Thursday, January 30, 2020

জীবন-জীবিকা (তৃতীয় পর্ব )>P



ক্ষৌরকার






শরীরের যে অংশ নিয়ে মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতা রয়েছে, তা হল তার কেশবিন্যাস। এটি কমতে থাকলে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কেশ বা চুলকে ভালোবাসেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই নগন্য। ছেলেদের কেউ বড়, কেউ ছোট আকারে চুল রাখতে পছন্দ করে আবার বর্তমানে মুন্ডিত মস্তক লক্ষ্য করা যায়।  মেয়েরা কেউ কেউ লম্বা চুলে বেণী বাঁধতে যেমন পছন্দ করে তেমন কেউ আবার বব  কাট  চুল রাখতে পছন্দ করে থাকে।  বর্তমানে আবার চুলের রঙ পরিবর্তন করে নানান রঙে রঙিন  করার চল হয়েছে। সৌন্দর্য ও মর্যাদার বহিঃ প্রকাশই হলো মানুষের কেশবিন্যাস। আমাদের এই কেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নাপিত বা ক্ষৌরকারদের প্রয়োজন হয়। তাদের পরামানিক ও কেশবিন্যাসকারীও বলা হয়ে থাকে।

নাপিত বা ক্ষৌরকারদের পেশা একটি বৈধ পেশা।  তারা সমাজকর্মী হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।  হিন্দু ও মুসলমান উভয় সমাজে এই সম্প্রদায়ের লোকদের একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানস্বরূপ গণ্য করা হয়। জীবনের প্রতিস্তরে এই পেশার লোক ছাড়া হিন্দুদের চলে না।   তা সে দৈনন্দিন জীবনের চুল বা দাঁড়ি কাটা হোক বা জন্ম ও বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠানে হোক।   কিছু  ধর্মীয় আচার-আচরণ তাদের দ্বারা পালন করতে হয়। হিন্দু ব্রাহ্মণ সন্তানদের উপনয়নের সময় ও পিতা-মাতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় মস্তক মুন্ডন করার জন্য এদের প্রয়োজন হয়। মানুষকে সেবা প্রদানের  মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে তাদের সংসার যাপন চলে। পূর্বে এই ধরণের সেবা প্রদানের জন্য তারা অর্থের বদলে দ্রব্যসামগ্রী উপহারস্বরূপ পেত।

নাপিতরা নমঃ শূদ্র জাতিগোষ্ঠীর একটি অংশ। এরা নমঃশূদ্ররা ছিল সমাজের সবচেয়ে নীচু প্রজাতির নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষ হলেও এরা অস্পৃশ্য নয়। মানুষের সেবামূলক কাজগুলো করাই এদের প্রধান দায়িত্ব। আগে যেখানে শীল গোত্রের নমঃশূদ্ররাই এই কাজটি করতো। সময়ের পরিবর্তনে  ও বাঁচার তাগিদে অন্য গোত্রের হিন্দুরাও এই পেশায় সামিল হয়েছে।

নাপিতদের সাধারণত একটি দোকান থাকে, সেই দোকানকে বলা হয় "সেলুন"।  এই দোকানে বসেই তারা দৈনন্দিন পেশার কাজ করে।  যেসব নাপিতের সেলুন খোলার ক্ষমতা নেই তারা রাস্তার ধরে ইটের ওপর বসে কাজ চালিয়ে নেয়।  বাঙালিরা রসিকতা করে এই গুলোকে "ইটালিযান সেলুন" বলে থাকে। আগে বাড়ির বড়োরা এই ইতালিয়ান সেলুনে বসে চুল-দাঁড়ি কেটে রাস্তার কোলে স্নান সেরে তবে বাড়িতে ঢুকতো। আজকাল এই ধরনের ইতালিয়ান সেলুন খুব কম দেখা যায়। পাড়ার সেলুনগুলোও অনেক কমে গেছে।  তার বদলে এসে গেছে ঝা-চকচকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সেলুন।  যার গাল  ভরা নাম দেওয়া হয়েছে ইংরেজদের থেকে ধার করে বিউটি পার্লার।   বর্তমানে  শহরের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে পুরুষদের ও মহিলাদের জন্য বিউটি পার্লার। কোনটা শুধুমাত্র মহিলাদের আবার কোনটা শুধুমাত্র পুরুষদের।  তবে কিছু পুরুষ-মহিলাদের পার্লার রয়েছে, যেগুলোকে বলা হয় ইউনিসেক্স পার্লার। ভিতরে ঢোকার জন্য পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা দরজা রয়েছে।  সেখানে সাধারণত চুল কাটা, চুলে রঙ  করা, কনেকে সাজানো ইত্যাদি কাজ করা হয়ে থাকে।



ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ : ৩০-০১-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Saturday, January 25, 2020

সচল বিশ্বনাথ >P

সচল বিশ্বনাথ 

"দেখলাম সাক্ষাৎ বিশ্বনাথ তাঁহার শরীরটা আশ্রয় করে প্রকাশিত হয়ে রয়েছেন।  তাঁর থাকায়  কাশী উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।  উঁচু জ্ঞানের অবস্থা।  শরীরের কোনো হুশই নেই, রোদে বালি এমনি তেতেছে যে, পা দেয় কার সাধ্য - সেই বালির ওপরেই সুখে শুয়ে আছেন। পায়েস রেঁধে নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিয়েছিলাম। তখন কথা কন না - মৌনী।  ইশারায় জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ঈশ্বর এক না অনেক? তাতে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন - সমাধিস্থ হয়ে দেখ তো এক, নইলে যতক্ষণ আমি, তুমি, জীব, জগৎ ইত্যাদি নানা জ্ঞান রয়েছে, ততক্ষন অনেক।  তাঁকে  দেখিয়ে হৃদেকে বলেছিলাম, একেই ঠিক ঠিক পরমহংস অবস্থা বলে।" 

