ব্যতিক্রমী ও অভিনব রথযাত্রা
হাওড়া কদমতলার মাকড়দহ রোডের বাদুরি পরিবারের রথ প্রায় ৬০০ বছরের রথ উৎসব। এই বংশের রথ ৬০০ বছর ধরে কোনোদিন মাসির বাড়ি যায়নি। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী এখানকার রথ মাসির বাড়ি যায় না। জগন্নাথদেবকে রথে করে মেলা ঘুরিয়ে নিজ বাটিতে রাখা হয়। পূর্বে নাকি এখানে জগন্নাথদেব মাসির বাড়িতে যেতেন। সূর্য কুমার বাদুরি মহাশয় এই প্রথা চালু করেন। সেই থেকেই এখানে এই নিয়ম মেনে চলা হয়।
ছবি ও লেখার স্বত্ত : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ : ০৬-০৭-২০১৯
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
তথ্যসূত্র গুগল
দুর্গাপুজো কলকাতাসহ সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ উৎসব বলে ধরা হয়ে থাকে। দুর্গাপুজোর পর যে উৎসবটি বাঙালিকে সবচেয়ে আকর্ষণ করে থাকে তা হলো রথযাত্রা। রথের দিনই দূর্গাপুজোর সৃচনা বলে ধরা হয় কারণ বেশীরভাগ জায়গাতে এই দিন মা দূর্গার কাঠামো পুজো করা হয়। রথযাত্রা হল জগন্নাথদেবের উৎসব, তবে তাঁর সাথে তাঁর ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে দেখা যায়। ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় রথ উৎসবটি অবশ্য শ্রীক্ষেত্র পুরীতে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে খুব আড়ম্বরের সাথে উৎসবটি পালন করা হয়। ইসকন সংস্থার দৌলতে এখন সারা বিশ্বেই ইসকন মন্দিরগুলোতে বেশ ঘটা করে রথ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জায়গায় রথের সওয়ারি জগন্নাথদেব হলেও অনেক জায়গায় অনেক রকম ব্যতিক্রম দেখা যায়। কোথাও রাধা-কৃষ্ণ যুগলে, কোথাও নারায়ণ শিলা, কোথাও রাজা রামচন্দ্র আবার কোথাও ভগবান বিষ্ণুদেবকেও দেখা যায় রথের সওয়ারি হতে।
আমরা দুর্গাপুজোতে প্রতিবারই যেমন নানারকম ব্যতিক্রমী থিম দেখতে পাই। এবার অর্থাৎ ২০১৯এর রথ উৎসবেও থিম ঢুকে পড়তে দেখা গেলো। এবার মেদিনীপুর শহরে এরকম একটা ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেলো। কাপড়, প্লাই ও প্রায় তিন হাজার শুকনো আমের আটি দিয়ে জগন্নাথদেবের মূর্তিটি তৈরী করা হয়েছে। হুগলী জেলার চন্দননগরের শিল্পী শুভনাথ মল্লিক এই অভিনব ও ব্যতিক্রমী মূর্তিটি তৈরী করেন। বিগ্রহগুলো দশ ফুট উচ্চতার। শোভাযাত্রায় জগন্নাথদেবের সাথে নাকি আরো ২২ টি বিভিন্ন দেবতার মঞ্চসজ্জা ছিল। ২০০২ সাল থেকে মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথ মন্দিরের মূর্তি প্রতিবার শিল্পী শুভনাথ মল্লিক তৈরী করে আসছেন। এবার তিনি একটু অন্য রকমের শিল্পকলাকে তুলে ধরলেন। রথ যে রাস্তা দিয়ে যাবে সেই রাস্তাটিকে সুন্দর করে আলপনা দিয়ে সাজানো হয়েছিল।
