বড়বাজারের পুঁটে কালী
কলকাতার সঙ্গে দেবী কালিমাতার সম্পর্ক বহুদিন এবং তা খুবই ঘনিষ্ঠ। সবাই বলে থাকে, দক্ষিণ কলকাতার শক্তিপীঠ কালীঘাট থেকেই শহরের গৌরবের শুরু।কালীঘাটের এই মন্দিরটি ছাড়া শহরের বহু জায়গায় বহু কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। সেই সব মন্দিরে কোথাও ডাকাত কালী, কোথাও আদ্যা কালী, কোথাও শ্মশান কালী আবার কোথাও সিদ্ধেশ্বরী কালীর প্রতিমা বিরাজমান। রঘু ডাকাত, মনোহর ডাকাত ও চিতু ডাকাতের কালীপূজার গল্প সবার কাছে খুবই পরিচিত। কালীঘাটের মন্দির ছাড়াও নিমতলার আনন্দময়ী, বৌবাজারের ফিরিঙ্গি কালী, বড়বাজারের পুঁটে কালী, বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী, টালিগঞ্জের করুণাময়ী এরকম বেশ কয়েকটি বিখ্যাত কালী প্রতিমার স্থায়ী মন্দির আমাদের শহরে রয়েছে। আমরা জানি যে ডাকাত ও তান্ত্রিকদের হাত থেকে দেবী কালীকে সর্বজনীন করে তুলেছিলেন শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। যদিও তাঁর আরাধনার স্থল কলকাতায় ছিল না, তা ছিল দক্ষিণেশ্বরে।
শহরের বড়বাজার অঞ্চলটি ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য। এই অঞ্চলের পোস্তার কাছে ২০ নম্বর কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে রাস্তার উপরে একটি ছোট কালী মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি খুবই প্রাচীন। মন্দিরটি হল পুঁটে কালী মন্দির। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবী মূর্তিটির উচ্চতা মাত্র ছয় ইঞ্চি। পুঁটে কালী মূর্তিটি খুবই ছোট, তাই সকলে এটিকে পুঁটে কালী বলে ডাকে। কিন্তু ভিন্ন আর একটা ইতিহাস প্রসিদ্ধ কাহিনী রয়েছে। খেলারাম বন্দ্যোপাধ্যায় নামক একজন তন্ত্রসাধক ছিলেন। কোনো এক সময় মন্দির লাগোয়া একটা খাল ছিল। খালটি দিয়ে গঙ্গার ধারা বয়ে যেত। তন্ত্রসাধক খেলারাম একদিন মন্দিরের সামনে বসে হোমযজ্ঞ করছিলেন। সেই সময় খালটি থেকে একটা পুঁটি মাছ হঠাৎ লাফিয়ে এসে হোমাগ্নিতে পড়ে। সাধক হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় প্রথমে চমকে ওঠেন। তিনি পরে পোড়া মাছটিকে হোমের আগুন থেকে তুলে খালের জলে ফেলে দেন। দেবীর কৃপায় অলৌকিকভাবে মাছটি তার প্রাণ ফিরে পায়। সেই থেকে এই দেবী মূর্তি পুঁটি কালী বলে পরিচিতি পায়। পরবর্তী সময় লোকমুখে প্রচার হতে হতে পুঁটি হয়ে যায় পুঁটে।
হুগলীর ভরশুট গ্রামের বাসিন্দা মানিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এক তন্ত্রসাধক। তাঁকে সবাই 'রাজামানিক' নামে ডাকতো। ৯৬৪ সাল। তখন সম্রাট আকবরের শাসন। এই সময় পঞ্চমুন্ডীর আসন পেতে তন্ত্রসাধক মানিকচন্দ্র একটি কালী মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি লম্বাকৃত ও তিনচালা বিশিষ্ট ছিল। মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী শিলাময়ী বিগ্রহ ছিল। এই মানিকচন্দ্রের উত্তর পুরুষ ছিলেন খেলারাম।
বর্তমান মন্দিরের তিনটি চুড়াবিশিষ্ট। চক্র, ত্রিশূল ও পতাকা গাঁথা রয়েছে চূড়াগুলিতে। মন্দিরটির ভিতরে বর্তমানে কষ্টিপাথরের বিগ্রহ রয়েছে। এই বিগ্রহটি পরবর্তী সময় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পূর্বের বিগ্রহটিকে বর্তমানে আর দেখা যায় না। বর্তমান মন্দিরটি ১৯৫৮ সালে স্থাপিত হয়েছিল। অতীতকাল থেকেই নিত্যপূজা হয়ে আসছে। দেবীকে এখানে তন্ত্রমতে পূজা করা হয়। কালীপূজার দিন বিশেষ পূজার ব্যবস্থা করা হয়। কালীপূজার রাতে দেবীকে স্বর্ণবেশে ভৈরবীরূপে পূজা করা হয়ে থাকে। কালী পূজার পরের দিন কুমারীপূজা ও অন্নকূট উৎসব পালন করা হয়। আমিষ ও নিরামিষ দুরকমের ভোগ মাকে নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়। নিরামিষ ভোগের মধ্যে খিচুড়ি, পোলাও, লুচি, দুরকমের সবজি, চাটনি ও পায়েস থাকে। আমিষ ভোগের মধ্যে নিরামিষ পদগুলোর সাথে পুঁটি, রুই, বোয়াল, ভেটকি ও ইলিশ এই পাঁচ রকমের মাছ থাকে। বিশেষ উপাচার হিসেবে খাস্তা কচুরি আর চানাচুর থাকে। খেলারামের পরিবারই এখনও এখানকার সেবাকার্যে যুক্ত রয়েছে। কালী মূর্তির পাশে একটি শ্বেতপাথরের শীতলা মূর্তিও রয়েছে। এখানকার দেবী মূর্তি খুবই জাগ্রত হিসেবে পরিচিত।
তারিখ :০৩-০২-২০২১
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
2 comments:
Fantastic
তোমার লেখা পড়ে সব সময় কিছু অজানা তথ্য জানতে পারি। তাই তোমার লেখা পড়তে আমার সব সময় ভালো লাগে। খুব ভাল লাগল।♥️♥️♥️
Post a Comment