আজ স্বর্ণযুগের কিংবদন্তি ছিয়াত্তরে পা রাখলেন
- সুদীপ্ত মুখার্জী
আজ ১৮ই জুলাই। ১৯৪৩ সালের আজকের দিনেই স্বর্ণযুগের কিংবদন্তি শিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায় কলকাতার এক সমৃদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পরিবারে বরাবরই সংগীতের চর্চা হতো। খুব ছোট্ট বয়সেই তিনি তাঁর মাতৃদেবীর কাছে সংগীতের শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময় তিনি সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়, ওস্তাদ মোহাম্মদ সাগিরুদ্দিন খান, পন্ডিত চিন্ময় লাহিড়ী, পন্ডিত লক্ষণ প্রসাদ জয়পুরওয়ালা ও পন্ডিত রমেশ নাদকার্নির কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন।
পরবর্তীসময় তিনি "মেট্রো-মর্ফি কনটেস্ট" সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি বিজয়ী হন। অনিল বিশ্বাস নওশাদ, বসন্ত দেশাই ও সি রামচন্দ্রের মতো গুণী সংগীত পরিচালকরা সেই প্রতিযোগিতার বিচারকের আসন অলংকৃত করেছিলেন। এই কন্টেস্টে বিজয়ী হওয়ার পর আরতি মুখোপাধ্যায়কে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৫৮ সালে 'সাহারা' নামে একটা হিন্দি সিনেমাতে প্লেব্যাক করার সুযোগ পান। এটাই তাঁর সংগীত শিল্পী হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ। কিন্তু এই সিনেমার গানগুলো শ্রোতাদের মন ভরাতে পারেনি। তারপর 'গার্ল ফ্রেন্ড' নামে আর একটা সিনেমায় তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন কিন্তু সেই সিনেমাটি ফ্লপ হয়। তারপর 'কন্যা' নামে একটি বাংলা সিনেমাতে তিনি গান গাওয়ার সুযোগ পান। এটাই তাঁর বাংলা সিনেমাতে প্রথম সুযোগ পাওয়া। বাংলা সংগীত জগতে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ। তাঁর আসামান্য গায়কী ও সুমধুর কন্ঠস্বর সবাইকে মুগ্ধ করে দেয়।
১৯৬৬ সালে "গল্প হলেও সত্যি" নামে বাংলা সিনেমাতে গান গেয়ে তিনি সেরা মহিলা নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে 'বিজেএফ' পুরস্কার পেয়েছিলেন। 'ছুটির ফাঁদে' সিনেমায় গান গেয়ে তিনি পুনরায় 'বিজেএফ' পুরস্কার পান। পরবর্তী সময় তিনি হিন্দি সিনেমা 'গীত গাতা চল' ও বাংলা 'হংসরাজ', 'অমরগীতি'র মতো সংগীত প্রধান সিনেমাতে গান গেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর গাওয়া বহু আধুনিক গান ও ছায়াছবির গান জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল। ষাটের দশকের শেষদিক থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত তিনি বাংলা সংগীত জগতে মহিলা শিল্পী হিসেবে শীর্ষ স্থান অলংকৃত করেছিলেন। তিনি শুধু বাংলা বা হিন্দি নয় বহু ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছিলেন। তিনি রাগাশ্রয়ী, আধুনিক গান, ভজন, গজল ইত্যাদি গান বহুবার কলকাতা ও মুম্বাই রেডিওতে গেয়েছেন। আনুমানিক প্রায় ১৫০০০ গান তিনি গেয়েছেন। 'বন্য বন্য এ অরণ্য', 'এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে', 'লজ্জা মরি মরি একি লজ্জা', 'মাধবী মধুপে হল মিতালি', 'তখন তোমার একুশ বছর', 'আমি মিস ক্যালকাটা' ইত্যাদি তাঁর খুবই জনপ্রিয় গান। ঋত্বিক ঘটক তাঁর 'যুক্তি তক্কো গল্প' সিনেমাতে আরতি মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি সর্বপ্রথম হিন্দিতে রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করেছিলেন। তিনি বহুবার বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হলেও তিনি সবসময় মনে করেন শ্রোতারাই তাঁকে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছেন এটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। বাংলায় যে কজন সংগীত শিল্পী এসেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন খুবই ভার্সেটাইল। বিভিন্ন রকম গান তিনি অনায়াস ও সাবলীলভাবে গাইতে পারতেন। সব ধরণের সংগীতে তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল।
আজ আপনার জন্মদিন, আমার তরফ থেকে আপনাকে অফুরন্ত শুভেচ্ছা জানাই। আপনি সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার অগুনতি ভক্তরা আপনাকে সবসময় ঘিরে থাকুক।
তারিখ :১৮-০৭-২০২১
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।