                                                                                                   -   ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব


"সন্ন্যাসী হয়ে যদি উলঙ্গ থাকবে, তবে এই জনাকীর্ণ তীর্থস্থান ত্যাগ করে জঙ্গলে গিয়ে বাস করো।" মহিলাটি দীপ্তকণ্ঠে বেশ কয়েকবার কথাগুলো বলল তার সামনে দিয়ে আগত এক উলঙ্গ সন্ন্যাসীটিকে। কিন্তু তাতে সন্ন্যাসীটির কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। এই উলঙ্গ সন্ন্যাসী তখন হনুমান ঘটে বাস করেন।  এক সম্ভ্রান্ত ঘরের মহারাষ্ট্রীয় মহিলা এই ঘাটের পথ ধরে বাবা বিশ্বনাথের পুজো দিতে রোজই যেতেন। একদিন এক সরু গলি দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি এই সন্ন্যাসীকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দেখে উপরোক্ত শ্লেষপূর্ণ তিরস্কারে তিরস্কৃত করেছিলেন।  মহিলাটির স্বামীর পেটে  বিরাট ক্ষত, ডাক্তার বদ্যিরা সব তাদের অক্ষমতা জানিয়ে দিয়েছেন।  স্বামীর রোগমুক্তির আশায় তিনি রোজ্ গঙ্গা স্নান করে বাবা বিশ্বনাথের পুজো দিতে যেতেন। তিরস্কার করার দিন রাতে তিনি এক স্বপ্ন দেখেছিলেন যে স্বয়ং মহাদেব তাকে বলছেন, "যে উদ্দেশ্য নিয়ে তুই রোজ আমার পুজো করিস, তোর সেই উদ্দেশ্য আমি সফল করতে পারবো না।" আরো বললেন "আজ তুই যে উলঙ্গ মহাযোগীকে অপমান করেছিস তার কৃপা পেলেই তোর মনোস্কামনা পূর্ণ হবে।" পরদিন সকাল বেলায় মহিলাটি হনুমান ঘাটে গিয়ে মহাযোগীর পা ধরে ক্ষমা চাইলেন আর তার স্বামীর প্রাণভিক্ষাও চাইলেন।  মহাযোগী তাকে ক্ষমা করলেন। স্বামীজী এক মুঠো ভস্ম তাকে দিয়ে বললেন স্বামীর দেহে পুরো ভস্মটি  মাখিয়ে দিতে। এই ভস্ম মাখানোর পর তার স্বামী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন।


 সেই প্রাচীন কাল থেকেই কাশীতে কত সাধক-মহাসাধকদের পদধূলি পড়েছে।  নানা বইতে নানা আলোচনায় তাঁদের অলৌকিক মহিমার কথা উঠে এসেছে।  মহাত্মা মহাযোগী তৈলঙ্গস্বামীর বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী এই দেবভূমি।  প্রায় ১৫০ বছর তিনি কাশীতে বসবাস করেছেন। অলৌকিক শক্তির অধিকারী এক মহাযোগী। তাঁর সময় যত ভক্ত ও সাধক কাশীতে এসেছিলেন তাঁরা বাবা বিশ্বনাথ, দেবী অন্নপূর্ণা, মণিকর্ণিকা ঘাট ও দশাশ্বমেধ ঘাট দর্শন করার পর এই মহাত্মাকে দর্শন করে কাশী ত্যাগ করতেন।  কাশীর অধিবাসীরা তাঁকে "সচল বিশ্বনাথ" নামকরণ করেছিলেন।

তৈলঙ্গস্বামীর সন্ন্যাস নেওয়ার পূর্বে নাম ছিল "শিবরাম" আর সন্ন্যাস নেওয়ার পর নাম হয়েছিল "গণপতি সরস্বতী"। তৈলঙ্গ দেশ থেকে আগত বলে তিনি কাশীর মানুষদের কাছে তৈলঙ্গস্বামী হিসেবে পরিচিত হলেন। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের হোলিয়া জনপদে এক রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা নরসিংহ রাও ওই জনপদের রাজা ছিলেন।  খুব সৎ ও ধর্মপরায়ণ রাজা ছিলেন।  তাঁর  স্ত্রী বিদ্যাবতীও খুব ধর্মপরায়ণ ছিলেন।  প্রতিদিন তাঁরা শিবের আরাধনা, ব্রাহ্মণ সেবা, দেবদেবীর পূজা করতেন।  দীর্ঘদিন তাঁদের কোনো সন্তান হচ্ছিলো না, নরসিংহ বংশরক্ষার জন্য খুব চিন্তিত ছিলেন। একপ্রকার বাধ্য হইয়াই তিনি বিদ্যাবতীর অনুমতি নিয়ে দ্বতীয়বার বিবাহ করেন। দেবদেবীর কৃপায় ও মহাদেবের করুণায় ১৬০৭ সালের এক পুন্য লগ্নে নরসিংহের প্রথম স্ত্রী বিদ্যাবতী এক পুত্র সন্তান লাভ করেন। শিবের পূজারী বিদ্যাবতী সন্তানের নাম রাখলেন "শিবরাম"। পরবর্তীকালে অবশ্য রাজা নরসিংহের দ্বিতীয় স্ত্রীও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই পুত্রের নাম ছিল শ্রীধর। বালক বয়স থেকেই শিবরাম মায়ের পুজোর সময় পাশে বসে সব লক্ষ্য করতেন।  বালক বয়স থেকেই তিনি খুব গম্ভীর স্বভাবের ছিলেন।  অন্যান্য বালকদের মত তাঁর খেলাধুলায় কোনোরূপ আগ্রহ ছিল না। শুধু বাল্যকাল নয়, কৈশোরে, যৌবনকালে সব ব্যাপারে তিনি সবসময় উদাসীন থাকতেন। বিষয়, সম্পত্তি ও সংসারের প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। ৪০ বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান, ৫০ বছর বয়সে মাতাকেও হারান। মাকে হারানোর পর তিনি খুব ভেঙে পড়েন।  তিনি সংসার ছেড়ে শ্মশানে এসে একটি পর্ণকুটির তৈরী করে বাস করতে থাকেন। ভ্রাতা শ্রীধর ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সকলেই তাঁকে কুটির ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। সকলের অনুরোধ তিনি উপেক্ষা করে এই কুটিরেই বাস করতে লাগলেন। এই কুটিরেই একদিন পাঞ্জাবের বাস্তুর গ্রামের যোগগুরু স্বামী ভোগীরথানন্দ সরস্বতী আসলেন।  পরবর্তীকালে এই যোগীর কাছ থেকে শিবরাম সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন। সন্ন্যাস নেওয়ার পর তিনি গুরুর নির্দেশে পর্যটনে বাহির হলেন।  রামেশ্বর, নেপাল, উত্তরাখন্ড, প্রয়াগ ঘুরে ১৮৪৪ সালে তিনি কাশীতে এসে পৌঁছলেন। কঠোর সাধনায় এবং গুরুর কৃপায় তিনি হয়ে উঠলেন মহাশক্তিধর যোগগুরু। কাশীতে এসে প্রথমে আসিঘাটে গোস্বামী তুলসীদাসের বাগানে বাস করতে আরম্ভ করলেন।  তারপর হনুমান ঘাট, দশাশ্বমেধ ঘাট আর সবশেষে পঞ্চগঙ্গা ঘাটে বাস করতে লাগলেন। তাঁর মুখে শিব আরাধনার স্ত্রোত্র শুনতে কাশীর ঘাটে প্রচুর লোক সমাগম হতো।   কাশীর ঘাটে-ঘাটে, অলিতে-গলিতে তাঁর মহিমা ছড়িয়ে আছে। তাঁর অলৌকিক কান্ডকারখানার সাক্ষী থাকতো কাশীর অধিবাসীরা। নগ্ন হয়েই তিনি ঘুরে বেড়াতেন। তাঁর আরো দুটো -তিনটি অলৌকিক মহিমার গল্প আজ আপনাদের জনাব।

