Friday, January 1, 2021

কল্পতরু উৎসব >P

কল্পতরু উৎসব 





ইংরেজি বছরের প্রথম দিন বাঙালিরা যেমন নতুন বছর পালন করে ঠিক তেমন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ  পরমহংসদেবের   অনুগামীরা দিনটিকে 'কল্পতরু দিবস' হিসেবে পালন করে থাকে।  বিশেষত কাশীপুর উদ্যানবাটী ও রামকৃষ্ণ মহাশ্মশান, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির, বেলুড়মঠ,  আদ্যাপীঠ সহ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বেশ কিছু পীঠস্থানে এই দিন নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।   
 

 এই দিনই কল্পতরু উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় কাশীপুর উদ্যানবাটীতে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে এখানে ভক্তদের ঢল নামতে দেখা যায়।  দক্ষিনেশ্বর কালী মন্দিরে ও হুগলির কামারপুকুরে ঠাকুরের জন্মস্থানেও বহু ভক্তের  সমাগম হয়।  এছাড়া   রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন শাখায় প্রতিবছর  ইংরেজি বছরের প্রথম দিনটি খুব ঘটা  করে কল্পতরু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 

এখন প্রশ্ন হলো কল্পতরু উৎসবটি কি।  আজ থেকে বছর ৭৪ পূর্বে  অর্থাৎ ১লা জানুয়ারি ১৮৮৬   সালে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব  কল্পতরু রূপে ভক্তদের দেখা দিয়েছিলেন। তাঁর অনুগামীদের জীবনে  অভূতপূর্ব  তাৎপর্যপূর্ণ একটি  ঘটনা।  শুক্রবার ১১ই  ডিসেম্বর, ১৮৮৫ সালে ঠাকুর শুক্লা পঞ্চমীতে শ্যামপুকুর বাটি  থেকে কাশীপুরের বাগান বাড়িতে বসবাস করতে এসেছিলেন। তখন তিনি খুবই অসুস্থ।ঠাকুর সেই সময় দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।  তাঁর গলায় ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। তবুও শয়নে-স্বপনে তিনি ভক্তদের চিন্তায় মগ্ন থাকতেন।   তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল। কলকাতার উত্তরের কাশীপুর অঞ্চলে একটা বাগানবাড়িতে তখন ঠাকুরকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এই দিন ঠাকুর একটু সুস্থ বোধ করায়  তাঁকে বাড়িটির বাগানে হাঁটতে  নিয়ে আসা হয়েছিল।  সেই সময় তিনি তাঁর বিশেষ অনুগামী নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষকে জিজ্ঞাসা করেন "তোমার কি মনে হয় আমি কে?" গিরিশচন্দ্র তাঁকে বলেন তিনি বিশ্বাস করেন যে "মানবকল্যাণের জন্য মর্তে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার।" ঠাকুর গিরিশের কথা শুনে বলেন "আমি আর কি বলবো?  তোমাদের চৈতন্য হোক।" এর পর তিনি সমাধিস্থ হন এবং তার সমস্ত শিষ্যদের স্পর্শ করেন।  তাঁর অনুগামীরা মনে করেন এই স্পর্শে সেদিন সমস্ত অনুগামীদের একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল।  ঠাকুরের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত বলেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন।  তিনিই এই দিনটিকে 'কল্পতরু দিবস' নামে নামাঙ্কিত করেন। পরবর্তী সময় কল্পতরু দিবসটিতে কল্পতরু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।  

ভোর বেলায় বিশেষ পূজার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়. ভোর থেকেই ভক্তদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়।  বেলা যত বাড়ে ভক্ত সমাগম তত বৃদ্ধি পায়।  দক্ষিণেশ্বর ও কাশীপুর উদ্যানবাটীতে হাজার হাজার  ভক্তের সমাগম হতে দেখা যায়।  ভিড় সামাল দিতে প্রচুর সংখ্যায়  নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়।  ভক্তরা মনে করে এই দিন ঠাকুরের কাছে  যা মনোস্কামনা করা হবে তাই পূর্ণ হবে।  দক্ষিনেশ্বরে ভোর চারটের  সময় ভবতারিণী মন্দিরে ও রামকৃষ্ণদেবের ঘরে মঙ্গলারতির মাধ্যমে পূজা শুরু হয়।  সকালে জিলিপি ও বোঁদে প্রসাদ দেওয়া হয়।  দুপুরে ঠাকুরকে ভাত , মাছ, ও পাঁচ রকমের ভাজা ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। কাশীপুর উদ্যানবাটীতে সকাল থেকেই মঙ্গলারটি কীর্তন ও ভোজন, বৈদিক মন্ত্রচারণ সহকারে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।  দিন দক্ষিনেশ্বর ও উদ্যানবাটী আলোক সজ্জায় সেজে ওঠে।  

তারিখ :০১-০১-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 




      




4 comments:

Unknown said...

কল্পতরু উৎসব ১৯০৮খ্রি ৩৮নং বিডন ষ্ট্রীটের নাগ ভবনের হেমেন্দ্র কুমার নাগ আরম্ভ করেন। এই বিষয়ে আপনি কি বিশদে কিছু জানেন।
নিবেদিতা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সম্পর্ক ত্যাগ করে বিবেকানন্দ সোসাইটি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু কোথায় অর্থাৎ কোন বাড়িটি স্থাপন করেছিলেন? জানেন কি?

Unknown said...

কল্পতরু উৎসব ১৯০৮খ্রি ৩৮নং বিডন ষ্ট্রীটের নাগ ভবনের হেমেন্দ্র কুমার নাগ আরম্ভ করেন। এই বিষয়ে আপনি কি বিশদে কিছু জানেন।
নিবেদিতা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সম্পর্ক ত্যাগ করে বিবেকানন্দ সোসাইটি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু কোথায় অর্থাৎ কোন বাড়িটি স্থাপন করেছিলেন? জানেন কি?

Dipak Kumar Das said...

বিষয় টা পড়ে খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
খুব ভালো থেকো।
❤️❤️🙏🙏🙏❤️❤️

Dipak Kumar Das said...

খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। খু ভালো থেকো।
❤️❤️🙏🙏🙏❤️❤️