Tuesday, September 15, 2020

অতীতের ফাঁসি দেওয়ার গলিই আজ ফ্যান্সি লেন>P

অতীতের ফাঁসি  দেওয়ার গলিই আজ ফ্যান্সি  লেন  



আমাদের শহর হল এক আজব শহর।  যার পথে ঘাটে  রয়েছে রোমাঞ্চকর কত ঘটনার স্মৃতি কথা।  আজকের সুসজ্জিত কলকাতার অলিতে গলিতে লুকিয়ে আছে কত ইতিহাস। এই সব ইতিহাসের অনেকটাই আজও উদ্ধার হয়নি। পুরোনো কলকাতার ইতিবৃত্তের বহু উপাদান আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।  সেইসব ইতিহাস যে সবসময় গর্বের ইতিহাস, তা নয়।  বহু বেদনাদায়ক গ্লানিময় ইতিহাসও  রচিত হয়ে আছে।  আজ সেইরকম এক গলির কথা বলব।  

 ইংরেজিতে ফ্যান্সি শব্দটির অর্থ সৌখিন বা রুচি, তার সাথে জড়িয়ে রয়েছে একটা সৌখিনতার প্রলেপ।  কিন্তু আজ যে ফ্যান্সি কথাটির কথা বলবো তা হল শহর কলকাতার এক বেদনার অধ্যাযের  সাথে জড়িয়ে রয়েছে।  ফাঁসি শব্দটির সাথে ভারতবাসীর স্বাধীনতা আন্দোলনের সমযে পরিচয় ঘটে।   সেইসময় ফাঁসির মঞ্চেই কত বিপ্লবের জয়গান রচিত হয়েছিল। এই ফাঁসি জেলের অন্দরে দেওয়া হত।

  তবে প্রকাশ্য দিবালোকে অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়া হত।  সেই প্রকাশ্য ফাঁসির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে  আমাদের শহরের একটি গলি।  গলিটির নাম ফ্যান্সি লেন।   সেদিনের সেই ফাঁকা জায়গা আর বর্তমানে নেই।  আজ গলিটিকে খুঁজতে হলে বহু সুউচ্চ আধুনিক ভবনের দেওয়ালে ধাক্কা খেতে হবে।  বহু লেন বহু পথ পেড়িয়ে তবে আজকের এই গলিটির সন্ধান মিলবে। কলকাতার ওয়েলেসলি প্লেস থেকে কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট পর্যন্ত রাস্তাটি বিস্তারিত।  এককালে এই রাস্তাটিতেই ফাঁসির দঁড়িতে জীবন দিতে হয়েছিল স্বাধীনচেতা ইংরেজ বিদ্রোহী মানুষদের,  অবাধ্য নীলচাষীদের।  এই ফাঁসি দেওয়ার গলির নামকরণ হয় ফাঁসি লেন।  যখন  ফাঁসি দেওয়া হত তখন অবশ্য এখানে কোনো রাস্তা ছিল না। 

