Tuesday, December 24, 2019

বড়দিন ও কলকাতা >

বড়দিন ও কলকাতা 


পঁচিশ মানে বড়দিন 
পঁচিশ মানে যীশু 
পঁচিশ মানে সকল দেশে 
খুশি সকল শিশু।

পঁচিশ মানে কেক, মিষ্টি 
পঁচিশ মানে ভালোবাসা 
পঁচিশ মানে সান্তাক্লজ 
মেটায়  শিশুর আশ।



পঁচিশে ডিসেম্বর মানেই বড়দিন। বড়দিন মানেই শিশুদের মন ভোলানোর জন্য সান্তাক্লজের আবির্ভাব ও উপহার প্রদানের  অলীক কল্পনা।  বড়দিন হলো খ্রিস্টান  ধর্মাবলম্বীদের  এক বাৎসরিক উৎসব। ধরা হয় এই দিনে খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রিষ্ট জন্মেছিলেন। সেই কবে বেথেলহেমের আস্তাবলে আশ্রয় নিয়েছিলেন আসন্নপ্রসবা মেরি, সারা বেথেলহেম যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, সেই সময় সবার অলক্ষে চুপিচুপি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আস্তাবলে এসে নামলো। এক অপার্থিব আলো  সারা পৃথিবীকে  আলোকিত করল। জন্ম নিল এক শিশু।  সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি যে এই শিশু একদিন পাল্টে দেবে পৃথিবীর মানচিত্রকে। এই নির্দিষ্ট দিনটিতে যীশু জন্মগ্রহণ করেছেন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।  যীশুর জন্মদিনের কোনো তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে যীশুর পৃথিবীবাস শেষ হওয়ার অনেক বছর পর ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন প্রথম যীশুর জন্মদিন পালন করেছিলেন। রোমবাসীরা সারা রাত  জেগে সেদিন বড়দিনের উৎসব উদযাপন করেছিলেন। যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনকে ইংরেজিতে "খ্রিষ্টমাস" বলা হয় আর বাংলায় "বড়দিন" বলে অভিহিত করা হয়। বাংলায় বড়দিন শব্দটি সম্ভবত কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সর্বপ্রথম তাঁর লেখায় ব্যবহার করেছিলেন।  তিনি লিখেছিলেন "যদিও আমরা হই হিন্দুর সন্তান,  বড়দিনে সুখী তবু, খ্রিষ্টান সমান"।

২৪শে  ডিসেম্বর মধ্য রাত্রি থেকে গির্জায় গির্জায় প্রার্থনার  মধ্য দিয়ে যীশুর জন্মদিন পালন করা রীতি রয়েছে। ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখে সারা বিশ্বেই বড়দিন বা খ্রিষ্টমাস হিসেবে পালন করা হয়। সময়ের আবর্তে বড়দিন আজ পেয়েছে সর্বজনীন উৎসবের মর্যাদা।  শুরুতে এই উৎসব সেরকমভাবে উৎযাপন করা হতো না।  যীশু খ্রিষ্টের জন্মের বহু বছর পর থেকে এই দিনটিকে খ্রিস্টানরা আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করা শুরু করে। প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে যীশুই মানব জাতিকে দেখিয়েছিলেন মুক্তি ও কল্যাণের পথ। তাই তাঁকে গভীরভাবে স্মরণ করে সারা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ২৫শে উৎসবের শুরু আর নিউ য়ার্স উৎসবের শেষ।

আমাদের শহর একসময় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল। শহরের বুকে  ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের মধ্যে গির্জার সংখ্যাও কিছু কম নয়। প্রতিবছরই এইসব গির্জাগুলো বড়দিনের প্রাক্কালে নানারকম আলোকমালায় সজ্জিত হয়। ক্রিসমাস ইভের সন্ধ্যায় ও ক্রিসমাসের দিন মানুষের ঢল নামতে দেখা যায় এই গির্জাগুলোতে। অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থনা সভার। এই বিশেষ দিনে বিভিন্ন গির্জা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেই সব চার্চগুলোর ছবি। এই দিন স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারী ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলো সাধারণত ছুটি থাকে। বাবা-মায়ের হাত ধরে কচিকাচারা সকাল থেকেই ভিড় জমান শহরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলোতে। যদিও বাঙালির সাথে বড়দিনের কোনো সুদূর সম্পর্ক নেই, তবুও বাঙালিরা এই দিনটা উৎসব হিসেবেই পালন করে আসছে।

আমাদের তিলোত্তমা সেজে উঠে, সেজে উঠে শহরের অ্যাংলো পাড়াগুলো। শহরের রাস্তার দুপাশে নানান  মাপের সান্টা ক্লজ, ক্রিসমাস ট্রি, জিঙ্গল বেল বিক্রির জন্য বিক্রেতারা পশরা  সাজিয়ে বসেন।  যুগ যুগ ধরে আমাদের শহরে হিন্দু-মুসলমানদের মন্দির-মসজিদের পাশাপাশি অবস্থান করে বহু গির্জা। এ যেন শহর কলকাতার এক সম্প্রীতির বন্ধন। কলকাতা তো সর্বধর্মের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা শহর। নস্টালজিয়া বাঙালির শিরায় শিরায়। তাই তারা সব ধর্মের অনুষ্ঠানেই নিজেদের আনন্দটুকু ঠিকভাবে তুলে নিতে জানে। শহর জুড়ে শীতের আবহাওয়া। তাপমাত্রার পারদ এই সময় অনেকটাই নেমে যায়, লেগে যায় হিমের পরশ। বড়দিনের অপেক্ষায় প্রহর গোনে শহরবাসী। বাবা-মায়ের হাত ধরে কচিকাচারা সকাল থেকেই ভিড় জমান চিড়িয়াখানায় বা ইকোপার্কে বা অন্যান্য জায়গাগুলোতে। রংবাহারি আলোর সাথে উৎসবের মেজাজ মহানগরবাসীদের বরাবরই পছন্দের।  সেজে ওঠে গির্জাগুলোর সাথে সাথে হগ মার্কেট, বো-ব্যারাক,  অ্যালেন পার্ক ও সমগ্র পার্ক স্ট্রিট। এলইডি আলোর চাঁদোয়ায় ঢাকা, আলো ঝলমল করে অ্যালেন পার্ক্ ও পার্ক স্ট্রিট।  উৎসব উদযাপনের ছাপ লক্ষ্য করা যায় পার্ক স্ট্রিটের আনাচে-কানাচে। পার্ক স্ট্রিটের আনন্দ বুক ভোরে নিতে আসে বাঙালিরা। বেলুন হাতে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথ ও রাস্তাটিতে  মাথায় লাল আলো জ্বলা সান্টা টুপি পরে বাচাদের বড়দের হাত ধরে ঘুরতে দেখা যায়। গান বাজনা, খাওয়া-দাওয়া আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে শহুরে জীবনগুলো। কারো সঙ্গে বন্ধু-বান্ধব, কারো সঙ্গে প্রিয় নারী। রাত যত বাড়ে তত সাহেবপাড়ার আলোগুলো আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বার-রেস্তোরাঁগুলোতে ভিড় উপচে পরে। বারগুলোতে ওঠে স্কচ-হুস্কির ফোয়ারা। কোনো কোনো বারে আবার নাচ-গানের এলাহী ব্যবস্থা থাকে। সুন্দরী নৃত্যপটীয়সীরা তাদের শরীরের  চটুল ভঙ্গিতে অতিথিদের উষ্ণ শরীর করে তোলে উষ্ণতর। দলে দলে শহরের মানুষ সামিল হয় সাহেবপাড়াগুলোতে। সেলফি তোলার হিড়িক পরে যায়। আট থেকে আশি ভিড় জমান গির্জাগুলোতে ও পার্ক স্ট্রিটের বাহারি আলোর তলায়।  সর্ব জাতি মিলেমিশে এক হয়ে যায়। যুবক-যুবতী ও বাচ্ছারা  মাথায় লাল রঙের সান্টা টুপি  আর চোখে বাহারি নকল চশমায় নিজেদের সাজিয়ে তোলে। তিলোত্তমা বড়দিনকে স্বাগত জানায়।