নদীয়ার নবদ্বীপে একটা অভিনব রথ চালানো হয়। সাধারণত রথে জগন্নাথদেবের সাথে তাঁর ভাই ও বোনকে দেখা যায়। কিন্তু নদীয়ার নবদ্বীপের অনুমহাপ্রভু মন্দিরের রথে শুধু জগন্নাথদেব একলা উপবিষ্ট থাকেন। এই রথটি মনিপুরী বৈষ্ণবদের রথ বলে পরিচিত। একটি নির্দিষ্ট সময়ে জগন্নাথদেবকে আট দিন ধরে জয়দেবের দশাবতার স্ত্রোত্র পড়ে শোনানো হয়। কথিত আছে দ্বারকা থেকে শ্রীকৃষ্ণ একা বৃন্দাবন ধামে এসেছিলেন। সেখানে তিনি রাধারানী ও অন্যান্য গোপিনীদের কৃপা করেন। তাই এই দর্শনকে অনুসরণ করে এখানকার রথে জগন্নাথদেব একলা থাকেন। এখানকার রথের আর একটা বৈশিষ্ট্য হল রথের যাত্রাপথে বিভিন্ন ভক্তের বাড়িতে থামানো হয় এবং সেই বাড়ি থেকে জগন্নাথদেবকে আরতি করা হয় ও ভোগ দেওয়া হয়।
সাধারণভাবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার হাত থাকে না, কিন্তু কালনার জগন্নাথ বাড়ির রথে জগন্নাথ ও বলরামের হাত রয়েছে, শুধু সুভদ্রার হাত নেই। কথিত আছে বর্ধমানের মহারাজ স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন জগন্নাথ ও বলরামের হাত লাগাবার। ২৫০ বছর ধরে এখানে এই নিয়ম চলে আসছে।
আমরা জানি জগন্নাথদেব ও তাঁর ভাই বোন মাসির বাড়িতে গিয়ে পোড়া পিঠে খান। কিন্তু মায়াপুরের ইসকনের মন্দিরে দেবতারা নাকি সব রকমের পদ খান। ইসকনের জগন্নাথদেব নাকি সবরকম পদ মিলিয়ে প্রায় ১০০ রকম পদ গ্রহণ করেন। বলরাম ও সুভদ্রার জন্য ৫৬ রকম পদ থাকে। গুন্ডিচায় দেশি বিদেশি মিলিয়ে পদগুলোকে তৈরী করা হয়। এই মেনুতে যেমন দইবড়া, পিঠেপুলি, খিচুড়ি, পায়েস, মিষ্টি থাকে তেমন চাউমিন, পোলাও থাকে। সাতদিন ধরে প্রভু নানারকম পদ মহানন্দে ভোজন করেন।
হুগলীর গুপ্তিপাড়ার রথকে জগন্নাথের রথ বলা হয় না, এখানে বৃন্দাবন জীউর রথ বলা হয়। মহিষাদলের রথে জগন্নাথ বলরামের সাথে রাজবাড়ীর কুলদেবতা অধিষ্ঠিত থাকেন। কলকাতার দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়ীতে তাঁদের কুলদেবতা রাজরাজেশ্বর। তাই তাঁদের উপবিষ্ঠ থাকেন কুলদেবতা, তাই এই রথকে রাজরাজেশ্বরের রথযাত্রা বলা হয়।
হুগলীর গুপ্তিপাড়ার রথকে জগন্নাথের রথ বলা হয় না, এখানে বৃন্দাবন জীউর রথ বলা হয়। মহিষাদলের রথে জগন্নাথ বলরামের সাথে রাজবাড়ীর কুলদেবতা অধিষ্ঠিত থাকেন। কলকাতার দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়ীতে তাঁদের কুলদেবতা রাজরাজেশ্বর। তাই তাঁদের উপবিষ্ঠ থাকেন কুলদেবতা, তাই এই রথকে রাজরাজেশ্বরের রথযাত্রা বলা হয়।
এইভাবে অনেক জায়গায় যেমন পারিবারিক নিয়ম রীতিতে নানারকম অভিনবত্ব দেখা যায় তেমন এবার আবার নতুন থিমের রথযাত্রাও দেখা গেছে। আশা করা যায় এবার থেকে রথ উৎসবটিতেও থিমের রমরমা শুরু হতে দেখা যাবে।
ছবি ও লেখার স্বত্ত : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ : ০৬-০৭-২০১৯
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
তথ্যসূত্র গুগল
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
1 comment:
খুব ভালো লাগলো তোমার এই গল্প। রথযাত্রা উৎসব কে কেন্দ্র করে লেখা তোমার এই কাহিনী থেকে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। খুব খুশি হলাম। খুব ভালো থেকো তুমি। জয় জগন্নাথ।🌹🌹❤️🙏🙏🙏❤️🌹🌹
Post a Comment