স্বামীজী যখন আসি ঘাটে বাস করতেন, তখন তিনি প্রায়ই লোলার্ক কুন্ডে যেতেন। একদিন তিনি ওখানে গিয়ে দেখেন ব্রহ্মসিংহ নামে  আজমীরের এক বাসিন্দা কুষ্ঠরোগে পঙ্গু হয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছেন।  এই দৃশ্য দেখে মহাযোগীর করুণা হল, তিনি সস্নেহে একটা বেলপাতা ব্রহ্মসিংহকে দিয়ে বললেন "কোন চিন্তা করো না. তুমি লোলার্ক কুন্ডে স্নান করে এসে এই বেলপাতাটি মাথায় ধারণ করলে তোমার সব রোগ সেরে যাবে।" ব্রহ্মসিংহ স্বামীজীর কথা মতো লোলার্ক কুন্ডে স্নান করে এসে মাথায় বেলপাতা ধারণ করলেন এবং অচিরেই রোগমুক্ত হলেন।

মহাযোগী একদিন আসি ঘাটে পৌঁছে দেখলেন একজন তরুণী তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে উচ্চকন্ঠে কাঁদছেন।  সাপের কামড়ে তার স্বামী মারা গেছেন।  যেহেতু সাপে কাটা মৃতদেহকে শশ্বানে পোড়ানো হয় না, তাই তার আত্মীয়রা গঙ্গার ভাসানোর উদ্দেশ্যে আসি ঘাটে মৃতদেহটি নিয়ে এসেছে।  এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে পরম দয়ালু স্বামীজী মনে মনে খুব কষ্ট অনুভব করলেন। স্বামীজী নদীর ধার থেকে কিছুটা গঙ্গামাটি নিয়ে এসে মৃতদেহের ক্ষতস্থানে মাখাইয়া দিলেন।  কিছুক্ষন পর সবাই দেখল আস্তে আস্তে দেহে প্রাণ সঞ্চার হতে লাগল। সবাই এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তরুণীটিও তার জীবনসাথীকে ফিরে পেল।

একবার এক বদমেজাজের নতুন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে কাশীতে এলেন। তিনি একদিন নগর পরিক্রমায় বেড়িয়ে দশাশ্বমেধ ঘাটে এসে উপস্থিত হলেন।  এখানে তিনি এক  উলঙ্গ স্বামীজিকে দেখে ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন।  হাজতের  ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী ও কয়েকজন রক্ষীকে ডেকে পাঠালেন এবং আদেশ দিলেন এই অসভ্য লোকটাকে ধরে হাজতে পাঠাবার জন্য।  সবাই মিলে স্বামীজিকে ধরে হাজতে তালাবন্ধ করে রাখলেন। স্বামীজী তখন ভাবলেশহীন। পরদিন সকালে ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীজিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁর ঘরে গিয়ে দেখলেন যে ঘর ফাঁকা, স্বামীজী বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘরে যেমন তালা লাগানো ছিল, তেমনি লাগানো রয়েছে।  তিনি ঘরটির দরজা, দেওয়াল ও তালা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখলেন, সব ঠিকই রয়েছে।  কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারলেন না কিভাবে কয়েদি ঘরের  বাইরে আসল।  তিনি বেশ গম্ভীরভাবে স্বামীজিকে বললেন, "সাধু, তুমি সত্য কথা বল, কি করে তুমি হাজতের বাইরে এলে?" স্বামীজী সহজ সরল ভাষায় বললেন "প্রত্যুষে আমার বাইরে আসবার ইচ্ছে হয়েছিল। সেই  ইচ্ছে হবার পরমুহূর্তে বাইরে এসে পড়লাম, কোনো বাধা কোথাও পেলাম না।" কয়েদির ঘরটি জলে জলময় হয়েছিল। মেজিস্ট্রেট স্বামীজীর কাছে জানতে চাইলেন এতো জল কিভাবে এখানে এলো।  স্বামীজী বললেন, "রাতে আমার প্রস্রাবের বেগ হয়েছিল, দেখলাম দ্বার তালাবন্ধ, ঘরের বাইরে যেতে তখন ইচ্ছে হয়নি, তাই শায়িত অবস্থাতেই খানিকটা মূত্রত্যাগ করেছি। তারপর রাত  হয়ে এলে, অন্ধকার ঘরটা তেমন আমার ভালো লাগছিল না , তাই মুক্ত হাওয়ায় এই বারান্দায় একটু ঘুরে বেড়াচ্ছি।" মেজিস্ট্রেট ভীষণ রেগে গেলেন, তিনি স্বামীজিকে আবার হাজতে পুড়ে নিজের হাতে দু-দুটো তালা লাগিয়ে তার এজলাসে চলে এলেন। কিছুক্ষন পরে তিনি এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন। তিনি যাকে নিজের হাতে তালাবন্ধ করে এলেন, সেই স্বামীজী তার এজলাসের এক কোনে বসে দুষ্টু বালকের মতো হাসছেন। এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে মেজিস্ট্রেট হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। স্বামীজী আস্তে আস্তে তার সামনে এসে বললেন "সাহেব, তুমি অন্যান্য সাধারণ মানুষের মত শুধু জড় ও জড়ের শক্তিই বোঝো। এই জগতের মধ্যে ওতপ্রোত হয়ে আছে এক চৈতন্যলোক, তার খবর তোমার মোটেই জানা নেই, সেই চৈতন্যলোকের সঙ্গে যার যোগাযোগ সাধিত হয়েছে, কোনো বন্ধন বা কোনো বাঁধাই আর তার স্বেচ্ছাবিহারকে আটকাতে পারে না। ভারতের যোগীপুরুষদের শক্তির কাছে পৃথিবীর কোনো কার্যই কখনো অসাধ্য বলে গণ্য হয় না।  বেটা, তাহলে বল দেখি , আমার মতো সাধু সন্ন্যাসীকে বিরক্ত করে কি লাভ ? তাছাড়া, সে শক্তিই বা তোর আছে কোই ?" মেজিস্ট্রেট তখন তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং তিনি নির্দেশ দিলেন যে কাশী শহরে তৈলঙ্গস্বামী নিজের ইচ্ছামত যেখানে খুশি ঘুরতে পারবেন। তাঁকে কেউ বাধা দিতে পারবে না।