 পাড়ায় পাড়ায়  তৈরী হয় বড়দিনের নানারকমের সামগ্রীর সাথে কেকের দোকান।  কেক ছাড়া বড়দিনের স্বাদটাই বিস্বাদ।  তাই কেকের দোকানেও  ভিড় উপছে পড়তে দেখা যায়। কেক বিলাসের অন্যতম পীঠস্থান হল হগ মার্কেট।  গরম গরম কেকের গন্ধে বাজারটির চারদিক  ম ম  করে। নাহুমস, ক্যাথলিন এরকম বহু নামি-দামি ব্যান্ডের আঁতুরঘর এই জায়গাটি। হগ মার্কেটে বছরের পর বছর ধরে এই দোকানগুলো কেকের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এখানে আসলেই আপনার সাধ্যের মধ্যেই হবে আপনার স্বাদ পূরণ।  বড়দিনের কেক, হগ মার্কেট ও বাঙালি মিলেমিশে এই সময়টাতে যেন  এক হয়ে যায়।

ক্রিস্টমাস ট্রি, আলো, মিষ্টি, খেলনা, তারা, ঘন্টা দিয়ে ঘর সাজানোর রেওয়াজ  বহু প্রাচীন। প্রথম দিকে উত্তর ইউরোপের ফার গাছগুলোকে এভাবে সাজানো হতো।  পরবর্তীকালে তা বিশ্বের সর্বত্রই ছড়িয়ে পরে।  আমাদের শহরও এর থেকে বাদ  যায় না।  শহরের বহু মানুষকে এইদিন ক্রিস্টমাস গাছ ও রং-বেরঙের আলো  দিয়ে নিজেদের  ঘরে যীশুর মূর্তি  সাজাতে দেখা যায়।

সান্টাক্লজ হল পাশ্চাত্য সংস্কৃতির রূপকথার এক কিংবদন্তি চরিত্র। সাধারণভাবে তিনি সান্টা নামে পরিচিত। উপকথায় বলে তিনি নাকি একজন অত্যন্ত দয়াবান ছিলেন। সান্টা সাধারণত হাস্যমুখর, সাদা দাঁড়িওলা একজন বৃদ্ধ মানুষের চিত্র।  তার পরনে সাদা কলার ও সাদা আস্তিনের লাল কোর্ট ও সাদা আস্তিনের লাল রঙের ট্রাউজার্স, কালো চামড়ার বেল্ট ও বুট জুতো  পরিহিত। তার পিঠের ঝোলাতে থাকে নানা রকমের উপহার সামগ্রী।  প্রাচীন গ্রিসের লাইসিয়াতে চতুর্থ শতকে সন্ট নিকোলাসের উল্লেখ মেলে। প্রচলিত বিশ্বাস হলো তিনি নাকি বড়দিনের প্রাকাল্লে অর্থাৎ ২৪ তারিখ মধ্যরাত্রে ভালো ভালো ছেলে মেয়েদের নানারকম উপহার দিয়ে থাকেন। এই কিংবদন্তির উৎস হল ঐতিহাসিক উপহার প্রদানকারী চরিত্র সন্ট নিকোলাস। সন্তসুলভ অবদানগুলোর পাশাপাশি তিনি শিশুদের পরিচর্যা, দয়া ও উপহার প্রদানের জন্য খ্যাত ছিলেন।  সন্তের পোশাকে তিনি শিশুদের খোঁজখবর নিতেন এবং বিচার করে দেখতেন কোন কোন শিশু উপহার পাওয়ার যোগ্য। সি সন্ত  নিকোলাস সান্তাক্লজের আদি রূপ। নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে খুবই জনপ্রিয় চরিত্র সিন্টারক্লাস ৬ই ডিসেম্বর তিনি উপহার দেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিসমাসের দিনও  বেশ কিছু লোক উপহার দিয়ে থাকেন।  যদিও আধুনিক সান্টাক্লজের রূপকল্পটি সৃষ্টি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। মার্কিন প্রেসে সান্তাক্লজ শব্দটি ১৭৭৩ সালে সর্বপ্রথম দেখা গিয়েছিল। রূপকথা আছে কি নেই কারো সেভাবে জানা না থাকলেও আমরা দেখেছি বহু মা-বাবা তার শিশু ২৪ তারিখে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লে তার মাথার কাছে একটি মোজার ভিতরে নানারকম খেলনা ও উপহার ভরে রেখে দেয়, পরের দিন সকালে শিশুটির ঘুম ভাঙলে সে যেন মোজাটি খুলে দেখতে পায় যে  সান্টাক্লজ  তার জন্য কি কি উপহার পাঠিয়েছে।  শিশু মনের আনন্দে তৈরী হয় উৎসবের শ্রেষ্ঠ দৃশ্য।  সারা পৃথিবীতেই পিতা-মাতার তাদের সন্তানদের সান্টাক্লজ  ও অন্যান্য উপহারপ্রদানকারীদের সম্পর্কে শিক্ষা দিলেও, কেউ কেউ এগুলোকে কুসংস্কার হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন। আবার অনেক দেশেই এই দিনে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উপহার আদান-প্রদানের রীতি রয়েছে।

