ফুলের বাজারে পূজার গন্ধ
আমাদের তিলোত্তমায় বাজারের সংখ্যা প্রচুর। বিচিত্র রকমের বাজার দেখা যায়। শহরের জনবহুল ব্যস্ততম বাজারগুলির মধ্যে অন্যতম হল গঙ্গাতীরবর্তী মল্লিকঘাটে অবস্থিত ফুলের বাজারটি। এটি এশিয়ার বৃহত্তম ফুলের বাজার।
ফুল হল বিশ্ব ভালোবাসার সর্বজনীন এক অনন্য উপহারের উপকরণ। ফুলের আদান প্রদানের মত নান্দনিক সুন্দর কাজ আর নেই। ফুল শুধু নান্দনিকতার উপকরণ নয়, পূজার অন্যতম উপকরণও বটে। বিশ্ব পেক্ষাপটে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভীত গড়তে সেই প্রাচীনকাল থেকেই বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হতে দেখা গেছে। বাংলার আবহাওয়া, মাটি ফুল চাষের জন্য খুবই সহায়ক। এশিয়ার দেশগুলোতে প্রাচীনকাল থেকেই ফুলের চাষ হয়ে আসছে। সজ্জায় বা পূজাপার্বনে ফুল সবসবসময়েই গ্রহণযোগ্য সামগ্রী। পদ্ম, অপরাজিতা, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, শ্বেতচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা , দোলনচাঁপা, গাঁদা, বকুল, রজনীগন্ধা, জবা, কদম, কৃষ্ণচূঁড়া, রাধাচূঁড়া, মাধবীলতা, নয়নতারা, পলাশ, শিউলি, টগর, শালুক, শাপলা প্রভৃতি কত শত ফুলের নাম শোনা যায়। এদের গন্ধে মানুষ মাতোয়ারা। বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও ফুলের যথেষ্ট কদর আছে। যদিও বর্তমানে গন্ধহীন প্লাস্টিকের ফুল গৃহসজ্জা ও অনুষ্ঠানাদিতে বেশ কিছুটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু পূজা পার্বনে এইসব আর্টিফিশিয়াল ফুলগুলো এখনো কোনো দাঁত ফোটাতে পারেনি। তবে দিনকে দিন যেভাবে আসল ফুলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে কি হবে বলা মুশকিল। যতই প্লাস্টিকের ফুল ঘরে ঘরে সৌন্দর্যের প্রতীক হোক, কিন্তু আসল ফুলের গন্ধে মানুষ সব সময়ে মুগ্ধ থাকবেই। সেই স্থান কোনোদিনই নকল ফুলগুলো পূরণ করতে পারবে না। এজন্যই যেন বলা হয় "ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায়"।
গঙ্গার ধারে হাওড়া ব্রিজের তলায় অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম ফুলের বাজার। হাওড়া ব্রিজের তলায় গড়ে ওঠা এই ফুলের বাজারে ভোর হয় সূর্য ওঠার অনেক আগেই। রাত থাকতেই ট্রেন বা ট্রাক বোঝাই করে ফুল আসে। আসেন খদ্দরেরা। কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে ও বিয়েবাড়ি থেকে নিত্যপূজার সমস্ত ফুলের যোগান এই বাজার দিয়ে থাকে। শহর ও শহরতলি থেকে ভোর তিনটে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রতিদিন ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করে এই সরু একফালি জায়গাটা। বর্তমানে ক্রেতা বিক্রেতার চাপে বাজারটা আর ওই এক ফালি জায়গাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বাড়তে বাড়তে তা স্ট্র্যান্ড রোডে এসে উপস্থিত হয়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ক্রেতাকে যেমন দেখা যায় তেমন প্রায় হাজারখানেক বিক্রেতাকেও দেখা যায়। দিনকে দিন চাহিদা বেড়েই চলেছে। বিয়ে বা পূজা পার্বনের দিনগুলোতে তিলধারণের জায়গা থাকে না। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি দেশেও ফুল রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানে প্রায় ২৫০ টি স্থায়ী দোকান ও ৩০০ টির মত ভেন্ডার রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় লাখ দশেক টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। অবস্থানগত কারণেও বাজারটি সকলকে বিস্মিত করে। বাজারটির ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পুন্য সলিলা গঙ্গা নদী আর ঠিক বিপরীত পাড়ে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে ব্যস্ততম হাওড়া স্টেশনটি রয়েছে।
