Friday, February 4, 2022

সোনামুখীর দে বাড়ির সরস্বতী পুজো >P

শতবর্ষ উত্তীর্ণ ব্যতিক্রমী ও অভিনব সোনামুখীর দে বাড়ির সরস্বতী পুজো 



সুদীপ্ত মুখার্জী 


সোনামুখী হল বাঁকুড়া জেলার একটা সুপ্রাচীন জনপদ। সোনামুখীর নামকরণ হয় দেবী স্বর্ণময়ী  থেকে। এই অঞ্চলের জমিদার অধরচন্দ্র দে মহাশয় বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকে সোনামুখীর জমিদারি পান। তাঁরই বদান্যতায় ১৯০৬ সালে সোনামুখীতে একটি দেবী সরস্বতীর মন্দির স্থাপিত হয়। তিনি নারী শিক্ষার প্রচলন ও প্রসারের উদ্দেশ্যে দেবী সরস্বতীর আরাধনা শুরু করেন। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন তিনি মকর সংক্রান্তির দিনে এক স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  এই পূজাটি দেখতে দেখতে আজ ১১৬ বছরে পদার্পন করলো। এখানে পূজাটি দুদিন নয়  চারদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 
সরস্বতী মন্দির 


সোনামুখী জমিদার বাড়ীর  কন্যা শ্রীমতী  নিলয়া দে জানালেন যে অধরচন্দ্রের  আট  সন্তান ছিল।  তাঁর সন্তানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট রাখার উদ্দ্যেশে এক চালায় তিনি দেবী সরস্বতীর সাথে তাঁর ভাই ও বোনের পূজা শুরু করেন। আজও এখানে সেই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম হতে দেখা যায়না।   সেই প্রাচীন নিয়ম মেনে এখানে বাগ্দেবীর আরাধনা চলে আসছে।  ডাকের সাজে সজ্জিতা দেবীকে পরিবারের সোনার গহনা দিয়ে সাজানো হয়। 
জমিদার অধরচন্দ্র দে 


শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার সাথে পরিবারের রান্নাপূজা ও অন্যান্য নিয়ম কানুন পালিত হয়।  পূজার প্রথম দিন পরিবারের নারায়ণ ও দেবী লক্ষ্মীকে দামোদর মন্দির থেকে সরস্বতী মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত ও পূজা করা হয়।  তারপর দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়। সরস্বতীর অঞ্জলি দেওয়ার পর পারিবারিক রীতি  মেনে পেঁয়াজ, রসুন ছাড়া মাছ রান্না করে খেতে হয়। দ্বিতীয় দিন মন্দিরের লাগোয়া পরিবারের বাড়িতে দেবী ষষ্ঠীর পূজা করা হয়।  এইদিন ষষ্ঠী দেবীকে ভোগ হিসেবে মাছের পদ ও গোটা সেদ্ধ দেওয়া হয়। তৃতীয় দিন দেবী সরস্বতী ও অন্যান্য দেব-দেবীকে সন্ধ্যায় লুচি ও মিষ্টান্ন দেওয়া হয়।  এই ভোগ স্থানীয় এক ময়রার কাছ থেকে আসে।  এই ময়রার বংশধররা বংশ পরম্পরায় প্রথম থেকে দেবীকে এই ভোগ নিবেদন করে আসছে। চতুর্থ দিন সকালে নারায়ণ ও লক্ষ্মীকে পরিবারের দামোদর মন্দিরে ফেরত নিয়ে  আসা হয়। এইদিন দেবীকে চিড়ে, খৈ, বিভিন্ন ফল ও মিষ্টান্ন ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়।  এছাড়া এইদিন পরিবারের ও পাড়া-প্রতিবেশী সকলের জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে রন্ধন করা হয় খিচুড়ী, চাটনি, তরকারি ও মিষ্টি। এই খিচুড়ী ভোগ অবশ্য দেবীকে প্রদান করা হয় না।  প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেবীকে শীতল ভোগ নিবেদন করা হয়ে থাকে।  চতুর্থ দিন সন্ধ্যায় শোভাযাত্রাসহ দেবীকে স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়।  বিসর্জনের সময় বিভিন্ন প্রকার আতস বাজি পোড়ানো হয়। 

গৃহলক্ষ্মী হাতে পরিবারের কন্যা নিলয়া দে 


  পারিবারিক রীতি মেনে পূজাটি প্রতি বছরের মত  এবছরও  অনুষ্ঠিত হবে। তবে অবশ্যই  করোনার সরকারি বিধি নিষেধ মেনে পূজাটি করা  হবে।


তারিখ :০৪-০২-২০২২

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।