বড়দিন মানে ঈশ্বরের কাছে থেকে সঠিক পথের নির্দেশ পাওয়া। বড়দিন মানে খারাপ কাজ ছেড়ে ভালো পথে চলতে শেখার দিন।  যীশু নামের অর্থ উদ্ধারকর্তা বা রক্ষাকর্তা।  যীশু হলেন একজন মানবরূপী ঈশ্বর।  পবিত্র বাইবেল বলে "যীশু খ্রিষ্টেই  আমরা মুক্তি, পাপের মোচন প্রাপ্ত হয়েছি।  ইনিই অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি"। আমাদের জীবনে বড়দিনের সার্থকতা শুধু ত্যাগস্বীকারে, ভোগবিলাসে বা উপহার দেয়া-নেয়াতে নয়।  যদি আমরা সর্ব ধর্মের সকল মানুষকে ভালোবাসি, তবেই বড়দিন সমাজে সার্থক হবে।

কবিতা : শক্তিপদ ঘোষ
ছবি ও  লেখার স্বত্ত  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ : ২৪-১২-২০১৯

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Thursday, December 12, 2019

নব কৈলাশ মন্দির >

ভ্রমণ

নব কৈলাশ মন্দির 



কথায় বলে "মাঘের শীত বাঘের গায়"।  এই বছর এখনও কলকাতায় সেইভাবে ঠান্ডা পড়েনি। ঠান্ডা পড়েনি তো কি হয়েছে, তা বলে কি ঘুরতে যাবো না তাতো হয় না। গত শনিবার অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ রাতে ঠিক করলাম পরেরদিন ৮ তারিখ অর্থাৎ রবিবার কোথাও একটা ঘুরতে যেতেই হবে।  গিন্নির সাথে কথা বলে ঠিক করা হলো কালনার নব কৈলাশ মন্দির দেখতে যাবো, কারণ আমাদের দুজনের কারোরই এই মন্দিরটা এখনো দেখা হয়ে ওঠেনি। রাতেই গুগল বাবাজির স্মরণাপন্ন  হলাম। বাবাজি জানালো সকাল ৮-০৬ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে একটা ট্রেন রয়েছে যেটা অম্বিকা কালনা স্টেশনে সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে আমাদের পৌঁছে দেবে।  ওই ট্রেনটাই  ধরবো বলে ঠিক করে নিলাম। পরের দিন ঠিক সময় ট্রেনটা ধরলাম এবং ঠিক সময় কালনায় পৌঁছেও গেলাম।





কালনা হলো বর্ধমান জেলার ভাগীরথীর তীরে একটা ছোট্ট শহর। বহু  প্রাচীন জনপদ।  পুণ্যসলিলা গঙ্গার (ভাগীরথী) পশ্চিমকূলে অবস্থিত  অম্বিকা কালনা প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু স্থানরূপেই প্রসিদ্ধ।  নগরটির প্রাচীনতা প্রায় হাজার তিনেক বছরের। অতীতে বর্ধমান রাজাদের গ্রীষ্মবাসের ঠিকানা এই নগরেই ছিল। পঞ্চদশ ও ষোড়শ  শতকে এই স্থানটি অম্বুয়া বা অম্বিকা  মুলুক নামে  পরিচিত ছিল। পৌরাণিক ব্যাখ্যায় দেখা যায় অম্বুমুনির পূজিতা দেবী ছিলেন  সিদ্ধেশ্বরী অম্বিকা। দেবী অম্বিকা জৈনদের দেবী  এই দেবী অম্বিকার নামানুসারে নগরটির নাম হয় অম্বিকা কালনা। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ লর্ড ক্যানিংহামের  মতে সপ্তম শতাব্দীর অম্বুয়া বা অম্বিকা তাম্রলিপ্ত শহরের অধীনে ছিল।  প্রাচীন কালনা নগর ছিল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। ১৮১২ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কালনার সংস্কৃত পন্ডিত তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয়কে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে নিয়োগের জন্য এই নগরে পদার্পন করেছিলেন  ১৭৭১ সালে বিখ্যাত  কবি কমলাকান্তের জন্ম হয়েছিল এই শহরে। পোড়ামাটির ভাস্কর্যে বাংলা বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। মধ্যযুগীয় স্থাপত্য ভাস্কর্য শিল্পের নানাবিধ নিদর্শন নিয়ে শহরটি আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।




