Wednesday, December 8, 2021

পেঁচার দেশ নতুনগ্রাম>P

পেঁচার দেশ নতুনগ্রাম 

- সুদীপ্ত মুখার্জী 





পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার একটি ছোট্ট স্টেশন হল অগ্রদ্বীপ। অগ্রদ্বীপ গ্রামটি খুবই প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম।  ব্যান্ডেল কাটোয়া লাইনের স্টেশন হল এই অগ্রদ্বীপ। এই স্টেশনের দক্ষিণ দিকে কিছুটা দূরে আর একটি গ্রাম রয়েছে যার নাম 'নতুনগ্রাম'। এটি খুবই ছোট্ট একটা গ্রাম। গ্রামটি ছোট হলেও শিল্পসুষমায় ভরপুর। বাংলার এক ঐতিহ্যের পীঠস্থান। বাংলার লোকশিল্পের জগতে গ্রামটির যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। বঙ্গীয় ঘরানার কাঠের পুতুলের জন্য গ্রামটি বিখ্যাত। বৈষ্ণব প্রভাবিত অগ্রদ্বীপ গ্রামের সন্নিহিত হওয়ার জন্য এখানকার শিল্পের মধ্যে একটা বৈষ্ণবীয় ধারার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।   




নতুনগ্রাম হল কাঠ খোদাই শিল্পের আঁতুরঘর। গ্রামটির একেকটা বাড়ি শিল্প সৃষ্টির আকর। আমরা বাংলার বিভিন্ন স্থানে মেলায় কাঠের তৈরী বিভিন্ন পুতুল দেখি  তার বেশিরভাগই এই  গ্রামে তৈরী  হয়। নতুনগ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবার বাস করে। প্রায় প্রত্যেকটা পরিবারেই কাঠ খোদাইয়ের কাজ হয়।এখানকার শিল্পী স্বর্গীয় শম্ভুনাথ ভাস্কর মহাশয় ১৯৬৬ সালে তদকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। তারপর থেকেই এখানকার শিল্পের কদর বহুগুন বেড়ে যায়।  




 কাঠ খোদাই করে এখানকার শিল্পীরা বিভিন্ন পুতুল তৈরী করে থাকে। বিস্ফারিত চক্ষুর পেঁচা, রাজা-রানী, হাত তোলা গৌড়-নিতাই এই  তিন ধরণের পুতুল এখানকার ঐতিহ্য। এছাড়া কাঠের পেঁচা দিয়ে বসার টুল, কাঠের টেবিলের উপর পেঁচা আঁকা, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, পেঁচার আদলে তৈরী রাজা-রানী। এছাড়া  গৃহসজ্জার সম্ভার  হিসেবে কাঠের তৈরী  বিভিন্ন পুতুল ও দেব-দেবীর মূর্তিও তারা তৈরী করে। আয়নার ফ্রেম, কলমদানি, মোবাইল স্ট্যান্ড, ইজিচেয়ার, টেবিল ল্যাম্পও তাঁরা তৈরী করে। এখানকার কাঠ খোদাই করে নির্মিত বিভিন্ন মাপের পেঁচা জগৎ বিখ্যাত। এখানকার তৈরী প্রত্যেকটা জিনিসেই এখানকার শিল্পীরা একটা নিজস্ব শিল্পরীতির ছাপ রাখে। 
 

নতুনগ্রামের সূত্রধর জাতিরা প্রথম দিকে পাথর খোদাইয়ের কাজ করতেন। বর্ধমান রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পাথর খোদাই কাজের একসময় এই অঞ্চলে  রমরমা ছিল।  বর্ধমান রাজার পতনের পর এখানকার পাথর খোদাইয়ের কাজ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখানকার কারিগরদের অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাব হতে থাকে।   সেই সময় এখানকার শিল্পীরা এই কাজ ছেড়ে দারুশিল্প শুরু করে। 

 কোনো শিল্প গড়ে ওঠার পিছনে কিছু ভৌগোলিক, সামাজিক বা ধর্মীয় পটভূমি থাকে। এইসব পটভূমির জন্যই সেখানকার শিল্পের খ্যাতি একচেটিয়া হয়ে ওঠে। নতুনগ্রামের সূত্রধর জাতির প্রথমদিকে পাথর খোদাইয়ের কাজ করতেন। বর্ধমান রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পাথর খোদাই কাজের একসময়  রমরমা ছিল। বর্ধমান রাজার পতনের পর এখানকার পাথর খোদাইয়ের কাজ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখানকার কারিগরদের অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাব হতে থাকে।   সেই সময় এখানকার শিল্পীরা এই কাজ ছেড়ে দারুশিল্প শুরু করে। 

নতুনগ্রামের নানা আকারের কাঠের তৈরী পেঁচা বিশ্ববন্দিত। এখানকার কাঠ খোদাই করা পেঁচার উৎস সন্ধান করলে দেখা যায় এইসব অঞ্চলগুলো পূর্বে কৃষিপ্রধান ছিল। এখানকার শিল্পীরা প্রথমদিকে সাধারণত কাঠ দিয়ে গরুর গাড়ির চাকা বানাতো। এইসব অঞ্চলে পূর্বে  বছরে বার তিনেক লক্ষ্মীপূজা হতো। পৌষ, চৈত্র ও ভাদ্র মাসে লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হত। দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। পূজার  বিধান অনুসারে এক সের ধানের চারদিকে  চারটি পেঁচা রাখার নিয়ম ছিল। সেইসব পেঁচাগুলো পুরুষ শিল্পীরা নিজেরা বানিয়ে দিতো। বাড়িরই বাচ্চাদের আবদারে তারা কাঠ খোদাই করে তাদের বিভিন্ন পুতুল বানিয়ে দিতো।  পরবর্তীকালে তাদের সেইসব শিল্পকলা ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন স্থানে। সময়ের তাগিদে চাহিদা বাড়ে। মানুষের রুচি বদলায়। তাই শুধু পুতুলেই আজ আর আটকে নেই নতুনগ্রাম। সেই কারণে উঠে আসে রাজা-রানী, গৌড় নিতাই, কৃষ্ণ ইত্যাদি মূর্তির  ভাবনা। বর্ধমান রাজ্যের কৃপাধন্য হয়ে পরে তাঁরা রাজা-রানীর মূর্তি নির্মাণ করে। এখানকার তৈরী প্রতিটা জিনিসেই রয়েছে শিল্পের সুষমা।এখানকার পুতুলগুলো রঙিন হওয়ার ফলে বেশ মনোগ্রাহী হয়।  বর্তমানে এখানকার এই শিল্প ধরে রাখার জন্য বেশ কয়েকবছর ধরে সরকার ও বেশ কয়েকটা সংস্থা বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করছে। সেইসব মেলায় এখানকার পুতুলের একটা আলাদা চাহিদা রয়েছে।শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নয়  ভারত সরকার ও ইউনেস্কো থেকেও এখানকার শিল্পীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। 

বিংশ শতাব্দীর এক গোড়ার দিকে বাজারে প্লাস্টিক নির্মিত বিভিন্ন পুতুল চলে আসে।  প্লাস্টিক পুতুলের সম্ভার যত বাজারজাত হয়েছে তত এখানকার কাঠের খোদাই করা পুতুলের কদর কিছুটা হলেও কমেছে। এখানকার লোকশিল্পীদের ইতিহাস কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। ১৯৫৫ সাল নাগাদ এখানকার কাঠ খোদাই শিল্প ভারত সরকারের নজরে আসে।  

এখানকার শিল্পীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও শিল্প গরিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।  আধুনিকতার কাছে তাঁরা হয়তো কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ছে তবুও তাঁরা তাঁদের শিল্পকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিচ্ছে। তাঁদের নিখুঁত হাতের স্পর্শে  এখানকার শিল্প কর্ম আজ বিশ্বের কাছে বাংলার ম্যান ও সম্মান অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। 


 

কিভাবে এখানে আসবেন :


নিজের গাড়িতে আসতে পারেন। এছাড়া হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লোকাল ধরে অগ্রদ্বীপ স্টেশনে নেমে অটো বা টোটো ধরে খুব সহজেই আসতে  পারবেন। 


