গুমঘর লেন
গুমঘর এই কথাটি শুনলেই সবার গা ছমছম করে ওঠে। সেই গুমঘর নামে যদি একটা গলি রাস্তা হয় তাহলে তো লোকে ভয় পাবে, সেই রাস্তায় পা দেবে না। হ্যা আমাদের প্রাণের শহরের একটা ছোট্ট গলি রয়েছে যার নাম গুমঘর লেন। গলিটি নানারকম বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানের ভিড়ে সারাদিন সরগরম থাকে। কিন্তু রাত যত বাড়ে পরিবেশ তত শুনশান হতে থাকে। রাত যত গভীর হয় গলিটি যেন তার নাম মাহাত্ম্য বজায় রাখে। মাত্র ৩০০ মিটার দৈঘ্য এই ছোট্ট গলিটি চাঁদনী চক থেকে বেরিয়ে মিশেছে টেম্পলে স্ট্রিটে। গলিটির দুধারেই বেশ কয়েকটা প্রাচীন বাড়ি রয়েছে। আবার কয়েকটা ভাঙাচোরা বাড়িও চোখে পড়বে।
আজ থেকে প্রায় ২০০-২৫০ বছর পূর্বে এই রাস্তাতেই গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। অষ্টাদশ শতকে কলকাতায় তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ছিল না বলা যায়। চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামোও ছিল না, ছিল মাত্র দু একজন ইংরেজ চিকিৎসক ও সেবিকা। তারা সামান্য চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলো। কী নেটিভ, কী নেটিজেন কেউ কোনো রোগে পড়লে উপযুক্ত ঔষধ ও চিকিৎসার অভাবে বেশিরভাগেরই কপালে মৃত্যু অবধারিত ছিল। চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় সাদা চামড়ার লোকেরা এমন পরিস্থিতিতে কাজ করতে খুবই অসুবিধায় পড়ছিলো। তারা ভয়ে ভয়ে কাজ করে যাচ্ছিলো।
শোনা যায় চাঁদনী চোখ অঞ্চলের এই ছোট্ট গলি পথটিতে কোনো এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দুরারোগ্য ও ছোঁয়াচে রোগীদের এই রাস্তার একটি বাড়িতে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা ছিল, কারণ রোগের প্রাদুর্ভাব যাতে ছড়িয়ে না পড়ে। ১৭৯২ সাল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় কর্মীদের চিকিৎসার জন্য নেটিভ হাসপাতালের প্রস্তাব দেয়। তার বছর দুয়েক পর কলুটোলা অঞ্চলে সেই হাসপাতাল গড়ে ওঠে। ১৭৯৬ সাল নাগাদ চাঁদনী চক অঞ্চলের বর্তমান হসপিটাল স্ট্রিটে হাসপাতালটি উঠে আসে। সেই হাসপাতালের লাগোয়া অংশই আজকের গুমঘর লেন।
কলকাতা পুরসভার খাতায় আজ গলিটির নাম গুমঘর লেন বলেই উল্লেখ রয়েছে। অতীতের সাক্ষাৎ যমপুরী আজ শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। কলকাতা বিশারদ শ্রীপান্থ তাঁর "ডাক্তার-বদ্যি" শিক্ষক এক প্রবন্ধে লিখেছেন " “লোক আসে আর মরে। মরে, তবুও আসে।… দিব্যি সুস্থ-সমর্থ জোয়ান ছেলে সন্ধ্যায় নেমেছে চাঁদপাল ঘাটে। রাত্তিরটাও কাটল না। ভোরবেলাতেই দেখা গেল কলকাতার অ্যাডভেঞ্চারে দাঁড়ি পড়ে গেছে তার।… লোক মরত। এখনও মরে, তখনও মরত। সাহেব-নেটিভ নির্বিশেষেই মরত।" এই নেটিভ শব্দটাই গুমঘর গলির দিকে এগোনোর প্রথম ক্লু। এখন যেমন নেটিজেনরা কোয়ারেন্টাইন, সেই সময়েও গুমঘর গলি নেটিভদের একঘরে রাখার একমাত্র ঠিকানা।"
ছবি ও লেখার সত্ব : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ : 11-10-2020
যোগাযোগ : 98304 20750
যোগাযোগ : 98304 20750
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
No comments:
Post a Comment