মহালয়া অমাবস্যা
মহালয়া এই শব্দটি বলতে আমরা বুঝি সাত সকালে উঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বজ্র গম্ভীর কণ্ঠে শোনা চন্ডীপাঠ আর মায়ের মর্ত্যে আগমনের বার্তাকে। কিন্তু এই দিনই পিতৃপক্ষের শেষদিন। পরদিন দেবীপক্ষের শুরু। দেবীপক্ষের শুরু মানেই দূর্গা দুর্গতিনাশিনীর আরাধনার শুরু, বাঙালির শারদীয়া উৎসবের শুরু। পিতৃপক্ষের শেষ দিন অর্থাৎ মহালয়ার দিন গঙ্গার ঘাটে ঘাটে দেখা যায় ষোলো শ্রাদ্ধ উৎযাপন হতে। হিন্দু রীতি অনুসারে মহালয়া হল প্রয়াত পূর্ব পুরুষদের তর্পনের মাধ্যমে স্মরণ করে তাদের শান্তি কামনার উদ্দেশ্যে জলদান করা হয়। পিতৃপক্ষ নিয়ে আত্মার মোক্ষলাভের কথা মার্কন্ডেয় পূরণে বলা আছে। দেবীপক্ষের সাথে যেমন দুর্গাপুজোর যোগ আছে, তেমন পিতৃপক্ষের সাথে মহাভারতের যোগ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে মহাভারতে একটি আখ্যান রয়েছে।
মহাভারতে কর্ণকে আমরা সবাই জানি দাতা কর্ণ হিসেবে। কর্ণ সারাজীবন সোনা, রুপা, হীরে, জহরত দান করে এসেছেন। তিনি কোনো মানুষকে কোনোদিন কোনো খাবার বা পোশাক দান করেননি। কর্ণের দাতার ভূমিকা অর্থাৎ তার এইসব ভালো কাজের জন্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তিনি স্বর্গরাজ্যে পৌঁছতে পেরেছিলেন। স্বর্গরাজ্যে যখন তার আত্মার ক্ষিদে পেল, সে খেতে চাইল, তখন তাকে খাদ্য-পানীয়ের বদলে সোনা, রুপা, হীরে, জহরত খেতে দাওয়া হল। কর্ণ অবাক হয়ে যমরাজের (মতান্তরে দেবরাজ ইন্দ্র ) কাছে জানতে চাইলেন, এগুলোর মানে কি? যমরাজ তাকে বলল দাতা হিসেবে তুমি খুবই ভালো কাজ করেছ, তাই তোমার স্বর্গলাভ হয়েছে। কিন্তু তুমি দান হিসেবে সবাইকে সোনা, রুপা, হীরে, জহরত দান করেছ। কোনদিন কোন বুভুক্ষ মানুষকে কোন খাবার দান করোনি। নিজের পূর্বপুরুষদের কথা কখনো ভাবোনি, তাদের কখনো খাবার বা জলদান করোনি। পূর্বপুরুষদের গমন পথে কোনোদিন আলোক প্রজ্জলিত করোনি। দাতার পুণ্যলাভের জন্য তুমি স্বর্গে এসেছ ঠিকই, কিন্তু তুমি খাদ্য-পানীয় পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হওনি। তাই তোমার এই পরিণতি হয়েছে।
কর্ণ যমরাজকে জানালেন তার পূর্ব পুরুষদের তিনি চেনেন না। জন্ম মুহূর্ত থেকেই আমার মা আমায় ত্যাগ করে চলে গেছেন। সুত বংশজাত অধিরথ ও তাঁর পত্নী আমায় প্রতিপাল্ন করেন। আমার বীরত্ত্ব ও শৌয্য দেখে দুর্যোধন আমায় আশ্রয় দেন। কুরুক্ষেত্ত্রের যুদ্ধ শুরুর আগে দিন প্রথমে কৃষ্ণ ও পরে মাতা কুন্তী আমায় আমার জন্ম ও বংশ পরিচয় জানান। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেলো। পূর্ব পুরুষদের জল দেওয়ার সময় পাইনি তো। তাহলে এখন উপায় কি? আমি কি কোনোদিনই খাদ্য বা পানীয় পাবো না। যমরাজ তাকে বললেন খাদ্য-পানীয় পেতে হলে তোমাকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে এবং পূর্ব পুরুষদের জলদান করতে হবে।
যমরাজ তখন তাকে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথিতে ১৪ দিনের জন্য আবার মর্ত্যে পাঠালেন। কর্ণ মর্ত্যে এসে এই ১৪ দিন সমস্ত বুভুক্ষ মানুষকে পেটভরে খাওয়ালেন, বুভুক্ষ মানুষদের আত্মার শান্তি ঘটালেন, মনের পরিতৃপ্তি পূরণ করলেন। পূর্ব পুরুষদের তিল ও জল দান করলেন। ১৪ দিন পর তিনি আবার স্বর্গে ফিরে আসলেন। স্বর্গে এবার তাকে নানা পদের নানারকম খাবার খেতে দেওয়া হল। কথিত আছে কর্ণের এই ১৪ দিনের মর্ত্য সফরকে পিতৃপক্ষ এবং মহালয়ার সময়কাল বলা হয়। সেই থেকেই মহালয়ার দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তিল ও জলদান করার রীতি প্রচলিত হয়েছে। মহালয়ার অমাবস্যাকে সর্বপিতৃ অমাবস্যা, পিতৃ অমাবস্যা, পেডালা অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বলেও অভিহিত করা হয়। তর্পনকারী প্রথমে ব্রহ্ম, বিষ্ণু ,ও মহাদেবকে জলদান করে। তারপর মানব শ্রেণীকে জলদান করে। মহালয়া অমাবস্যা তিথি থেকে পরের অমাবস্যা অর্থাৎ কালী পূজার অমাবস্যা পর্যন্ত পূর্ব পুরুষরা মর্ত্যে থাকেন বলে শাস্ত্রকারদের বা মানুষের অনুমান।