তারিখ :০৯-১২-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 






Monday, November 8, 2021

কালীপুজায় চেতলা অভিযান >P

কালীপুজায় চেতলা অভিযান 


- সুদীপ্ত মুখার্জী 



দক্ষিণ কলকাতার আদি গঙ্গার দুধারে দুটি অঞ্চল রয়েছে।  পূর্বধারে রয়েছে কালীঘাট  আর পশ্চিম ধারে রয়েছে চেতলা নামক একটা জনপদ। কলকাতার অন্য অংশের মতো চেতলা অঞ্চলটিও বেশ ঘন বসতিপূর্ণ।  

কালিপূজায় মহানগরীর দুটো অঞ্চল বরাবরই একে অপরকে টেক্কা দিতো। অঞ্চল দুটি হল মধ্য কলকাতার আমহার্টস স্ট্রীট ও দক্ষিণ কলকাতার চেতলা। আমহার্টস স্ট্রিটে পরপর বেশ কয়েকটা বড় বড় পূজা হয়ে থাকে। বড় মণ্ডপ, বড় প্রতিমা এখানকার বৈশিষ্ট্য। এখানকার পূজায় লাইটিংয়ের খেলাও বিশেষত্ব। এখানে কোনো দিন কোনো থিম দেখা যায় না। সাবেকি প্রতিমায় দেবীর আরাধনা করা হয়। অঞ্চলের পূজাগুলির মধ্যে ফাটা কেষ্টর পূজা ও সৌমেন মিত্রের পূজা খুবই বিখ্যাত। এককালে এখানে জনসমুদ্র দেখা যেত।
 
চেতলার পূজা মানেই বর্ণময়। চেতলায় বরাবরই দেখা যায় দেবী কালীর ভিন্ন ভিন্ন রূপ। এখানে শুধু শাস্ত্রমতে বর্ণিত রূপ নয়, এই অঞ্চলটিতে বাইরে থেকে নানা রকম রূপের দেবীকে  আমদানি করা হয়। এখানে কোনো পূজায় সেরকম বড় প্যান্ডেল বা বড় প্রতিমা সাধারণত দেখা যায় না।  লাইটের খেলাও খুব একটা দেখা যায় না।  এখানে কোথাও দশমহাবিদ্যা, কোথাও চামুন্ডা কালী আবার কোথাও দেখা যায় হাজার হাত কালীর। এই বৈচিত্রই চেতলা অঞ্চলের কালীপূজাকে দর্শনীয় করে তুলেছে। এখানেও এককালে জনসমুদ্র দেখা যেত। শুধু চেতলা অঞ্চলটি ঘুরলেই দেবীর সব রকমের রূপ দর্শন হয়ে যায়। 

আজ কালীপূজার দিন। এই দিন সকালে আমার মায়ের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দর্শনের উদ্দেশ্যে চেতলা অভিযান।  এখানে আমি আপনাদের দেখার জন্য মায়ের বিভিন্ন রূপের ছবি দেবো।  


দশ মুন্ড কালী 




রাবনের মতো দশ মুন্ডের কালী প্রতিমায় এখানে পূজা হয়। বলা হয় দশমুণ্ড কালী। দেবী অষ্টভুজা। উচ্চতায় প্রায় পনেরো ফুট। মহাদেবের উপর দেবী দন্ডায়মান। এই পূজাটি দীর্ঘ ৮০ বছর ধরে করা হচ্ছে। পূজাটি পরিচালনা করে চেতলা রূপান্তর ক্লাব। পূজাটি চেতলার শংকর ঘোষ রোডের সি.আই. টি পার্কে করা হয়।  এখানে তান্ত্রিক মতে পূজা করা হয়। দেবীকে খিচুড়ি, পাঁচরকম ভাজা, পায়েস, বিভিন্ন ফল ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে নিবেদন করা  হযে থাকে। আখ, চালকুমড়া, শশা ও কলা বলি দেওয়া হয়। 


 শ্বেত কালী 




দেবী এখানে শ্বেত শুভ্র অর্থাৎ দেবীর গাত্রবর্ণ শ্বেত। পূজাটি পরিচালনা করে আলিপুর এ.বি.এস. স্পোর্টিং ক্লাব।  এবছর এখানে ৪৭ তম বর্ষের পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেবীমূর্তি মাহেশ্বরী রুপি। দেবী চতুর্ভূজা। দেবীর এক হাতে রয়েছে ত্রিশূল, এক হাতে ডুগডুগি,  এক হাতে চাঁদমালা, ও অন্য হাতে থাকে মাটির নরমুণ্ড। দেবীর বিশেষত্ব হলো দেবীর পাদদেশে শিয়ালের বদলে থাকে শ্বেত ষাঁড়।  খিচুড়ি, লুচি, তরকারি, পাঁচরকম ভাজা, বিভিন্ন ফল ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে মাকে নিবেদন করা হয়। এখানে কোনো প্রকার আমিষ ভোগ দেওয়ার প্রথা নেই।  


সিংহবাহিনী কালী 



দেবী সিংহবাহিনী কালীকে পূজা করে থাকে আলিপুর শীতল স্মৃতি সংঘ। এবছর তাদের পূজাটি ৫৩তম বর্ষে পদার্প করলো।  দেবীকে পোলাও, খিচুড়ি, পাঁচরকম ভাজা, মাছ, মাংস, চাটনি, পায়েস, ফল মিষ্টি ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়।  এখানে বলি দেওয়ার কোন নিয়ম নেই।  এখানকার মূর্তিটি রাজপুরের  বিপদতারিনী মায়ের আদলে তৈরী করা হয়।  প্রতিমাটির উচ্চতা প্রায় ১২ ফুটের মত। দেবী সিংহের উপর দন্ডায়মান।  দেবীর পাশে ত্রিশূল হাতে মহাদেব বসে রয়েছে।


শিব কালী 




শিবকালী হলেন দেবাদিদেব মহাদেব ও দেবী কালীর সম্মিলিত রূপ। শিবকালী পূজাটি পরিচালনা করে চেতলা বালক সংঘ। পূজাটি এবছর ৪১তম বর্ষে পদার্পন করলো। এখানে দেবীর অর্ধেক অংশ দেবাদিদেব মহাদেব আর বাকি অর্ধেক অংশে দেবী কালী। দেবী এখানে পদ্মের উপর দন্ডায়মান। দেবীর নীচে বাহন হিসেবে শেয়ালকে দেখা যাচ্ছে। দেবী চতুর্ভূজা। দেবীর এক হাতে থাকে ত্রিশূল, এক হাতে খাঁড়া, এক হাতে চাঁদমালা, আর এক হাতে থাকে নরমুণ্ড। মাকে এখানে খিচুড়ি, পায়েস, আলুরদম, ফল ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। এখানে কোনোরূপ বলি দেওয়া হয়না।  কোনো এক ভক্তের আঙ্গুল কেটে সামান্য রক্ত দেবীপূজায় মাকে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। 

চামুন্ডা কালী 




আমরা জানি দশমহাবিদ্যার প্রথম ও আদি রূপ হল কালী। রামায়ণে আমরা দেখেছি বশিষ্ঠ মুণি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন দক্ষিণাকালী রুপী কালীকে আরাধনা করে।  আদ্যাশক্তি মহামায়ার আটটি রূপ - দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, কৃষ্ণকালী, মহাকালী, গুহ্যকালী, ভদ্রকালী, শ্মশানকালী এবং চামুণ্ডাকালী।  এখানে দেবী কোরালবদনা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা, নরমুণ্ডমালা বিভূষিতা। চেতলা দুর্গাপুর  সেতুর পাশে রয়েছে আলিপুর আরাধনা সমিতি। এই সমিতির তত্ত্ববধানে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় চামুন্ডা কালীর পূজা। ষোলো ফুট উচ্চতার দেবী চামুন্ডার পাশে থাকে দশ ফুট উচ্চতার শিব ঠাকুর। দেবীর দুপাশে থাকে ভয়াল চেহারার ডাকিনি-যোগিনী ও কঙ্কাল। মণ্ডপে লোহার ট্রলিতে দেবীমূর্তি বিরাজিত। বিসর্জনের সময় এই ট্রলিকে ঠেলে বাবুঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। দেবী বিসর্জনে পর ট্রলিটিকে ফেরত নিয়ে আসা হয় এবং সেটাকে যত্ন সহকারে রেখে দেওয়া হয়। এই ট্রলিটিকে সারাবছর দেবীর কাঠামো হিসেবে পূজা করা হয়। কাঠামোটিকেই দেবী বলে গণ্য করা হয়। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার কাঠামোকে পূজা করা হয়।  এছাড়া প্রত্যেক অমাবস্যায় কাঠামোকে ভোগ দেওয়া হয়। এবছর ৭৪তম বর্ষের পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খিচুড়ি, পায়েস, পাঁচরকম ভাজা, আলুরদম, পোলাও, সুজি, পাঁচরকম মিষ্টি, চাটনি দেবীকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। এখানে কোনো প্রকার আমিষ ভোগ  দেবীকে নিবেদন করা হয় না।  বলি দেওয়া হয় না।  বৈষ্ণব  মতে পূজা করা হয়। পুজোর দেবীর পূজার সময় দেবীকে মানব দেহের রক্ত ও কারণ সুধা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।  রক্ত ছাড়া চামুন্ডা কালির পূজা হয় না। 


দুর্গাকালী 




দুর্গাকালী হলেন দেবী দূর্গা ও দেবী কালীর  সম্মিলিত রূপ। পূজাটি পরিচালনা করে চেতলা সৎ সংঘ  ক্লাব। এবছর ৩০তম পূজাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ক্লাবটিতে পূর্বে শ্যামা মায়ের, তারপর অজন্তা কালীর  আরাধনা করা হত।  এখন দুর্গাকালীর আরাধনা করা হয়। এখানকার ভোগ সম্পূর্ণ নিরামিষ।  খিচুড়ি, পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, আলুরদম, শাকের ঘন্ট, পায়েস, ফল-মিষ্টি দেওয়া হয়।  চালকুমড়া, আখ, শশা, কলা, বাতাবি লেবু বলি দেওয়া হয়।  প্রথমে ১০৮টি পদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করা হয়, তারপর দেবী কালীর পূজা করা হয়।  
 

হাজার হাত কালী 



হাজার হাত কালীর পূজাটি পরিচালনা করে চেতলা ফিজিক্যাল কালচার এসোসিয়েশন। হাওড়ার শিবপুরের হাজার হাত কালীর অনুকরণে এখানকার মূর্তিটি রূপায়িত হয়। ক্লাবের এক সদস্য জানালেন  আমরা সব সময় মানুষের দুঃখ কষ্টে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। আমরা  আমাদের সদস্যদের হাজার হাজার হাত মানব সেবায় নিয়োজিত করতে থাকি তাই আমাদের এই ধরণের থিম। হাজার হাত নিয়ে দেবীর শান্ত রূপ। এবছর পূজাটি ৮৩তম বর্ষে পদার্পন করলো। দেবীকে খিচুড়ি, পোলাও,  লুচি, পাঁচরকম ভাজা, হালুয়া, লাবড়া, চাটনি, পায়েস ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়।  আখ, চালকুমড়া, বলি দেওয়া হয়। এখানে পরম্পরা বজায় রেখে  পূজা করা হয়।  ভোগ বা দেবীর অন্য কাজে  পুরুষরাই সব কাজ করে থাকে কোনো মহিলাকে এইসব কাজে অংশ নিতে দেওয়া হয় না।  মায়ের এক হাতে ত্রিশূল আর এক হাতে খাঁড়া থাকে। দেবীর গাত্রবর্ণ সবুজ। দেবী এখানে শিবের উপর দন্ডায়মান নয়, বাঘ চাল পরিহিত মহাদেবাদিদেব মহাদেব দেবীর পাশে বসে রয়েছে। এছাড়া এখানে দেবীর বাহন হিসেবে একটি সিংহকে দেখা যায়।   


লক্ষ্মী কালী  



লক্ষ্মীকালী হলেন দেবী লক্ষ্মী ও দেবী কালীর সম্মিলিত রূপ। লক্ষ্মীকালী পূজাটি পরিচালনা করে শাস্ত্রী রয়েল ক্লাব। এবছর পূজাটি ২৩তম বর্ষে পদার্পন করলো। এখানে দেবীকে ভোগ হিসেবে খিচুড়ি, আলুরদম, পায়েস, নানারকম ফল, বিভিন্ন মিষ্টি দেওয়া হয়।  সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোগ মাকে  নিবেদন করা হয়।  এখানে কোনোরূপ বলি দেওয়া হয় না।  দেবী পদ্মের উপর দন্ডায়মান। দেবীর নীচে একটি শঙ্খের উপর দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা থাকে। দেবীর পাশে বাঘচাল পরিহিত দেবাদিদেব মহাদেব থাকেন। দেবী চতুর্ভূজা। 


চন্ড ঘন্টা কালী 



চেতলা হাট রোডের চন্ড ঘন্টা কালী পূজাটি পরিচালনা করে গীতাঞ্জলি স্পোর্টিং ক্লাব। এবছর তাদের পূজাটি ৪১তম বর্ষে পদার্পন করলো। দেবী চতুর্ভূজা। দেবীর মাথার দুপাশে দুটি করে মোট চারটি নরমুণ্ড রয়েছে। দেবী বাঘছাল পরিহিত অবস্থায়  মহাদেবের উপর দন্ডায়মান। এছাড়া দেবীর পাশে আর একটি মহাদেবের মূর্তি বিরাজিত। 


কৃষ্ণ কালী 



কৃষ্ণকালী হলেন বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ ও দেবী কালীর সম্মিলিত রূপ। চেতলা হাট রোডে অবস্থিত চেতলা সংঘ ক্লাবটি ১৯৬৬ সালে স্থাপিত হয়। এই ক্লাবটি প্রতিবছর নিয়ম করে এখানে কৃষ্ণ কালীর আরাধনা করে থাকে। দেবী এখানে চতুর্ভূজা।  দেবীর এক হাতে থাকে খাঁড়া, এক হাতে চাঁদমালা আর বাকি দুই হাতে দেখা যায় বাঁশি।  দেবীর পাশে দেবী লক্ষ্মী করজোড় অবস্থায় দন্ডায়মান। দেবীকে সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। এখানে কোনো প্রকার আমিষ ভোগ দেওয়ার নিয়ম নেই।  এখানে চালকুমড়ো, আগ  বলি দেওয়া হয়। 

আদ্যামা 


 
দেবী আদ্যমা পূজাটি পরিচালনা করে চেতলা বজরঙ বালক সমিতি। এবার পূজাটি ৫০ বছরে পড়ল। দেবীর উপরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণ। দেবীর নীচে রয়েছে রামপ্রসাদ। দেবীকে সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়।  এখানে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়।  


দেবী কিরীটেশ্বরী 



কিরীটেশ্বর কালী পূজাটি পরিচালন করে চেতলা প্রণব সংঘ।  এবছর পূজাটি ২০তম বর্ষে পদার্পন করলো। দেবীকে ভোগ হিসেবে খিচুড়ি, পাঁচরকম ভাজা, লাবড়ার তরকারি, পায়েস ইত্যাদি দেওয়া হয়।  চালকুমড়া, আখ, আমাদা বলি দেওয়া হয়। এই ক্লাবটি পূর্বে শ্যামা পূজা করতো। তারপর ৫১ পিঠের দেবী কিরীটেশ্বরকে দেখে ও মুর্শিদাবাদের ৫১ পীঠ কিরীটেশ্বরের প্রধান পুরোহিত শ্রী রক্ষাকর চক্রবর্তী মহাশয়ের আদেশ অনুযায়ী এখানকার শ্যামা পূজার পরিবর্তে দেবী কিরীটেশ্বররীর আরাধনা শুরু হয়। 