ঐশ্বর্যপূর্ণ পোড়ামন্দির দ্বারা সমৃদ্ধ অম্বিকা কালনাকে আসলে "মন্দির নগরী" বলা হয়। এখানকার মন্দিরগুলো সাধারণত আটচালা শৈলীতে নির্মিত। এই প্রাচীন শহরে দেখার মতো অনেক ঐতিহাসিক মন্দির, বৃক্ষতল, ধর্মস্থান ও রাজবাড়ী রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় মন্দির হলো নব কৈলাশ মন্দির।  যাইহোক, আজ  আমি শুধু কালনার নব কৈলাশ মন্দির অর্থাৎ ১০৮ শিব মন্দিরের কথাই আপনাদের বলব। পরে কোনো একসময় কালনার অন্যান্য দ্রষ্টব্যস্থানগুলোর কথা জানাবো। মন্দিরে ঢোকার পূর্বে জুতা খুলে প্রবেশ করতে হলো।  ভিতরে ঢুকে অপূর্ব চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য ও নৈঃশব্দ আমায়  বিস্মিত করে দিলো। ভারতবর্ষের অন্যান্য মন্দিরের যেরকম কোলাহল শোনা যায়, এখানে সেরকম নেই।  পশ্চিমবঙ্গের তথা ভারতবর্ষের একমাত্র জেলা হল বর্ধমান,  যেখানে দু-দুটো ১০৮/৯ শিব মন্দির রয়েছে।  এই রকম ১০৮ বা  ১০৯ কোনো মন্দির সারা ভারতবর্ষের আর কোথাও নেই। বর্ধমানের নবাবহাটে একটি সুন্দর ১০৮ শিব মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরটি বর্ধমানের মহারানী বিষ্ণুকুমারী দেবী ১৭৮৮ সালে নির্মাণ করেছিলেন।  জেলার দ্বিতীয় ১০৮ শিব মন্দিরটির অবস্থান কালনা শহরে। কালনার মন্দিরটি বর্ধমানের মহারাজ তেজচন্দ্র ১৮০৯ সালে নির্মাণ করেছিলেন।  দুটি মন্দিরের আকৃতি ভিন্ন, নবাবহাটের  মন্দিরগুলো দুটি লম্বা সারিতে নির্মিত আর কালনার মন্দিরটি গোলাকৃতি আকৃতিতে নির্মিত।  দুটি মন্দিরকেই ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খুব সুন্দর করে সংস্কার করে দিয়েছে।  এই সংস্কারের ফলে পুরাতাত্ত্বিক কৌলিন্য কিছুটা হারিয়েছে বলে সবাই মতামত দিয়ে থাকে। উজ্জ্বল রঙের প্রলেপ থাকলেও এখানে ইতিহাসের গন্ধ পেতে কোনো অসুবিধা হয় না।

