Thursday, October 3, 2019

মূর্তিপূজা >

 মূর্তিপূজা



হিন্দু দৃষ্টিতে একমাত্র পরম আরাধ্য দেবতা হলেন ভগবান বা ঈশ্বর। আমাদের  ধারণা ঈশ্বর সর্বব্যাপী ও সর্বশক্তিমান। ঈশ্বরের বা পরমেশ্বরের অলৌকিক ক্ষমতার বলে এই বিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরা হয়। তাঁরই করুণায় বিশ্বের জীবের  অস্তিত্ত্ব বিদ্যমান ও অন্তিমে বিলীন হওয়া। হিন্দুদের বিশ্বাস ঈশ্বরই দেবতারূপে বিভিন্ন সময় বিভিন্নরূপে পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হন। ঈশ্বরই আমাদের পথ প্রদর্শক। আমরা জানি যে মূর্তি ঈশ্বর নয়, ঈশ্বরের প্রতীক হিসেবে আমরা মূর্তিকে পূজা করে থাকি। মূর্তি একটা মাধ্যম মাত্র। মূর্তিকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে প্রকৃতপক্ষে আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের উপসনা করি। মূর্তিপূজা হল উৎসবের আনন্দ, জনসমাবেশ ও জন্যসংযোগের উপায়। মূর্তিপূজার প্রচলনের বর্ণনা ঘটলে আমরা দেখতে পাই যে সুপ্রাচীনকালে মূর্তিপূজার কোনো অস্তিত্ব ছিল না।   

আদিম যুগে শুধু ভারতবর্ষেই নয়, বিশ্বের প্রায় সকল দেশে প্রাণস্পন্দন ও প্রাণস্পন্দনহীন প্রাণী ও পদার্থের পূজা আরাধনার প্রচলন ছিল।  আদিম ও অনুন্নত যুগে বিদেহী আত্মা, ভূত-প্রেত প্রভৃতি অপদেবতাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পূজার প্রচলন ছিল।  প্রাচীনকালে বৃক্ষকে কল্পনা করা হত  সূর্যের আশ্রয়রূপে। আকাশের সাথে বৃক্ষের সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হত।  যেসব বৃক্ষগুলি সুউচ্চ ও সুপ্রসারিত যেমন, বট, অশ্বথ, বেল, নিম এগুলোকে আকাশ বা সূর্যের অশ্রয়স্থল হিসেবে ধরা হত।  এই সুউচ্চ বৃক্ষগুলোকে পূজা করার রীতি চালু ছিল।

বৃক্ষ পূজার পর এল যূপ ও স্তুপ পূজা। এগুলো বৈদিক যাগ যজ্ঞে ব্যৱহৃত হত। যূপ থেকেই ক্রমে শিবলিঙ্গের উৎপত্তি এবং বিকাশ হয়েছে।   যূপ ও বৃক্ষ পূজা আর্য সভ্যতার নিদর্শন। দেবী দুর্গার পূজা গোড়ার দিকে বট, অশ্বথ, বেল, নিম ইত্যাদি বৃক্ষে করা হত।  বেল বৃক্ষকে দেবী দূর্গা ভাবা হত। ষষ্ঠী তিথিতে বিল্ল বৃক্ষের পূজার পর সপ্তমীর প্রাতঃকালে বৃক্ষরূপিণী দেবী দুর্গার স্নান  করা হয়।  শাঁখ , ঘন্টা কাঁসর, ও ঢাক বাজিয়ে সেই শাখাদেবীকে পূজা মণ্ডপে আনা হয়। বৈদিক সম্প্রদায়ের অনুকরণে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে মূর্তি পূজা প্রবর্তিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। মূর্তিপূজা ভারতবর্ষের সকল প্রদেশেই প্রচলিত আছে।  তবে পশ্চিমবঙ্গে আর প্রচলন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

দুর্গার দ্বিভূজা, চতুর্ভূজা, অষ্টভূজা, দশভূজা, দ্বাদশভূজা ও অস্টাদশভূজা মূর্তির কথা পূরাণে বলা আছে।  এই সকল মূর্তির সমস্ত মূর্তিই সকল দেশে পূজ্য নয়। তবে বাংলায় আমরা দশভুজা মূর্তি পূজা করে থাকি।

আমরা যখন কোনো বিদ্বান ব্যক্তিকে সম্মান জানাই তখন তাঁর বিদ্যাকেই সম্মান জানাই, কখনোই তাঁর রক্তমাংসের শরীরটাকে সম্মান জানাই না। তেমনি আমরা যখন কোনো মূর্তিকে পূজা করি তখন আসলে ঈশ্বরকেই সম্মান জানিয়ে থাকি। কোনো মূর্তিকে সম্মান জানাই না। মূর্তিতো ঈশ্বরের প্রতীকরূপে আমাদের কাছে আসে।

বাঙালি সমাজ দেবী মূর্তির মধ্যেই মায়ের ভালোবাসা খুঁজে পায়। ঈশ্বরের প্রতিরূপ মূর্তিই সকল জীবের মা হয়ে বিরাজ করেন। তাই তো বলা হয়ে থাকে "যা দেবী  সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা"।

 ছবি ও  লেখার স্বত্ত  : সুদীপ্ত মুখার্জী 
তারিখ :০৩-১০-২০১৯

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০

 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 



No comments: