পশ্চিমবঙ্গের উৎসব অনুষ্ঠান একটি নিজস্ব স্বতন্ত্র সৌন্দর্য বহন করে, উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে আমরা বাংলার বিভিন্ন রাজা-জমিদারদের পরিবারের পূজা ও তাদের ঐতিহ্যের কথা জানতে পারি, জানতে পারি তাদের পারিবারিক ইতিহাস। হুগলি জেলার শেওড়াফুলিতে তেমনি এক ঐতিহ্যবাড়ি জমিদার ছিলেন রাজা মনোহর রায়। আজ তাঁর পারিবারিক পূজার কথা বলবো।
শেওড়াফুলি রাজবাড়ীর পূজা এবছর ২৮৭ বছরে পদার্পন করলো। এটা হুগলি জেলার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পূজা। দেবী এখানে সর্বমঙ্গলময় মাতা সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিত হন। এই পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার পাটুলি গ্রামে। এই বংশের রাজারা প্রচার বিমুখ মাতৃসাধক ছিলেন। কলকাতা থেকে কাশীধাম পর্যন্ত বহু জায়গায় এঁনারা বহু মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। পুন্যহৃদয় রাজা মনোহর রায় বর্ধমান জেলার আঁটিসারা গ্রামে প্রজাদের সুবিধার্থে একটি পুকুর খনন করার সময় স্বপ্নে মাতা সর্বমঙ্গলাকে দেখতে পান। দেবী তাঁর কাছে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে দেখা দেন। কয়েকদিন পরে ওই খননের সময় এক দিনমজুরের কোদালে উঠে আসে একটি অষ্টধাতুর দূর্গা বিগ্রহটি (দেবী সর্বমঙ্গলা)। পরবর্তী কালে রাজবংশের পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায়। রাজা মনোহর রায় পাকাপাকিভাবে শেওড়াফুলিতে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময় জায়গাটা চলে আসে হুগলি জেলায়। তিনি শেওড়াফুলি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
১১৪১ সালের ১৫ই জ্যৈষ্ঠ (১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে) শেওড়াফুলির রাজবাটীতে তিনি বিগ্রহটিকে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে রাজবাটীর লক্ষ্মী জনার্দন মন্দিরে মায়ের নিত্যপূজা, জন্মতিথি পালন ও বিশেষভাবে দুর্গাপূজা করা হয়ে আসছে। মায়ের নিত্য সেবায় আতপ চালের নৈবেদ্য ও ফল-মিষ্টান্ন থাকে। দুর্গাপুজোয় পূর্বে ছাগবলি, মহিষবলি করা হতো বর্তমানে চালকুমড়া বলি করা হয়। কথিত আছে, রাজবংশের বড় তরফের সেবাইত স্বর্গীয় নির্মল চন্দ্র ঘোষ স্বপ্নে দেখেন পাঠাবলির সময় পাঁঠাটি বিকট শব্দে আৰ্তনাদ করছে। সেই সময় পন্ডিতরা পশুবলি নিষেধ করে দেন। তারপর থেকে আর কখনো এখানকার পূজায় পশুবলি করা হয় না। দেবী এখানে কাত্যাযনিরূপী হওয়ায় দেবীর সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী লক্ষ্মী থাকে না। রাজবাড়ীর পুজোটি সাধারণভাবে মহালয়ার সাতদিন পূর্বে কৃষ্ণনবমী তিথিতে বোধন দিয়ে শুরু হয়। এবছর তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। এবছর মল মাস পড়ায় মহালয়ার ৩৪ দিন পর দুর্গাপূজা মহাষষ্ঠী পড়েছে। এখানে দুর্গাপূজার ৪১ দিন পূর্বে দেবীর বোধন হয়ে গেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চন্ডীপাঠ, সন্ধ্যারতি ও নিত্যপূজা চলছে। সকালে আতপচাল ও বিভিন্ন ফল এবং সন্ধ্যায় লুচি ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে দেবীকে দেওয়া হয়। মহাষ্টমীর দিন কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। দশমীর দিন শুধু দেবী ঘট ও কলাবৌ বিসর্জন দেওয়া হয়ে থাকে। পূর্বে এখানে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রেওয়াজ ছিল। জৌলুস হয়তো আজ নিভন্ত। তবে রীতি নীতি আজও যতটা সম্ভব মেনে চলা হয়।
রাজবাড়ীর দুর্গাপূজা দেখতে বহু দূর-দূরান্ত থেকে বহু দর্শক আসেন। বহু ভক্ত তাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য মায়ের পূজা দিয়ে থাকেন।
ছবি ও লেখার সত্ব : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ :২৩-১০-২০২০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।