কখনো তাঁকে  কাশীর গঙ্গায় ভাসমান আবার কখনো ডুবন্ত অবস্থায় দেখা যেত। গঙ্গার সাথে তাঁর যেন অন্তরের সম্পর্ক ছিল। এরকম বহু লীলা বা মহিমা স্বামীজী দেড়শো বছর ধরে দেবভূমিতে করে গেছেন।  সাধারণ সাধু সন্ন্যাসীদের জীবন সাধারণত শিষ্যবর্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।  কিন্তু তৈলঙ্গস্বামীর সে অর্থে কোন শিষ্য ছিল না।  উমাচরণ মুখোপাধ্যায়ের নামই একমাত্র শিষ্য হিসেবে শোনা যায়, তবে তাঁর প্রচুর ভক্ত ছিলেন। । ১৮৮৭ সালের পৌষ মাসের শুক্লা একাদশীর পুন্য তিথিতে স্বইচ্ছায় ২৮০ বছর বয়সে তিনি যোগবলে দেহরক্ষা করেন অর্থাৎ প্রয়াত হন।  মৃত্যুর পূর্বে তিনি ভক্তদের বলে গিয়েছিলেন তাকে চন্দনকাঠের বাক্সে ভোরে গঙ্গা সমাধি দেওয়ার কথা তাঁর ইচ্ছাই ভক্তগণ পূরণ করেন।

 ১৮৬৮ সালে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব কাশীতে যখন এসেছিলেন তখন তিনি তৈলঙ্গস্বামীর সাথে দেখা করেছিলেন এবং নিজ হাতে তৈরী করা পায়েস স্বামীজিকে খাইয়েছিলেন। যোগী শ্যামাচরণ লাহিড়ীও স্বামীজীর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

মহাত্মা তৈলঙ্গস্বামী ছিলেন ভারতের  সাধকদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল জোতিস্ক। প্রথম বিস্ময় তাঁর দীর্ঘ আয়ু। আরো বিস্ময় অলৌকিক ক্ষমতাবলে  মানবের জীবন দান  ও হিতসাধন করা। তবে এটা  চিরন্তন সত্য যে মানব কল্যানে ব্রতী হয়ে ভারতবর্যে যুগে যুগে ঈশ্বর বিভিন্ন অবতারের রূপ ধরে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন। কখনও বুদ্ধ, কখনও যিশু আবার কখনও শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস। তেমনি তৈলঙ্গস্বামীকেও ভগবানের  এক রূপ বলে মানব সমাজ মেনে নিয়েছে।






ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ : ২৫-০১-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 

Saturday, January 11, 2020

মন্দারমণি>P

 লাল কাঁকড়ার দেশে 




অফিসে দু-তিনদিন ছুটি পেলেই বাঙালি মন ঘরে টিকতে চায় না।  কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করতে থাকে, আর যদি সেটা হয় শীতকাল, তবেতো কোনো কথাই নেই, ঘর ছেড়ে বেরোতেই হবে। অল্প সময়ের ছুটিতে ভ্রমনরসিকরা কাছাকাছি পাহাড়, জঙ্গল বা সমুদ্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। ভ্রমণের ব্যাপারে বাঙালির যে একটা প্রসিদ্ধি আছে, ভারতের অন্য রাজ্যের অধিবাসীদের বোধহয় সেটা নেই। ভ্রমণটা বাঙালির মজ্জায় মজ্জায় গেঁথে রয়েছে। তেমনি এক অল্প শীতের ছুটির মুহূর্তে আমি সপরিবারে পাড়ি জমালাম পূর্ব মেদিনীপুরের এক সৈকতে।  বৈচিত্রময় পৃথিবীর দুটো জিনিস মানুষকে সবসময় অভিভূত করে। আকাশ আর সমুদ্র, দুটোই বিশাল আর অসীম। পার্থক্য হল, আকাশকে স্পর্শ করা যায় না, আর সমুদ্রকে শুধু স্পর্শ নয়, সর্ব শরীরকে তার কোলে নিমজ্জিত করা যায়।

 সূর্য্যোদয় 

পূর্ব মেদিনীপুরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অনেকগুলো সৈকত রয়েছে, তাজপুর আর মন্দারমণি ছাড়া সব কটাই আমার দেখা হয়ে গেছে। তাই এবার চললাম লাল কাঁকড়ার দেশ মন্দারমণিতে। ব্যস্ত জীবনে একটু বিশ্রাম, একটু মুক্তির স্বাদ, আর সমুদ্রের মাতাল হাওয়ায় নিজেকে মাতাল করে তোলা। হালকা শীতল আবহাওয়া, সমুদ্রের শান্ত ঢেউ, মৃদু গর্জন, সেটা তো বিশ্রাম ও শান্তির আর এক নাম। দুচোখ ভরে শুধু দেখে যাওয়া আর মন ভরে শুধু বিশুদ্ধ নিশ্বাস নেওয়া।