ছিন্নমস্তা



 ছিন্নমস্তা রুপী দেবী কালীর  আরাধনা করে থাকে চেতলা অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য পূজা কমিটি।  পূজাটি পরিচালনা করে চেতলা ৮৬ পল্লী ক্লাব। এখানকার প্রতিমা প্রায় পনেরো ফুট উচ্চতার। প্রতিমার গাত্রবর্ণ টকটকে  লাল এবং মুন্ডহীন। নিজের কাটা মুন্ড নিজের হাতেই ধরা।  দেবীর ডান হাতে ধরা থাকে খাঁড়া। গলা থেকে ছিটকে আসা তিনটে রক্তের ধারা দেবীর কাটা মুন্ড  ও ডাকিনি  যোগিনী পান করে। মা দাঁড়িয়ে থাকেন কাম রতি  অর্থাৎ চিৎ ও শুয়ে থাকার নারী পুরুষ মূর্তির উপর।মূর্তি দুটি পদ্মের উপর থাকে।  সুদীর্ঘকাল ধরে এখানে মায়ের এই রূপের পূজা করা হয়। বহুকাল ধরে এখানে পূজাটি করার অন্যতম কারণ এখানকার ক্লাবের সদস্য ও পল্লীবাসীদের বিশ্বাস। ছিন্নমস্তা রুপী দেবীর পূজাটি এখানে শুরু হওয়ার পর অনেক ক্লাব সদস্যের চাকরি হয়েছে আবার কারো ব্যবসায় শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। এছাড়া ক্লাব সদস্য ও পল্লীবাসীদের অনেকের অনেক রকম উপকার হয়েছে বলে শোনা যায়।  সাধারণত ছিন্নমস্তা হলেন দশমহাবিদ্যার এক রূপ। দেবীকে এই রূপে পূজা করতে হলে যেমন বহুরকম নিয়ম পালন করতে হয় তেমন বহুরকম বিধিনিষেধও রয়েছে। পূজার সময় বাইরের কারোকে মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়া হয় না।  উপোস করা  থাকলে তবে তাকে পূজার সময় মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়া হয়। তান্ত্রিক ছাড়া সাধারণ কোনো পুরোহিত এই পূজা করতে পারেন না।  প্রতি বছর তারাপীঠ থেকে কোনো তান্ত্রিক এসে এখানকার পূজাটি করে থাকে। এই পূজায় পাঁঠা বলির নিয়ম রয়েছে। পাঁঠা বলির সাথে চালকুমড়া বলি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দেবীকে ভোগ হিসেবে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, পায়েস, লুচি, মালপোয়া, হালুয়া, মাছ ভাজা, মাংস দেওয়া হয়। 


জহুরা কালী 





চেতলা ব্রীজের ঠিক পাশে দেবী জহুরার আরাধনা করা হয়ে থাকে। পূজাটি পরিচালন করে চেতলা ইয়ং ফ্রেন্ডস। দেবী কালির অন্যান্য রূপে সাথে এই রূপে  নেই। এখানে দেবীরূপ বীভৎস। রক্তবর্ণ মুখ। এবছর পূজাটি ৪৮তম বর্ষে পদার্পন করলো। দেবীকে খিচুড়ি, পায়েস, পাঁচরকম ভাজা, লাবড়ার তরকারি, চাটনি ইত্যাদি দেওয়া হয়।  এখানে কোনো রকম আমিষ ভোগ দেওয়ার নিয়ম নেই।  বলি দেওয়া হয় চালকুমড়োকে। 


লেখা ও ছবির স্বত্ব সম্পূর্ণ লেখকের।

তারিখ :০৯-১১-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Friday, November 5, 2021

কাঁকুলিয়া কালীবাড়ি>P

কাঁকুলিয়া কালীবাড়ি

-সুদীপ্ত মুখার্জী 








বালিগঞ্জ অঞ্চলটি খুবই বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। ১৮ শতকে এই অঞ্চলটিতে ইউরোপীয়দের বাগান বাড়ি ছিল। শহরতলির রেলপথের দক্ষিণ শাখা চালু হওয়ার  পর যখন বালিগঞ্জে  একটা রেলওয়ে স্টেশন তৈরী হয় তখন থেকে এই অঞ্চলটিতে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের বসবাস শুরু হয়। এই বালিগঞ্জ অঞ্চলের  মধ্যেই পরবর্তীকালে কাঁকুলিয়া নামক আর একটা  অঞ্চল গড়ে ওঠে। এই অঞ্চলটিও মধ্যবিত্তের  পাড়া  হিসেবে পরিচিত হয়।  



এই কাঁকুলিয়া অঞ্চলে রয়েছে একটা ভগ্নপ্রায় মন্দির।  আনন্দময়ী কালী মন্দির। যেখানে বহুবছর ধরে  দেবী কালীর  আরাধনা করা হয়ে চলেছে। দেখতে দেখতে তা আজ প্রায় ৮০ বছর  অতিক্রম করে গেছে। 


যোগীন্দ্রচন্দ্র দাশগুপ্ত মহাশয়ের আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলায়। ১৯৩২ সাল নাগাদ তিনি ওখানে দেবী আনন্দময়ীর আরাধনা শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মণিমোহন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এই দাশগুপ্ত পরিবারের কুলগুরু। মণি বাবু ছিলেন দেবী আনন্দময়ীর নিত্য সেবক। ওপার বাংলায় যখন হিন্দু-মুসলমানের সংঘর্ষ শুরু হয়। ভারতে তখন স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় দাশগুপ্ত পরিবার তাঁদের কুলদেবী  আনন্দময়ীকে নিজ গৃহ রাখতে ভরসা পাচ্ছিলেন না। তাঁরা তাঁদের কুলগুরু শ্রী মণিমোহন বাবুকে অনুরোধ করেন যে দেবীমূর্তিটিকে পদ্মার জলে বিসর্জন দিয়ে দিতে। বিসর্জন পর্বের পর তিনি যেন ওই স্থান ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। মণিমোহন বাবু কিন্তু যোগীন্দ্রচন্দ্র দাশগুপ্তর কথায় রাজি হলেন না।  তিনি বললেন যদি এপার  বাংলা থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতেই  হয় তাহলে তিনি দেবী আনন্দময়ীকে সাথে করে নিয়ে ফিরে যাবেন।  এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি মা আনন্দময়ীকে সাথে করে পশ্চিমবাংলায়  চলে আসেন। তিনি তাঁর দেশের বাড়ি বর্ধমানে প্রথমে গেলেন। তারপর তিনি দেবী আনন্দময়ীকে সাথে করে নিয়ে কলকাতায় এসে কাঁকুলিয়াতে আস্তানা গড়লেন। সেই সময় কাঁকুলিয়া অঞ্চলটি একটি ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বারা সরক্ষিত ছিল।  ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা প্রথমে দেবী আনন্দময়ীর জন্য একটি স্থান নির্দিষ্ট করে একটি কাঁচা ঘর নির্মাণ করে দিলেন। এই কাঁচা ঘরে মা আনন্দময়ী প্রতিষ্ঠিত হলেন। সালটা ছিল ১৯৪৮।তা আজ দেখতে দেখতে প্রায় ৮৪-৮৫ বছর হতে চললো। পরবর্তী সময় দাশগুপ্ত পরিবারের এক দৌহিত্র শ্রী অনিল দত্ত মহাশয় বর্তমান মন্দিরটিকে নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। পরে তিনি মন্দিরের ঠিক সামনে একটি নাটমন্দির ও পাশে একটি শিব মন্দির তৈরী করে দিয়েছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ সাল নাগাদ পুরো নাটমন্দিরটি ও শিব মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায় তখন এই অঞ্চলের অধিবাসী শ্রী রঘুনাথ মুখার্জী, শ্রী হীরেন চন্দ্র ও আরো কয়েকজন নতুন করে নাটমন্দির ও শিমন্দিরটিকে পুনরায়  তৈরী করে দেন। শুধু নাটমন্দির বা শিব মন্দির নয় তার সাথে তারা মন্দিরের পিছনে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বসবাসের উপযুক্ত ঘরও  তৈরী করে দিয়েছিলেন। 




কষ্টিপাথরের বিগ্রহটি উচ্চতায় ২২ ফুট। দেবী এখানে চতুর্ভূজা ও দেবাদিদেব মহাদেবের উপর দন্ডায়মান।  আষাঢ় মাসের অমাবস্যার দিন এই মন্দিরটিতে দেবী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  সেই জন্য ওই দিন এখানে প্রতিবছর নিয়ম করে বাৎসরিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা, চক্ষুদান ও ঘটস্থাপন সম্পন্ন হয়। প্রতিদিন নিত্যপূজা করা হয়ে থাকে। কালীপূজার দিন বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর কালীপূজার পূর্বে দেবীর অঙ্গরাগ সম্পন্ন হয়। এইদিন সকালে দেবীকে রাজবেশ পরানো হয়।  কালীপূজার দিন নিত্যপূজা অনুষ্ঠিত হলেও আমবস্যার সময় বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। 