পচা ফুল-পাতায় জায়গাটা যেন এক নরককুন্ড। এই নরককুণ্ডতেই প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম হয়, চলে লাখ লাখ টাকার লেনদেন। এইভাবেই অস্বাস্থকর পরিবেশে বাজারটি চলে প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘন্টা ধরে। দুপাশে স্তূপাকার ফুল ও ফুলের মালা মাঝের সরু জায়গাটা দিয়ে লোক চলাচল ও ফুলবোঝাই ম্যাটাডোর চলাচল করে। এখানকার ক্রতা বিক্রতাদের ইচ্ছা ফুল বাজারটি "আধুনিক ফ্লাওয়ার মার্কেট"এ পরিণত হোক। মল্লিকঘাট ফুলবাজারের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর দু-একবার চেষ্টা হলেও তা এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। কয়েক বছর আগে সরকারি তরফ থেকে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, তা বিভিন্ন যাঁতাকলে আটকে রয়েছে। সংস্কারের কথা বহুবার শোনা গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বাজার সেই পূর্বের মতো হতশ্রী অবস্থাতেই রয়ে গেছে। বিপজ্জনকভাবে দুলতে দুলতে চলা ম্যাটাডোরের আঘাতে প্রতিদিন ছোটোখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে।
সংস্কার হোক বা না হোক এই নরককুন্ডতেই দিকে দিকে কিন্তু ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আছে, গেলে শুধু ফুলেরই নানারকম সুবাস নাকে আসে। রাশি রাশি ফুলের স্তুপের পাশ দিয়ে আপনার হেঁটে যাওয়াটা ভারী মনোরম লাগবে, আর আপনার জীবনে একটা দৃষ্টিনন্দন উপলব্ধি হয়ে উঠতে বাধ্য।
একজন বয়স্ক লোক গাঁদা, রজনীগন্ধার স্টিক ও গোলাপ বিক্রি করছেন। ওনার কাছ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে দুটো রজনীগন্ধার স্টিক ও কিছু গোলাপ কিনে বাড়ির পথ ধরলাম। আমার মতো নগন্য একজন ক্রেতা যখন তার সামনে এসে দরদাম করছে তখন তার মুখে খেলে যাওয়া অনাবিল হাসি যা দেখে আমার মনটা ভরে উঠেছিল, এই হাসি আমার জীবদ্দশায় সত্যি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। সারা রাস্তাটা রজনী গন্ধা ও গোলাপের সুবাস নিতে নিতে চললাম। স্মৃতির পাতায় এক মনরোম অনুভূতি যোগ হলো, যা হয়তো কোনোদিন বিস্মৃতি হবে না।
ছবি ও লেখার স্বত্ত : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ :২২-০৯-২০১৯
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
গঙ্গার ধারে হাওড়া ব্রিজের তলায় অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম ফুলের বাজার। হাওড়া ব্রিজের তলায় গড়ে ওঠা এই ফুলের বাজারে ভোর হয় সূর্য ওঠার অনেক আগেই। রাত থাকতেই ট্রেন বা ট্রাক বোঝাই করে ফুল আসে। আসেন খদ্দরেরা। কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে ও বিয়েবাড়ি থেকে নিত্যপূজার সমস্ত ফুলের যোগান এই বাজার দিয়ে থাকে। শহর ও শহরতলি থেকে ভোর তিনটে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রতিদিন ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করে এই সরু একফালি জায়গাটা। বর্তমানে ক্রেতা বিক্রেতার চাপে বাজারটা আর ওই এক ফালি জায়গাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বাড়তে বাড়তে তা স্ট্র্যান্ড রোডে এসে উপস্থিত হয়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ক্রেতাকে যেমন দেখা যায় তেমন প্রায় হাজারখানেক বিক্রেতাকেও দেখা যায়। দিনকে দিন চাহিদা বেড়েই চলেছে। বিয়ে বা পূজা পার্বনের দিনগুলোতে তিলধারণের জায়গা থাকে না। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি দেশেও ফুল রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানে প্রায় ২৫০ টি স্থায়ী দোকান ও ৩০০ টির মত ভেন্ডার রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় লাখ দশেক টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। অবস্থানগত কারণেও বাজারটি সকলকে বিস্মিত করে। বাজারটির ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পুন্য সলিলা গঙ্গা নদী আর ঠিক বিপরীত পাড়ে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে ব্যস্ততম হাওড়া স্টেশনটি রয়েছে।
পচা ফুল-পাতায় জায়গাটা যেন এক নরককুন্ড। এই নরককুণ্ডতেই প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম হয়, চলে লাখ লাখ টাকার লেনদেন। এইভাবেই অস্বাস্থকর পরিবেশে বাজারটি চলে প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘন্টা ধরে। দুপাশে স্তূপাকার ফুল ও ফুলের মালা মাঝের সরু জায়গাটা দিয়ে লোক চলাচল ও ফুলবোঝাই ম্যাটাডোর চলাচল করে। এখানকার ক্রতা বিক্রতাদের ইচ্ছা ফুল বাজারটি "আধুনিক ফ্লাওয়ার মার্কেট"এ পরিণত হোক। মল্লিকঘাট ফুলবাজারের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর দু-একবার চেষ্টা হলেও তা এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। কয়েক বছর আগে সরকারি তরফ থেকে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, তা বিভিন্ন যাঁতাকলে আটকে রয়েছে। সংস্কারের কথা বহুবার শোনা গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বাজার সেই পূর্বের মতো হতশ্রী অবস্থাতেই রয়ে গেছে। বিপজ্জনকভাবে দুলতে দুলতে চলা ম্যাটাডোরের আঘাতে প্রতিদিন ছোটোখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে।
সংস্কার হোক বা না হোক এই নরককুন্ডতেই দিকে দিকে কিন্তু ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আছে, গেলে শুধু ফুলেরই নানারকম সুবাস নাকে আসে। রাশি রাশি ফুলের স্তুপের পাশ দিয়ে আপনার হেঁটে যাওয়াটা ভারী মনোরম লাগবে, আর আপনার জীবনে একটা দৃষ্টিনন্দন উপলব্ধি হয়ে উঠতে বাধ্য।
একজন বয়স্ক লোক গাঁদা, রজনীগন্ধার স্টিক ও গোলাপ বিক্রি করছেন। ওনার কাছ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে দুটো রজনীগন্ধার স্টিক ও কিছু গোলাপ কিনে বাড়ির পথ ধরলাম। আমার মতো নগন্য একজন ক্রেতা যখন তার সামনে এসে দরদাম করছে তখন তার মুখে খেলে যাওয়া অনাবিল হাসি যা দেখে আমার মনটা ভরে উঠেছিল, এই হাসি আমার জীবদ্দশায় সত্যি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। সারা রাস্তাটা রজনী গন্ধা ও গোলাপের সুবাস নিতে নিতে চললাম। স্মৃতির পাতায় এক মনরোম অনুভূতি যোগ হলো, যা হয়তো কোনোদিন বিস্মৃতি হবে না।
ছবি ও লেখার স্বত্ত : সুদীপ্ত মুখার্জী
তারিখ :২২-০৯-২০১৯
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিটি যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
No comments:
Post a Comment