শীতের এক সকালে ধর্মতলা থেকে দিঘাগামী বাস ধরে চাউলখোলাতে পৌঁছলাম। প্রায় ১৮০ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে ঘন্টা চারেক সময় লাগলো।  এখান থেকে ভ্যান রিক্সা ধরে মন্দারমণি আসলাম।  রাস্তার ধারে অজস্র হোটেল। একটু ঘোরাঘুরি করে একটা হোটেলে সমুদ্রের দিকে একটা ভালো ঘর পেয়ে গেলাম।  ঘরে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়েই ছুট লাগলাম সৈকতে।  সামনে দিগন্ত বিস্তীর্ন ঘন নীল আকাশ, বঙ্গোপসাগরের সুনীল জলরাশি, ঝাউয়ের হাতছানি  আর নিরালা সাগরবেলা।  সমুদ্র উপকূলের নয়নাভিরাম দৃশ্য সার্বিকভাবে আমাদের মন ভরিয়ে দিল। এখানকার সমুদ্রতট সমান হওয়ার জন্য দেখলাম দুদিকেই বহুদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। তটটিও বেশ  পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

মাছ ধরার নৌকো 

হোটেলে ফিরে  দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফিরে এলাম তটভূমিতে। তখন ভাটা  চলছে, সৈকতের বেশিরভাগ অঞ্চলটাই দৃশ্যমান, বালুকাতটে লাল কাঁকড়ার মিছিল, দূর থেকে মনে হচ্ছে অনেকটা জায়গা জুড়ে কে যেন টকটকে লাল আবির  ছড়িয়ে দিয়েছে।  সামান্য পায়ের আওয়াজেই তারা বালির গর্তে লুকিয়ে পড়ছে, চলছে তাদের লুকোচুরি খেলা।  সমুদ্রের তটভূমি  ধরে বেশ কিছুক্ষন হাঁটলাম।  রোদ ঝলমলে দুপুরের পর সৈকতে বিকেলের পড়ন্ত রোদ এসে পড়তে লাগলো। ধীরে ধীরে আলো কমে আসতে লাগল, লালচে আভা ছড়িয়ে পড়তে লাগল সমগ্র সৈকতজুড়ে, সূর্য্যিমামাও পশ্চিমপাড়ে ঝাউয়ের বনে ঢোলে পড়লো। অনেক্ষন হাঁটার ফলে আমরাও কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। দীঘার থেকে ঝাউয়ের বন এখানে একটু কম বলেই আমার মনে হলো, তও যা রয়েছে তা এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। আমরা পাকোড়া ও চা খেয়ে অঞ্চলটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম, সৈকতের ধারেই বেশ বড় একটা বাজার রয়েছে যেখানে নানারকম খেলনা, শামুকের তৈরী মূর্তি, কাপড়ের ব্যাগ আরো অনেক কিছু বিক্রি হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের অলংকারও। সব সমুদ্র সৈকতের মতো এখানেও  ভাজা মাছ বিক্রি চলছে। বহু স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখলাম তেলেভাজা ও মুড়ি কিনছে। ওদের দেখা দেখি কয়েকজন পর্যটকও গরম গরম তেলেভাজার স্বাদ নিচ্ছে। বহু পর্যটককে দেখলাম নানারকম জিনিস কিনছে। এখানে বিকি-কিনি বেশ ভালোই হচ্ছে বলে আমার মনে হলো। আমার গিন্নি  একটা সুন্দর পুঁথির মালা ও কানের দুল কিনলো, জানিনা নিজের জন্য না অন্য কারোকে উপহার দেবে।  এবার হোটেলের পথ ধরলাম।

সৈকত 

ঘর থেকেই দেখছিলাম চাঁদের আলোয় বেলাভূমির বালিগুলো হীরের মতো চিক্চিক করছে। ভাবছিলাম জ্যোস্না রাতে বেলাভূমিটি নিশ্চয় আরো ঝিকমিক করে, তখন নিশ্চয় আরো অপরূপা লাগে। জ্যোস্ন্যা রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্য্য পৃথিবীর যে কোনো সৌন্দর্যকে হার মানায়। রাত যত বাড়ছে সমুদ্রের গর্জন তত হুঙ্কার ছাড়ছে। যদিও দীঘা বা পুরীর তুলনায় সেটা অনেকটাই কম। দীঘার কোলাহল পরিবেশ আর এখানকার শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশ দুটো পাশাপাশি সৈকতের মধ্যে কতটা ফারাক। এখানকার পরিবেশের সাথে ঈশ্বর যেন এখানকার ঢেউগুলোকেও শান্ত করে দিয়েছে। মন্দারমণি ও তাজপুর পশ্চিমবঙ্গের নতুন আবিষ্কৃত সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। মন্দারমণির সৈকত বেশ শক্ত, পূর্বে এই সৈকত ধরে গাড়ি যাতায়াত করতো, বর্তমানে  সরকারি তরফ থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মোহনায় বাঁক কাঁধে জেলে 

ছোট ছোট চারটি গ্রাম নিয়ে তৈরী এই মন্দারমণি। .সমুদ্রতীরবর্তী গ্রামগুলোতে এককালে নোনা জলের বেশ কিছু ভেড়ি ছিল। এইসব ভেরিগুলোতে জেলেদের ও মাছের ব্যবসাদারদের আনাগোনা বরাবরই ছিল, কিন্তু ছিল না তাদের বসবাসের কোনোরূপ আস্তানা। এই মাছ ব্যবসায়ীদের উৎসাহে প্রথম এখানে হোটেল তৈরী হয়, পরবর্তীকালে পর্যটকদের অগমনে হোটেল ব্যবসা ও হোটেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।  মন্দারমণি এই নাম নিয়ে অনেকরকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কেউ বলে অঞ্চলটি মন্দার গাছে ঘেরা ছিল বলে এই নামকরণ আবার কারো কারো মতে বিশাল সৈকতে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দলবদ্ধ দৌড় দেখে কোনো এক সময়ে এখানকার উচ্চপদস্থ কোনো সরকারি আধিকারিক মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাঁর চোখে দৃশ্যটা মন্দার ফুলের মতো লেগেছিল বলে তিনি নাকি এইরূপ নামকরণ করেছিলেন। প্রথমদিকে জায়গাটির নাম ছিল মন্দারবনি, পরবর্তীকালে মদার মণি আর বর্তমানে মন্দারমণি হয়েছে।  বছর কুড়ি আগে জায়গাটা পূর্ব মেদিনীপুরের এক অখ্যাত গ্রাম ছিল।  তার আপন রূপের কারণেই সে আজ সকলের মন জয় করে নিয়েছে।