এই বিশেষ দিনটিতে দেবীকে খিচুড়ি, সাদা ভাত, লুচি, তরকারি, পায়েস, চাটনি এবং নানারকম ফল ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে দেবীকে নিবেদন করা হয়। এখানকার মন্দিরে যেহেতু শালগ্রাম শিলা রয়েছে তাই নিরামিষ ভোগ দেবীকে নিবেদন করা হয়।  পূর্বে এখানে বলিদান করা হত কিন্তু বহুকাল পূর্ব থেকে তা বন্ধ হয়ে গেছে।  পুরানো ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও  মন্দিরে পূজাপর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 

মন্দিরের সেবায়েত জানালেন যে দক্ষিনেশ্বরের ভবতারিনীর বিগ্রহটিকে যে নবীন ভাস্কর নির্মাণ করেছিলেন তারই চৌহিত্র এখানকার দেবীর বিগ্রহটিকে তৈরী করে দিয়েছিলেন।  
 
কিভাবে যাবেন : 

শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণ শাখার  যে কোনো ট্রেন ধরে বালিগঞ্জ এসে নামুন। স্টেশন থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই মন্দিরটিকে পেয়ে যাবেন। এছাড়া যে কোন বাসে করে এসে গড়িয়াহাটে নামুন।  গড়িয়াহাটে কাউকে জিজ্ঞাসা করে কাঁকুলিয়া রোড-এ আসুন। এই রাস্তার উপর আনন্দময়ীর মন্দিরটি অবস্থিত। 

মন্দিরের ঠিকানা : 

১৪৭ নং কাঁকুলিয়া রোড, কলকাতা - ৭০০০২৯


তারিখ :০২-১১-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Tuesday, November 2, 2021

চমকে ভরা ধনতেরাস

চমকে ভরা ধনতেরাস 

- সুদীপ্ত মুখার্জী 

আজ গড়িয়াহাট -এ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, অনেক্ষনই বাসের দেখা নেই, অপেক্ষা করতে করতে সামনে কতগুলো সোনার গহনার দোকানের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল।  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই দেখছিলাম। বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে কোথাও লেখা রয়েছে গহনার মজুরির ওপর শতকরা এত ছাড়, কোথাও লাকি ড্র-এর কথা বলা হয়েছে, আবার কোথাও নিশ্চিত উপহারের কথা বলা আছে। এগুলো দেখতে দেখতে একটা বিজ্ঞাপনের শিরোনামে আমার চোখ আটকে গেলো। সেখানে লেখা "চমকে ভরা ধনতেরাস"। সত্যি ধনতেরাসটা শব্দটা আমার কাছেও বেশ চমকের ব্যাপার।  এই শব্দটা বাংলায় কবে কি করে ঢুকে পড়েছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই ভাবছিলাম।

আমি আমার স্কুল, কলেজ জীবনে ফিরে গেলাম, মনে করার চেষ্টা করলাম ধনতেরাস শব্দটা ওই সময়ে শুনেছিলাম কিনা। অনেক চেষ্টা করেও শুনেছি বলে ঠিক মনে করতে পারলাম না। যাই হোক, বাস এসে যাওয়ায় বাসে উঠে পড়লাম। বাসেও সারাক্ষন মাথায় ওই এক চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো। বাড়ী ফিরে কম্পুটার পন্ডিতের শরণাপন্ন হলাম।



কম্পিউটার পন্ডিত আমায় জানালো ধনতেরাস বা ধন ত্রয়োদশী হলো হিন্দুদের একটা জনপ্রিয় উৎসব। "ধন" শব্দের অর্থ সম্পত্তি আর 'ত্রয়োদশী' হলো কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি। এই দিন ধনতেরাস উৎসবটি উদযাপন করা হয়।  ধনতেরাসের আর এক নাম ধন ত্রয়োদশী। কথিত আছে যে, সমুদ্র মন্থনের সময় এই  দিনেই ভগবান অমৃতের কলস নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।  তাই এই দিন দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়ে থাকে। ধরা হয়, এই দিন দেবী লক্ষ্মী ভক্তের গৃহে যান এবং তাদের ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন।   শাস্ত্রমতে ধনতেরাসে সাধারণত লক্ষ্মী ও কুবেরের পুজো করা হয়। সারা ভারতজুড়ে হিন্দুরা এই দিন এই উৎসব পালন করে থাকে। উৎসবটি অবাঙালি হিন্দুরা বহুদিন থেকে বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পালন করে আসছে।

ব্যবসায়ীদের কাছেও এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা ব্যবসাস্থলে ও বাড়িতে দিনটিতে পুজো অর্চনা করে থাকে।

ধন্বন্তরি নাম এক রাজা ছিলেন। তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন আয়ুর্বেদ চর্চা  ও তার প্রচারের   জন্য। তিনি এই ত্রয়োদশী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই  তাঁর জন্ম তিথিকে স্মরণে রাখার জন্য ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী হিসাবে পালন করা হয়।  হিন্দিতে এটাকে ধন্বন্তরি তেরাস বা সংক্ষেপে ধনতেরাস বলা হয়।  এই দিনেই সাথে ধন বা অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই।  
 

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দিনটি বহুদিন ধরে পালন করা হয় কিন্তু বাংলায় আগে এই উৎসবটির প্রচলন ছিল না।  সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে অবাঙলিদের সাথে বাঙালীরাও ধনতেরাস উৎসবে সামিল হচ্ছে। ধীরে ধীরে  বাংলায় উৎসবটি ক্রমশ বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। সময়ের সাথে বাঙালিরাও নিজেদের বদলে ফেলছে, অবাঙালিদের সাথে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে।



ধনতেরাসের দিন সোনা, রূপা বা বাসনাদি কেনা সংসারের পক্ষ্ খুব শুভ বলে সবাই মনে করে। এই দিন কোনো কিছু নতুন কিনলে পরিবারের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বাড়ে বলে সকলের অনুমান। স্বর্ণকাররা সোনার গহনার নতুন নতুন সম্ভার নিয়ে ক্রেতাদের টানার চেষ্টা করে থাকে। গহনার দোকানগুলিতে এই দিন কেনাকাটার ওপর বেশ আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে থাকে। দোকানগুলো খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য। কেউ কেউ আবার অলংকার কিনলে লোভনীয় পুরস্কারও দেয়। ধনতেরাসে স্বর্ণকারদের বিক্রি বেশ ভাল হয়। 

বাঙালির তেরো পার্বণের সাথে আর একটা পার্বন যুক্ত হয়েছে এখন বাঙালিরাও আবার অবাঙালিদের মতো বেশ উৎসাহের সাথে দিনটি উৎযাপন করছে। 


তারিখ :০২-১১-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


ছবিগুলো : ইন্টারনেট থেকে নেওয়া




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Tuesday, October 26, 2021

শেওড়াফুলির নিস্তারিণী মা >P

শেওড়াফুলির নিস্তারিণী মা 


- সুদীপ্ত মুখার্জী 





বহুদিন পূর্বের কথা তখনও শেওড়াফুলি নাম হয়নি, সাড়াপুলি নামটা  সকলের কাছে পরিচিত ছিল।  এই সাড়াপুলিতেই গঙ্গার ধারে ক্ষত্রিয়রাজ মনোহর রায়ের পুত্র রাজা রাজচন্দ্র রায়ের প্রপৌত্র রাজা হরিশ্চন্দ্র রায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজা হরিশ্চন্দ্র ছিলেন পরম ধার্মিক,  নিষ্ঠাবান ও দেবী কালিকার ভক্ত। কথিত আছে, রাজা হরিশ্চন্দ্র রায়ের প্রথম পত্নী সর্বমঙ্গলা দেবীর অপমৃত্যু হয়।  এই কারণে তিনি পন্ডিতদের শরণাপন্ন হন। পন্ডিতদের বিধান অনুসারে তিনি তাঁর স্ত্রীর আত্মার শান্তি কামনায় তাঁর রাজ্যে গঙ্গা তীরবর্তী স্থানে এই মন্দিরটি  স্থাপন করেন। মন্দিরটি বিশালাকার। মন্দিরে তিনি শিবপত্নী দক্ষিণাকালী শ্রী শ্রী নিস্তারিণী মাতার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। সালটা ছিল ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৩৪ বঙ্গাব্দ)।  

