Tuesday, February 15, 2022

সাবর্ণ সংগ্রহশালায় অনুষ্ঠিত  আন্তর্জাতিক ইতিহাসের আসর


সুদীপ্ত মুখার্জী


অনুষ্ঠান মঞ্চ 



আমাদের প্রাণের শহর কলকাতা। সেই তিলোত্তমার এক প্রাচীন পরিবার হল সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। এই পরিবার প্রতিবছরই নিজেদের বাড়িতে এক ইতিহাস উৎসবের আয়োজন করে থাকেন। বর্তমানে সেই উৎসব আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং দূর-দূরান্ত থেকে অগণিত ইতিহাসপ্রেমীরা ভিড় করেন এই বাড়ির ইতিহাস উৎসবে। প্রতিবারের মতন এবারও বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের বড়বাড়িতে সাবর্ণ সংগ্রহশালার আয়োজনে শুরু হয়ে গেল ষোড়শ আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব। গত ১৩ তারিখে  সকাল ১০টায় এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হল, চলবে আগামী ১৬ তারিখ অবধি। সাধারণ মানুষজনের বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে তবে প্রবেশের ক্ষেত্রে মানতে হবে কোভিড বিধি।

সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক শ্রীযুক্ত দেবর্ষি রায় চৌধুরীর সাথে আমি 



এই বিষয়ে কথা হল সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক তথা সাবর্ণ সংগ্রহশালার কিউরেটর দেবর্ষি রায় চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানালেন এবার এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো সিন্ধু সভ্যতার ১০০ বছর উদযাপন। এছাড়া এবার  তাঁরা সর্বপ্রথম স্বনামধন্য অভিনেতা রবি ঘোষকে সম্মান জানাচ্ছেন।  রবিবাবুর  ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রদর্শনীতে রেখেছেন। প্রখ্যাত অভিনেতার ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, পেন, টুপি, ব্যাগ ইত্যাদি রাখা হয়েছে সাবর্ণদের প্রদর্শনীতে। এছাড়া তিনি জীবনে যে সমস্ত সম্মান পেয়েছেন তার কিছু অংশও রাখা হয়েছে আন্তর্জাতিক এই ইতিহাস উৎসবে। এবারের এই উৎসবের থিম ক্যান্ট্রি শ্রীলঙ্কা এবং ফ্রান্স। সেখানকারও নানান উপাদান সাজানো রয়েছে এই প্রদর্শনীতে।

সিন্ধু সভ্যতায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র



এছাড়া অন্যান্য ঐতিহাসিক উপাদানের পাশাপাশি এবার সাবর্ণদের ইতিহাস উৎসবের মূল আকর্ষণ হল সিন্ধু সভ্যতা (হরপ্পা) আবিষ্কারের ১০০ বছর উৎযাপন। যে সভ্যতা প্রায় ৫০০০ বছরেরও প্রাচীন তা ১৯২১ সালে দয়ারাম সাহানি এবং রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। এই সিন্ধু সভ্যতার ইট, মাটির পাত্র, পুতুল ইত্যাদি নানান ঐতিহাসিক উপাদান রাখা হয়েছে সংগ্রহশালার প্রদর্শনীতে। এইসব জিনিস আমরা এতদিন শুধু ছবিতে দেখে এসেছি।  এখানে এসে তার সামান্য কিছু আমার চাক্ষুস করার সৌভাগ্য হল।
 
কিংবদন্তি শিল্পী রবি ঘোষের উল্টোরথ পুরস্কার

এবারে তাঁরা অভিনেতা রবি ঘোষের সাথে বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও সম্মান জানাচ্ছেন। এই মহান শিল্পীর যেমন বেশ  কিছু দুষ্প্রাপ্য রেকর্ডস এই প্রদর্শনীতে স্থান  পেয়েছে। তেমন শিল্পীর বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবিও রয়েছে।  

শিল্পী ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দুষ্প্রাপ্য রেকর্ডস্


সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বিভিন্ন জনের  ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা রয়েছে প্রদর্শনীতে। এছাড়া এই পরিবারের প্রথম জমিদার লক্ষ্মীকান্ত রায় চৌধুরীর জীবনের কিছু ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে ইতিহাস উৎসবে।  এছাড়া দুই আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা ইত্যাদি এই পাঁচ মহাদেশের পুতুল সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে সংগ্রহশালার প্রদর্শনীতে।

আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবে নতুন ভাবে প্রকাশিত ‘লক্ষ্মীকান্ত’ বইটির উদ্বোধন করছেন সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় এবং সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক দেবর্ষি রায় চৌধুরী


আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবে নতুন ভাবে প্রকাশিত 'লক্ষীকান্ত' বইটি পুনঃ প্রকাশিত হল। বইটির  উদ্বোধন করেন রাজ্যসভার সদস্য মাননীয় সুখেন্দু শেখর রায়।  