কালনার  ১০৯ টি মন্দিরের মধ্যে  ১০৮ টি মন্দির জ্যামিতিক বৃত্তে বিন্যস্ত, যা একটি স্থাপত্য বিস্ময়।  মন্দিরের কাঠামো দুটি সমকেন্দ্রিয় বৃত্তের একটি সমন্বয়। এটি একটি পুঁথির অক্ষ মালার প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে রয়েছে আটচালাবিশিষ্ট ১০৮টি শিব মন্দির আর একটি পঞ্চরত্ন মন্দির। সবকটা মন্দিরের  ছাদগুলো গম্ভূজাকৃতি।  দুটি বৃত্তের মধ্যে মন্দিরগুলি তৈরী।  বাইরের বৃত্তে ৭৪টি আর ভিতরের বৃত্তে ৩৪টি মন্দির রয়েছে।  মন্দিরগুলির দেওয়ালে পৌরাণিক কাহিনী চিত্রিত আছে। ১০৮টি মন্দিরের প্রতিটিতে একটি করে শিব লিঙ্গ বিরাজ করছে। ভিতরের বৃত্তের পরিধি প্রায় ৩৩৬ ফুট আর বাইরের বিত্তের পরিধি প্রায় ৭১০ ফুট। মন্দিরগুলো স্বল্প উঁচু ভিত্তিবেদীর উপর স্থাপিত ও পরস্পর সংলংগ্ন। মন্দিরগুলির উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট আর প্রস্থ প্রায় ৯.৫ ফুট।  ভিতরের শিব মন্দিরগুলোতে শুভ্র বর্ণের আর বাইরের বিত্তের শিব মন্দিরগুলোতে অর্ধেক কৃষ্ণবর্ণ ও অর্ধেক শুভ্র বর্ণের  শিব লিঙ্গ বিরাজ করছে। বৃত্ত দুটির ঠিক কেন্দ্রে একটা  বাঁধানো ইঁদারা রয়েছে।  এই ইঁদারার জল পূজার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  

১০৯ সংখ্যক মন্দিরটি  হলো পঞ্চরত্ন মন্দির। ৬ ফুট উচ্চ  ভিত্তিবেদীর উপর মন্দিরটি অবস্থিত।  মন্দিরটির আয়তন দৈর্ঘ্যে  ও প্রস্থে  প্রায় ১৩ ফুট করে, উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। বর্তমানে মন্দিরটি জল্পেশ্বর মন্দির নামে  অধিক পরিচিত।  

পুরো স্থাপত্যটি ঠিক জপমালার মতো। সমগ্র সৃষ্টিটি এক অপূর্ব শিল্পসত্তা ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনকে বহন করে চলেছে। 

বর্তমানে মন্দিরগুলির দায়িত্বে  রয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষন (আর্কিওলজিক্যাল  সার্ভে অফ ইন্ডিয়া)  মন্দিরে ঢোকার মুখে বিভাগের একটা নীল রঙের বোর্ডে এখানকার সম্পূর্ণ ইতিহাস লিখে রাখা রয়েছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ মন্দির চত্বরের মধ্যে একটা সুন্দর বাগান তৈরী করেছে।  এই বাগানের জন্য মন্দিরের সৌন্দর্য শতগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সমগ্র মন্দিরটিকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। দিনের থেকে রাতে মন্দিরগুলোকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। চুপচাপ শুধু ইতিহাসকে অনুভব করে গেলাম। প্রায় আড়াইশো বছরের এক পৌরাণিক ও বাংলার এক শিল্পকলার অপূর্ব নিদর্শন দেখতে দেখতে আমি ইতিহাসের পাতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখানে ইতিহাসের সাথে অধ্যাত্বিকতা মিলেমিশে এক হয়ে গেছে।  এ যেন ইতিহাস ও আধ্যাতিকতার এক মেলবন্ধন, এ যেন বাংলা তথা ভারতের সংষ্কৃতির এক  জীবন্ত সাক্ষী। 


 আমাদের বাংলায় ঘোরার স্থানের কোনো অভাব নেই, শুধু একটু সন্ধান করতে পারলেই হলো। কলকাতা থেকে কালনা ঘুরতে যাওয়ার জন্য রাত্রিবাসের কোনো প্রয়োজন নেই।  সকালে বেরিয়ে সবকিছু দেখে রাতে অনায়াসেই ফিরে আসা যায়। এখানে আসলে বাংলার টেরাকোটার অপরূপ সৃষ্টির সাথে আপনার পরিচয় হবে তার  জন্য অবশ্যই একবার ঘুরে যান। 




কিভাবে যাবেন : 


হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লোকাল ধরে অম্বিকা কালনা স্টেশনে এসে নামবেন।  স্টেশনের বাইরে টোটো বা রিক্সা ভাড়া করে মন্দির চত্বরের আসতে পারবেন।  



