন্যার নাম = সভ্যা
দুই বছরের কন্যার নাম = সরস্বতী
তিন বছরের কন্যার নাম = ত্রিধমূর্তি
চার বছরের কন্যার নাম = কালিকা
পাঁচ বছরের কন্যার নাম = সুঙ্গা
ছয় বছরের কন্যার নাম = উমা
সাত বছরের কন্যার নাম = মাতঙ্গিনী
আট বছরের কন্যার নাম = কুষ্টিকা
নয় বছরের কন্যার নাম = কাল সন্দভা
দশ বছরের কন্যার নাম = অপরাজিকা
এগারো বছরের কন্যার নাম = রুদ্রাণী
এগারো বছরের কন্যার নাম = রুদ্রাণী
বারো বছরের কন্যার নাম = ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যার নাম = মহালক্ষ্মী
চোদ্দ বছরের কন্যার নাম = পঠনায়িকা
পনেরো বছরের কন্যার নাম = ক্ষেত্র
ষোলো বছরের কন্যার নাম = অম্বিকা
মহানবমী
দশমী
দেবীবরণ
সিঁদুর খেলা
বিসর্জন
শাস্ত্র মতে পুরোহিত মায়ের বিসর্জনের আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষ করেন। তারপর মণ্ডপে দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত সন্ধ্যায় শোভাযাত্রা সহকারে মাকে নিরঞ্জনের জন্য কাছাকাছি কোন নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়েই শেষ হয় হিন্দু ধর্মের পরম কাঙ্খিত শারদোৎসব। উত্তর চব্বিশ পরগনার টাকিতে এই বিসর্জন একটু অন্যভাবে পালন করা হয়ে থাকে। সেখানে সকালে দুটো নৌকোর মাঝখানে মাকে বসিয়ে সারাদিন ইছামতী নদীতে প্রদক্ষিণ করানো হয়। তারপর সন্ধ্যের সময় মাকে ইছামতীতে ভাসানো হয়।
বিজয়া দশমী
দুর্গাপূজা আনন্দময় মহামিলনের উৎসব। যা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিয্যের প্রতীক। এই পুজো এখন আর শুধু হিন্দুদের জন্য আনন্দ বয়ে আনে না, সব জাতির মধ্যেই আনন্দ, শান্তি ও ভালোবাসা বয়ে নিয়ে আসে। এ যেন এক সৌভ্রাতৃত্বের মিলনোৎসব। তাই দুর্গাপুজো শুধু ধর্মীয় কৃত্য নয়, তা সার্বজনীন উৎসবও বটে
তথ্যসূত্র : মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা , স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ
ছবি ও লেখার স্বত্ত : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ : ১৫-০৮-২০১৯
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।