এখানকার দেবী নিস্তারিণীর সাথে একটি কাহিনীর কথা প্রচলিত রয়েছে। একবার রানী রাসমণি বেশ কয়েকটি বজরায় দাস-দাসী সমেত বেনারসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তখনও  দক্ষিনেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দির তৈরী হয়নি।  যখন তাঁদের  বজরা শেওড়াফুলি ঘাটের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলো, তখন রানীমা  দেখতে পেলেন যে ঘাটের ধারে একটি পরমাসুন্দরী কিশোরী তাঁকে ডাকছে। ঘাটে বা ঘাটের আশপাশে আর কারোকে দেখা যাচ্ছে না। কিশোরীর মনোমুগ্ধকর রূপ দেখে রানীমা মোহিত হয়ে গেলেন। রানীমা অবশ্য পূর্বেই জানতেন যে এখানে দেবী নিস্তারিণীর একটা সুন্দর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তিনি তাঁর  মাঝিকে ঘাটে বজরা ভিড়াতে বললেন।  ঘাটে এসে তিনি ওই কিশোরীকে দেবী নিস্তারিণীর কাছে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিতে বললেন। কিশোরী তাঁকে বললেন  আমিতো ওখানেই থাকি। রানী মন্ত্রমুগ্ধের মতো কিশোরীকে অনুসরণ করলেন।  মন্দিরের কাছাকাছি আসার পর কিশোরী তাঁকে জানালেন এই পথ ধরে আর একটু এগোলেই নিস্তারিণীর মায়ের থান তিনি দেখতে পাবেন। একথা বলে হঠাৎ  কিশোরী কোথায় মিলিয়ে গেলো। রানী আর কোথাও তাকে দেখতে পেলেন না। রানীমা দেবী নিস্তারিণীর সাথে ওই কিশোরীর একটা অপার্থিব মিল খুঁজে পেলেন। তিনি দেবীদর্শন ও দেবীর পাদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি দিলেন। এই কাহিনীর কথা আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। 

এই কালী মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের একটা প্রাচীন কালীমন্দির। মন্দিরটি অল্প উচ্চতার ভিত্তিবেদীর উপর স্থাপিত। সমতল ছাদযুক্ত। মন্দিরটির দক্ষিণদিকে দালান রয়েছে। মন্দিরের সামনের দিকে সাতটি  খিলান আর পূর্ব ও পশ্চিম দিকে পাঁচটি খিলান রয়েছে। খিলানগুলি সব থামের উপর স্থাপিত। মন্দিরের চারদিকে বারান্দা রয়েছে। মন্দিরটির ডানদিকে রয়েছে একটি নাটমন্দির। নাটমন্দিরের বেশিরভাগ অংশে দোকান রয়েছে। মন্দিরের মধ্যে কয়েকটি ঘর রয়েছে। মন্দিরের সামনের দিকের ঠিক মাঝখানের ঘরটিতে পঞ্চমুন্ডীর আসনে একটি তামার পদ্মাসনের  উপর নিস্তারিণী দেবীর বিগ্রহটি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দেবী বিগ্রহের পদতলে শায়িত রয়েছেন মহাদেব। এখানে দেবী চতুর্ভূজা। দেবীর বামদিকের ওপরের হাতে তরবারি ও নিচের হাতে নরমুণ্ড বিদ্যমান। দক্ষিণের দুটি হাত দিয়ে দেবী বর ও অভয় দান করছেন। মাঝের ঘরটির দুপাশে দুটি ঘরে দুটি শ্বেতপাথরের শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দেবী নিস্তারিণীর ঘরে দুটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে। গর্ভগৃহের সামনে অলিন্দ। এছাড়া মন্দিরের মধ্যে দুটি ঘরে রাজবংশের দুটি প্রাচীন মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। একটি ঘরে কৃষ্ণরাযের বিগ্রহ রয়েছে। এই কৃষ্ণরায়ের বিগ্রহটিকে বর্ধমান জেলার পাটুলি গ্রাম থেকে নিয়ে এসে এখানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।ওপর একটি ঘরে পাটুলী রাজবংশের কুলদেবী মহিষাসুরমর্দিনীর একটি মূর্তি রয়েছে। এখানকার সবকটি বিগ্রহকে নিত্যপূজা করা হয়। মন্দির চত্বরে ভোগ রান্নার একটি ঘর রয়েছে। মন্দির চত্বরেই পূজা সামগ্রী, নিত্য ব্যৱহৃত সামগ্রীর দোকান ও খাবারের  দোকান রয়েছে।  

রাজ বংশের সদস্য শ্রী আশীষ ঘোষ মহাশয় জানালেন যে সম্প্রতি মন্দির ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় মন্দির চত্বরে ১৪ টা  ক্লোজ সার্কিট টিভি লাগানো হয়েছে। এখন পুলিশ ফাঁড়িতে বসেই মন্দির চত্বরে নজরদারি করা হচ্ছে।  

সকলের বিশ্বাস দেবী নিস্তারিণী খুবই জাগ্রত দেবী। সকলের সব রকম মনোস্কামনা তিনি পরিপূর্ণ করেন বলে সবাই মনে করে থাকে। তাই এখানে স্থানীয়রা ছাড়াও বহু দূর দূরান্ত থেকে বহু ভক্তের সমাগম হয়। গঙ্গা স্নান করে মায়ের পূজার মাধ্যমে তারা মায়ের কাছে তাদের মনোস্কামনা নিবেদন করেন।  


 মন্দির খোলার সময় : 

সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত আর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত্রি নয়টা সময় পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। বিশেষ বিশেষ দিনে অবশ্য বিশেষ পূজার জন্য অবশ্য মন্দির  অধিক সময় খোলা থাকে। 


কিভাবে যাবেন : 

হাওড়া স্টেশন থেকে শেওড়াফুলি স্টেশনে এসে নামুন। মন্দিরটি একদম স্টেশনের পাশে অবস্থিত। 

তারিখ : ২৪-১০-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Sunday, October 24, 2021

সুখরিয়ার মিত্রমুস্তাফিদের আনন্দ ভৈরবী কালী মন্দির>P


সুখরিয়ার  মিত্রমুস্তাফিদের আনন্দ ভৈরবী কালী মন্দির  

- সুদীপ্ত মুখার্জী 






সুখরিয়া পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার একটা সুপ্রাচীন গ্রাম। গ্রামটি সোমড়াবাজার  ও বলাগড়ের  মধ্যে অবস্থিত।  গ্রামটির অলিতে গলিতে রয়েছে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন।  মিত্র মুস্তাফি পরিবারের সন্তান অনন্তরাম এই গ্রামে এসে রাধাকুঞ্জ নামক একটা সুবিশাল প্রাসাদ বানান। গ্রামটির ঐতিহ্য এই রাজপ্রাসাদ ও রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি মন্দিরকে  নিয়ে । এখানকার ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ী ও মন্দিরগুলো পর্যটকদের এখানে টেনে নিয়ে আসে। এখানকার মন্দির স্তাপত্যগুলো বৈচিত্রে ভরা।  






রাজবাড়ীর ঠিক উল্টোদিকে সবুজ প্রকৃতির মধ্যে টুকটুকে লাল রঙের টেরাকোটার আনন্দ ভৈরবী মন্দির সুখরিয়ার সব থেকে আকর্ষণীয়। এক অসাধারণ মন্দির। এই মন্দিরটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরটির আকর্ষণে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসে।  মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল ১৮১৩ সালে। রাজ পরিবারের সন্তান বীরেশ্বর মিত্র মুস্তাফি মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। কথিত আছে সেই সময় মন্দিরটি নির্মাণ করতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছিল। মন্দিরটি উচ্চতায় ৭০ ফুট ২৮ ইঞ্চি। পঁচিশটি চূড়া বিশিষ্ট। মন্দিরটিতে টেরাকোটা শিল্পের অসাধারণ নিদর্শন রয়েছে। মন্দিরের গায়ে টালির উপর নানা দেবদেবীর মূর্তি উল্লেখযোগ্য। বেদীর উপরে শায়িত শিবের উপর দেবী আনন্দময়ী ভৈরবী উপবিষ্টা। দেবী মূর্তির উচ্চতা তিন ফুট। মূর্তিটি কষ্টি পাথরে তৈরী।  মন্দিরের অভ্যন্তরে পাথরে গড়া বেশ কিছু দেবদেবীর মূর্তি পরিলক্ষিত হয়। 