ছবি ও  লেখার স্বত্ত  : সুদীপ্ত মুখার্জী 
তারিখ : ১২-১২-২০১৯

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০

 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 



Tuesday, December 3, 2019

জীবন ও জীবিকা (দ্বিতীয় পর্ব )


জীবন  ও জীবিকা 
(দ্বিতীয় পর্ব )


ধীবর বা মৎস্যজীবী 


আমরা কাগজে বা খবরে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে  প্রায়ই  দেখতে পাই "দীঘার সমুদ্র ফুঁসছে, সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে জলোচ্ছাস দেখা দিচ্ছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। মৎসজীবীদের প্রতি সতর্কতা জারি করা হয়েছে"।  এই খবর দেখার পর আমরা দৌড়ে যাই জলোচ্ছাস দেখার জন্য, কখনো ভাবি না ঐসব অঞ্চলের মৎসজীবীদের কথা,  আবহাওয়ার দুর্নিপাকে পরে তাদের দুর্ভোগের কথা।

এরা ধীবর সম্প্রদায়। কথ্য ভাষায় আমরা জেলে বা মৎসজীবি বলে থাকি। মাছ ধরাই এদের জীবিকা, জাতিগত পেশা। তথ্যগতভাবে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে এরা  তফসিলি জাতি বা নিচু জাতি গোষ্ঠীভুক্ত। জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে  আমাদের দেশে ধর্মীয় প্রশ্নে বেশিরভাগই জেলেই হিন্দু ও  মুসলমান সম্প্রদায়ের হয়।  হিন্দু জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন শাখা শ্রেণী রয়েছে যেমন, কৈবর্ত্য, রাজবংশী, বেরুয়া, জিয়ানি, মালো, নদীয়াল ও আরো কয়েকটি। মাছ ধরার ইতিহাস বহু প্রাচীন। খ্রিষ্টপুর্ব ৩২১-৩০০ সালে  কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে মাছ ধরার বর্ননা রয়েছে। জেলেদের অস্তিত্বের ছবি মেলে হরপ্পা-মহেঞ্জদরোর খনন কার্যের সময়।  সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাসেও এদের কথা রয়েছে।

দুনিয়ায় জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে কোনো না কোনো ভাবে উপার্জন করে নিজের ও পোষ্যবর্গের প্রয়োজন মেটাতে হয়। আজকের পেশা হিসেবে আমি মৎস্য শিকারীদের বেছে নিয়েছি।  সাধারণভাবে যারা মাছকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই জেলে বা মৎস্যজীবী হিসেবে স্বীকৃত। আবহমান কাল থেকেই একশ্রেণী লোকের পেশা হল খাল-বিল, নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা। জেলে বা মৎস্যজীবী সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় মৎস্য আহরণ ও নিকটবর্তী পাইকারি হাটে বা বাজারে বিক্রি করে চলেছে। কেউ কেউ আবার আড়তদারদের কাছেও বিক্রি করে থাকে।  মৎসজীবীদের যেমন ইতিহাস রয়েছে তেমন রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাত্রা। মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে জেলেদের কাজের পরিধিও অনেকগুন বেড়ে গেছে। মাছের প্রজনন থেকে শুরু করে মাছ চাষের প্রায় প্রতিটি ধাপ এরাই পরিচালনা করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই পেশা আজ কিছুটা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ।  ঝড়, জলোচ্ছাস, জোয়ারের তীব্রতা, নদী-ভাঙ্গন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের বিপদ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। জীবিকার জন্য জীবনকে বাজি রেখে এদের চলতে হয়।  বিকল্প জীবিকা বা নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থাও সরকারিভাবে না থাকায় নতুন প্রজন্ম অনিচ্ছাকৃতভাবে এই পেশায় চলে আস্তে বাধ্য হচ্ছে। এদের বসবাস  সাধারণত নদী, খাল-বিল বা সমুদ্রের কাছাকাছি হয়ে থাকে।  তারা বেশিরভাগ সময় নদীতে বা খালে-বিলে মাছ ধরে থাকে। এক শ্রেণীর জেলে আবার গভীর সমুদ্রে মাছের আশায় পাড়ি জমায়। এদের জীবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারা যখন সমুদ্র পাড়ি দেয়  তখন তাদের পরিবার নিরাপদে ফেরা পর্যন্ত খুবই উদ্বিগ্নে  থাকে। বেশিরভাগ জেলেদেরই কোনো নিজস্ব নৌকো থাকে না।  মালিকের কাছ থেকে নৌকো  ভাড়া করে তারা সমুদ্র পাড়ি দেয়।  ঋণদাতার কাছ থেকে ঋণ  নিয়ে জাল কিনতে হয়। তার ফলে মহাজনের কাছে ঋণবদ্ধও  হয়ে পড়ে।

