সুখরিয়ার মিত্রমুস্তাফিদের আনন্দ ভৈরবী কালী মন্দির
- সুদীপ্ত মুখার্জী
সুখরিয়া পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার একটা সুপ্রাচীন গ্রাম। গ্রামটি সোমড়াবাজার ও বলাগড়ের মধ্যে অবস্থিত। গ্রামটির অলিতে গলিতে রয়েছে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন। মিত্র মুস্তাফি পরিবারের সন্তান অনন্তরাম এই গ্রামে এসে রাধাকুঞ্জ নামক একটা সুবিশাল প্রাসাদ বানান। গ্রামটির ঐতিহ্য এই রাজপ্রাসাদ ও রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি মন্দিরকে নিয়ে । এখানকার ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ী ও মন্দিরগুলো পর্যটকদের এখানে টেনে নিয়ে আসে। এখানকার মন্দির স্তাপত্যগুলো বৈচিত্রে ভরা।
রাজবাড়ীর ঠিক উল্টোদিকে সবুজ প্রকৃতির মধ্যে টুকটুকে লাল রঙের টেরাকোটার আনন্দ ভৈরবী মন্দির সুখরিয়ার সব থেকে আকর্ষণীয়। এক অসাধারণ মন্দির। এই মন্দিরটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরটির আকর্ষণে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসে। মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল ১৮১৩ সালে। রাজ পরিবারের সন্তান বীরেশ্বর মিত্র মুস্তাফি মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। কথিত আছে সেই সময় মন্দিরটি নির্মাণ করতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছিল। মন্দিরটি উচ্চতায় ৭০ ফুট ২৮ ইঞ্চি। পঁচিশটি চূড়া বিশিষ্ট। মন্দিরটিতে টেরাকোটা শিল্পের অসাধারণ নিদর্শন রয়েছে। মন্দিরের গায়ে টালির উপর নানা দেবদেবীর মূর্তি উল্লেখযোগ্য। বেদীর উপরে শায়িত শিবের উপর দেবী আনন্দময়ী ভৈরবী উপবিষ্টা। দেবী মূর্তির উচ্চতা তিন ফুট। মূর্তিটি কষ্টি পাথরে তৈরী। মন্দিরের অভ্যন্তরে পাথরে গড়া বেশ কিছু দেবদেবীর মূর্তি পরিলক্ষিত হয়।
মূল মন্দিরের দুপাশে দুটো সারিতে রয়েছে ১২টা ছোট মন্দির। এক একটি সারিতে ছয়টি করে মন্দির বিদ্যমান। দুটি সারিতে একটি করে মোট দুটি পঞ্চরত্ন মন্দির রয়েছে আর বাকি মন্দিরগুলো আটচালা বিশিষ্ট। পঞ্চরত্ন মন্দির দুটিতে গণেশের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে আর বাকি আটচালা মন্দিরগুলোতে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের সময় মন্দিরের সর্বোচ্চ পাঁচটি চূড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীকালে মন্দিরটির পাঁচটি চূড়াকে নতুন করে তৈরি করা হয়। এখানকার সমস্ত মন্দিরগুলোকে সারিয়ে নতুনভাবে রঙ করা হয়েছে।
মন্দির খোলা -
সকাল ছাড়তে থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত বাইরে থেকে দেখা যায়।
কীভাবে যাবেন-
শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকালে করে পৌঁছতে হবে সোমড়াবাজার স্টেশন। তারপর ভ্যান বা টোটো-এ চেপে খুব সহজেই পৌঁছে যান সুখরিয়া।
তারিখ : ২৪-১০-২০২১
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
No comments:
Post a Comment