 প্রতি বছরের ন্যায় এবছর এই ইতিহাস উৎসব বেশ শিক্ষণীয়।  প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এই উৎসব দর্শন করা উচিত। 



তারিখ :-১৫-০২-২০২২

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 




Friday, February 4, 2022

সোনামুখীর দে বাড়ির সরস্বতী পুজো >P

শতবর্ষ উত্তীর্ণ ব্যতিক্রমী ও অভিনব সোনামুখীর দে বাড়ির সরস্বতী পুজো 



সুদীপ্ত মুখার্জী 


সোনামুখী হল বাঁকুড়া জেলার একটা সুপ্রাচীন জনপদ। সোনামুখীর নামকরণ হয় দেবী স্বর্ণময়ী  থেকে। এই অঞ্চলের জমিদার অধরচন্দ্র দে মহাশয় বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকে সোনামুখীর জমিদারি পান। তাঁরই বদান্যতায় ১৯০৬ সালে সোনামুখীতে একটি দেবী সরস্বতীর মন্দির স্থাপিত হয়। তিনি নারী শিক্ষার প্রচলন ও প্রসারের উদ্দেশ্যে দেবী সরস্বতীর আরাধনা শুরু করেন। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন তিনি মকর সংক্রান্তির দিনে এক স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  এই পূজাটি দেখতে দেখতে আজ ১১৬ বছরে পদার্পন করলো। এখানে পূজাটি দুদিন নয়  চারদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 
সরস্বতী মন্দির 


সোনামুখী জমিদার বাড়ীর  কন্যা শ্রীমতী  নিলয়া দে জানালেন যে অধরচন্দ্রের  আট  সন্তান ছিল।  তাঁর সন্তানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট রাখার উদ্দ্যেশে এক চালায় তিনি দেবী সরস্বতীর সাথে তাঁর ভাই ও বোনের পূজা শুরু করেন। আজও এখানে সেই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম হতে দেখা যায়না।   সেই প্রাচীন নিয়ম মেনে এখানে বাগ্দেবীর আরাধনা চলে আসছে।  ডাকের সাজে সজ্জিতা দেবীকে পরিবারের সোনার গহনা দিয়ে সাজানো হয়। 
জমিদার অধরচন্দ্র দে 


শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার সাথে পরিবারের রান্নাপূজা ও অন্যান্য নিয়ম কানুন পালিত হয়।  পূজার প্রথম দিন পরিবারের নারায়ণ ও দেবী লক্ষ্মীকে দামোদর মন্দির থেকে সরস্বতী মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত ও পূজা করা হয়।  তারপর দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়। সরস্বতীর অঞ্জলি দেওয়ার পর পারিবারিক রীতি  মেনে পেঁয়াজ, রসুন ছাড়া মাছ রান্না করে খেতে হয়। দ্বিতীয় দিন মন্দিরের লাগোয়া পরিবারের বাড়িতে দেবী ষষ্ঠীর পূজা করা হয়।  এইদিন ষষ্ঠী দেবীকে ভোগ হিসেবে মাছের পদ ও গোটা সেদ্ধ দেওয়া হয়। তৃতীয় দিন দেবী সরস্বতী ও অন্যান্য দেব-দেবীকে সন্ধ্যায় লুচি ও মিষ্টান্ন দেওয়া হয়।  এই ভোগ স্থানীয় এক ময়রার কাছ থেকে আসে।  এই ময়রার বংশধররা বংশ পরম্পরায় প্রথম থেকে দেবীকে এই ভোগ নিবেদন করে আসছে। চতুর্থ দিন সকালে নারায়ণ ও লক্ষ্মীকে পরিবারের দামোদর মন্দিরে ফেরত নিয়ে  আসা হয়। এইদিন দেবীকে চিড়ে, খৈ, বিভিন্ন ফল ও মিষ্টান্ন ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়।  এছাড়া এইদিন পরিবারের ও পাড়া-প্রতিবেশী সকলের জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে রন্ধন করা হয় খিচুড়ী, চাটনি, তরকারি ও মিষ্টি। এই খিচুড়ী ভোগ অবশ্য দেবীকে প্রদান করা হয় না।  প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেবীকে শীতল ভোগ নিবেদন করা হয়ে থাকে।  চতুর্থ দিন সন্ধ্যায় শোভাযাত্রাসহ দেবীকে স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়।  বিসর্জনের সময় বিভিন্ন প্রকার আতস বাজি পোড়ানো হয়। 

গৃহলক্ষ্মী হাতে পরিবারের কন্যা নিলয়া দে 


  পারিবারিক রীতি মেনে পূজাটি প্রতি বছরের মত  এবছরও  অনুষ্ঠিত হবে। তবে অবশ্যই  করোনার সরকারি বিধি নিষেধ মেনে পূজাটি করা  হবে।


তারিখ :০৪-০২-২০২২

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।