কালো দূর্গার আরাধনা চলছে তিলোত্তমাতেই
- সুদীপ্ত মুখার্জী
আমরা ছোটোবেলা থেকেই জেনে এসেছি কালী মাতার গায়ের রং কালো অর্থাৎ তিনি কৃষ্ণবর্ণা হন। কিন্তু এবার আমি দেখে এলাম কালো দূর্গা মানে কৃষ্ণবর্ণ দেবী দূর্গা। তাও সেই পূজাটি খোদ কলকাতার বুকেই অনুষ্ঠিত হয়। বেশ আড়ম্বরের সাথে বেলেঘাটার ভট্টাচার্য্য পরিবারে কৃষ্ণবর্ণ দেবী দূর্গা পূজিত হন।
অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুরের জমিদার ছিলেন হরিদেব ভট্টাচার্য্য। তিনি আসলে ছিলেন বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার বাসিন্দা। নাটোরের মহারানী ভবানী তাঁকে পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুরের জমিদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। তিনি তাঁকে ওই অঞ্চলের জমিদারি স্বত্ব প্রদান করেন। কথিত রয়েছে, যে এই ভট্টাচার্য্য পরিবারে বহু পূর্ব থেকেই মা কালীর পূজা করা হত। শোনা যায় হিমালয়ের পাদদেশে কোনো কোনো জায়গায় নাকি কৃষ্ণবর্ণের অতসীপুষ্প ফোটে। এই ফুল অতীব দুষ্প্রাপ্য। দেবীর হয়তো ইচ্ছা হয়েছিল কৃষ্ণবর্ণরূপে পূজা পেতে। তাই তিনি নাকি কারোকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে আদেশ দিয়েছিলেন তাঁর এই রূপকে পূজা করার।
তেমনই এক স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন স্থলবসন্তপুরের জমিদার হরিদেব ভট্টাচার্য্য মহাশয়। তিনি স্বপ্নে এরকম কৃষ্ণবর্ণ দেবীকে দেখেছিলেন। তিনি স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর তার জমিদারিতে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। রানী ভবানীর আমলেই সেই পূজা শুরু হয়েছিল। সেই থেকেই আজও ভট্টাচার্য্য পরিবারে কালো দূর্গা প্রতিমা পূজিত হয়ে আসছে। যা এবছর ২৮৯ বছরে পদার্পন করলো।
পূজা শুরু করার পূর্বে জমিদারবাবু প্রথমে মায়ের এই বিচিত্র রূপের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেন। তিনি ভাটপাড়া ও কাশীর পন্ডিতদের সাথে কথা বলেন কিন্তু তাদের ব্যাখ্যায় তাঁর মনঃপুত হল না। এমতাবস্থায় একদিন হরিদেববাবু মনমরা হয়ে কাশীর গঙ্গার ঘাটে বসে ছিলেন। সেই সময় একজন সাধু তার কাছে এসে জানতে চাইলেন কেন তিনি এইরকম বিষণ্ণভাবে বসে আছেন, তার সমস্যাটা কোথায়?
সব কিছু শুনে তিনি মাকে ভদ্রকালী রূপে পূজা করার কথা তাঁকে বললেন। তাঁকে তালপত্রে লেখা এক প্রাচীন পুঁথি দেন এবং তাঁকে এই পুঁথি অনুসরণ করে পূজা করতে বললেন।
দেবী এখানে কৃষ্ণবর্ণ হলেও তার সন্তানদের গাত্রবর্ণ কিন্তু সাদা হয়। মহিষাসুরের গাত্রবর্ণ হয় সবুজ।দেবীর ডানপাশে থাকেন দেবী লক্ষ্মী ও কার্তিক আর বামপাশে থাকেন দেবী সরস্বতী ও গণেশ। পূজাটি দীর্ঘদিন যাবৎ স্থলবসন্তপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার পর পরিবারের সদস্যরা কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। তখন থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এখানে পূজাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শাক্ত মতে পূজা হয়। পূর্বে বলিদান প্রথা থাকলেও বর্তমানে চালকুমড়া বলি দেওয়া হয়। সন্ধিপূজার সময় দেবীকে মাছভাজা দেওয়া হয়। সকালে নিরামিষ ও সন্ধ্যায় দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন দই, কলা, পান্তাভাত সহযোগে দেবীকে আপ্যায়িত করা হয়।
প্রাচীন রীতি নীতি মেনে আজও পূজা করা হয়। পরিবারের নতুন প্রজন্ম সেই ঐতিহ্যকে যতটা সম্ভব বজায় রেখে চলেছে। স্থানাভাবের জন্য বাড়িরই নীচে দেবী পূজা হয়ে থাকে। পদ্মা পেরিয়ে গঙ্গাপাড়ে এসেও তাদের পূজার জৌলুশ কিন্তু একদমই কমেনি।
তারিখ : ১৫-১০-২০২১
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
No comments:
Post a Comment