 

মূল মন্দিরের দুপাশে দুটো সারিতে রয়েছে ১২টা ছোট মন্দির। এক একটি  সারিতে ছয়টি করে মন্দির বিদ্যমান।  দুটি সারিতে একটি করে মোট দুটি পঞ্চরত্ন মন্দির রয়েছে আর বাকি মন্দিরগুলো আটচালা বিশিষ্ট। পঞ্চরত্ন মন্দির দুটিতে গণেশের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে আর বাকি আটচালা মন্দিরগুলোতে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। 



১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের সময় মন্দিরের সর্বোচ্চ পাঁচটি চূড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীকালে মন্দিরটির পাঁচটি চূড়াকে নতুন করে তৈরি  করা হয়। এখানকার সমস্ত মন্দিরগুলোকে সারিয়ে নতুনভাবে রঙ  করা হয়েছে।  

মন্দির খোলা

সকাল ছাড়তে থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত বাইরে থেকে দেখা যায়।  

কীভাবে যাবেন

শিয়ালদহ  বা হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকালে করে পৌঁছতে হবে সোমড়াবাজার স্টেশন। তারপর ভ্যান বা টোটো-এ চেপে খুব সহজেই  পৌঁছে যান সুখরিয়া।



তারিখ : ২৪-১০-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 



 

Wednesday, October 20, 2021

সুখরিয়ার বিশ্বাস বাড়ির পূজা >P

সুখরিয়ার বিশ্বাস বাড়ির পূজা 

- সুদীপ্ত মুখার্জী 








পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলা যেখানে সর্বপ্রথম বারোয়ারি পূজা শুরু হয়েছিল। সেই  জেলাতেই তিন শত বছর অতিক্রম করা এক পারিবারিক দুর্গাপূজা হয়ে চলেছে। সাবেকি বাড়ির প্রাচীন দুর্গাপূজা। এই পূজার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে এক জমিদার পরিবারের কাহিনী। 

এই জমিদার পরিবারের ইতিহাস জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় তিনশো বছর পূর্বে। ১৬৫৭ সাল।  নদীয়া জেলার টেকা গ্রাম থেকে শান্তিপুরের বিখ্যাত গুরুমহাশয় মোহন মিত্র উঠে আসেন  ওই জেলারই উলা গ্রামে। নদীয়া জেলার  উলা গ্রামটি বর্তমানে বীরপুর নামে প্রসিদ্ধ। এই মোহন মিত্রের পুত্র ছিলেন রামেশ্বর মিত্র।  তিনি উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। তখন বাংলার গভর্নর ছিলেন শায়েস্তা খান এবং বাংলার নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খাঁ।  রামেশ্বর তার পিতার পন্ডিতি ব্যবসা ছেড়ে নবাব মুর্শিদকুলির শাসনকালে সুবে বাংলার রাজস্ববিভাগের নায়েব কানুনগো ছিলেন।  ১৭০৪ সালে তাঁর কাজের পারদর্শিতার জন্য দিল্লির সম্রাট ঔরঙ্গজেব রামেশ্বরকে 'মুস্তাফি' উপাধি প্রদান করেন। রামেশ্বর এই চাকরি থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। তিনি নদীয়া জেলায় একটি জমিদারি এস্টেট ক্রয় করেন। পরবর্তী সময় তিনি তাঁর  জমিদারির সম্পত্তি আরো বৃদ্ধি করেন।  তিনি ধীরে ধীরে জমিদার হিসেবে পরিচিত হন।

তিনি জমিদার হলেও অন্য জমিদারদের মতো কখনোই ভোগ বিলাসে নিজেকে ডুবিয়ে দেন নি।  পরবর্তীকালে গঙ্গা নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে উলা গ্রাম থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যেতে শুরু করে।  তার ফলে উলার গৌরব ও সমৃদ্ধি কমতে থাকে। মিত্রমুস্তাফি পরিবার ভেঙে তিন ভাগ হয়ে যায়। রামেশ্বর মিত্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র রঘুনন্দন  ১৭০৮ সালে (১৬৩০ শকাব্দ) গঙ্গার  নদীর পূর্বতীরে উলা গ্রাম থেকে পশ্চিমতীরের হুগলী জেলার আটিশেওড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং গ্রামটির নতুন নামকরণ করেন শ্রীপুর। রামেশ্বেরের আর এক পুত্র অনন্তরাম এই শ্রীপুর গ্রামের কিছুদূরে সুখরিয়া গ্রামে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। এই অঞ্চলগুলো সেই সময় বাঁশবেড়িয়ার রাজা রঘুদেবের জমিদারির মধ্যে ছিল। বাঁশবেড়িয়ার রাজা রঘুনন্দন মিত্রমুস্তাফিকে আটিশেওড়া  গ্রামে ৭৫ বিঘা ভূসম্পত্তি দান  করেন। সেই জমিতেই রঘুনন্দন দীঘি, পুষ্করিণী, চণ্ডীমণ্ডপ প্রভৃতি নির্মাণ করেন।  





অনন্তরামের নাতি রামজীবন মিত্র মুস্তাফি  সুখরিয়াতে একটা সুবিশাল প্রাসাদ ও একটি মনোরম ঠাকুরদালান নির্মাণ করেন। এই প্রাসাদেই ঠাকুরদালানের ঠিক পাশে রয়েছে রত্নেশ্বর মিত্র মুস্তাফির  প্রতিষ্ঠিত  শিবমোহিনী দুর্গার মূর্তি।  তার সাথে একটি রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তিও প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।  শিবমোহিনী দূর্গা ও আনন্দময়ী কালী এনাদের কুলদেবী।  আমি আজ সুখরিয়া  রাজবাড়ীর দুর্গাপূজা নিয়ে আপনাদের জানাবো। 

সুখরিয়ার গ্রামটি হুগলি জেলার বলাগড়  ও  সোমড়াবাজারের  মধ্যবর্তী একটা গ্রাম। এক গ্রামেই জমিদার রত্নেশ্বর মিত্র তাঁর প্রাসাদ ও বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই প্রাসাদ ও মন্দিরগুলোকে দেখলে তাঁর শিল্পকলা ও স্থাপত্যের নিদর্শন অনুমান করা যায়। রত্নেশ্বর মিত্রমুস্তাফির পুত্র রাধাজীবনের তিন কন্যা ও এক পুত্র ছিল। যোগমায়াদেবী দাসী, পদ্মাবতী দাসী ও ভবভাবিনী দাসী এই তিন কন্যা ও ক্ষেত্ৰনাথ নামে এক পুত্র ছিল।  তাঁর একমাত্র পুত্র ক্ষেত্ৰনাথ বসন্ত রোগে মারা যায়।  তাঁর তিন কন্যার মধ্যে একজনের বিবাহ হয় শোভাবাজার রাজবাড়ীর যতীন্দ্র মোহন দেবের  সহিত, একজনের  বিবাহ হয় রানাঘাটের জমিদার বিনোদ বিহারি বিশ্বাসের সহিত আর এক কন্যার কলকাতার ব্যবসায়ী যতীন্দ্রনাথ ঘোষের সহিত বিবাহ হয়। সুখরিয়ার এই বাড়িটি বর্তমানে বিনোদ বিহারি  বিশ্বাসের পরিবারের উত্তরপুরুষদের অধীনে রয়েছে। বংশের কোনো পুত্র সন্তান জীবিত না থাকার  জন্য বিশ্বাস পরিবার দীর্ঘকাল ধরে  রাজবাড়ির এই দুর্গাপূজাটি বজায় রেখে চলেছেন। 


 



এখানে রয়েছে  মিত্রমুস্তাফিদের নির্মিত ভগ্নপ্রায় একটি ঠাকুরদালান। এই ঠাকুর দালানে আজও বেশ ঘটা করে দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। 

