পোস্তা ও মন্দির
পোস্তা অঞ্চলটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা শহরের মধ্যাংশে অবস্থিত একটা অঞ্চল। পূর্বে অঞ্চলটিতে বাঙালি ব্যবসায়ীদের বসতি অঞ্চল ছিল। বর্তমানে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। অঞ্চলটির নামকরণ হয়েছিল হুগলি নদীর পোস্তা ঘাটের নামানুসারে। বাঙালি ব্যবসায়ী লাক্সক্ষীকান্ত ধার ওরফে নকু ধর ছিলেন এই অঞ্চলের একজন বিত্তশালী বাঙালি ছিলেন। রাজা নবকৃষ্ণ দেব প্রথম জীবনে এই নকু বাবুর কাছেই চাকরি করেছিলেন। নকু ধরের দৌহিত্র সুখময় রায় পরবর্তীকালে এখানে একটিবিশাল রাজবাড়ী নির্মাণ করেন। পূর্বে অঞ্চলটিতে মগ জলদস্যু, চোর-ডাকাতের ভয় ছিল। রাজবাড়ীর সদস্যরা নজস্ব শক্তি ও জনবলের সাহায্যে সেই ভয় অতিক্রম করে। তারপর অঞ্চলটিতে ধীরে ধীরে জন বসতি গড়ে ওঠে। এখানে ডাল, আলু প্রভৃতির বিশাল পাইকারি বাজার রয়েছে। বর্তমানে অঞ্চলটি বাণিজ্যিক বাজার অঞ্চল। ২০১৬ সালের ৩১সে মার্চ আচমকাই এখানকার নির্মীয়মান বিবেকানন্দ সেতুটি ভেঙে পরে।
এই অঞ্চলে দুটো খুব প্রাচীন ও প্রতিষ্ঠিত মন্দির রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখে ওই অঞ্চলে একটা কাজের জন্য গিয়েছিলাম। মন্দির দুটো দেখার ইচ্ছে বহুকাল ধরে মনে বন্দি করে রেখেছিলাম। এজ বহুদিনের ইচ্ছের কিছুটা লাঘব হলো। করণের জন্য একটি মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারলাম না, অন্যটির দ্বার বন্ধ ছিল। যাই যোগ যতটুকু দেখেছি ও যতটুকু জেনেছি তাই সকলকে জানবার চেষ্টা করছি।
পুঁটে কালী মন্দির
হিন্দুদের প্রধান দেবী হলেন কালী বা কালিকা। কালীকে শ্যামা ও আদ্যাশক্তি বলেও অবিবাহিত করা হয়। শক্ত সম্প্রদায়ের কলকেরা সাধারণত কালী পূজা করে থাকে। তন্ত্র অনুসারে দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবীই হলেন কালী। তন্ত্র ও পূরণে কালির নানা রূপভেদ দেখা যায়। সেই অনুসারে দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী , ভদ্রকালী চামুণ্ডাকালী শ্মশানকালী ও শ্রীকালী। কলকাতার উত্তর দিকে দক্ষিনেশ্বরে তিনি মা ভবতারিণী আবার দক্ষিণে কালীঘাটে দেবী কালিকা।
পোস্তা অঞ্চলের কালী কৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিতে রাস্তার ধারে ছোট্ট একটা লালা রঙের সুন্দর মন্দির বিদ্যমান। এটা খুবই প্রাচীন মন্দির। স্থাপিত ৯৬৪ বঙ্গাব্দে। এই বিখ্যাত মন্দিরটির নাম পুঁটে কালী। কেউ কেউ আবার পুঁটি কালী বলেও অভিহিত করে থাকে। কালী মূর্তিটি খুবই ছোট। উচ্চতা মাত্র ৬ ফুট। দেবীকে এখানে যোগমায়া রূপে পূজা করা হয়। কেউ কেউ ছোট মূর্তি বলে এরকম নামকরণ হয়েছে বলে থাকেন। আবার কারো কারো মতে কালী ভক্ত আমার কৃষ্ণ ভট্টাচার্য স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। "পুঁটিমাছ ভাসছে তার নিচে পাওয়া যাবে আমাকে বলে কালী মায়ের সস্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। শহুদহু তাই নয় দেবী তাকে এই স্তনে পূজা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়া আরো একটা মোট শোনা যায়। পূর্বে মন্দিরের পাশ দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত ছিল। কোনো একদিন হমার সময়ে গঙ্গা থেকে একটা পুঁটিমাছ লাফিয়ে হ্মকুণ্ডের মধ্যে পরে যায়। অর্ধ দগ্ধ মাছটিকে তুলে আবার জলে ফেলে দিতেই সেটি আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই কারণেই মন্দিরটির নাম পুঁটে কালী বলা হয়ে থাকে।
বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির
এই অঞ্চলে অবস্থিত আর একটা অতীব সুন্দর মন্দির রয়েছে। নাম বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির। বিখ্যাত ব্যবসায়ী রাম কুমারজি বাঙুর ও মাঙ্গানি রাম বাঙুর মন্দিরটিই নির্মাণ করেন। সালটা ছিল ১৯৬০। মন্দিরটির অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলে ত্রিদেবী ও ভূদেবী। মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে তৈরী। মন্দিরটির বাইরে ও ভিতরে অসাধারণ কারুকার্যে নির্মিত। মন্দিরটির ভিতরে বেশ কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে। দেবী মূর্তির পাথর আদি বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ছবি ও লেখার সত্ব : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ : 03-10-২০২০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
No comments:
Post a Comment