Sunday, February 21, 2021

সহেলীর কৌতুহল (পর্ব - ১)

সহেলীর কৌতুহল 

(পর্ব - ১)


সহেলী   দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর দিন তার বন্ধু ঋতুপর্ণার বাড়িতে এলো। ফর্সা রোগাটে চেহারায়  আজ সে হালকা রঙের একটা সুন্দর শাড়ি পড়েছে। তার সাথে রঙের সামঞ্জ্যস্য বজায় রেখে একটা ব্লাউজ পড়েছে।  চুলটা বেশ পরিপাটি করে বাঁধা রয়েছে।  সাধারণত অন্যদিন সে জিন্সের প্যান্ট ও টপ পরে আসে। কিন্তু আজ  একেবারে বাঙালি সাজে সজ্জিত হয়ে এসেছে। দেখতে তাকে  খুবই সুন্দর লাগছে। এতো সেজেগুজে আসলেও  মনটা তার একদমই ভালো নেই, খুব উতলা হয়ে আছে।   নানা প্রশ্ন তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।  সত্যি কথা বলতে, আজ সে তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে আসেনি, সে এসেছে ঋতুর দাদু শ্যামল বাবুর সাথে গল্প করতে।  গল্পের মাধ্যমেই সে তার সব প্রশ্নগুলোর উত্তর  জেনে নেবে।  তার মনের ক্ষিদে মেটাবে।  দাদুর কাছ থেকে  সব প্রশ্নের উত্তর তাকে জানতে হবে।  সবকিছু জানতে পারলেই যেন তার মনের জ্বালা  মিটবে।  

শ্যামলবাবু অর্থাৎ শ্রী শ্যামল কুমার ঘোষ।  শ্যামলবাবু আদপে  পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মানুষ।  বর্তমানে আমেরিকাবাসী। তাঁর ছোটবেলা, লেখা-পড়া সবই কেটেছে বর্ধমান জেলা ও কলকাতাতে। তাঁদের বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়ার কাছে নবধেনু গ্রামে। জন্ম কৃষিজীবী পরিবারে।  তিনি গ্রামের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন।  কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।  তারপর গবেষণার কাজে আমেরিকায় চলে আসেন। সেই থেকে তিনি এখানে রয়ে গেছেন। দেখতে দেখতে তা আজ প্রায় বছর ৪০ পার হয়ে গেলো। ১৯৮০ সালে তিনি আমেরিকাতে আসেন। এখন  অবসর জীবন যাপন  করেছেন । 

সহেলী শ্যামলবাবুর কাছ থেকেই তাঁদের গ্রামের দুর্গাপুজো সম্বন্ধে জানতে চান, জানতে চান কলকাতার দুর্গাপুজো সম্বন্ধেও। সেই কারণেই আজ তার ঋতুপর্ণাদের বাড়িতে আসা। যেহেতু সে ঋতুকে না জানিয়ে এসেছে, তাই ভেবেছিল ঋতু হয়তো বাড়িতে নাও থাকতে পারে। কিন্তু  সে এসে ঋতুকে বাড়িতে পেয়ে গেলো। সামান্য কথা ঋতুর সাথে বলেই সে ছুট লাগালো দাদুর কাছে।  দাদুকে আগেই বলে রেখেছিল। দাদুও তার জন্য অপেক্ষা করছিল। ঋতুকে সময় না দেওয়ায় অর্থাৎ এইভাবে ঋতুকে অবজ্ঞা করায়, ঋতু কিছুটা মনঃক্ষুন্ন হলো।  সহেলী  ঘরে ঢুকেই প্রথমে দাদুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো। দাদু বেশ অবাক হয়ে গেলো। 

তুই তো কোনোদিন প্রণাম করিস না, আজ হঠাৎ প্রণাম করলি?  

 দাদু একদিন পরেই আমাদের দেশে দুর্গাপুজো শেষ হয়ে যাবে। আসবে বিজয়া দশমী।  তাই তোমায় আগাম প্রণাম করে রাখলাম।  আজ তোমার কাছ থেকে দুর্গাপুজোর গল্প শুনবো বলেই তো আমার এখানে আসা।

 সহেলীর কথাগুলো শুনে শ্যামলবাবু বেশ অবাক হয়ে গেলেন।  ভাবতে লাগলেন দুর্গাপুজোর কথা ও  কি করে জানলো।  তিনি বললেন তুই তো কোনোদিন পশ্চিমবঙ্গে যাসনি। ভারতেও কোনোদিন যাসনি দুর্গাপুজোর কথা তুই কিভাবে জানলি ? 