বেশ কিছু মৎসজীবি সমুদ্র উপকূলের কাছে একসাথে একটি ছোট পাড়ায় বসবাস করে, এই পাড়াটিকে সবাই জেলেপাড়া বলে অভিহিত করে থাকে। জেলেপাড়ায় সূর্যের উদয় ও অস্তের সঙ্গে দিন-রাতের সম্পর্ক ততটা নেই, যতটা আছে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সঙ্গে।  রাতদুপুরে জোয়ার এলে জেলেপাড়ায় তখন দিনের মতোই কর্মব্যস্ততা পরিলক্ষিত হয়। সমুদ্রের উত্তাল, জলের রং, মাছের চরিত্র অনুযায়ী জাল ফেলতে হয়। জাল বিভিন্ন রকমের হয়। সমুদ্রের উপযোগী জাল হলো সাবাড় জাল। এই প্রকার জাল বিশাল আয়তনের হয়। শুধু জালের ওপর মাছ ধরা নির্ভর করে না, মাছ ধরার কৌশলও অনেকাংশে নির্ভর করে।  ট্রলারে বরফ বোঝাই করে তারা মাছ ধরার জন্য সাত-আট  দিনের জন্য সমুদ্রে পাড়ি দেয়। এই কদিনের খাবারও  সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। গ্রীষ্ম বা শীতের সময়ের চেয়ে বর্ষার সময় বেশি মাছ উৎপন্ন হয়।  সেই সময় জেলেরাও  বেশি পরিমাণে মাছ ধরতে পারে, তার ফলে তাদের আয়ের পরিমাণ অনেকটা বাড়ে। অবসর সময় নতুন জাল তৈরী ও পুরোনো জাল মেরামতি করেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।


সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে মাছ ধরা ভীষণই বিপদজনক।  এখানে থাকে জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ।  সুন্দরবনের বিভিন্ন খাড়িতে মাছ ধরতে গিয়ে বহু মৎসজীবি বাঘের হামলায় মারা যান।  এই অঞ্চলের বহু মহিলা তাদের স্বামীকে বাঘের হামলায় হারিয়েছেন। হিঙ্গলগঞ্জ, গোসাবা, কুলতলী, পাথরপ্রতিমা এবং বাসন্তী ব্লকের গ্রামবাসীরা রোজকার জীবন ও জীবিকার জন্য জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল।  তাদের জন্য এইসব অঞ্চল সংলগ্ন জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতি খুব বড় সন্ত্রাসের কারণ। এইসব অঞ্চলে গেলে সর্বত্রই এক গল্প শোনা যায়, বেশ কিছু পরিবার তাদের পুরুষ সদস্যদের  বাঘের আক্রমণে খুইয়েছেন। খুঁজে দেখলে এখানে বিধবা পাড়াও খুঁজে পাওয়া যাবে।  অধিকাংশ পরিবারেরই মহিলাদের জীবন যন্ত্রনা ও দারিদ্রে ভরা।


 পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে নৌ যাত্রার প্রাক্কালে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজার্চ্চনা করে থাকে  সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা বনবিবির পূজা করে থাকে।  মুসলমান মৎসজীবীরা আবার গাজীর আরাধনা করে।  ওদের প্রবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে।

জীবনকে বাজি রেখে রক্ত, ঘাম, উত্তেজনা আর মেহনতের দ্বারা জেলেপাড়ার মানুষদের অন্নসংস্থান হয়। সত্যই এদের জীবন খুবই সংগ্রামের জীবন।


ছবি ও  লেখার স্বত্ত  : সুদীপ্ত মুখার্জী 
তারিখ : ০৩-১২-২০১৯

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।