মহালয়া পিতৃ পুরুষদের জলদান করার তিথি। মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজার কোনো যোগ নেই, যোগ নেই আকাশবাণীর প্রচারিত "মহিষাসুরমর্দিনী" গীতিআলেখ্যটিরও।
ছবি ও লেখার স্বত্ত : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ :০৩-০৯-২০১৯
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
মহাভারতে কর্ণকে আমরা সবাই জানি দাতা কর্ণ হিসেবে। কর্ণ সারাজীবন সোনা, রুপা, হীরে, জহরত দান করে এসেছেন। তিনি কোনো মানুষকে কোনোদিন কোনো খাবার বা পোশাক দান করেননি। কর্ণের দাতার ভূমিকা অর্থাৎ তার এইসব ভালো কাজের জন্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তিনি স্বর্গরাজ্যে পৌঁছতে পেরেছিলেন। স্বর্গরাজ্যে যখন তার আত্মার ক্ষিদে পেল, সে খেতে চাইল, তখন তাকে খাদ্য-পানীয়ের বদলে সোনা, রুপা, হীরে, জহরত খেতে দাওয়া হল। কর্ণ অবাক হয়ে যমরাজের (মতান্তরে দেবরাজ ইন্দ্র ) কাছে জানতে চাইলেন, এগুলোর মানে কি? যমরাজ তাকে বলল দাতা হিসেবে তুমি খুবই ভালো কাজ করেছ, তাই তোমার স্বর্গলাভ হয়েছে। কিন্তু তুমি দান হিসেবে সবাইকে সোনা, রুপা, হীরে, জহরত দান করেছ। কোনদিন কোন বুভুক্ষ মানুষকে কোন খাবার দান করোনি। নিজের পূর্বপুরুষদের কথা কখনো ভাবোনি, তাদের কখনো খাবার বা জলদান করোনি। পূর্বপুরুষদের গমন পথে কোনোদিন আলোক প্রজ্জলিত করোনি। দাতার পুণ্যলাভের জন্য তুমি স্বর্গে এসেছ ঠিকই, কিন্তু তুমি খাদ্য-পানীয় পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হওনি। তাই তোমার এই পরিণতি হয়েছে।
কর্ণ যমরাজকে জানালেন তার পূর্ব পুরুষদের তিনি চেনেন না। জন্ম মুহূর্ত থেকেই আমার মা আমায় ত্যাগ করে চলে গেছেন। সুত বংশজাত অধিরথ ও তাঁর পত্নী আমায় প্রতিপাল্ন করেন। আমার বীরত্ত্ব ও শৌয্য দেখে দুর্যোধন আমায় আশ্রয় দেন। কুরুক্ষেত্ত্রের যুদ্ধ শুরুর আগে দিন প্রথমে কৃষ্ণ ও পরে মাতা কুন্তী আমায় আমার জন্ম ও বংশ পরিচয় জানান। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেলো। পূর্ব পুরুষদের জল দেওয়ার সময় পাইনি তো। তাহলে এখন উপায় কি? আমি কি কোনোদিনই খাদ্য বা পানীয় পাবো না। যমরাজ তাকে বললেন খাদ্য-পানীয় পেতে হলে তোমাকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে এবং পূর্ব পুরুষদের জলদান করতে হবে।
যমরাজ তখন তাকে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথিতে ১৪ দিনের জন্য আবার মর্ত্যে পাঠালেন। কর্ণ মর্ত্যে এসে এই ১৪ দিন সমস্ত বুভুক্ষ মানুষকে পেটভরে খাওয়ালেন, বুভুক্ষ মানুষদের আত্মার শান্তি ঘটালেন, মনের পরিতৃপ্তি পূরণ করলেন। পূর্ব পুরুষদের তিল ও জল দান করলেন। ১৪ দিন পর তিনি আবার স্বর্গে ফিরে আসলেন। স্বর্গে এবার তাকে নানা পদের নানারকম খাবার খেতে দেওয়া হল। কথিত আছে কর্ণের এই ১৪ দিনের মর্ত্য সফরকে পিতৃপক্ষ এবং মহালয়ার সময়কাল বলা হয়। সেই থেকেই মহালয়ার দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তিল ও জলদান করার রীতি প্রচলিত হয়েছে। মহালয়ার অমাবস্যাকে সর্বপিতৃ অমাবস্যা, পিতৃ অমাবস্যা, পেডালা অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বলেও অভিহিত করা হয়। তর্পনকারী প্রথমে ব্রহ্ম, বিষ্ণু ,ও মহাদেবকে জলদান করে। তারপর মানব শ্রেণীকে জলদান করে। মহালয়া অমাবস্যা তিথি থেকে পরের অমাবস্যা অর্থাৎ কালী পূজার অমাবস্যা পর্যন্ত পূর্ব পুরুষরা মর্ত্যে থাকেন বলে শাস্ত্রকারদের বা মানুষের অনুমান।
মহালয়া পিতৃ পুরুষদের জলদান করার তিথি। মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজার কোনো যোগ নেই, যোগ নেই আকাশবাণীর প্রচারিত "মহিষাসুরমর্দিনী" গীতিআলেখ্যটিরও।
ছবি ও লেখার স্বত্ত : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ :০৩-০৯-২০১৯
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।