এখানকার দেবীমূর্তি দশভুজা।  ঘোড়ার মুখবিশিষ্ট সিংহ এখানে দেবীর বাহন। পূজার দিন সাতেক পূর্বে বোধন শুরু হয়। এখানে বৈষ্ণব মতে পূজা করা হয়।   প্রত্যেকদিন সকাল বিকেল দুইবেলা পূজা করা হয়।  সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী এই তিনদিনই এখানে বলি দেওয়া হয়।  পূর্বে মহিষ বলি দেওয়া হত কিন্তু বর্তমানে চালকুমড়া, আখ বলি দেওয়া হয়। পূজার কটাদিন ভোর চারটের  সময় মঙ্গলারতি করা হয়। মঙ্গলারতির সময় প্রত্যেকদিন দেবীকে মাখন ও মিশ্রি দেওয়া হয়।  দেবী মূর্তি এখানকার ঠাকুরদালানেই নির্মিত হয়। নবপত্রিকাকে কোন পুকুর বা নদীতে স্নান করানো হয়না।  তাঁকে ঠাকুরদালানেই স্নান করানো হয়। দেবীকে ভোগ হিসেবে লুচি, তরকারি, বিভিন্ন ফল ও মিষ্টি নিবেদন করা হয়।  এছাড়া কাঁচা ডাল, বিভিন্ন সবজি, তেল দেবীকে বোধনের পর থেকে প্রতিদিন দেওয়া হয়।  প্রত্যেকদিন সন্ধিপূজা করা হয়। অষ্টমীর দিন কুমারী পূজা করা হয়। এখানে বরণ  ও কনকাঞ্জলি প্রথা রয়েছে কিন্তু  সিঁদুরখেলার  কোনো নিয়ম নেই।  পূজায় বাড়ির মহিলারা বাইরের পুরুষদের সামনে আসতেন না। পূজার সময় পূজার দালানে আসতেন কিন্তু তখন বাইরের কেউ বাড়ির ভিতরে থাকতো না।  তাই বিসর্জনের সময় যেহেতু বাইরের লোকজন ঠাকুরদালানে থাকতো তাই সেইসময় বাড়ির মহিলারা অন্দরমহল থেকে জানালা দিয়ে  দেবী দুর্গার চলে যাওয়া দেখতেন। এককালে দুর্গাপুজোর সময় এখানে যাত্রাপালা, কবিগান, নাটকের  আসর বসত। 
  
  মিত্রমুস্তাফি বা বিশ্বাস পরিবারের কেউ আজ আর এখানে বসবাস করেন না কিন্তু দুর্গাপূজার সময় তাঁরা ঠিক তাঁদের ভদ্রাসনে ফিরে আসেন। ঐতিহ্যের বাতি আজ আর সেভাবে জ্বলে ওঠে না। তাঁরা যতটা সম্ভব  নিয়ম রক্ষা করে কোনোভাবে পূজাটি বজায় রেখে চলছেন। এই রাজবাড়িতেই মৃনাল সেন তাঁর "অকালের সন্ধানে" সিনেমার শুটিং করেছিলেন। 


তারিখ : ২০-১০-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 






Friday, October 15, 2021

কালো দূর্গার আরাধনা চলছে তিলোত্তমাতেই >P

কালো দূর্গার আরাধনা চলছে তিলোত্তমাতেই  


- সুদীপ্ত মুখার্জী 




আমরা ছোটোবেলা থেকেই জেনে এসেছি কালী মাতার গায়ের রং কালো অর্থাৎ তিনি কৃষ্ণবর্ণা হন।  কিন্তু এবার আমি দেখে এলাম কালো দূর্গা মানে কৃষ্ণবর্ণ দেবী দূর্গা। তাও সেই পূজাটি খোদ কলকাতার বুকেই অনুষ্ঠিত হয়। বেশ আড়ম্বরের সাথে বেলেঘাটার ভট্টাচার্য্য পরিবারে কৃষ্ণবর্ণ দেবী দূর্গা পূজিত হন। 

অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুরের জমিদার ছিলেন হরিদেব  ভট্টাচার্য্য।  তিনি আসলে  ছিলেন বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার বাসিন্দা। নাটোরের মহারানী ভবানী তাঁকে  পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুরের জমিদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। তিনি  তাঁকে ওই অঞ্চলের জমিদারি স্বত্ব প্রদান করেন। কথিত রয়েছে, যে এই ভট্টাচার্য্য পরিবারে বহু পূর্ব থেকেই মা কালীর পূজা করা হত।  শোনা যায় হিমালয়ের পাদদেশে কোনো কোনো জায়গায় নাকি কৃষ্ণবর্ণের অতসীপুষ্প ফোটে। এই ফুল অতীব দুষ্প্রাপ্য।  দেবীর হয়তো ইচ্ছা হয়েছিল কৃষ্ণবর্ণরূপে পূজা পেতে। তাই তিনি নাকি কারোকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে আদেশ দিয়েছিলেন তাঁর এই রূপকে পূজা করার।   



তেমনই এক স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন স্থলবসন্তপুরের জমিদার হরিদেব ভট্টাচার্য্য মহাশয়। তিনি স্বপ্নে এরকম কৃষ্ণবর্ণ দেবীকে দেখেছিলেন। তিনি স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর তার জমিদারিতে প্রথম দুর্গাপূজা করেন।  রানী ভবানীর আমলেই সেই পূজা শুরু হয়েছিল।  সেই থেকেই আজও  ভট্টাচার্য্য পরিবারে কালো দূর্গা প্রতিমা পূজিত হয়ে আসছে। যা এবছর ২৮৯ বছরে পদার্পন করলো। 

পূজা শুরু করার পূর্বে জমিদারবাবু প্রথমে মায়ের এই বিচিত্র রূপের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেন।  তিনি ভাটপাড়া ও কাশীর পন্ডিতদের সাথে কথা বলেন কিন্তু তাদের ব্যাখ্যায় তাঁর মনঃপুত হল না।  এমতাবস্থায় একদিন হরিদেববাবু মনমরা হয়ে কাশীর গঙ্গার ঘাটে বসে ছিলেন। সেই সময় একজন সাধু তার কাছে এসে জানতে চাইলেন কেন তিনি এইরকম বিষণ্ণভাবে বসে আছেন,  তার সমস্যাটা কোথায়? 
সব কিছু শুনে তিনি মাকে ভদ্রকালী রূপে পূজা করার কথা তাঁকে  বললেন।  তাঁকে  তালপত্রে লেখা এক প্রাচীন পুঁথি দেন  এবং তাঁকে এই পুঁথি অনুসরণ করে পূজা করতে বললেন।  

দেবী এখানে কৃষ্ণবর্ণ হলেও তার সন্তানদের গাত্রবর্ণ কিন্তু সাদা হয়। মহিষাসুরের গাত্রবর্ণ হয় সবুজ।দেবীর ডানপাশে থাকেন দেবী লক্ষ্মী ও কার্তিক আর বামপাশে থাকেন দেবী সরস্বতী ও গণেশ। পূজাটি দীর্ঘদিন যাবৎ স্থলবসন্তপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার পর পরিবারের সদস্যরা কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলে এসে  বসবাস শুরু করেন।  তখন থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এখানে পূজাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শাক্ত মতে পূজা হয়। পূর্বে বলিদান প্রথা থাকলেও বর্তমানে চালকুমড়া  বলি দেওয়া হয়। সন্ধিপূজার সময় দেবীকে মাছভাজা দেওয়া হয়। সকালে নিরামিষ ও সন্ধ্যায় দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন দই, কলা, পান্তাভাত সহযোগে দেবীকে আপ্যায়িত করা হয়।  

প্রাচীন রীতি নীতি মেনে আজও পূজা করা হয়। পরিবারের নতুন প্রজন্ম সেই ঐতিহ্যকে যতটা সম্ভব বজায় রেখে চলেছে। স্থানাভাবের  জন্য বাড়িরই নীচে দেবী পূজা হয়ে থাকে।  পদ্মা  পেরিয়ে গঙ্গাপাড়ে এসেও তাদের পূজার জৌলুশ কিন্তু একদমই কমেনি।  



তারিখ : ১৫-১০-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।