 ১৬৯০ সালে জোব চার্ণক শহরে পদার্পণ করেন। তখনকার ভৌগোলিক অবস্থান আজকের মতো একদমই ছিল না।  বৈঠকখানা সংলগ্ন সার্কুলার রোড  ছিল তখন খাল বা পরিখা।  এই খালটি বর্গীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য খনন করা হয়েছিল। খালটি বাগবাজার থেকে শুরু করে বৈঠকখানার পাশ দিয়ে গিয়ে চক্রাকারে খিদিরপুরের আদি গঙ্গায় মিশেছিল। শিয়ালদহ অঞ্চলে এই খাল থেকে আর একটা খাল বেরিয়েছিল, যা ক্রিক রো, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, বেন্টিক স্ট্রিট হয়ে অধুনা ফ্যান্সি লেনের  পাশ দিয়ে গঙ্গায় মিশেছিল।  জোব  চার্নক এই খালের উপর একটা উপবন্দর তৈরী করেন। তখন বন্দরটি  ছিল বাগবাজার অঞ্চলে।  গঙ্গার সাথে খালটির যোগ থাকায় সকাল থেকেই বহু পণ্য বোঝাই নৌকো বাগবাজারে ও বৈঠকখানায় ভিড় জমাতো।  চলতো রমরমা বাণিজ্য।  বর্গীদের হামলা, লুঠতরাজ, খুন  খারাপি অবাধে চলতো। ব্যবসাদারা  ভয়ে জলপথে বাণিজ্য বন্ধ করে দিল।  এই বর্গী হাঙ্গামাযা শুধু ব্যবসাদার কেন সাধারণ মানুষও ছিল জর্জরিত। জোব  চার্ণক সকলের সুবিধার জন্য ও ব্যবসাদারদের বাণিজ্য যাতে অবাধে চলতে পারে সেই কারণে একদল সশস্ত্র রক্ষীদল গঠন করলেন এবং তারা খাল  বরাবর বাগবাজার থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত জলপথটিতে টহল দিত।  একদিন এই সশস্ত্র রক্ষীদের হাতে এক পর্তুগিজ দস্যু সর্দার ধরা পরে।  সে যেমন বহু অর্থ ও পণ্য লুঠ করেছে তেমন বহু মানুষকে খুনও করেছে। দস্যু সর্দারকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করে কারাগারে বন্দি করা হয়, কিন্তু সে কারাগার ভেঙে পালিয়ে যায়।  পালাবার সময সে এক ফিরিঙ্গি মহিলার সামনে পরে।   সে ধরা পড়ার ভয়ে মহিলাটিকে  গলা টিপে মেরে ফেলে।  এই ঘটনায়   চারদিকে আবার হৈচৈ পরে যায়।  ব্যবসায়ীরা আবার আতঙ্কিত  হয়ে পরে।   সশস্ত্র বাহিনী দস্যু সর্দারটিকে খুঁজে পায়নি।  এই ঘটনায়  দস্যু সর্দার জোব  চার্ণকের উপর ক্ষিপ্ত হলেন।  একদিন সে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে জোবের শোবার ঘরে পৌঁছে যায়।  জোব  তখন তার বাঙালি বধূকে নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।  দস্যুর আক্রমনে  তাদের ঘুম ভেঙে যায়।  জোব যখন দস্যুর সাথে ধস্তাধস্তি করছেন তখন তার স্ত্রী বিপদ ঘন্টা বাজিয়ে দেন।  প্রহরীরা দৌড়ে আসে এবং দস্যুকে বেঁধে ফেলে।  চার্ণক তাকে প্রাণদণ্ড দেন।  চক্রাকার পরিখার মাঝামাঝি থেকে যে খালটি ভাগিরথীতে গিয়ে মিশেছিল, সেই খালের পাশে একটা বড় গাছের নিচে ফাঁসিকাঠ তৈরী করা হয়েছিল। সেই ফাসিঁকাঠে প্রকাশ্যে দস্যু সর্দারকে ঝোলানোই হয়।  এই ঘটনার পর ওই পথে দস্যুবৃত্তি অনেকটা কমে যায়।  ফলে সেই অস্থায়ী ফাঁসির মঞ্চ গুরুত্ত্ব হারায়।  মানুষ এই মঞ্চের কথা ভুলে যায়।   

তারপর বহু বছর কেটে গেছে।  দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন।  বণিকের মানদণ্ড তখন কোম্পানির রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছে।  ইংরেজদের মানসিকতার বদল রয়েছে।  তারা তখন শোষকে পরিণত হয়েছে।  আমাদের দেশজ সম্পদ তখন জাহাজ ভর্তি হয়ে ইংরেজ মুলুকে চলে যাচ্ছে।  তাদের অত্যাচারে মানুষ তখন নাজেহাল। বিশেষ করে তাঁতিদের  উপর বেশি পরিমানে অত্যাচারের খাড়া নেমে এসেছে।  চাষিদের  নীলচাষ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।  অবাধে চলছে তাদের  উপর দমন-পীড়ন নীতি।  কখনো  কখনো অত্যাচারিত মানুষ সহ্য করতে না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। নীলচাষে অস্বীকৃত চাষিদের  জোবের দেওয়া এই ফাঁসির সময় প্রচুর লোক দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিল, কিন্তু পরে কোম্পানি ফাঁসি দিতো লোকচক্ষুর আড়ালে।  

 পরবর্তীকালে খাল সংলগ্ন ওই ফাঁসির  মঞ্চের নির্জন এলাকায় ধীরে ধীরে লোক বসত গড়ে উঠতে লাগলো।  ফাঁসির মঞ্চের ধার ঘেসে রাস্তা তৈরী হল,  তৈরী হল বাড়ি ঘর।  ফাঁসির মঞ্চকে কেন্দ্র করেই রাস্তাটির নাম হল ফাঁসি লেন।   ইংরেজদের মুখে ফাঁসি কথাটি হয়ে যায় ফানসি ।  আজ আর নেই সেই খাল।  সেই ফাঁসিকাঠ হারিয়ে গেছে। সেই ফানসি মানেই বিবর্তনের আবহে বিবর্তিত হয়ে আজ হয়েছে  ফ্যান্সি  লেন। 

গলিটি ইংরেজ বিদ্রোহী বহু মানুষ দেশকে ভালোবেসে এখানেই ফাঁসি কাঠে ঝুলেছিল।  তারাই নিশ্চিতভাবে আমাদের বুকে স্বাধীনতার বীজ রোপন করে দিয়েছিল। 
 
আজ সেই জোব  চার্ণক নেই, নেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।  ফ্যান্সি লেনে দেখা মিলবে না কোনো  ফাঁসির মঞ্চ। কিন্তু সেই নামের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে আমি আছি, ভয়ঙ্কর হলেও আজ আমি ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছি।  


ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  

তারিখ : 15-০৯-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 









Tuesday, September 8, 2020

ষ্টার থিয়েটার - এক চলমান ইতিহাস >P

ষ্টার থিয়েটার - এক চলমান ইতিহাস 



৮৪৪ সাল। বাংলার রঙ্গালয়ের  ইতিহাসে দুটি যুগান্তকারী ঘটনার ঘটে গিয়েছিল। শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা রাধাকান্ত দেবের পৃষ্টপোষকতায় দুটি ইংরেজি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই বছরেই বাগবাজার বোসপাড়ায় ২৮শে ফেব্রুয়ারি  নীলকমল ঘোষ ও রাইমনি দেবীর দ্বিতীয় পুত্র গিরিশচন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।  সেই সময়  শহর কলকাতায় কয়েকটি স্থানে শখের রঙ্গালয়ে চালু ছিল।  ১৯৬৭ সালে নাগাদ রাধামাধব কর, গিরিশচন্দ্র   ও ধর্মদাস সুর এরকম কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা নাট্য দল তৈরী করলেন। তখন এরকম শখের নাটকের দল তৈরী করে নাটক  মঞ্চস্থ করা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ ছিল। বাগবাজারে তাঁদের শখের দলটি তৈরী হয়েছিল। তাঁদের প্রথম পালা ছিল মাইকেল মধুসূদনের "শৰ্মিষ্ঠা" নাটকটি। ১৮৬৮ সালের দূর্গা পুজার সময় দীনবন্ধু মিত্রের সামাজিক প্রহসন "সধবার একাদশী" নাটকটি  গিরিশ ঘোষের নেতৃত্বে বাগবাজার আমেচার থিয়েটারে  মঞ্চস্থ হল। তাঁদের  পরের নাটক ছিল "লীলাবতী"। "সধবার একাদশী" ও "লীলাবতী" নাটক দুটি বিদগ্ধ মহলকে মুগ্ধ করেছিল। গিরিশ ঘোষের  নাম চারদিকে  ছড়িয়ে পরেছিলো।   প্রথমদিকে শ্যামবাজারে রাজেন্দ্র লাল পালের বাড়িতে একটা রঙ্গমঞ্চ তৈরী করা হয়েছিল।  সেখানেই নাটক দুটির অভিনীত হয়েছিল।  শুরু হয়েছিল বেশ কিছু  পেশাদারী নাট্য দল।  গিরিশ ঘোষ তার কর্মজীবনে বহুবার নাট্যদল বদলেছিলেন।  গিরিশের উদ্যোগেই  ষ্টার থিয়েটার একটা নিজস্ব ঠিকানা পেয়েছিলো।  

কথিত আছে ষ্টার থিয়েটারের ভীত শক্ত করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি একটা গুদামঘরে বসে নাটক লিখেছিলেন।  বিনোদিনী নামে নতুন প্রতিভাকে রঙ্গমঞ্চে  এনে দিয়েছিলেন। সেই সময় বাংলা থিয়েটারের রশিটি প্রতাপ চাঁদ জহুরি, গুর্মুখ রায় প্রমুখ ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল।  

১৮৮৩ সাল গিরিশ ষ্টার থিয়েটার গড়ে তুলেছিলেন। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের মালিক অবাঙালি প্রতাপ চাঁদ জহুরি। তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তারই অধীনে কাজ করত গিরিশ ঘোষ ও বিনোদিনী দাসী।  থিয়েটারকে তিনি ব্যবসা হিসেবেই দেখতেন। গিরিশের তা একদমই পছন্দ ছিল না।  তিনি চেয়েছিলেন নতুন একটা থিয়েটার তৈরী করে নাটক মঞ্চস্থ করতে কিন্তু একটা মঞ্চ তৈরী করা বহু টাকার ব্যাপার।  এত টাকা সে কোথায় পাবে। এদিকে গুর্মুখ রায় নামে অল্প বয়সী এক ব্যবসায়ী গিরিশকে থিয়েটার গড়ে তোলার জন্য অর্থ প্রদান করেন। সে বিনোদিনী দাসীর প্রেমে পাগল হয়ে উঠেছিলেন। ৫০ হাজার টাকায় সে বিনোদিনীকে কিনতে চায়।  থিয়েটারের থেকে বিনোদিনীর প্রতি তাঁর  আকর্ষণ বেশি ছিল। তিনি বিনোদিনীকে একান্তে আপন করে পাওয়ার জন্য তার নামে  থিয়েটার খুলতে আগ্রহী হন।  

৫৮ বিডন স্ট্রিটে একটা ফাঁকা জায়গা ইজারায় নেন গুর্মুখ রায়।  খোলা হয় থিয়েটার। তবে বিনোদিনীর নামে  নয়।  গিরিশ যুক্তি দিয়ে বোঝান বারাঙ্গনা বিনোদিনীর নামে থিয়েটারের নামে  হলে সামাজিক বাঁধা আসবে। গিরিশের যুক্তি মেনে নাম করা হয় "ষ্টার থিয়েটার"।  ৩১শে  জুলাই ১৮৮৩ সালে গিরিশের লেখা "দক্ষযজ্ঞ" নাটক দিয়ে প্রেক্ষাগৃহটির উদ্বোধন হয়। তবে বছর কয়েক পরে গুর্মুখ রায় থিয়েটারের শর্ত ছেড়ে দেন। অমৃতলাল মিত্র, হরিপ্রসাদ বসু ও দাসুচরণ নিয়োগী প্রমুখরা মাত্র ১১ হাজার টাকায় কিনে নতুন মালিক হন।  বিনোদিনী ষ্টার থিয়েটারেই রয়ে গেলেন।  ২১শে সেপ্টেম্বর ১৮৮৪ সালে "চৈতন্যলীলা" নাটকের প্রধান অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীর অভিনয় দেখতে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণই পরমহংসদেব এই থিয়েটারে প্রথম এসেছিলেন। বিনোদিনীর অভিনয়ে আপলুত হয়ে তিনি তাকে আশীর্বাদ করে যান। বলেন "তোর চৈতন্য হোক"  ১৮৮৭ সাল নাগাদ বিনোদিনী রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নেন, তার বিদায়ের অল্প  কিছুদিন পরে ষ্টার থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়।  মালিক পক্ষ মাত্র তিরিশ হাজার টাকায়  বিক্রি করে দেয় গোপাললাল শীলকে। তিনি এমারেল্ড থিয়েটার নাম একটা নতুন দল গঠন করেন। সেটি তিনি বেশিদিন চালাতে পারেননি। ৭৫/৩ কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে প্রেক্ষাগৃহ বিক্রির টাকায় ত্রিশ কাটা  জমি কেনেন। প্রায় সবাই হাল ছেড়ে দিলেও, গিরিশ ঘোষ হাল ছাড়েননি। তিনি নাট্য জগতে থেকে গেলেন। তিনি পুরোনো দল থেকে বোনাস হিসেবে পাওয়া টাকা ও আরো কিছু টাকা জোগাড় করে গিরিশ ঘোষ ষ্টার থিয়েটারের নতুন বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিলেন।  নতুন থিয়েটারের জন্য "নাসিরাম" নামে  একটা নতুন নাটকও  লিখলেন। ২৫শে মে ১৮৮৮ সালে এই নতুন নাটক দিয়ে ষ্টার থিয়েটারের পথচলা শুরু হল। তার কিছুদিন পরে গিরিশ এই থিয়েটারে যোগ দিলেন।  থিয়েটারটি পেশাদার মঞ্চ হিসেবে তৈরী করা হয়েছিল। পেশাদার মঞ্চ হিসেবে আজ প্রায় শতবর্ষ উত্তীর্ণ করে গেছে। এই শতাধিক বছরে প্রায় ২৫০টি নাট্য প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়েছিল। কত খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয় এখানে হয়েছে। শিশির ভাদুড়ী, অহীন্দ্র চৌধুরী, ছবি বিশ্বাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তমকুমার, তরুণকুমার, প্রমুখ অভিনেতা আর সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, প্রভাদেবী, সরযূবালা প্রভৃতি অভিনেত্রীর অভিনয় সমৃদ্ধ ছিল রঙ্গমঞ্চটি। 

১২ই অক্টবর  ১৯৯১ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ষ্টার থিয়েটার  সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়ে যায়।  আগুনের লেলিহান শিখা আস্তে আস্তে গ্রাস করে নেয় গিরিশ-বিনোদিনীর আত্ম্যত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যমন্ডিত রঙ্গমঞ্চটিকে। কলকাতা পুরসভা প্রেক্ষাগৃহটিকে নতুন করে গড়ে দেয়। প্রায়  ১২৫ বছর উত্তীর্ণ ষ্টার থিয়েটারের দ্বিতীয় দফায় পথ চলা শুরু হয় ২০০৪ সালে কলকাতা পুরসভার হাত ধরে। পরিকাঠামো ও অন্যান্য কারণে এখানে নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ করা সম্ভব হচ্ছিল না, তাই পুর কর্তৃপক্ষ  ঠিক করে নাটকের বদলে এখানে  সিনেমা  প্রদর্শন করা হবে।  নাটকের বদলে রূপান্তরিত হয় চলচিত্র প্রদর্শনীর প্রেক্ষাগৃহ।  


ষ্টার থিয়েটার হলো কলকাতার এক স্বনামধন্য থিয়েটার ও এক ঐতিহ্যশালী বাড়ি। এটি  বাঙালি জাতির গৌরবময় ঐতিহ্যকে বহন  চলেছে। এটি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গর্ব।  এটি ব্রিটিশ আমলে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঢেউ এনেছিল। অন্যন্য থিয়েটার হলগুলোর সেই সময় উপস্থিতি সত্ত্বেও ষ্টার থিয়েটার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল।  


ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  

তারিখ : ০৮-০৯-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।