সৈকত 

পরেরদিন কাক ভোরে উঠে বেলাভূমিতে গেলাম। আবছা আলোয় হাঁটতে থাকলাম। আলো-আধারিতে বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, সারি সারি ঝাউ গাছ, সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউ, পশ্চিমপাড়ে সারিবদ্ধভাবে হোটেল, দিগন্তে জলরাশি ভেদ করে রক্তবর্ণের এক থালা ছোট থেকে বড় হতে লাগল, ধীরে ধীরে তার উজ্জ্বলতা বাড়তে লাগলো, চারপাশের লাল আভা আস্তে আস্তে সাদা হতে লাগল। একটার পর একটা ক্লান্তিহীন ঢেউ বালিয়াড়িতে আছড়ে পড়ছে, জলে পা ভিজিয়ে হেঁটে যাওয়া, এক মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভেসে যাওয়া। জলখাবার খেয়ে হোটেলের ঘরে একটু বিশ্রাম নিয়ে তোয়ালে কাঁধে সমুদ্র স্নানের উদ্দেশ্যে চললাম।

শরীরটাকে কিছুটা নিমজ্জিত করে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকলাম, ক্ষনে ক্ষনে শীতল ঢেউ সমগ্র শরীরকে ভিজিয়ে যাচ্ছে, অনুভব করছি সমুদ্র স্নানের তৃপ্তি। ঢেউগুলো যেন বহুদূর থেকে উড়ে আসা একরাশ শিমুল তুলো, আমি যেন এক ধুনুরির ধনুক, সমানে বুনে চলেছি নকশিকাঁথার বালুচর। আমি আর নেই আমাতে, মিশে গেছি নীল সাগরের অতল জলে।  যতদূর চোখ যায় শুধু ঢেউ আর ঢেউ। ঢেউয়ের তালে তালে আমিও কখনও  এগিয়ে যাচ্ছে আবার কখনও  পিছিয়ে যাচ্ছি, এক মিনিটের জন্য এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছি না। নীল জলের গহন রহস্যে নিজেকে সমানে সামলে চলতে হচ্ছে। আমার মতো অনেকেই স্নান করছে।  লাফালাফি, ঝাপাঝাপি, বেলেল্লেপনা সবই চলছে, চলছে যুবক যুবতীদেরদের বাঁদরামীও। সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ে মনে চলছে অনাবিল আনন্দের ঢেউ। বাচ্ছা বুড়ো সবার মুখেই সেই আনন্দের অভিব্যক্তি ফুটে উঠছে। দুটো পয়সার আশায় কয়েকজন আলোকচিত্রীও ছোটাছুটি করে এইসব দৃশ্যের ছবি তুলছে।

মোহনায় সূর্যাস্ত 


হোটেলে  দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে একটা অটো  ভাড়া নিয়ে চললাম মোহনা দেখতে।  মন্দারমণি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে এই মোহনা অবস্থিত। বিচের শেষে জলধা খতি নদীর কূলে এখনকার মোহনা। মোহনার বালিয়াড়ি খুব নরম।  দীঘার মোহনার মতো এখানে কোনো মাছের আড়ৎ নেই, মাঝে মাঝে ছোট ছোট মাছ ভর্তি নৌকো এসে ভিড়ছে।  জেলেরা বাঁক কাঁধে সেই মাছ নিয়ে ছোটগাড়িতে তুলছে। শুনলাম এই মাছ চলে যাচ্ছে দীঘা মোহনার বাজারে।  মাছ আর মাঝিভাইদের আনাগোনায় জায়গাটা বেশ মনোরম লাগছিলো। এখানেই একটু অপেক্ষা করে সূর্যাস্ত দেখছিলাম। পড়ন্ত বিকেলে আকাশকে চিরে সূৰ্য্যিমামা চারদিক লাল-কমলায় রাঙিয়ে আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। আজকের মতো তার কাজ শেষ। রাতটুকু চাঁদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে যেন তার এই গমন। এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত দৃশ্য বিস্ময়ে  বিমুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকলাম। গভীর আবেশে মন প্রশান্তিতে ভরে উঠলো। জলধা খতি নদীর একপাশে মন্দারমণির মোহনা আর অপরপাড়ে তাজপুর। দূরে বঙ্গোপসাগর।

.রাতে খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে আবার সৈকতের বুকে সূর্য্যোদয়  উপভোগ করলাম। শান্ত নির্জন সৈকতে বসে থাকতে বেশ ভালো লাগলো। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বেশিক্ষন থাকা গেলো না ফেরার তারায়।  আজ আমাদের ফেরার পালা, দুপুরের খাবার খেয়ে একটা অটো  ধরে কাঁথি স্টেশানে চলে এলাম। এখান  থেকেই ট্রেন ধরে কলকাতার উদ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম।


নিরালা  পরিবেশে মন্দারমণি ঘোরা সত্যি মনোরম। দুটো দিন এই নিরিবিলি জায়গায় কাটাতে মন্দ লাগলো না। শান্ত, নির্জন সমুদ্রে মন পেল বিশ্রাম, প্রাণ পেল আরাম। যেন এক ক্যানভাসে আঁকা কোনো শিল্পীর তুলিতে উঠে আসা সব দৃশ্য। যা নির্ভেজাল ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা। দীঘার  ভিড় এড়িয়ে সমুদ্র ভ্রমণের অবশ্যই আদর্শ ঠিকানা এই শান্ত সৈকতটি। সমুদ্রের পেট চিরে সূর্য্যের উদয় হওয়া  আর পশ্চিমপাড়ে সূর্য্যের হারিয়ে যাওয়ার মনভোলানো দৃশ্য যা আমার কাছে সারাজীবনের এক স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। সমুদ্রকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার জন্য এখানকার নিরিবিলি পরিবেশে  দুটো দিন কাটাতে আপনারও বেশ ভালো লাগবে।



কিভাবে যাবেন :
কলকাতার ধর্মতলা থেকে দীঘাগামী বসে করে এসে চাউলখোলাতে নামুন। ওখান থেকে অটো করে অনায়াসে পৌঁছে যাবেন। অথবা হাওড়া থেকে দীঘার ট্রেন ধরে রামনগর বা কাঁথি স্টেশনে নামুন।  ওখান থেকে অটো ধরে মন্দারমণি চলে আসুন।

কোথায় থাকবেন :

অনেক হোটেল রয়েছে, তবে আগে থেকে বুক করে যাওয়া ভালো।

কোথায় কোথায় ঘুরবেন :

মন্দারমণি থেকে আপনি দীঘা, তাজপুর, শংকরপুর, দীঘার  মোহনা অটো ভাড়া করে দেখে আসতে  পারেন।


ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ : ১১-০১-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 




Thursday, January 2, 2020

পৌষ মেলা>p

পৌষের আমন্ত্রণে গ্রামীণ মেলায় 




পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে 
আয় রে চলে, আয় আয় আয়। 


 শীত ঋতুর পৌষ মাসেই বাংলায় নবান্ন উৎসবের পরে আয়োজিত হয় বিভিন্ন উৎসব। পৌষের কুয়াশায়, শীত শীত হাওয়ায়, শীতল বাতাসে নেচে ওঠে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের মন। শীতকাল আর মেলা যেন একে  ওপরের পরিপূরক।  এই সময় কলকাতা ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি মন এইসব মেলাগুলোকে উপেক্ষা করে ঘরে বসে থাকতে পারে না।  বছর দুয়েক আগে আমিও  পৌষের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারিনি। চলে গিয়েছিলাম এক গ্রামীণ মেলায়। ডাকছিল  পৌষ, ডাকছিল শান্তিনিকেতন, এ যেন মাটির টানেই চলে যাওয়া।


এককালে পশ্চিমবঙ্গের একটা ছোট্ট গ্রাম ছিল ভুবনডাঙ্গা। ১৮৬০ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ গ্রামটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল কিনে নিয়েছিলেন। অঞ্চলটির উন্নয়ন করেন। তৈরী করেন তাঁর সাধের প্রার্থনা ভবন।  পরবর্তীকালে ভুবনডাঙা হয়ে যায় শান্তিনিকেতন। মেলাকে কেন্দ্র করে কবিগুরুর  নানান স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে , জড়িয়ে রয়েছে নানান গল্পগাঁথা। 


১৮৪৩ সালের ২১শে ডিসেম্বর (৭ই পৌষ, ১২৫০) মহর্ষি কয়েকজন অনুগামীকে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছ থেকে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেন।  ১২৯৮ সালের ৭ই পৌষ (২১শে ডিসেম্বর, ১৮৯১) শান্তিনিকেতনে তিনি একটা ব্রাহ্ম মন্দির স্থাপন করেন।  এই মন্দিরের উদ্বোধনের সময় তিনি মূল মন্দিরের ঠিক বিপরীত দিকের মাঠে একটা ছোট্ট মেলায় আয়োজন করেন। সেই থেকেই শান্তিনিকেতনের জগৎ বিখ্যাত পৌষ মেলার শুরু। মহর্ষির প্রয়ানের পর রবীন্দ্রনাথই মেলার রূপকার হিসেবে দেখা দেন।  মেলার আয়তন বৃদ্ধি পাবার ফলে পরে মেলাটি পূর্বপল্লীর মাঠে আয়োজন করা হয়। মেলাটি চলে দিন তিনেক তবে ভাঙা মেলাটি চলে আরো বেশ কয়েকদিন। সমগ্র শহরটি জুড়েই বসে যায় পসরার হাট। খোয়াইয়ের পাড়ও হয়ে ওঠে জমজমাট। একতারার সুরে রবীন্দ্রনাথের শহর দুলতে থাকে। প্রতিবছর নিয়ম করে বিশ্বভারতী ৭ই পৌষ থেকে ৯ই পৌষ মেলাটির আয়োজন করে থাকে। মেলার সূচনা হয় বৈতালিক গান দিয়ে। গান গেয়ে গেয়ে আশ্রমিকরা ও অতিথিরা শালবীথি, আম্রকুঞ্জ, বকুলবীথি, ছাতিমতলা  পরিক্রমা করেন।উপাসনা, প্রয়াত আশ্রমিকদের স্মরণ থেকে খ্রিস্ট উৎসবের মাধ্যমে মূল পৌষ মেলাটির সমাপ্তি ঘটে।  এই মেলার বড় বিশেষত্ব হস্তশিল্প ও গ্রামীণ কৃষ্টির উপস্থিতি। বাঙালির অনুভূতির সঙ্গী যেমন রবীন্দ্রনাথ, তেমন রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা বাঙালির মননের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। 




 বছর দুয়েক আগে কলকাতা থেকে রওনা দিলাম পৌষের আমন্ত্রণে বোলপুরে। পৌঁছে গেলাম ঘন্টা তিনেকের মধ্যে।  স্টেশনে নেমে দেখলাম লোকে লোকারণ্য।  সবাই একটা গাড়ির জন্য ছোটাছুটি করছে। কেউ কেউ কিছু না পেয়ে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর ভাগ্যক্রমে একটা সাইকেল রিক্সা পেয়ে গেলাম। আগে শুনেছিলাম স্টেশন থেকে মেলা প্রাঙ্গনের ভাড়া ৩০ টাকা, কিন্তু রিক্সাওয়ালা আমার কাছে ২০০ টাকা চাইলো।  অনেক দরাদরি করার পর ১৫০ টাকায়  সে রাজি হলো।  অল্প সময়ের মধ্যে মেলা প্রাঙ্গনে পৌঁছে গেলাম। 



 রিক্সা করে যেতে যেতে দেখছিলাম রাস্তার ধারে অনেক জায়গায় গ্রাম্য মহিলারা নানারকম পসরা সাজিয়ে বসে আছে।  মেলা প্রাঙ্গনে ঢুকে দেখলাম চারদিকে শুধু দোকান আর দোকান। বেশিরভাগই হস্তশিল্পের দোকান। প্রাঙ্গনটিতে নিরাপত্তার  বেশ আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা রয়েছে।  সাদা পোশাকের মহিলা ও পুরুষ পুলিশ টহল দিচ্ছে।  ওয়াচ টাওয়ার ও সিসিটিভির মাধ্যমে অঞ্চলটির দেখভাল চলছে একটি কেন্দ্র থেকে। রয়েছে পুলিশের একটা সহাযতা কেন্দ্র। এছাড়া বিশ্বভারতীর বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষীও  পর্যটকদের সহাযতা করছে। রিক্সাওয়ালার মুখে শুনছিলাম আগে আতসবাজির প্রদর্শনী হতো, বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে তা বন্ধ রয়েছে।  দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাঙ্গনটিতে মাঝে মাঝে জল ছড়ানো ও ঝাড় দেওয়া হচ্ছে।  মেলার এক ধারে একটা বিশাল মঞ্চ রয়েছে, রয়েছে মঞ্চটির পিছনে বাউলের আখড়া।  মঞ্চটিতে সারাক্ষণই বাউল সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছে।  এই বাউল সংগীত মেলাটির অন্যতম আকর্ষণ। 




মেলাটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের স্টল রয়েছে, রয়েছে শান্তিনিকেতন ব্যাগ, কাঠের তৈরী বিভিন্ন খেলনা, টেরাকোটার তৈরী ঘর সাজানোর জিনিস, পাটের তৈরী পুতুল ও জুতো, ডোকরার অলংকার, বাঁশি-ডুগডুগি-একতারা। এছাড়া বই, বস্ত্র ও চর্মজাত দ্রব্যের দোকানও  ঝলমল করছে। বাঁশির সুরে দোল দিচ্ছে পিঠে-পুলিও।  জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি বলে মনে হলো না। মেলার মধ্যে গ্রামীণ ও শহুরে জিনিসের সম্ভার সর্বত্রই বিরাজ করছে।  মেলার একপ্রান্তে বাচ্ছাদের খেলার জন্য দু-তিনটে জায়গা করা আছে, সেখানে টিকিটের বিনিময়ে বাচ্ছারা কিছুটা সময় অতিবাহিত করতে পারে। প্রাঙ্গণটির ঠিক মাঝখানে একটা জায়গা গোল করে ঘিরে রাখা আছে, জায়গাটি অপূর্ব ফুলে সজ্জিত  রয়েছে।  তবে ফুলগুলো সবই মেলার শোভাবর্ধনের জন্য, ক্রয় করা যাবে না। সবশেষে বলি মেলার মূল আকর্ষণ বাউল সংগীত হলেও খাবারের স্টলগুলো কম আকর্ষণের নয়।  আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবেই। বাচ্চা  থেকে বুড়ো সবাই বসে খাবার খেতে খেতে একটু বিশ্রাম করে নিচ্ছে।  গরম গরম জিলিপি, এগরোল, ঘুগনি, তেলেভাজা, বাদামভাজা, পাউরুটির কাটলেট, বিরিয়ানি কি নেই সেখানে। জিভে জল আনার পক্ষে যথেষ্ট।  আমিও লোভ সামলাতে পারলাম না, একটা এগ রোলের অর্ডার দিয়েই ফেললাম।  খেতে খেতে কিছুটা বিশ্রামও  হয়ে গেলো



কয়েকদিনের মেলা হলেও মেলাটিতে দেশীয়দের সাথে বহু বিদেশী পর্যটককেও ঘুরতে দেখছিলাম।  কেনাকাটা বা বিকিকিনি বেশ ভালোই চলছে। মেলাটি যেন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রনে গড়ে উঠেছে। হস্তশিল্প ও গ্রামীণ শিল্পীদের সম্ভার বিক্রিকে বিশ্বভারতী সবচেয়ে বেশি গুরুত্ত্ব দেয়। হাড় হিম করা কড়া ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে লালমাটির শাতিনিকেতন কয়েক হাজার মানুষের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠেছে। শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা হয়ে উঠেছে বাংলার ঐতিহ্যের মিলনস্থল। 



বেড়েছে খরচ, বেড়েছে ব্যবস্থাপনার খরচও,  বিশৃঙ্খলা ও বিন্যাসের প্রতুলতা ছাড়িয়ে গেছে বোলপুর থেকে শান্তিনিকেতন হয়ে খোয়াই পর্যন্ত।  বেড়েছে হুল্লোড়ের ব্যাপ্তি, কমেছে ধর্মীয় পবিত্রতা ও শান্তশ্রী পরিবেশ। তবে টেরাকোটার কারুকাজ কেনা, বাউল গানের আসর, চেনা-অচেনা মানুষের মৈত্রী, কুয়াশাঘেরা বিষণ্ণতা আজও টিকে আছে। এ যেন গ্রামীণ কার্নিভ্যাল। বাঙালির সাধের পৌষমেলা আজ চিরাচরিত ঐতিহ্যকে  ছাপিয়ে যেন হয়ে উঠেছে কর্পোরেট। 



বর্তমানে পৌষ মেলার চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে। মহর্ষির আদর্শ কিছুটা হলেও বিচ্যুত হয়েছে।  কয়েকদিন আগে একটা দৈনিক কাগজে পড়চ্ছিলাম এক প্রবীণ আশ্রমিক জানিয়েছিলেন "পৌষমেলা তার আদর্শ ও ঐতিহ্য থেকে সরে এসেছে। সেকালের পৌষমেলার সাথে আজকের মেলার অনেকটাই ফারাক ঘটে গেছে।" আমি আগে কখনো এখানকার মেলায় আসিনি, তাই এই সম্বন্ধে আমার কোনোরূপ ধারণা নেই। তবে মেলা প্রাঙ্গনে ও রাস্তায় বেশ কিছু বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন দেখছিলাম।  যুগের পরিবর্তনের সাথে হয়তো গ্রামীণ চরিত্র হারিয়েছে।  মেলা প্রাঙ্গণেও বেশ কয়েকটি নামি-দামি সংস্থার স্টলও  রয়েছে। যাইহোক, জনপ্রিয় মেলাটি দেখতে সুদূর কলকাতা থেকে এসে বেশ আনন্দই উপভোগ করলাম। বাঙালির জীবনের সংস্কৃতির সাথে মেলাটি এখনো নিবিড়ভাবেই জড়িয়ে আছে বলে আমার মনে হলো। সন্ধ্যের ট্রেন ধরে আমায় ফিরে  সতে হবে বলে আর সময় নষ্ট করলাম না।  মেলা প্রাঙ্গন ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। 

কিভাবে যাবেন :
হাওড়া থেকে গণদেবতা, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ও আরো অনেকগুলো ট্রেন রয়েছে যেগুলো সরাসরি বোলপুর যায়। শিয়ালদহ থেকেও মাতারা  এক্সপ্রেসও বোলপুর যায়।  তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো সময় লাগে। বোলপুর থেকে মেলাপ্রাঙ্গন মিনিট কুড়ি  সময় লাগে। 

কোথায় থাকবেন :
বোলপুরে ও শান্তিনিকেতনে প্রচুর বেসরকারি হোটেল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন  দপ্তরের একটা সুন্দর অতিথি নিবাস রয়েছে।  মেলার সময় যেতে চাইলে অন্তত দু-তিন মাস আগে থেকে হোটেল বুক করতে হবে, নইলে জায়গা পাওয়া যাবে না।  





ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ : ০২-০১-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।