Tuesday, November 2, 2021

চমকে ভরা ধনতেরাস

চমকে ভরা ধনতেরাস 

- সুদীপ্ত মুখার্জী 

আজ গড়িয়াহাট -এ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, অনেক্ষনই বাসের দেখা নেই, অপেক্ষা করতে করতে সামনে কতগুলো সোনার গহনার দোকানের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল।  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই দেখছিলাম। বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে কোথাও লেখা রয়েছে গহনার মজুরির ওপর শতকরা এত ছাড়, কোথাও লাকি ড্র-এর কথা বলা হয়েছে, আবার কোথাও নিশ্চিত উপহারের কথা বলা আছে। এগুলো দেখতে দেখতে একটা বিজ্ঞাপনের শিরোনামে আমার চোখ আটকে গেলো। সেখানে লেখা "চমকে ভরা ধনতেরাস"। সত্যি ধনতেরাসটা শব্দটা আমার কাছেও বেশ চমকের ব্যাপার।  এই শব্দটা বাংলায় কবে কি করে ঢুকে পড়েছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই ভাবছিলাম।

আমি আমার স্কুল, কলেজ জীবনে ফিরে গেলাম, মনে করার চেষ্টা করলাম ধনতেরাস শব্দটা ওই সময়ে শুনেছিলাম কিনা। অনেক চেষ্টা করেও শুনেছি বলে ঠিক মনে করতে পারলাম না। যাই হোক, বাস এসে যাওয়ায় বাসে উঠে পড়লাম। বাসেও সারাক্ষন মাথায় ওই এক চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো। বাড়ী ফিরে কম্পুটার পন্ডিতের শরণাপন্ন হলাম।



কম্পিউটার পন্ডিত আমায় জানালো ধনতেরাস বা ধন ত্রয়োদশী হলো হিন্দুদের একটা জনপ্রিয় উৎসব। "ধন" শব্দের অর্থ সম্পত্তি আর 'ত্রয়োদশী' হলো কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি। এই দিন ধনতেরাস উৎসবটি উদযাপন করা হয়।  ধনতেরাসের আর এক নাম ধন ত্রয়োদশী। কথিত আছে যে, সমুদ্র মন্থনের সময় এই  দিনেই ভগবান অমৃতের কলস নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।  তাই এই দিন দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়ে থাকে। ধরা হয়, এই দিন দেবী লক্ষ্মী ভক্তের গৃহে যান এবং তাদের ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন।   শাস্ত্রমতে ধনতেরাসে সাধারণত লক্ষ্মী ও কুবেরের পুজো করা হয়। সারা ভারতজুড়ে হিন্দুরা এই দিন এই উৎসব পালন করে থাকে। উৎসবটি অবাঙালি হিন্দুরা বহুদিন থেকে বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পালন করে আসছে।

ব্যবসায়ীদের কাছেও এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা ব্যবসাস্থলে ও বাড়িতে দিনটিতে পুজো অর্চনা করে থাকে।

ধন্বন্তরি নাম এক রাজা ছিলেন। তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন আয়ুর্বেদ চর্চা  ও তার প্রচারের   জন্য। তিনি এই ত্রয়োদশী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই  তাঁর জন্ম তিথিকে স্মরণে রাখার জন্য ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী হিসাবে পালন করা হয়।  হিন্দিতে এটাকে ধন্বন্তরি তেরাস বা সংক্ষেপে ধনতেরাস বলা হয়।  এই দিনেই সাথে ধন বা অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই।  
 

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দিনটি বহুদিন ধরে পালন করা হয় কিন্তু বাংলায় আগে এই উৎসবটির প্রচলন ছিল না।  সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে অবাঙলিদের সাথে বাঙালীরাও ধনতেরাস উৎসবে সামিল হচ্ছে। ধীরে ধীরে  বাংলায় উৎসবটি ক্রমশ বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। সময়ের সাথে বাঙালিরাও নিজেদের বদলে ফেলছে, অবাঙালিদের সাথে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে।



ধনতেরাসের দিন সোনা, রূপা বা বাসনাদি কেনা সংসারের পক্ষ্ খুব শুভ বলে সবাই মনে করে। এই দিন কোনো কিছু নতুন কিনলে পরিবারের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বাড়ে বলে সকলের অনুমান। স্বর্ণকাররা সোনার গহনার নতুন নতুন সম্ভার নিয়ে ক্রেতাদের টানার চেষ্টা করে থাকে। গহনার দোকানগুলিতে এই দিন কেনাকাটার ওপর বেশ আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে থাকে। দোকানগুলো খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য। কেউ কেউ আবার অলংকার কিনলে লোভনীয় পুরস্কারও দেয়। ধনতেরাসে স্বর্ণকারদের বিক্রি বেশ ভাল হয়। 

বাঙালির তেরো পার্বণের সাথে আর একটা পার্বন যুক্ত হয়েছে এখন বাঙালিরাও আবার অবাঙালিদের মতো বেশ উৎসাহের সাথে দিনটি উৎযাপন করছে। 


তারিখ :০২-১১-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


ছবিগুলো : ইন্টারনেট থেকে নেওয়া




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


No comments: