Sunday, November 22, 2020

কলকাতার চীনা কালী মন্দির>P

কলকাতার চীনা কালী মন্দির




আমরা প্রায়ই চীনা  খাবার খেতে ট্যাংরার চায়না টাউনে  যাই, কিন্তু  ভুলেও কেউ দেখতে যাই না ওই পাড়ার বিখ্যাত চীনা কালী মন্দিরটিকে। শহরবাসীর কাছে অঞ্চলটি শুধু পানশালা ও মনোরম চাইনিজ খাবারের জন্য বিখ্যাত।  এই চীনা পাড়াতেই রয়েছে বহু প্রাচীন ও সুবিখ্যাত চীনা কালী মন্দির। এই মন্দিরে পূজিতা হন দেবী কালী, যা হিন্দুদের কাছে যেমন জাগ্রত ঠিক তেমন অঞ্চলের চীনা পরিবারগুলোর কাছেও সমানভাবে সমাদৃত। 

আমরা জানি শহর কলকাতার কাছে বজবজে প্রথম চীন দেশ থেকে টং অছি নামে  এক চীনা ভদ্রলোক একটা চিনি কল স্থাপন করেন।  তিনি তার কলে উৎপাদিত চিনি  বিক্রির উদ্দেশ্যে এই শহরে পাড়ি জমান।  চিনি শিল্পের হাত ধরে তার আগমন ঘটলেও চীনারা পরবর্তী সময়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন।  তারা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিলে মিশে যায়।  তারই ফলস্বরূপ এক চীনা অধিবাসী অধুনা চীনা পাড়ায়  গড়ে তোলেন এই চীন কালী মন্দিরটি। যা আজ প্রায় ষাট  বছর অতিক্রম করে গেছে।  




বছর ষাটেক পূর্বে স্থানীয় অধিবাসীরা একটি নিম  গাছের তলায় দুটি  কালো পাথরে সিঁদুর মাখিয়ে পূজা করতো। পরবর্তীকালে অঞ্চলে একজন চীনা অধিবাসী সেটিকে অনুসরণ করতে থাকেন।  তিনি জাতে ও ধর্মে ভিন্ন হলেও হিন্দু দেবতারূপে পাথরটিকে সমানভাবে মান্যতা দিতেন ও খুব নিষ্ঠা সহকারে পূজা করতেন।  ধীরে ধীরে আরো কয়েকজন চীনা অধিবাসী তাকে অনুসরণ করতে লাগলো। সব কিছু দেখে পরবর্তীকালে জনৈক চীনা ভদ্রলোক সেই গাছকে ও কালো পাথর দুটিকে নিয়ে একটি ছোট্ট মন্দির নির্মাণ করে দেন। 

 কথিত রয়েছে এক চীনা  দম্পতির সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।  তখন তারা ওই গাছের কালো পাথর দুটিকে ভক্তি ভরে আরাধনা করেছিলেন। সেই আরাধনার ফলে তাদের সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।  সেই বিশ্বাসে তাঁরা এখানকার এই মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন ও মাটির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে দেন।  পরবর্তীকালে আবশ্য সেই মাটির মূর্তিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুনভাবে মূর্তিকে অষ্টধাতুতে নির্মিত করা হয়েছে।  


মন্দিরে অবস্থিত রয়েছেন দেবী কালিকা  ও মহাদেব।  সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হিন্দু ধর্ম মতে এখানে নিয়মিত পুজার্চ্চনা করা হয়ে থাকে।  এখানকার দেবী আরাধনার দায়িত্বে রয়েছেন হিন্দু পুরোহিত। দীপাবলির দিন বহু চীনা ও বাঙালি ভক্তের সমাগম হতে দেখা যায়।  সকলেই পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে থাকে। এখানকার ভোগ হিন্দু  ও চাইনিজ সংস্কৃতির মিশ্রনে হয়ে থাকে। দেবীর নৈবেদ্যতে যেমন থাকে হিন্দুদের মতো খিচুড়ি, তরকারি, ফল, মিষ্টি তেমন চাউমিন ইত্যাদি কয়েকপ্রকার চাইনিজ খাবারও  থাকে। শোনা যায় মন্দিরে যে ধূপ ব্যবহার করা হয় তা চীন দেশ থেকে নিয়ে আসা হয়।  

আমাদের শহর বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র।  তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো এই চীনা কালী মন্দিরটি। যা এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কলকাতার বুকে।  মা সবার, সবার তাকে আরাধনা করার অধিকার  রয়েছে। 

তারিখ : ২২-১১-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 



Sunday, November 15, 2020

উত্তর কলকাতার গিন্নি>P


উত্তর কলকাতার গিন্নি 

- সুদীপ্ত মুখার্জী 




সনাতন ধর্ম মতে কালী বা কালিকা হলেন শক্তির দেবী।  হিন্দু দেবী।  দেবীর ওপর নাম শ্যামা। কাল শব্দিটির অর্থ হলো মৃত্যুরোধক অর্থাৎ মৃত্যুর সময় আসন্ন, বলা হয় মহাকাল এসে গেছে।  দেবীর নাম মহাকালী। শিবের ওপর নাম কাল।  কালী হচ্ছেন কাল কথাটির স্ত্রীলিঙ্গ বোধক।  কালী হচ্ছেন দেবী দুর্গার বা পার্বতীর ভয়াল রূপ।  তিনি কৃষ্ণবর্ণা ও ভয়ঙ্করা। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবীর ভয়ঙ্করা রূপের পূজা করে থাকেন। তিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করেন। তাঁর এই সংহারী রূপের পরেও আমরা তাঁকে মাতা হিসেবে সম্বোধন করে থাকি।  তিনি কল্যাণময়ী ও মঙ্গলময়ী মাতাও। তন্ত্র অনুসারে দেবী কালী হলেন দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী।  



কলকাতা শহরের উত্তর দিকের কুমারটুলি অঞ্চলটিকে  আমরা সবাই ঠাকুর তৈরির  পাড়া  হিসেবেই জানি।  কিন্তু এই পাড়াতেই  একটি বহু প্রাচীন কালী মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি কত প্রাচীন তার কোনো হদিস আজও পাওয়া যায়নি।  আজ থেকে প্রায় ৪০০ - ৫০০ বছর পূর্বে উত্তর কলকাতার কুমারটুলি ও বাগবাজার অঞ্চলটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। তখন অঞ্চলটি সুতানুতি নাম পরিচিত ছিল। জঙ্গলের    চারদিকে বেত ও নানারকম গাছে ভরা, ঘুরে বেড়াতো ডাকাত ও ঠ্যাঙারের দল।  কোনো জনবসতি গড়ে ওঠেনি।   সেই সময় উত্তর ভারতের হিমালয় থেকে  কালীবর নামাঙ্কিত এক তপস্বী সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে দক্ষিণদিকে যাত্রা শুরু করেন। ভুলবশত তিনি গঙ্গার ধারে অর্থাৎ ভাগীরথীর তীরে আজকের বাগবাজার অঞ্চলে একটি মায়ের মূর্তি তৈরী করে গভীর সাধনায় নিমগ্ন হন, গড়ে তোলেন তার সাধনার পীঠ।  সাধনা করে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন এবং মাতৃ দর্শন লাভ করেন। শোনা যায়, এই স্থানে তিনি বেত ও হোগলা পাতা দিয়ে একটি ঘরও  তৈরী করেন।  সেই ঘরে দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তাঁর সাধনার সময় ও মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় নিয়ে বহু মতান্তর রয়েছে। সেই সন্ন্যাসী  চলে যাওয়ার পর এক কাপালিক বিগ্রহটির পূজা শুরু করেন।   কথিত রয়েছে, সেই আমলে নাকি নন্দ ডাকাত নামে  এক ডাকাত এই অঞ্চলে দেবী কালির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দিরটি তার আশ্রম  ছিল।  গোপবংশীয় ডাকাত নন্দরাম ঘোষ দেবী সিদ্ধেশ্বরীর সামনে নরবলি দিতেন।  ডাকাতের দলে ছিল হাড়ি, বাগদি, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ, মুসলমান সহ নানা রকম ধর্মের মানুষ।  দলের সকলেই মাতৃ আরাধনায় অংশ নিতো।    প্রায় প্রতিদিন ডাকাত তার মন্দিরে নরবলি দিয়ে তবে ডাকাতি করতে বেরতো। পরবর্তীকালে  ইস্ট ইন্ডিয়া  নরবলি বন্ধ করে দেয়।  পরবর্তী সময় এই অঞ্চলে তৎকালীন জমিদার গোবিন্দরাম মিত্র ১৭৩০-৩১ সাল  নাগাদ একটি মন্দির নির্মাণ করে দেন। মন্দিরের চূড়া আজকের শহীদ মিনারের চেয়েও উঁচু ছিল।  ১৭৩৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সেটি ভেঙে পড়ে।  জমিদারের মন্দিরটিকে সাহেবরা "মিত্র প্যাগোডা" বা "ব্ল্যাক প্যাগোডা" বলে অভিহিত করতো। 

পরে কাঁটাপুকুর অঞ্চলের রামসন্তোষ ঘোষ নাম একজন সম্পন্ন ও প্রভাবশালী ব্যক্তি এখানে এসে বসবাস শুরু করেন।  তিনি ডাকাতদলের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন।  শোনা যায় , এক অমাবস্যার  রাতে দুটো বালককে বলি দেওয়ার জন্য ডাকাতদল ধরে নিয়ে এসেছিলো।  সিদিন সন্ধ্যে থেকে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতহচ্ছিল। রামসন্তোষের স্ত্রী শিবানী দেবী তার ঘরে পূজাতে বসেছিলেন সেই সময় দরজায় কেউ ধাক্কা দিতে থাকে। তিনি দরজা খুলে দেখেন সম্মুখে দুটি বালক দাঁড়িয়ে আছেন।  একটি বালক ঠক ঠক করে কাঁপছে আর একটি বালক তার পায়ে লুটিয়ে পরে আশ্রয় ভিক্ষা করছে।  বালকটি শিবানীদেবীকে বলল যদি আশ্রয় না দেওয়া হয় ডাকাতরা তাদের দুজনকে বলি দিয়ে দেবে।  কোনোক্রমে ডাকাতদের চোখ এড়িয়ে তারা পালিয়ে এসেছে।  সেই রাতে রামসন্তোষ তার স্ত্রীর কাছ থেকে সব ঘটনা শুনে পরদিন সকালে ডাকাত সর্দারকে ডেকে পাঠান। ডাকাত সর্দার নন্দ  তাকে পাত্তা দিলেন না, উপরন্তু তাকে হুমকি দিলেন। রামসন্তোষ পরদিন গ্রামের সকলকে ডেকে মন্দিরে উপস্থিত হয়ে দেখলেন একটি মানুষের কাটা মুন্ডু  পড়ে  রয়েছে।  ডাকাতরা  আগেরদিন রাতে জনৈক কোনো ব্যক্তিকে বলি দিয়েছিল।  এরপরই রামসন্তোষের বাহিনী ডাকাতকে গুলি করে মারে।  তারপর থেকে অঞ্চলে উৎপাত বন্ধ হয়।   


বর্তমানে কুমারটুলি অঞ্চলে বাগবাজারের কাছে ট্রাম লাইনের পাশে  সুপ্রাচীন মন্দিরটি অবস্থিত। রবীন্দ্র সারণি ও মদন মোহনতলা স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবস্থিত মন্দিরটির  ঠিকানা হলো- ৫২০, রবীন্দ্র সারণি, কুমারটুলি, কলকাতা- ৭০০০০৫। মন্দিরটি খুবই ছোট।  রাস্তা থেকেই দেবী মূর্তি দেখা যায়।  মন্দির সংলগ্ন একটি দালান রয়েছে।  মূর্তি পশ্চিমাস্যা।  মন্দিরের বারান্দার নিচে ফুটপাতের উপরেই বলিদানের মঞ্চ রয়েছে।মন্দিরটিতে একটি  সুন্দর সিদ্ধেশ্বরী মাতার মূর্তি বিরাজিত। দেবী এখানে মৃন্ময়ী বসন ও স্বর্ণালংকারে ভূষিত। দেবীর পদতলে শ্বেত  মহাদেব শায়িত রয়েছে। প্রতিদিন নিত্যপূজা হয়। কালী পূজার দিন ও বিশেষ বিশেষ তিথিতে বেশ সমারোহে দেবী পূজিত হন। সেই সব দিনগুলোতে  এখানে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। কালীপুজোর দিন দেবীর বিশেষ ভোগের ব্যবস্থা করা হয়।   সাধারণত তাতে  খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচ রকমের ভাজা, দুরকমের তরকারি, মাছের ঝোল, চাটনি ও পায়েস থাকে। এছাড়া নানারকম ফল ও  মিষ্টান্ন তো থাকে।  খুবই নিষ্ঠা সহকারে দেবী পূজিত হন। কার্তিকী অমাবস্যা, বুধ পূর্ণিমায় ফুলদল ও জ্যৈষ্ঠ মাসের ফোলহারিণী কালীপূজা সাড়ম্বরে পালিত হয়।  রাজা নবকৃষ্ণের নির্দেশে সেই কাল থেকে আজ মন্দিরের ভোগের জন্য শোভাবাজার বাজার থেকে সবজি আসে।  





কথিত রয়েছে শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব পরমহংসের পদধূলি এই দেবী মন্দিরে পড়েছিল। যখন কেশবচন্দ্র সেন  অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন ঠাকুর মায়ের কাছে ডাব  ও চিনি মানত করেন।  তিনি বলতেন  - "ওরে এই মা সকলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন, তোদের যা যা কামনা তাই তিনি পূর্ণ করতে পারেন"। একবার তিনি বসুমতি সাহিত্য মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে বলেছিলেন - "উপেন যা।  সিদ্ধেশ্বরীর কাছে মানত কর, তোর এক দরজা যেন শত দরজায় পরিণত হয়"।  নাট্য সম্রাট গিরিশ ঘোষ তার নতুন নাটক মঞ্চস্থ করার পূর্বে এখানে দেবী মূর্তির পায়ে নাটকটির পাণ্ডুলিপি ঠেকিয়ে নিয়ে যেতেন। নাটিকটিকে তিনি মায়ের পায়ে উৎসর্গ করতেন।  নাট্য সম্রাট মাকে  "উত্তর কলকাতার গিন্নি " বলে অভিহিত করে যান।  রামকৃষ্ণদেব ছাড়াও স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী সারদানন্দ প্রমুখেরা মায়ের পূজা অর্চনা করে গেছেন।  মাতা সারদা দেবীর পদধুলিও এখানে পড়েছে।  



নানান তিথিতে ও কালী পুজোর দিন ভক্ত ও ভক্তি মিলে-মিশে এক হয়ে যায়। দেবী সিদ্ধেশ্বরী সকলের  মনোবাঞ্ছা  পূরণ করেন বলে লোকের বিশ্বাস রয়েছে। দেবীর উপর মহিমায় "উত্তর কলকাতার গিন্নি" আজও মহিমান্বিত হয়ে  রয়েছেন।  


তারিখ :১৫-১১-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 





Friday, October 23, 2020

শেওড়াফুলি রাজবাড়ীর পূজা >P

 হুগলির ঐতিহ্যবাহী শেওড়াফুলি রাজবাড়ীর পূজা 






  পশ্চিমবঙ্গের উৎসব অনুষ্ঠান একটি নিজস্ব স্বতন্ত্র সৌন্দর্য বহন করে, উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।  ইতিহাসের পাতা ওল্টালে আমরা বাংলার বিভিন্ন রাজা-জমিদারদের  পরিবারের পূজা ও তাদের ঐতিহ্যের কথা জানতে পারি, জানতে পারি তাদের পারিবারিক ইতিহাস। হুগলি জেলার শেওড়াফুলিতে তেমনি এক ঐতিহ্যবাড়ি জমিদার ছিলেন রাজা মনোহর রায়। আজ তাঁর পারিবারিক পূজার কথা বলবো।  
 

শেওড়াফুলি রাজবাড়ীর পূজা এবছর ২৮৭ বছরে পদার্পন করলো। এটা হুগলি জেলার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পূজা। দেবী এখানে সর্বমঙ্গলময় মাতা সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিত হন। এই পরিবারের  আদি নিবাস  ছিল বর্ধমান জেলার পাটুলি গ্রামে। এই বংশের রাজারা প্রচার বিমুখ মাতৃসাধক ছিলেন। কলকাতা থেকে কাশীধাম পর্যন্ত বহু জায়গায় এঁনারা বহু মন্দির ও বিগ্রহ  প্রতিষ্ঠা করেন। পুন্যহৃদয় রাজা মনোহর রায় বর্ধমান জেলার আঁটিসারা গ্রামে  প্রজাদের সুবিধার্থে একটি পুকুর খনন করার সময় স্বপ্নে মাতা সর্বমঙ্গলাকে দেখতে পান। দেবী তাঁর কাছে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে দেখা দেন। কয়েকদিন পরে ওই খননের সময় এক দিনমজুরের কোদালে উঠে আসে একটি  অষ্টধাতুর দূর্গা বিগ্রহটি (দেবী সর্বমঙ্গলা)। পরবর্তী কালে রাজবংশের পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায়। রাজা মনোহর রায় পাকাপাকিভাবে শেওড়াফুলিতে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময় জায়গাটা চলে আসে হুগলি জেলায়। তিনি শেওড়াফুলি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।  



১১৪১ সালের ১৫ই জ্যৈষ্ঠ (১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে) শেওড়াফুলির রাজবাটীতে তিনি বিগ্রহটিকে প্রতিষ্ঠা করেন।  সেই থেকে রাজবাটীর লক্ষ্মী জনার্দন মন্দিরে মায়ের নিত্যপূজা, জন্মতিথি পালন ও বিশেষভাবে দুর্গাপূজা করা হয়ে আসছে।  মায়ের নিত্য সেবায় আতপ চালের নৈবেদ্য ও ফল-মিষ্টান্ন থাকে। দুর্গাপুজোয়  পূর্বে ছাগবলি, মহিষবলি করা হতো বর্তমানে চালকুমড়া বলি করা হয়।  কথিত আছে, রাজবংশের বড়  তরফের সেবাইত  স্বর্গীয় নির্মল  চন্দ্র ঘোষ স্বপ্নে দেখেন পাঠাবলির সময় পাঁঠাটি বিকট শব্দে আৰ্তনাদ করছে।  সেই সময় পন্ডিতরা পশুবলি নিষেধ করে দেন।  তারপর থেকে আর কখনো এখানকার পূজায়  পশুবলি করা হয় না। দেবী এখানে কাত্যাযনিরূপী হওয়ায় দেবীর সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী লক্ষ্মী থাকে না। রাজবাড়ীর পুজোটি  সাধারণভাবে মহালয়ার সাতদিন পূর্বে কৃষ্ণনবমী তিথিতে বোধন দিয়ে শুরু হয়। এবছর তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। এবছর  মল   মাস পড়ায়  মহালয়ার ৩৪ দিন পর দুর্গাপূজা মহাষষ্ঠী পড়েছে। এখানে দুর্গাপূজার ৪১ দিন পূর্বে দেবীর বোধন হয়ে গেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চন্ডীপাঠ, সন্ধ্যারতি ও নিত্যপূজা  চলছে।    সকালে আতপচাল ও বিভিন্ন ফল এবং সন্ধ্যায় লুচি ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে দেবীকে দেওয়া হয়।  মহাষ্টমীর দিন কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে।  দশমীর দিন শুধু দেবী ঘট ও কলাবৌ বিসর্জন দেওয়া হয়ে থাকে।  পূর্বে এখানে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রেওয়াজ  ছিল। জৌলুস  হয়তো আজ নিভন্ত।  তবে রীতি নীতি আজও যতটা সম্ভব মেনে চলা হয়।   


রাজবাড়ীর দুর্গাপূজা দেখতে বহু দূর-দূরান্ত থেকে বহু দর্শক আসেন। বহু ভক্ত তাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য মায়ের পূজা দিয়ে থাকেন।  


 ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ :২৩-১০-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 




Wednesday, October 21, 2020

দুর্গাপুজোকে উৎসবে পরিণত করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ>P

দুর্গাপুজোকে উৎসবে পরিণত করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ 

- সুদীপ্ত মুখার্জী 

কলকাতায় বাঙালির দুর্গোপূজো খুব বেশিদিনের নয়।  ১৬১০ সালে বেহালায় লক্ষ্মীকান্ত মজুমদারের হাত ধরে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের আটচালায় শুরু হয়েছিল।  তার দেড়শো বছর পরে উত্তর কলকাতার শোভাবাজারে বেশ ঘটা করে পুজো করা হয়েছিল।  মাঝে অবশ্য অস্টাদশ শতকের প্রথমভাগে ব্ল্যাক জমিদার গোবিন্দরাম মিত্রের কুমারটুলির বাড়িতে পুজোর প্রচলন হয়েছিল।  পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়কে দুর্গাপুজোর মাধ্যমে উৎসবে পরিণত করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব।  ধীরে ধীরে তা সর্বজনীন উৎসবের রূপ নিয়েছে।  শহরের অলিতে গলিতে দুর্গোৎসবটি ছড়িয়ে পড়েছে। 

নবকৃষ্ণের পিতা রামচরণ দেব বাংলার তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর অধীনে তার সেরেস্তায় কাজ করতেন বলে শোনা যায়।  নবাব তাঁকে  হিজলি, তমলুক, মহিষাদল, ইত্যাদি স্থানের কলেক্টর পদে নিযুক্ত করেছিলেন। পরে তিনি কটকের দেওয়ান হয়েছিলেন।  মেদিনীপুরের জঙ্গলে মারাঠা দস্যুদের হাতে তিনি নিহত হয়েছিলেন। মৃত্যুকালে তিন পুত্র ও পাঁচ কন্যা রেখে গেছেন।  রামচরণের বিধবা পত্নী পুত্র-কন্যা নিয়ে খুবই কষ্ট করে গোবিন্দপুরে জীবনযাপন করতেন।  পরবর্তী কালে প্রথমে তিনি আড়িপুলিতে ও তারপরে শোভাবাজারে এসে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন।  নবকৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন।  মায়ের চেষ্টায় ও অনুপ্রেরণায় প্রথমদিকে আরবি ও ফরাসি ভাষা শেখেন এবং পরবর্তীকালে নবকৃষ্ণ ইংরেজি ভাষাটিকেও বেশ রপ্ত করে নেন।  সেই আমলে ধনকুবের নকু ধরের  কাছে তিনি চাকরি নেন।  নকু ধরের  আনুকূল্যে তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের ফরাসি শিক্ষক নিযুক্ত হন।  তখন অবশ্য হেস্টিংস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য কর্মচারী ছিলেন।  বুদ্ধিমান নবকৃষ্ণ হেস্টিংস ও লর্ড ক্লাইভের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।  ধীরে ধীরে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেশ বিশস্ত কর্মী হয়ে ওঠেন।  কোম্পানি তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে মুন্সী পদে উত্তীর্ণ  করেন।  পলাশীর যুদ্ধের পর নবকৃষ্ণের ভাগ্যের  চাকা ঘুরে যায়।  তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হর্তাকর্তা ছিলেন লর্ড ক্লাইভ।  তিনি তার বন্ধু নবকৃষ্ণের  জন্য দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে "রাজাবাহাদুর" খেতাব নিয়ে আসেন। 

ক্রমে ক্রমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রপ হিসেবে কলকাতাকে গড়ে তোলে।  তারা বাংলার বহু জায়গায় বাণিজ্যকুঠি তৈরী করে।  সেই সময় কেউ কেউ ইংরেজদের বদান্যতায় হঠাৎ ধোনি হয়ে ওঠে।  এই নব্য ধোনিরা শহরে চালু করেছিলেন বাবু সংস্কৃতি। বাবু সংস্কৃতির প্রধান পথ প্রদর্শক ছিলেন অবশ্য নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র।  কলকাতার ধোনিদের মধ্যে রাজা নবকৃষ্ণের হাত ধরে বাবু কালচার শুরু হয়।  পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের সহায় করার জন্য পুরস্কার হিসেবে প্রভূত ধনসম্পত্তি পেয়েছিলেন।  শোভাবাজারে তিনি একটি প্রাসাদোপম বাড়ি শোভারাম বসকের কাছ থেকে কেনেন।  বাড়িটি কেনার পর তিনি বহু টাকা ব্যয় করে সংস্কার করেন।  বাড়িটি ঠাকুরদালান সমেত কয়েক মহল ছিল।  ঐতিহাসিকদের মতে বাংলার শেষ নবাব সিরাজের বিপুল ধনসম্পত্তি ভাগ বাঁটোয়ারায় তিনি প্রচুর সম্পত্তি লাভ করেছিলেন।  

পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে লর্ড ক্লাইভ বাঙালির দুর্গাপূজাকে হাতিয়ার করেন।  তিনি রাজা নবকৃষ্ণকে বিজয়ৎসব করার কথা বলেন।  রাজা তাঁর নবনির্মিত ঠাকুরদালানে এই উৎসবের আয়োজন করেন।  শুরু হল দেবী দুর্গাকে ঘিরে উৎসব।  এই পুজোয় আমন্ত্রিত হয়ে সাঙ্গপাঙ্গ সমত লর্ড ক্লাইভ এসেছিলেন।  মহামান্য ক্লাইভের ও আমন্ত্রিত সাহেবদের বসার জায়গা এমনভাবে করা হয়েছিল  যাতে তাঁরা সরাসরি দেবীর পুজো দেখতে পারেন।  কথিত আছে, লর্ড ক্লাইভ সঙ্গে করে কয়েক ঝুড়ি ফল নিয়ে এসেছিলেন।  এছাড়া তিনি ১০১ টাকা চাঁদাও দিয়েছিলেন।  

পূজা উপলক্ষ্যে লাগামহীন আমোদ-প্রমোদ ও আনন্দ উচ্ছাসের  ব্যবস্থা করা হয়েছিল।  খানাপিনা ও বাইজি নাচের অঢেল ব্যবস্থা ছিল।  শোনা যায়,  লখনউ থেকে বাইজি ও বেনারস থেকে পুরোহিত নিয়ে আসা  হয়েছিল।  ১৮০১ সালে উইলিয়াম ওয়ার্ড শোভাবাজার রাজবাড়ীর দুর্গাপুজোর নবমী রাত্রির   বিবরণ লিখে গেছেন। তাঁর বিবরণ থেকে আমরা জানতে পারি, হিন্দু নর্তকীদের নাচ, মুসলমান বাঈজীরা হিন্দুস্থানী গান গেয়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে সকলকে আপ্যায়ন করেছিল।  চারদিকে সাবেবরা বসে এই নাচের দৃশ্যগুলো উপভোগ করেছিলেন।  পূজামণ্ডপে নানারকম খিস্তিখেউড় ও বেলেল্লাপনা করা হয়েছিল, যা কলকাতার পুজোয় সর্বপ্রথম এখানেই দেখা গিয়েছিলো।  

১৮০২ সালে ফ্যানি পার্কস নবকৃষ্ণের পুজো সম্বন্ধে লিখে গেছেন - "পুজোমণ্ডপের পাশের একটা বড় ঘরে নানারকম উপাদেয় খাবার অঢেল পরিমানে সাজানো রয়েছে। সবই বাড়ির কর্তার সাহেব অতিথিদের জন্য।  খাবার সরবরাহ করেছেন বিদেশী পরিবেশক গান্টার আন্ড হুপার।  খাবার জিনিসের সঙ্গে বরফ ও ফরাসি মদ ছিল প্রচুর।  মণ্ডপের আর একদিকে একটা বড় হল ঘরে সুন্দরী বাঈজীদের নাচগান হচ্ছিলো।  সাহেব ও এদেশীও ভদ্রলোকেরা চেয়ার বসে সুরা পান করতে করতে সেই নাচ দেখছিলেন।  বাঈজীদের গান শোনার জন্য বাইরেও বেশ লোকের ভিড় হয়েছিল।  বাঈজীদের নাচগান সকলকে বেশ মাতিয়ে রেখেছিল।"

সেই থেকে বাবুদের দুর্গাপুজো মহাসমারোহে উদযাপিত হতে আরম্ভ করে।  শুধু নাচ নয়, পুজোর জাঁকজৌলুস, বিলাস,-বৈভব, খানাপিনার বহর, সাহেব-মেমদের আপ্যায়ন শুরু হয়েছিল।  দেবী দুর্গার পুজোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় উৎসব।  এই নিয়ে সেই সময়কার পত্রপত্রিকায় নানারকম মুখরোচক খবর ছাপা হত।  সাহেবরা কলকাতার দুর্গাপুজোকে "গ্রান্ট ফেস্ট"  নামে  অবিহিত করেছিলেন। 

বাবুদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল আভিজাত্যের লড়াই।  বিলাস-বৈভব ও বিপুল ব্যয়ের কারণে বর্তমানে বনেদি বাড়িগুলোর দুর্গাপুজোয় পড়তির চিহ্ন স্পষ্ট,  হারিয়ে গেছে বাবু কালচার।  সে যাই  হোক, রাজা নবকৃষ্ণের হাত ধরেই আমাদের শহরে ধুমধাম  সহকারে পুজো শুরু হয়েছিল।  দুগাপুজো তাঁর  হাত ধরেই পরিণত হয়েছিল দুর্গোৎসবে।  



ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  

তারিখ :২০-১০-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 




 










 

Sunday, October 11, 2020

গুমঘর লেন >P

গুমঘর লেন 



গুমঘর এই কথাটি শুনলেই সবার গা ছমছম করে ওঠে।  সেই গুমঘর নামে যদি একটা গলি রাস্তা হয় তাহলে তো  লোকে ভয় পাবে, সেই রাস্তায় পা দেবে না।  হ্যা আমাদের প্রাণের শহরের একটা ছোট্ট গলি রয়েছে যার নাম গুমঘর লেন।  গলিটি নানারকম বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানের ভিড়ে সারাদিন সরগরম থাকে।  কিন্তু রাত  যত বাড়ে পরিবেশ তত শুনশান হতে থাকে।  রাত  যত গভীর হয় গলিটি যেন তার নাম মাহাত্ম্য বজায় রাখে। মাত্র ৩০০ মিটার দৈঘ্য এই ছোট্ট গলিটি চাঁদনী চক  থেকে বেরিয়ে মিশেছে টেম্পলে স্ট্রিটে।  গলিটির দুধারেই বেশ কয়েকটা প্রাচীন বাড়ি রয়েছে। আবার কয়েকটা ভাঙাচোরা বাড়িও চোখে পড়বে।  

আজ থেকে প্রায় ২০০-২৫০ বছর পূর্বে এই  রাস্তাতেই গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার।  অষ্টাদশ শতকে কলকাতায়  তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ছিল না বলা যায়।  চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামোও ছিল না,  ছিল মাত্র দু একজন ইংরেজ চিকিৎসক ও সেবিকা।  তারা সামান্য চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলো।  কী নেটিভ, কী নেটিজেন কেউ কোনো  রোগে পড়লে উপযুক্ত  ঔষধ ও চিকিৎসার অভাবে বেশিরভাগেরই কপালে মৃত্যু অবধারিত ছিল। চিকিৎসা ব্যবস্থা না  থাকায় সাদা চামড়ার লোকেরা এমন পরিস্থিতিতে কাজ করতে খুবই অসুবিধায় পড়ছিলো।  তারা ভয়ে ভয়ে কাজ করে যাচ্ছিলো।  


 শোনা যায় চাঁদনী চোখ অঞ্চলের এই ছোট্ট গলি  পথটিতে কোনো এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দুরারোগ্য ও ছোঁয়াচে রোগীদের এই রাস্তার একটি বাড়িতে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা ছিল, কারণ রোগের প্রাদুর্ভাব যাতে ছড়িয়ে না পড়ে।  ১৭৯২ সাল  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় কর্মীদের চিকিৎসার জন্য নেটিভ হাসপাতালের প্রস্তাব দেয়। তার  বছর দুয়েক পর কলুটোলা অঞ্চলে সেই হাসপাতাল গড়ে ওঠে। ১৭৯৬ সাল নাগাদ চাঁদনী চক  অঞ্চলের বর্তমান হসপিটাল  স্ট্রিটে হাসপাতালটি উঠে আসে।  সেই হাসপাতালের  লাগোয়া অংশই আজকের গুমঘর লেন।   

কলকাতা পুরসভার খাতায় আজ গলিটির নাম গুমঘর লেন বলেই উল্লেখ রয়েছে।  অতীতের সাক্ষাৎ যমপুরী আজ শহরের ব্যস্ততম রাস্তা।  কলকাতা বিশারদ শ্রীপান্থ তাঁর "ডাক্তার-বদ্যি"  শিক্ষক এক প্রবন্ধে লিখেছেন " “লোক আসে আর মরে। মরে, তবুও আসে।… দিব্যি সুস্থ-সমর্থ জোয়ান ছেলে সন্ধ্যায় নেমেছে চাঁদপাল ঘাটে। রাত্তিরটাও কাটল না। ভোরবেলাতেই দেখা গেল কলকাতার অ্যাডভেঞ্চারে দাঁড়ি পড়ে গেছে তার।… লোক মরত। এখনও মরে, তখনও মরত। সাহেব-নেটিভ নির্বিশেষেই মরত।" এই নেটিভ শব্দটাই গুমঘর গলির দিকে এগোনোর প্রথম ক্লু। এখন যেমন নেটিজেনরা কোয়ারেন্টাইন, সেই সময়েও গুমঘর গলি নেটিভদের একঘরে রাখার একমাত্র ঠিকানা।"

ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  

তারিখ : 11-10-2020

যোগাযোগ : 98304 20750 




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 


Saturday, October 3, 2020

পোস্তা ও মন্দির> P

পোস্তা ও মন্দির 


পোস্তা অঞ্চলটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা শহরের মধ্যাংশে অবস্থিত একটা অঞ্চল। পূর্বে অঞ্চলটিতে বাঙালি ব্যবসায়ীদের বসতি অঞ্চল ছিল। বর্তমানে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। অঞ্চলটির নামকরণ হয়েছিল হুগলি নদীর পোস্তা ঘাটের নামানুসারে।  বাঙালি ব্যবসায়ী লাক্সক্ষীকান্ত ধার ওরফে নকু ধর ছিলেন এই অঞ্চলের একজন বিত্তশালী বাঙালি ছিলেন।  রাজা নবকৃষ্ণ দেব প্রথম জীবনে এই নকু বাবুর কাছেই চাকরি করেছিলেন।  নকু ধরের দৌহিত্র সুখময় রায় পরবর্তীকালে এখানে একটিবিশাল রাজবাড়ী নির্মাণ করেন।  পূর্বে অঞ্চলটিতে মগ জলদস্যু, চোর-ডাকাতের ভয় ছিল।  রাজবাড়ীর সদস্যরা নজস্ব শক্তি ও জনবলের সাহায্যে সেই ভয় অতিক্রম করে। তারপর অঞ্চলটিতে ধীরে ধীরে জন বসতি গড়ে ওঠে।  এখানে ডাল, আলু প্রভৃতির বিশাল পাইকারি বাজার রয়েছে। বর্তমানে অঞ্চলটি বাণিজ্যিক বাজার অঞ্চল। ২০১৬ সালের ৩১সে মার্চ আচমকাই এখানকার নির্মীয়মান বিবেকানন্দ সেতুটি ভেঙে পরে।  

এই অঞ্চলে দুটো খুব প্রাচীন ও প্রতিষ্ঠিত মন্দির রয়েছে।  গত সেপ্টেম্বর  মাসের ৩০ তারিখে ওই অঞ্চলে একটা কাজের জন্য গিয়েছিলাম। মন্দির দুটো দেখার ইচ্ছে বহুকাল ধরে মনে বন্দি করে রেখেছিলাম।  এজ বহুদিনের ইচ্ছের কিছুটা লাঘব হলো। করণের জন্য একটি মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারলাম না, অন্যটির দ্বার বন্ধ ছিল।  যাই যোগ যতটুকু দেখেছি ও যতটুকু জেনেছি তাই সকলকে জানবার চেষ্টা করছি। 


পুঁটে কালী মন্দির 


হিন্দুদের প্রধান দেবী হলেন কালী বা কালিকা।  কালীকে শ্যামা ও আদ্যাশক্তি বলেও অবিবাহিত করা হয়।  শক্ত সম্প্রদায়ের কলকেরা সাধারণত কালী পূজা করে থাকে।  তন্ত্র অনুসারে দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবীই হলেন কালী।  তন্ত্র ও পূরণে কালির নানা রূপভেদ দেখা যায়।  সেই অনুসারে দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী , ভদ্রকালী চামুণ্ডাকালী শ্মশানকালী ও শ্রীকালী। কলকাতার উত্তর দিকে দক্ষিনেশ্বরে তিনি মা ভবতারিণী আবার দক্ষিণে কালীঘাটে দেবী কালিকা।  


পোস্তা অঞ্চলের কালী কৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিতে রাস্তার ধারে  ছোট্ট একটা লালা রঙের সুন্দর মন্দির বিদ্যমান। এটা  খুবই প্রাচীন মন্দির। স্থাপিত ৯৬৪ বঙ্গাব্দে। এই বিখ্যাত মন্দিরটির নাম পুঁটে কালী।  কেউ কেউ আবার পুঁটি কালী বলেও অভিহিত করে থাকে।  কালী মূর্তিটি খুবই ছোট।  উচ্চতা মাত্র ৬ ফুট। দেবীকে এখানে যোগমায়া রূপে পূজা করা হয়। কেউ কেউ ছোট মূর্তি বলে এরকম নামকরণ হয়েছে বলে থাকেন।  আবার কারো কারো মতে কালী ভক্ত আমার কৃষ্ণ ভট্টাচার্য স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন।  "পুঁটিমাছ ভাসছে তার নিচে পাওয়া যাবে আমাকে বলে কালী মায়ের সস্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন।  শহুদহু তাই নয় দেবী তাকে এই স্তনে পূজা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।  এছাড়া আরো একটা মোট শোনা যায়।  পূর্বে মন্দিরের পাশ দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত ছিল।  কোনো একদিন হমার সময়ে গঙ্গা থেকে একটা পুঁটিমাছ লাফিয়ে হ্মকুণ্ডের মধ্যে পরে যায়।  অর্ধ দগ্ধ মাছটিকে তুলে আবার জলে ফেলে দিতেই সেটি আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে।  এই কারণেই মন্দিরটির নাম পুঁটে কালী বলা হয়ে থাকে।  



বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির 

এই অঞ্চলে অবস্থিত আর একটা অতীব সুন্দর মন্দির রয়েছে। নাম বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির। বিখ্যাত ব্যবসায়ী রাম কুমারজি বাঙুর ও মাঙ্গানি রাম বাঙুর মন্দিরটিই নির্মাণ করেন। সালটা ছিল ১৯৬০। মন্দিরটির অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলে ত্রিদেবী ও ভূদেবী। মন্দিরটি দক্ষিণ  ভারতের মন্দিরের আদলে তৈরী।  মন্দিরটির বাইরে ও ভিতরে অসাধারণ কারুকার্যে নির্মিত। মন্দিরটির ভিতরে বেশ কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে।   দেবী মূর্তির পাথর আদি বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।   




ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  

তারিখ : 03-10-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 




Tuesday, September 15, 2020

অতীতের ফাঁসি দেওয়ার গলিই আজ ফ্যান্সি লেন>P

অতীতের ফাঁসি  দেওয়ার গলিই আজ ফ্যান্সি  লেন  



আমাদের শহর হল এক আজব শহর।  যার পথে ঘাটে  রয়েছে রোমাঞ্চকর কত ঘটনার স্মৃতি কথা।  আজকের সুসজ্জিত কলকাতার অলিতে গলিতে লুকিয়ে আছে কত ইতিহাস। এই সব ইতিহাসের অনেকটাই আজও উদ্ধার হয়নি। পুরোনো কলকাতার ইতিবৃত্তের বহু উপাদান আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।  সেইসব ইতিহাস যে সবসময় গর্বের ইতিহাস, তা নয়।  বহু বেদনাদায়ক গ্লানিময় ইতিহাসও  রচিত হয়ে আছে।  আজ সেইরকম এক গলির কথা বলব।  

 ইংরেজিতে ফ্যান্সি শব্দটির অর্থ সৌখিন বা রুচি, তার সাথে জড়িয়ে রয়েছে একটা সৌখিনতার প্রলেপ।  কিন্তু আজ যে ফ্যান্সি কথাটির কথা বলবো তা হল শহর কলকাতার এক বেদনার অধ্যাযের  সাথে জড়িয়ে রয়েছে।  ফাঁসি শব্দটির সাথে ভারতবাসীর স্বাধীনতা আন্দোলনের সমযে পরিচয় ঘটে।   সেইসময় ফাঁসির মঞ্চেই কত বিপ্লবের জয়গান রচিত হয়েছিল। এই ফাঁসি জেলের অন্দরে দেওয়া হত।

  তবে প্রকাশ্য দিবালোকে অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়া হত।  সেই প্রকাশ্য ফাঁসির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে  আমাদের শহরের একটি গলি।  গলিটির নাম ফ্যান্সি লেন।   সেদিনের সেই ফাঁকা জায়গা আর বর্তমানে নেই।  আজ গলিটিকে খুঁজতে হলে বহু সুউচ্চ আধুনিক ভবনের দেওয়ালে ধাক্কা খেতে হবে।  বহু লেন বহু পথ পেড়িয়ে তবে আজকের এই গলিটির সন্ধান মিলবে। কলকাতার ওয়েলেসলি প্লেস থেকে কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট পর্যন্ত রাস্তাটি বিস্তারিত।  এককালে এই রাস্তাটিতেই ফাঁসির দঁড়িতে জীবন দিতে হয়েছিল স্বাধীনচেতা ইংরেজ বিদ্রোহী মানুষদের,  অবাধ্য নীলচাষীদের।  এই ফাঁসি দেওয়ার গলির নামকরণ হয় ফাঁসি লেন।  যখন  ফাঁসি দেওয়া হত তখন অবশ্য এখানে কোনো রাস্তা ছিল না। 

 ১৬৯০ সালে জোব চার্ণক শহরে পদার্পণ করেন। তখনকার ভৌগোলিক অবস্থান আজকের মতো একদমই ছিল না।  বৈঠকখানা সংলগ্ন সার্কুলার রোড  ছিল তখন খাল বা পরিখা।  এই খালটি বর্গীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য খনন করা হয়েছিল। খালটি বাগবাজার থেকে শুরু করে বৈঠকখানার পাশ দিয়ে গিয়ে চক্রাকারে খিদিরপুরের আদি গঙ্গায় মিশেছিল। শিয়ালদহ অঞ্চলে এই খাল থেকে আর একটা খাল বেরিয়েছিল, যা ক্রিক রো, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, বেন্টিক স্ট্রিট হয়ে অধুনা ফ্যান্সি লেনের  পাশ দিয়ে গঙ্গায় মিশেছিল।  জোব  চার্নক এই খালের উপর একটা উপবন্দর তৈরী করেন। তখন বন্দরটি  ছিল বাগবাজার অঞ্চলে।  গঙ্গার সাথে খালটির যোগ থাকায় সকাল থেকেই বহু পণ্য বোঝাই নৌকো বাগবাজারে ও বৈঠকখানায় ভিড় জমাতো।  চলতো রমরমা বাণিজ্য।  বর্গীদের হামলা, লুঠতরাজ, খুন  খারাপি অবাধে চলতো। ব্যবসাদারা  ভয়ে জলপথে বাণিজ্য বন্ধ করে দিল।  এই বর্গী হাঙ্গামাযা শুধু ব্যবসাদার কেন সাধারণ মানুষও ছিল জর্জরিত। জোব  চার্ণক সকলের সুবিধার জন্য ও ব্যবসাদারদের বাণিজ্য যাতে অবাধে চলতে পারে সেই কারণে একদল সশস্ত্র রক্ষীদল গঠন করলেন এবং তারা খাল  বরাবর বাগবাজার থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত জলপথটিতে টহল দিত।  একদিন এই সশস্ত্র রক্ষীদের হাতে এক পর্তুগিজ দস্যু সর্দার ধরা পরে।  সে যেমন বহু অর্থ ও পণ্য লুঠ করেছে তেমন বহু মানুষকে খুনও করেছে। দস্যু সর্দারকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করে কারাগারে বন্দি করা হয়, কিন্তু সে কারাগার ভেঙে পালিয়ে যায়।  পালাবার সময সে এক ফিরিঙ্গি মহিলার সামনে পরে।   সে ধরা পড়ার ভয়ে মহিলাটিকে  গলা টিপে মেরে ফেলে।  এই ঘটনায়   চারদিকে আবার হৈচৈ পরে যায়।  ব্যবসায়ীরা আবার আতঙ্কিত  হয়ে পরে।   সশস্ত্র বাহিনী দস্যু সর্দারটিকে খুঁজে পায়নি।  এই ঘটনায়  দস্যু সর্দার জোব  চার্ণকের উপর ক্ষিপ্ত হলেন।  একদিন সে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে জোবের শোবার ঘরে পৌঁছে যায়।  জোব  তখন তার বাঙালি বধূকে নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।  দস্যুর আক্রমনে  তাদের ঘুম ভেঙে যায়।  জোব যখন দস্যুর সাথে ধস্তাধস্তি করছেন তখন তার স্ত্রী বিপদ ঘন্টা বাজিয়ে দেন।  প্রহরীরা দৌড়ে আসে এবং দস্যুকে বেঁধে ফেলে।  চার্ণক তাকে প্রাণদণ্ড দেন।  চক্রাকার পরিখার মাঝামাঝি থেকে যে খালটি ভাগিরথীতে গিয়ে মিশেছিল, সেই খালের পাশে একটা বড় গাছের নিচে ফাঁসিকাঠ তৈরী করা হয়েছিল। সেই ফাসিঁকাঠে প্রকাশ্যে দস্যু সর্দারকে ঝোলানোই হয়।  এই ঘটনার পর ওই পথে দস্যুবৃত্তি অনেকটা কমে যায়।  ফলে সেই অস্থায়ী ফাঁসির মঞ্চ গুরুত্ত্ব হারায়।  মানুষ এই মঞ্চের কথা ভুলে যায়।   

তারপর বহু বছর কেটে গেছে।  দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন।  বণিকের মানদণ্ড তখন কোম্পানির রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছে।  ইংরেজদের মানসিকতার বদল রয়েছে।  তারা তখন শোষকে পরিণত হয়েছে।  আমাদের দেশজ সম্পদ তখন জাহাজ ভর্তি হয়ে ইংরেজ মুলুকে চলে যাচ্ছে।  তাদের অত্যাচারে মানুষ তখন নাজেহাল। বিশেষ করে তাঁতিদের  উপর বেশি পরিমানে অত্যাচারের খাড়া নেমে এসেছে।  চাষিদের  নীলচাষ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।  অবাধে চলছে তাদের  উপর দমন-পীড়ন নীতি।  কখনো  কখনো অত্যাচারিত মানুষ সহ্য করতে না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। নীলচাষে অস্বীকৃত চাষিদের  জোবের দেওয়া এই ফাঁসির সময় প্রচুর লোক দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিল, কিন্তু পরে কোম্পানি ফাঁসি দিতো লোকচক্ষুর আড়ালে।  

 পরবর্তীকালে খাল সংলগ্ন ওই ফাঁসির  মঞ্চের নির্জন এলাকায় ধীরে ধীরে লোক বসত গড়ে উঠতে লাগলো।  ফাঁসির মঞ্চের ধার ঘেসে রাস্তা তৈরী হল,  তৈরী হল বাড়ি ঘর।  ফাঁসির মঞ্চকে কেন্দ্র করেই রাস্তাটির নাম হল ফাঁসি লেন।   ইংরেজদের মুখে ফাঁসি কথাটি হয়ে যায় ফানসি ।  আজ আর নেই সেই খাল।  সেই ফাঁসিকাঠ হারিয়ে গেছে। সেই ফানসি মানেই বিবর্তনের আবহে বিবর্তিত হয়ে আজ হয়েছে  ফ্যান্সি  লেন। 

গলিটি ইংরেজ বিদ্রোহী বহু মানুষ দেশকে ভালোবেসে এখানেই ফাঁসি কাঠে ঝুলেছিল।  তারাই নিশ্চিতভাবে আমাদের বুকে স্বাধীনতার বীজ রোপন করে দিয়েছিল। 
 
আজ সেই জোব  চার্ণক নেই, নেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।  ফ্যান্সি লেনে দেখা মিলবে না কোনো  ফাঁসির মঞ্চ। কিন্তু সেই নামের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে আমি আছি, ভয়ঙ্কর হলেও আজ আমি ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছি।  


ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  

তারিখ : 15-০৯-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 









Tuesday, September 8, 2020

ষ্টার থিয়েটার - এক চলমান ইতিহাস >P

ষ্টার থিয়েটার - এক চলমান ইতিহাস 



৮৪৪ সাল। বাংলার রঙ্গালয়ের  ইতিহাসে দুটি যুগান্তকারী ঘটনার ঘটে গিয়েছিল। শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা রাধাকান্ত দেবের পৃষ্টপোষকতায় দুটি ইংরেজি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই বছরেই বাগবাজার বোসপাড়ায় ২৮শে ফেব্রুয়ারি  নীলকমল ঘোষ ও রাইমনি দেবীর দ্বিতীয় পুত্র গিরিশচন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।  সেই সময়  শহর কলকাতায় কয়েকটি স্থানে শখের রঙ্গালয়ে চালু ছিল।  ১৯৬৭ সালে নাগাদ রাধামাধব কর, গিরিশচন্দ্র   ও ধর্মদাস সুর এরকম কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা নাট্য দল তৈরী করলেন। তখন এরকম শখের নাটকের দল তৈরী করে নাটক  মঞ্চস্থ করা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ ছিল। বাগবাজারে তাঁদের শখের দলটি তৈরী হয়েছিল। তাঁদের প্রথম পালা ছিল মাইকেল মধুসূদনের "শৰ্মিষ্ঠা" নাটকটি। ১৮৬৮ সালের দূর্গা পুজার সময় দীনবন্ধু মিত্রের সামাজিক প্রহসন "সধবার একাদশী" নাটকটি  গিরিশ ঘোষের নেতৃত্বে বাগবাজার আমেচার থিয়েটারে  মঞ্চস্থ হল। তাঁদের  পরের নাটক ছিল "লীলাবতী"। "সধবার একাদশী" ও "লীলাবতী" নাটক দুটি বিদগ্ধ মহলকে মুগ্ধ করেছিল। গিরিশ ঘোষের  নাম চারদিকে  ছড়িয়ে পরেছিলো।   প্রথমদিকে শ্যামবাজারে রাজেন্দ্র লাল পালের বাড়িতে একটা রঙ্গমঞ্চ তৈরী করা হয়েছিল।  সেখানেই নাটক দুটির অভিনীত হয়েছিল।  শুরু হয়েছিল বেশ কিছু  পেশাদারী নাট্য দল।  গিরিশ ঘোষ তার কর্মজীবনে বহুবার নাট্যদল বদলেছিলেন।  গিরিশের উদ্যোগেই  ষ্টার থিয়েটার একটা নিজস্ব ঠিকানা পেয়েছিলো।  

কথিত আছে ষ্টার থিয়েটারের ভীত শক্ত করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি একটা গুদামঘরে বসে নাটক লিখেছিলেন।  বিনোদিনী নামে নতুন প্রতিভাকে রঙ্গমঞ্চে  এনে দিয়েছিলেন। সেই সময় বাংলা থিয়েটারের রশিটি প্রতাপ চাঁদ জহুরি, গুর্মুখ রায় প্রমুখ ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল।  

১৮৮৩ সাল গিরিশ ষ্টার থিয়েটার গড়ে তুলেছিলেন। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের মালিক অবাঙালি প্রতাপ চাঁদ জহুরি। তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তারই অধীনে কাজ করত গিরিশ ঘোষ ও বিনোদিনী দাসী।  থিয়েটারকে তিনি ব্যবসা হিসেবেই দেখতেন। গিরিশের তা একদমই পছন্দ ছিল না।  তিনি চেয়েছিলেন নতুন একটা থিয়েটার তৈরী করে নাটক মঞ্চস্থ করতে কিন্তু একটা মঞ্চ তৈরী করা বহু টাকার ব্যাপার।  এত টাকা সে কোথায় পাবে। এদিকে গুর্মুখ রায় নামে অল্প বয়সী এক ব্যবসায়ী গিরিশকে থিয়েটার গড়ে তোলার জন্য অর্থ প্রদান করেন। সে বিনোদিনী দাসীর প্রেমে পাগল হয়ে উঠেছিলেন। ৫০ হাজার টাকায় সে বিনোদিনীকে কিনতে চায়।  থিয়েটারের থেকে বিনোদিনীর প্রতি তাঁর  আকর্ষণ বেশি ছিল। তিনি বিনোদিনীকে একান্তে আপন করে পাওয়ার জন্য তার নামে  থিয়েটার খুলতে আগ্রহী হন।  

৫৮ বিডন স্ট্রিটে একটা ফাঁকা জায়গা ইজারায় নেন গুর্মুখ রায়।  খোলা হয় থিয়েটার। তবে বিনোদিনীর নামে  নয়।  গিরিশ যুক্তি দিয়ে বোঝান বারাঙ্গনা বিনোদিনীর নামে থিয়েটারের নামে  হলে সামাজিক বাঁধা আসবে। গিরিশের যুক্তি মেনে নাম করা হয় "ষ্টার থিয়েটার"।  ৩১শে  জুলাই ১৮৮৩ সালে গিরিশের লেখা "দক্ষযজ্ঞ" নাটক দিয়ে প্রেক্ষাগৃহটির উদ্বোধন হয়। তবে বছর কয়েক পরে গুর্মুখ রায় থিয়েটারের শর্ত ছেড়ে দেন। অমৃতলাল মিত্র, হরিপ্রসাদ বসু ও দাসুচরণ নিয়োগী প্রমুখরা মাত্র ১১ হাজার টাকায় কিনে নতুন মালিক হন।  বিনোদিনী ষ্টার থিয়েটারেই রয়ে গেলেন।  ২১শে সেপ্টেম্বর ১৮৮৪ সালে "চৈতন্যলীলা" নাটকের প্রধান অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীর অভিনয় দেখতে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণই পরমহংসদেব এই থিয়েটারে প্রথম এসেছিলেন। বিনোদিনীর অভিনয়ে আপলুত হয়ে তিনি তাকে আশীর্বাদ করে যান। বলেন "তোর চৈতন্য হোক"  ১৮৮৭ সাল নাগাদ বিনোদিনী রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নেন, তার বিদায়ের অল্প  কিছুদিন পরে ষ্টার থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়।  মালিক পক্ষ মাত্র তিরিশ হাজার টাকায়  বিক্রি করে দেয় গোপাললাল শীলকে। তিনি এমারেল্ড থিয়েটার নাম একটা নতুন দল গঠন করেন। সেটি তিনি বেশিদিন চালাতে পারেননি। ৭৫/৩ কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে প্রেক্ষাগৃহ বিক্রির টাকায় ত্রিশ কাটা  জমি কেনেন। প্রায় সবাই হাল ছেড়ে দিলেও, গিরিশ ঘোষ হাল ছাড়েননি। তিনি নাট্য জগতে থেকে গেলেন। তিনি পুরোনো দল থেকে বোনাস হিসেবে পাওয়া টাকা ও আরো কিছু টাকা জোগাড় করে গিরিশ ঘোষ ষ্টার থিয়েটারের নতুন বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিলেন।  নতুন থিয়েটারের জন্য "নাসিরাম" নামে  একটা নতুন নাটকও  লিখলেন। ২৫শে মে ১৮৮৮ সালে এই নতুন নাটক দিয়ে ষ্টার থিয়েটারের পথচলা শুরু হল। তার কিছুদিন পরে গিরিশ এই থিয়েটারে যোগ দিলেন।  থিয়েটারটি পেশাদার মঞ্চ হিসেবে তৈরী করা হয়েছিল। পেশাদার মঞ্চ হিসেবে আজ প্রায় শতবর্ষ উত্তীর্ণ করে গেছে। এই শতাধিক বছরে প্রায় ২৫০টি নাট্য প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়েছিল। কত খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয় এখানে হয়েছে। শিশির ভাদুড়ী, অহীন্দ্র চৌধুরী, ছবি বিশ্বাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তমকুমার, তরুণকুমার, প্রমুখ অভিনেতা আর সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, প্রভাদেবী, সরযূবালা প্রভৃতি অভিনেত্রীর অভিনয় সমৃদ্ধ ছিল রঙ্গমঞ্চটি। 

১২ই অক্টবর  ১৯৯১ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ষ্টার থিয়েটার  সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়ে যায়।  আগুনের লেলিহান শিখা আস্তে আস্তে গ্রাস করে নেয় গিরিশ-বিনোদিনীর আত্ম্যত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যমন্ডিত রঙ্গমঞ্চটিকে। কলকাতা পুরসভা প্রেক্ষাগৃহটিকে নতুন করে গড়ে দেয়। প্রায়  ১২৫ বছর উত্তীর্ণ ষ্টার থিয়েটারের দ্বিতীয় দফায় পথ চলা শুরু হয় ২০০৪ সালে কলকাতা পুরসভার হাত ধরে। পরিকাঠামো ও অন্যান্য কারণে এখানে নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ করা সম্ভব হচ্ছিল না, তাই পুর কর্তৃপক্ষ  ঠিক করে নাটকের বদলে এখানে  সিনেমা  প্রদর্শন করা হবে।  নাটকের বদলে রূপান্তরিত হয় চলচিত্র প্রদর্শনীর প্রেক্ষাগৃহ।  


ষ্টার থিয়েটার হলো কলকাতার এক স্বনামধন্য থিয়েটার ও এক ঐতিহ্যশালী বাড়ি। এটি  বাঙালি জাতির গৌরবময় ঐতিহ্যকে বহন  চলেছে। এটি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গর্ব।  এটি ব্রিটিশ আমলে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঢেউ এনেছিল। অন্যন্য থিয়েটার হলগুলোর সেই সময় উপস্থিতি সত্ত্বেও ষ্টার থিয়েটার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল।  


ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  

তারিখ : ০৮-০৯-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 



Tuesday, August 25, 2020

ইঞ্জিয়ারের নামেই সেতু >P

ইঞ্জিয়ারের নামেই সেতু 





১৯৭৪ সাল।  আগস্ট  মাসের ২ তারিখ।  শহরে ঘটে গেলো এই নৃশংস হত্যাকান্ড। নিহত হলেন ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ সালে জন্ম নেওয়া কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের তরুণ নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞ কুমার বসু।  তখন কসবা, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, সন্তোষপুর এই অঞ্চলগুলো ছিল আজকের মতো জনপ্লাবিত নয়,  নিছকই কিছু এপার-ওপার বাংলার মানুষের বাস। অঞ্চলগুলোকে ঠিক শহর বলা চলে না।  শহর আর এই অঞ্চলগুলোর মাঝে একটা  রেল লাইন আছে। এই লাইনটি  শহর আর মফস্বলের  মধ্যে তফাৎ গড়ে দিয়েছিল। 

যাদবপুরের পূর্বদিকে সন্তোষপুর নামে একটা জায়গা আছে. সেই সময় জায়গাটা একদম নবীন একটা পল্লী হিসেবে জন্ম নিয়েছিল। এই সন্তোষপুরেই ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসের ২ তারিখে তরুণ ইঞ্জিনীযার  তার বোনের বাড়িতে এসেছিলেন। কথা বলতে বলতে ঘড়ির কাঁটা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে পৌঁছে গিয়েছিল।  তরুণ বাড়ি যাওয়ার জন্য যাদবপুর স্টেশনে এসে পৌঁছলো। সে তখন উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলে থাকতো।  ঘড়িতে তখন রাত  ৯টা  বাজে। ট্রেন আসতেই সে উঠে পড়লো। রাত অনেকটা হয়ে যাওয়ায় গাড়িটা বেশ ফাঁকাই ছিল,  কিছু পুরুষ ও  কয়েকজন মহিলা কামরাটিতে ছিল।  ট্রেনটি যাদবপুর থেকে ছেড়ে ঢাকুরিয়া স্টেশনে এসে থামলো।  এখান থেকে কয়েকজন যুবক ট্রেনটিতে উঠলো। যথাসময়ে গাড়ি ছাড়লো। যুবকগুলো গেটের ধারে  দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। গাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে তারা স্বমূর্তি ধারণ করল।  কেউ ছোড়া, কেউ ছুরি, কেউ বন্দুক উঁচিয়ে অতর্কিতে যাত্রীদের উপর আক্রমণ করতে আরম্ভ করল। মহিলা যাত্রীদের গহনা, পুরুষ যাত্রীদের মানিব্যাগ, ঘড়ি, আংটি ছিনিয়ে নিতে লাগলো। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলো না। তারা সব কিছু তাদের হাতে তুলে দিতে লাগল।  তরুণ ইঞ্জিনীযার বিজন কুমার বসু আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। তার শরীরে তখন এক তরতাজা যুবকের রক্ত টকবগ করে ফুটছে।    তিনি প্রতিবাদে সরফ হলেন।  ছিনতাইবাজরা বালিগঞ্জ স্টেশনে নামার উদ্যোগ নিল, কিন্তু তারা নামতে পারলো না। বিজন  বাবু তাদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন।  তার সাথে যাত্রীদের কেউ গলা মেলালো না।  চার পাঁচজন তরুনের সাথে মাত্র একজন কি করে পেরে উঠবে। যথারীতি  তিনি একা তাদের সাথে যুজঁতে পারলেন না।  আক্রমণকারীরা ছোড়া, ছুরির আঘাতে তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করলো। চলন্ত গাড়ি থেকে তার দেহটিকে ছুড়ে ফেলে দিলো। পরের স্টেশনে ছিনতাইবাজরা নেমে গেলো।  সবাই চুপ করে বসে রইলো, কেউ কোনো প্রতিবাদ করলো না।  

গাড়ি যথাসময়ে শেয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছলো।  প্রতক্ষ যাত্রীরা সবাই নিজেদের গা বাঁচিয়ে নেমে চলে গেল।  এতবড় ঘটনার কথা কেউ পুলিশকে জানানোর প্রয়োজনটুকু অনুভব করলো না। কেউ  জানালো না।  যে যার বাড়ির পথে রওনা দিলো। একজন মাত্র বছর ছত্রিশের  তরুণ যাদের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিল  তারা তার প্রতি সামান্যতম সৌজন্য দেখানোর কথা ভাবল না, নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে চলে গেলো।  

সব মানুষ সমান হয় না।  বনগাঁর বাসিন্দা  এক বয়স্ক সাধু  নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না। সাধু  প্রভূচরণ দাস স্বচক্ষে যা দেখেছেন তা রেল পুলিশকে জানালেন। তিনি এও বলে গেলেন তদন্তের স্বার্থে যদি কোনো প্রয়োজন হয়,  তিনি সব সময় সাহায্য করতে আসবেন। 

সেই সময় শিয়ালদহ  রেল পুলিশের সুপার ছিলেন উমাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।  তিনি সব জেনে তৎক্ষণাৎ লাশ তুলে মর্গে পাঠালেন। খবর বাতাসের চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়লো। পরের দিন শহরের বহুল প্রচারিত দৈনিকগুলোতে খবরটা প্রথম পাতায় মোটা হরফে ছাপা হল।  চারদিকে সোরগোল পরে গেলো।  তরুণ যেহেতু সি আই টির  কর্মচারী ছিলেন, তাই তার কার্যালয়ের কর্মীরা এটা খুন না দুর্ঘটনা এই নিয়ে প্রশ্ন তুললো।  তদন্তের দায়িত্ব নিলেন তৎকালী সিআইডির প্রধান জে  সি তালুকদার। তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কার রায়। তার সরকার নড়ে চড়ে বসল।   তদন্ত  তার নিয়মে চলতে লাগলো।  প্রচিলত সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বেশ কয়েকদিন ধরে বিজন বসু হত্যা রহস্য জায়গা করে নিয়েছিলো।  এইভাবে তদন্ত তার নিয়মে চলতে লাগলো। কেটে গেলো বেশ কয়েকটা বছর।  কিন্তু রহস্যের কোনো কিনারা হলো না।  ধরা গেলো না ঘাতকদের। অপরাধীরা শাস্তি পেলো না। 

 বছর ৪০ আগে ১৯৭৮ সালে বালিগঞ্জ রেল স্টেশানের পাশে একটা সেতু নির্মাণ করা হল।  সেতুটির নামকরণ করা হল সাহসী তরুনের নাম। সকলের সম্মতিতে  সেতুটিকে তার নাম উৎসর্গিত করা হলো।  হত্যাকান্ড ও সেতু নির্মাণের মাঝে এই  লাইন দিয়ে বহু ট্রেন চলে গেছে। পাল্টে গেছে বাংলার সরকার। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মধু দণ্ডবতের স্ত্রী প্রমীলা দণ্ডবতে ও পশ্চিমবাংলার তৎকালীন  মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জ্যোতি বসু  সেতুটির উদ্বোধন করেছিলেন। 





 লেখা :  সুদীপ্ত মুখার্জী 

তারিখ : 25  আগস্ট, ২০২০ 

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪ ২০৭৫০ 

👉 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।  পরবর্তী লেখাগুলো পেতে বগতিকে ফলো করে রাখুন।  






Saturday, August 15, 2020

ভারতের জাতীয় পতাকার সাতকাহন >P

ভারতের জাতীয় পতাকার সাতকাহন 



পতাকা হলো কোনো দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আর জাতীয় মর্যাদার প্রতীক। পৃথিবীর প্রত্যেক স্বাধীন দেশের একটা করে জাতীয় পতাকা থাকে। মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় পতাকা সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য।  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো ভারতবর্ষেরও  একটি নিজস্ব জাতীয় পতাকা রয়েছে।  

 ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দেবে বলে ঘোষণা করে। ভারত স্বাধীনতা পায় ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট। সেই থেকে ১৫ই আগস্ট  ভারতের সর্বত্র স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় পতাকা উত্তলন করা হয়। আমরা জানি ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল।  ভারতবাসীদের তীব্র ও দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বহু সংগ্রামীর জীবনের মূল্য দিয়ে এই স্বাধীনতা আমরা লাভ করেছিলাম। স্বাধীন ভারতের একটা নিজস্ব পতাকা হওয়া  উচিত বলে সবাই মনে করলেন। ১৯৪৭ সালের ২২শে জুলাই গণপরিষদের অধিবেশনে ভারতের বর্তমান পতাকার রূপরেখাটি গৃহীত হয়েছিল।  পরবর্তী সময়ে এই পতাকাটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয়  পতাকার মর্যাদা লাভ করেছিল।  

ভারতের জাতীয় পতাকাটি হলো আয়তাকার। পতাকাটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত। প্রস্থ হয় দৈর্ঘ্যের  দ্বিগুন।  পতাকায় তিনটি রঙের জায়গা সমান থাকে। পতাকার কেন্দ্রে থাকে চব্বিশটি দণ্ড বিশিষ্ট নীল রঙের অশোকচক্র। এই অশোকচক্রের উপরে গেরুয়া, মাঝে সাদা আর নিচে সবুজ রং থাকে। এই তিনটি রঙের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। উপরের গেরুয়া রংটি হল ত্যাগের প্রতীক, মাঝের সাদা রংটি হল শান্তির ও পবিত্রতার প্রতীক আর নিচের সবুজ রংটি নির্ভীকতা, জীবনধর্ম ও তারুণ্যের প্রতীক।  মাঝের সাদা অংশটিতে একটি চক্র রয়েছে।  চক্রটি হলো সম্রাট অশোকের ধর্ম চক্রের অনুকরণে নির্মিত।  এই চক্রটিতে ২৪ টি স্পোক রয়েছে।  এই ২৪ টি স্পোকও ২৪টি অর্থ বহন করে।  এই স্পোকগুলির অর্থ হল ১) ধৈর্য্য, ২) আরোগ্য, ৩) শান্তি, ৪) ত্যাগ, ৫) অনুশাসন, ৬) সেবা, ৭) ক্ষমা, ৮) মৈত্রী, ৯) বন্ধুত্ব, ১০) সংগঠন, ১১) কল্যাণ, ১২) সমৃদ্ধি, ১৩) অধিকার, ১৪) কর্তব্য, ১৫) সহকার্য্য, ১৬) ন্যায়, ১৭) নীতি, ১৮) অর্থ, ১৯) সমতা, ২০) নিয়ম, ২১) ভালোবাসা, ২২) নিরাপত্তা, ২৩) সুরক্ষা, ২৪) উদ্যোগ।   

  পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বরাজ পতাকার ভিত্তিতেই এই পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন ভারতের জাতীয় পতাকার নকশাকার।  ১৯৫০ সালে ভারতীয় সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।  ১৯৫২ সালে ভারতীয়  মানক ব্যুরো  প্রথমবার জাতীয় পতাকা উৎপাদন সংক্রান্ত বিধি নিয়ম প্রকাশ করে।  ১৯৬৮ সালের ১৭ই আগস্ট পুনরায় এই নিয়মের কিছু সংশোধন করা হয়।  নিয়ম অনুযায়ী এই পতাকা একমাত্র খাদি নামক তাঁতবস্ত্রের কাপড়ে তৈরী করা হয়। তুলো, রেশম ও উল ছাড়া অন্যকিছু কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
  
ভারতের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম বেঁধে দেওয়া হযেছে। ভারতীয় মানক  ব্যুরো এই পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন স্থির করে দিয়েছে।  জাতীয় পতাকা উৎপাদনের অধিকার কেবল খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের হাতে রয়েছে।  এই কমিশন বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে উৎপাদনের অধিকার দিয়ে থাকে।  ২০০৯ সালে তথ্য অনুযায়ী কর্ণাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ জাতীয় পতাকার একমাত্র উৎপাদক।  

 ভারতের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেছিলেন বাহাদুর শাহ জাফর।  ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়।  তার পতাকার রং ছিল সবুজ।  উপরের দিকে সোনালী রঙের পদ্ম  ছিল।   এরপর ভগিনী নিবেদিতা ১৯০৫ সালে একটি লাল রঙের একটি পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। পতাকাটির চারধারে ১০৮টি শিখা  আর মাঝখানে হলুদ রঙে বজ্র ছিল। বজ্রটির বাঁদিকে "বন্দে" আর ডানদিকে "মাতরম" কথাটি লেখা ছিল।  ১৯০৭ সালে ম্যাডাম ভিকাজী রুস্তম কামা বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতের পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন। ১৯১৭ সালে এনি বেসান্ত ও বাল গঙ্গাধর তিলক একটি নতুন পতাকার কথা ভেবেছিলেন।  ১৯২১ সালে গান্ধীজি প্রথম তাঁর পতাকা নিয়ে আসেন।  এই পতাকাটির উপরদিক থেকে তিনটি রং আড়াআড়ি ভাবে তিনটি সমান ভাগে ভাগ করা ছিল।  রংগুলো সাদা, সবুজ ও লাল ছিল।  মাঝখানে একটি রেখা আঁকা ছিল।  ১৯৪৭ সালের ২২ শে  জুলাই ভারতের জাতীয় পতাকা তৈরী করা হয়েছিল।  ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট মধ্য রাত্রে গণ পরিষদের  হাতে জাতির উদ্দেশ্যে পতাকাটি তুলে দেওয়া হয়। তারপরের দিন মাঝ রাতে ১৫ই আগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দিল্লিতে জওহরলাল নেহেরু  স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কারও ভার গ্রহণ করলেন।  মাউন্ট ব্যাটন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হলেন। এই দিন সর্বপ্রথম দিল্লির লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকাটি উত্তোলন কর হয়।  তার সাথে প্রত্যেকটি রাজ্যের রাজধানীগুলোতেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।  দিনটিকেএ সাদা দেশে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।  সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানি এই দিন প্রতিবছর ছুটি থাকে। বহু জায়গায় পতাকা উত্তোলনের সাথে  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।   


 লেখা :  সুদীপ্ত মুখার্জী 

তারিখ : ১৫ই আগস্ট, ২০২০ 

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪ ২০৭৫০ 

👉 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।  পরবর্তী লেখাগুলো পেতে বগতিকে ফলো করে রাখুন।  


Saturday, August 8, 2020

অস্তাচলে রবি> P

অস্তাচলে রবি 

সুদীপ্ত মুখার্জী 



নিমতলা মহাশ্মশান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাধিস্থল 






"সম্মুখে দেখছি অপরাহ্নের সূর্য শেষ বিদায়ের পথ নিচ্ছে - ভাগীরথীর গৈরিক জলপ্রবাহে উঠেছে এক করুন তাপ - আজ সমস্ত বাংলার বুকে দীর্ঘশ্বাসের ওঠা-পড়া - বাতাসে হাহাকার - বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ আর নেই।  রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের জানি, কিন্তু তিনি বাঙালির রবিঠাকুর, বাঙালির গৌরব, বাঙালির প্রাণের প্রাণ, একটি আপনজন। - আজ সূর্যকে কি বিসর্জন দিয়ে চিররাত্রির অন্ধকারের মধ্যে বাঙালি জাতি আত্মগোপন করবে - না আবার সে নবসূর্যের আলোক সভাতলে জ্যোতির সমুদ্রে স্নান করতে পারবে ? সমগ্র বাঙালির মনে এই প্রশ্ন উঠছে বার বার, আজ তাই সকলের মনে এই প্রার্থনা জেগে উঠছে, হে কবি, হে পুরাতন, হে চিরনূতন - রাত্রির অবসান ক্ষণিক হোক - আগামীকালের নবপ্রভাতে নূতনরূপে তুমি দেখা দাও, - দেখা দাও আবার হে নুতন। "  - শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র 


বৃহস্পতিবার ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ সাল  (২২শে  শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা  বেজে গেছে হঠাৎ সকলকে শোকাতুর করে চলে গেলেন বিশ্বের কবি, বাঙালির প্রাণের কবি। ৮০ বছর ৩ মাস বয়সে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। 
 
কবি তাঁর শেষ দিনগুলোতে খুবই ভুগছিলেন।  শান্তিনিকেতনে কবিরাজি ও এলোপ্যাথি উভয় পদ্ধতিতে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু কোনো চিকিৎসাতেই তিনি সুস্থ হচ্ছিলেন না। শরীরে একটা ছোট অস্ত্রপ্রচারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কবিগুরুর মন একদমই চাইছিলো না শেষ বয়সে এসে এই কাটা ছেঁড়া করাটা। 

মৃত্যুর সপ্তাহ দুই পূর্বে ২৫শে জুলাই কবিকে শান্তিনিকেতন থেকে অসুস্থ শরীরে চিকিৎসার সুবিধার জন্য কলকাতায় নিয়ে আসতে হয়েছিল। কবিকে ছেড়ে আসতে  হয়েছিল তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের ও শান্তিনিকেতনকে।  সেদিন দুপুর ৩টা ১৫ নাগাদ তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এসে পৌঁছলেন। ৩০শে জুলাই তাঁর অস্ত্রপ্রচার হওয়ার কথা। ৩০শে জুলাই  যথাসময়ে তাঁর  অস্ত্রপ্রচার হয়। সেইদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি অসুস্থ শরীরেই একটি বড় কবিতা লিখলেন ও তাঁর স্নেহের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে একটা চিঠিও  লিখলেন।  সকাল  ১১টা  নাগাদ তাঁকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে আসা হলো, মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যে অপেরেশনটি  শেষ হয়ে যায়। অপারেশন করলেন বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ডাক্তার ললিত ব্যানার্জী।  অপেরেশনের পর থেকে তাঁর শরীরটা আরো ভেঙে গেলো। শরীরে তাপমাত্রা ও ভারসাম্যের হেরফের হতে লাগলো। ৬ই আগস্ট ঠাকুরবাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড়। কবির শরীর আর ডাক্তারের আয়ত্তের মধ্যে থাকছিল না। কবির তখন হিক্কা উঠছিল।  ২২শে শ্রাবণ (৭ই আগস্ট) ভোররাত্রি থেকেই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে মোটর গাড়ির  আনাগোনা চলছিল।  নিকট আত্মীয়, বন্ধু,  প্রিয়জন সব দলে দলে আসছেন। সকাল  থেকেই ভক্তরা জোড়াসাঁকোর বাড়িতে জমায়েত হতে লাগল। বেলা ১২টা নাগাদ তাঁর নিঃশ্বাস কম হতে লাগলো। শরীরের উষ্ণতা কমে আস্তে লাগল। তাঁর শরীরের তখন  আরো অবনতি হল। ধীরে ধীরে শেষের সেই সময় আসতে লাগলো। ১২টা ১০ মিনিট, কবির শেষ  নিঃশ্বাস পড়লো।  একেবারেই তা থেমে গেলো। তিনি  চির বিদায় নিলেন।  বাংলার আকাশে সেই সময় হঠাৎই যেন সূর্যাস্ত হয়ে গেলো। সূর্য্যের মতোই যিনি জ্বলজ্বলে মূর্তিতে দীপ্যমান থেকে চিরকাল জীবনযাপন করে গেছেন। তিনি  তাঁর লেখনীতে সকল বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করে গেছেন, এই সেই রবি যা আজ অস্তাচলে। রবি ঠাকুর অমৃতলোকে যাত্রা করলেন।  বাইরে জনতার কোলাহল শুরু হয়ে গেলো। সবাই একবার তাদের প্রাণের গুরুদেবকে শেষবারের মত  দেখতে চায়।

রানী চন্দ্রের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই - "গুরুদেবকে সাদা বেনারসী  জোড় পরিয়ে সাজানো হল।  কোঁচানো ধুতি, গরদের পাঞ্জাবি, পাট-করা চাদর গলার নীচ থেকে পা পর্যন্ত ঝোলানো, কপালে চন্দন, গলায় গোড়ে মালা, দুপাশে রাশি রাশি শ্বেতকমল রজনীগন্ধা। বুকের ওপর রাখা হাতের মাঝে একটি পদ্মকোরক ধরিয়ে দিলাম; দেখে মনে হতে লাগল যেন রাজবেশে রাজা ঘুমোচ্ছেন রাজশয্যার উপরে। ক্ষণকালের জন্য যেন সব তন্ময় হয়ে রইলাম। একে একে  এসে প্রণাম করে যেতে লাগল নারীপুরুষে।  ব্রহ্মসংগীত হতে লাগল এক দিকে শান্তকণ্ঠে। 

ভিতরে উঠোনে নন্দদা সকাল থেকে তাঁর নিজের কাজ করে যাচ্ছিলেন। নকশা এঁকে মিস্ত্রি দিয়ে কাঠের পালঙ্ক তৈরী করালেন। গুরুদেব যে রাজার রাজা, শেষ-যাওয়াও  তিনি সেইভাবেই তো যাবেন।
 
তিনটে বাজতে হঠাৎ এক সময়ে গুরুদেবকে সব্বাই মিলে  নীচে নিয়ে গেল।  দোতলার পাথরের ঘরের পশ্চিম বারান্দা হতে দেখলাম - জনসমুদ্রের উপর দিয়ে একখানি ফুলের নৌকো নিমেষে বাইরে ভেসে চলে গেল।"

 
শোকার্ত বিহ্বল মানুষের উন্মাদনা ব্যাথার আগুনে পরিণত হল।  দিকে দিকে জমাট বাঁধা কান্নার রোল উঠতে লাগল। জোড়াসাঁকোর বাড়ি থেকে নিমতলা পর্যন্ত সমগ্র রাস্তা  জনসমুদ্রে পরিণত হতে লাগল। সূর্যের দাবদাহে তপ্ত হয়ে ওঠা প্রকৃতিকে অবজ্ঞা করে চলেছে শোকাতুর মানুষের মিছিল। অচিরেই রাস্তাগুলোতে তৈরী হয়ে উঠলো জনসমুদ্র।  ধীরে ধীরে ওই জনসমুদ্র অতিক্রম করে কবিগুরুর নশ্বর দেহ বিকেল পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট নাগাদ  নিমতলা শ্মশানঘাটে এসে পৌঁছলো।  উপস্থিত সকলের চোখে তখন বাঁধনহারা চোখের জল। সকলেই চোখের জলে নতমুখে কবিকে চিরবিদায় জানালেন।  

আকাশবাণী কেন্দ্র পনেরো মিনিট অন্তর  কবির অন্তিম যাত্রার ধারা বিবরণ দিচ্ছিল।   বীরেন্দ্রাকৃষ্ণ ভদ্র  তার আবেগঘন  কণ্ঠে এই দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমার লেখার প্রথম স্তবকে রয়েছে  আকাশবাণী থেকে প্রচারিত কবির শেষ যাত্রার বিবরণ। এই ধারাভাষ্যটি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের দেওয়া। 

চিত্র ও লেখা " সুদীপ্ত মুখার্জী 
তারিখ : ২২শে শ্রাবণ , ১৪২৭ (ইং. ০৭-০৮-২০২০)
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪ ২০৭৫০ 



👉 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।  পরবর্তী লেখাগুলো পেতে বগতিকে ফলো করে রাখুন।  

Sunday, August 2, 2020

রাখী পূর্ণিমা ও উৎসব >P

রাখী পূর্ণিমা ও উৎসব 


বাঙালি বরাবরই উৎসব প্রিয় জাতি। তাদের রন্ধে রন্ধে বিভিন্ন উৎসব জড়িয়ে রয়েছে। কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।  শ্রাবণ মাসের শুক্লা একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে ঝুলন পূর্ণিমার উৎসব। ঝুলন সাজিয়ে ছোটরা এই উৎসবে সামিল হয়ে থাকে। ঝুলনযাত্রা পাঁচ দিন ব্যাপী চলে। এটা রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের উৎসব।  এই উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে রাখী  উৎসবের  মধ্য দিয়ে।  এই উৎসবের পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, ও সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। এই উৎসব কবে কিভাবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে।  কিছু গল্পও  প্রচলিত রয়েছে।  

এই উৎসবটা সাধারণভাবে সর্বভারতেই উদযাপিত হয়ে থাকে। হিন্দু জৈন ও শিখরা এই উৎসবে সামিল হয়।  এটি  ভাই বোনের ভালোবাসা ও শুভ কামনার উৎসব।  এই দিন দিদি বা বোনেরা দাদা বা ভাইদের হাতে রাখী নামে  পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়।  এই সুতোর মাধ্যমে তারা  একে  ওপরের কাছে সারা জীবন রক্ষা নিজেদের করার শপথ গ্রহণ করে।

 মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে যে কোন এক যুদ্ধে কৃষ্ণের হাতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হয়, সেই সময় পাণ্ডবদের স্ত্রী দৌপদী তার শাড়ির আঁচলের কিছুটা অংশ ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেয়।  এই ঘটনায় কৃষ্ণ অভিভূত হয়ে দৌপদীকে তার ভগ্নি হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তিনি তাকে এর প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।  বহু বছর পর যখন কৌরবরা দৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে গেলে কৃষ্ণ তার সম্মান রক্ষা  করেন।  এইভাবেই রাখীবন্ধনের প্রচলন হয়।  

কথিত রয়েছে,  দৈত্যরাজা বলি বিষ্ণুর ভক্ত ছিলেন। বিষ্ণু বৈকুন্ঠ  ছেড়ে বলি রাজ্য রক্ষা করতে আসেন। বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী তার স্বামীকেফিরে পাওয়ার জন্য সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে  বলিরাজার কাছে আসেন  এবং তাঁকে তার স্বামী নিরুদ্দেশ বলে জানান। তার স্বামী যতদিন না ফিরে আসবেন ততদিন তিনি রাজার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।  রাজা তার প্রার্থনা মনজুর করেন।  এই শ্রাবন পূর্ণিমার শুভ তিথিতে তিনি রাজার হাতে পবিত্র রাখী বেঁধে দেন।  রাজা এই রাখী বাঁধার  কারণ জানতে চাইলে তিনি রাজাকে সব খুলে বলেন। রাজা তার কথায় মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে আবার বৈকুন্ঠে ফিরে  যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।  সেই থেকে রাখীবন্ধনের উৎসব পালিত হয়।   

চিতোরের রানী কর্ণবতী মুঘল  সম্রাট হুমায়ূনকে রাখী পাঠান।  সালটা ছিল ১৫৩৫। গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ চিতোর  আক্রমণ করলে বিধবা রানী ভয় পেয়ে যান এবং খুব অসহায় বোধ করেন।  সেই সময়  তিনি সম্রাট কাছে সাহায্য প্রার্থী হন এবং তাকে একটি রাখী পাঠান।  রানীর পাঠানো রাখী দেখে সম্রাট অভিভূত হয়ে যান  এবং তিনি চিতোর রক্ষা  করার জন্য সৈন্য পাঠান।  তবে সম্রাট সৈন্য পাঠাতে দেরি করায়  বাহাদুর শাহ চিতোরের দুর্গ জয় করেন।  ১৫৩৫ সালের ৮ই মার্চ রানী তার সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য জোহর ব্রত পালন করেনা এবং নিজেকে আগুনে আত্মহুতি দেন। এটি মধ্য সপ্তদশ শতকের লোকগাথা হিসেবে প্রচলিত আছে।  

বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধের কারণে ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ রাখী উৎসবটি প্রচলন করেছিলেন।  উনিশ শতকে বাংলায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায় পৌঁছেছিল। ব্রিটিশ সরকার বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার সিন্ধান্ত নিয়েছিল। ১৯০৫ সালের ১৯ শে জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময় সারা ভারতের সব নেতা এই সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে আন্দোলন  শুরু করেন। কলকাতায়  রবীন্দ্রনাথ হাজার হাজার হিন্দু মুসলমান ভাই ও বোনকে আহ্বান করেছিলেন। এই আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে তিনি একে  ওপরের হাতে রাখী পরিয়ে  দিতে বলেন।  প্রতিবাদস্বরূপ উৎসব পালন করেন।  তিনি তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন। এই দিন প্রতিবাদস্বরূপ কোনো বাড়িতে উনুন জ্বালানো হয়নি।   

রাখীবন্ধন  একটি জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। দামি, কম দামি, রঙিন রাখীর নিচে ঢাকা পড়ে  যায় আমাদের দীনতা, আমাদের লজ্জাবোধ। একটা সুতোর মারফত আমরা আমাদের সব কিছু ঢেকে সৌভাতৃত্বকে সামনে তুলে আনতে চেষ্টা করি।  গড়ে তুলি সৌহার্দ্যের বন্ধন।  




ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ : ০২-০৮-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০

👉 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।  পরবর্তী লেখাগুলো পেতে বগতিকে ফলো করে রাখুন।  





Thursday, July 30, 2020

শতবর্ষের আলোকে সরবতের দোকান>P



শতবর্ষের আলোকে  সরবতের দোকান




সেই দিন হঠাৎ একটা বইয়ের খোঁজে কলেজ স্ট্রিট-এ গিয়েছিলাম।  গ্রীষ্মের প্রখর রোদ্দুর। এ দোকান সে দোকান ঘুড়তে  ঘুড়তে  বইটা অবশ্য পেলাম। বইটা পেলে কি হবে, তার সন্ধান করতে গিয়ে আমার অবস্থা খুবই কাহিল হয়ে পড়লো।  ঘেমে নিয়ে একাকার হয়ে গেলাম। শরীরটা  একটু গাছের ছাওয়ায় স্নিগ্ধ হাওয়ায় নিরিবিলিতে একটু বিশ্রাম পেতে চাইছিলো।  কলেজ স্ট্রিটে এরকম জায়গা পাওয়া তো দুস্কর। প্রথমে কলেজ স্কোয়ারে গিয়ে একটা ছাওয়ায় বসলাম।  জায়গাটায় ছাওয়া থাকলেও রোদের ঝলকানি আর সাথে গরম হাওয়া দিচ্ছিল। সেখানে বেশিক্ষন বসা গেলো না।  সেখান থেকে উঠে পড়লাম।  এবার চললাম কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ও বিখ্যাত শরবতের দোকানে। ওখানে একটু ঠান্ডা শরবত খেয়ে প্রাণটা  জুড়ানোই উদ্দ্যেশ্য। 

 ওখানে ঢুকে দেখলাম বেশ ভিড় রয়েছে, তবে কয়েকটা খালি জায়গা রয়েছে।  ওদের বিখ্যাত ডাবের শরবত দেওয়ার জন্য বললাম।  বসে বসে দোকানের ইতিহাসটা ভাবছিলাম।  কি ঐতিহ্য দোকানটির।  প্রায় একশত বছর অতিক্রান্ত  এক দোকান। ভাবা যায় একটা শরবতের দোকানের বয়স  শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। 

১৯১৮ সাল। অবিভক্ত বাংলার বরিশাল নিবাসী নীহাররঞ্জন মজুমদার কলকাতায় এসে দোকানটি  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি নাম দেন প্যারাডাইস। প্রতিষ্ঠানটা শুধু দোকান ছিল না।  দোকানের আড়ালে চলতো স্বদেশী আন্দোলনের কাজ কর্ম। নীহারবাবু নিজে ছিলেন একজন বিপ্লবী। এখানে তখন সতীন  সেন, বাঘাযতীন এরকম বহু স্বনামধন্য বিপ্লবীদের যাতায়াত ছিল।  এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও। শরবতের আড়ালেই চলতো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গুপ্ত সমিতির কাজকর্ম। ব্রিটিশদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলতো  অনুশীলন সমিতির কাজ। কিন্তু তা বেশিদিন চালানো যায়নি।  তাদের কাজকর্মের খবর একদিন ব্রিটিশ সরকারের নজরে চলে আসে।  তারা এসে দোকানটিকে বন্ধ করে দেয়।  বেশ কিছু বছর পর দোকানটি আবার চালু করা হয়। সালটা ছিল সম্ভবত ১৯৩৭। তবে দোকানটির নাম পরিবতর্ন করে তখন করা হলো প্যারামাউন্ট। সেই থেকে এক রয়ে গেছে দোকানের চেয়ার-টেবিল।  শরবতেরও কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, তার রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ আজও বহাল রয়েছে। চাওমিন, বিরিয়ানির যুগেও  বা কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডের যুগেও দোকানটি আট  থেকে আশি সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে।  


শরবতের যে কতরকম স্বাদ হতে পারে, কত রকম বৈচিত্র হতে পারে তা এখানে না আসলে জানা যায় না।  প্রত্যেকটির স্বাদই আলাদা, একের থেকে অন্যটি  ভিন্ন। কোকা মালাই, ম্যাংগো মালাই, কেশর মালাই, রোজ  মালাই, প্যাশন ফ্রউট, পাইনাপিল মালাই, ব্যানানা  মালাই, ভ্যানিলা মালাই ইত্যাদি নানারকম স্বাদের  শরবত    পাওয়া যায়।  এছাড়া নানারকম সিরাপও পাওয়া যায়।  

এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত শরবত হলো ডাবের শরবত। এই শরবত তৈরির নিয়ম আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নীহারবাবুকে বলে গিয়েছিলেন। তিনি কিভাবে ডাবের শাঁসের সাথে সিরাপ মিশিয়ে একটা সুস্বাদু শরবত বানানো যায় তা শিখিয়ে গিয়েছিলেন। এদের এই রেসিপিটি জগৎ বিখ্যাত। ভারতীয় বিজ্ঞান আচার্যের সেই রেসিপি আজও সমান ভাবে চলে আসছে। যা একশো বছর ধরে ব্যাট করে চলেছে। শোনা যায়,  প্রতিদিনই প্রায় তার ব্যাট থেকে দু-তিন শতক রানের বন্যা বয়ে চলে। এই ডাবের শরবতের স্বাদ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের পদধূলি বারংবার পড়েছে।  

এখানকার শরবতের টানে কাজী নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহা, বিশিষ্ট লেখক শঙ্খ ঘোষ, স্বনামধন্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়, শচীন দেব বর্মন,  মহানায়ক উত্তমকুমার, মহানায়িকা সুচিত্রা সেন, সিদ্ধার্থ শংকর রায়,  থেকে বহু ভারত বিখ্যাতরা  সুস্বাদু শরবতের টানে এখানে এসেছেন। বর্তমান দোকানের মালিকের সাথে কথা হচ্ছিল এঁনারা  টিভি বা কোনো কাগজ বা পত্রিকাতে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দেন না , শতবর্ষ ধরে এদের বিজ্ঞাপন লোকের মুখে মুখেই  চলে আসছে। 

 
বাঙালির শরবত চর্চার ইতিহাসে, খাদ্য রসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তির ক্ষেত্রে শতাব্দী প্রাচীন দোকানটি তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।  গরমের সময়  ক্লান্ত শরীরে  এখানকার শরবতে  এক চুমুকে চমক এনে দেয়। 




ছবি ও  লেখার সত্ব  : সুদীপ্ত মুখার্জী  
তারিখ : ৩০-০৭-২০২০

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।