দাদু, পৃথিবীটা তো এখন হাতের মুঠোয়। তুমি যা জানতে চাইবে আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় তাই অনায়াসে জানতে পারবে। 

সেটা  তো বুঝলাম কিন্তু তোর দুর্গাপুজো নিয়ে এতো আগ্রহ জন্মালো কি করে ? সেটা তো বল।  

আসলে আমি সেদিন  একটা বাংলা সিনেমা দেখছিলাম।  সিনেমাটার নামটা  ছিল "উমা"। সিনেমাটার প্রধান চরিত্রে ছিল একটা বাচ্চা বাঙালি মেয়ে, যে সুইজারল্যান্ডে বসবাস করতো।  মাতৃহারা  বাচ্চা মেয়েটি মরণ রোগে আক্রান্ত। ডাক্তার মোটামুটি জবাব দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটির মনোবাঞ্ছা  ছিল সে কলকাতায় গিয়ে সেখানকার দুর্গাপুজো অর্থাৎ বাঙালিদের সবচেয়ে বড় উৎসবটি নিজের চোখে দেখবে। মেয়েটির বাবা তার স্বপ্নপুরণের জন্য কলকাতায় অকালে একটা নকল দুর্গাপুজোর আয়োজন করলো। ছবিটা ছিল ভীষণ ইমোশনাল মুভি। ছবিটার শেষটা দেখে আমি আর থাকতে পারিনি, চোখে জল এসে গিয়েছিলো। মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ছবিটাতে পাঁচদিন ধরে চলা একটা দুৰ্গোৎসবকে দেখানো হয়েছিল। ওখানে যেমন বহুরকম নিয়ম-নিষ্ঠা দেখানো হয়েছিল তেমন  মানুষদের উচ্ছাস ও উদ্দীপনাও  দেখানো হয়েছিল।  সেই পুজোয় উমা খুব আনন্দ করে, সে খুবই উপভোগ করে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না।  অচিরেই তাকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে হয়। এই সিনেমাটা আমায় ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যায়।  আমি ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে  দুর্গাপুজোর  গল্প বহুবার শুনেছি।  মা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন নানারকম গল্পের মধ্যে কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলের কথা, দুর্গাপুজোর কথা মাঝে মাঝেই উঠে আসতো।  বিশেষ করে মায়ের মামাবাড়ি টাকির জমিদারদের দুর্গাপুজো ও ভাসানের কথা বলতো।  দেবী দূর্গা ও মা কালী ছিল মায়ের পরম ভক্তির জায়গা। 

দুর্গাপুজো বাঙালিদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব অথচ আমি বাঙালি হয়ে কোনোদিন এই উৎসবে সামিল হতে পারিনি।  শুধু তাই নয়, কোনোদিন দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি।  সিনেমাতে বাচ্চা মেয়েটির দুর্গাপুজো নিয়ে যে আবেগ, যে উচ্ছাস দেখলাম, তা আমায় কলকাতার দুর্গাপুজো দেখার ইচ্ছে আরো বাড়িয়ে দিলো।  দেবী দূর্গা ও তাঁকে কেন্দ্র করে যে  উৎসব তা জানার আগ্রহ বাড়িয়ে দিল। খুব ইচ্ছে করে, একবার ওখানে গিয়ে নিজেদের দেশটাকে দেখে আসতে।যে দেশে জন্ম নিয়েছে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, নেতাজির মতো মহান ব্যক্তিত্বরা সে দেশ দেখার জন্য আমার মনটা ব্যাকুল  হয়ে আছে।  

আমি তাই তোমার কাছে কলকাতার দুর্গাপূজা ও তোমাদের পল্লীগ্রামের দুর্গাপুজোর কথা যেমন জানতে চাই তেমন দূর্গাপুজো নিয়ে আমাদের শাস্ত্রে যা বলা আছে সেগুলোও জানতে সমান আগ্রহী। তুমি আমায় সবটা জানাবে। কোনো রকম ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে না। 

আমি সবকিছু তো জানি না, তবে আমার যতটুকু জানা রয়েছে তোকে নিশ্চয়ই তা জানাবো।  ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। তবে আরো অনেক কিছু আছে যা আমার জানা নেই।   আমি তো বহু বছর ওখানকার পুজোতে যাইনি তাই  বর্তমানে  ওখানকার পুজোর পরিবেশ তোকে হয়তো  ঠিক ভাবে বলতে পারবো না।  


(চলবে )


তারিখ :২১-০২-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 



No comments: