Tuesday, February 12, 2019

স্মরণে : পান্নালাল ভট্টাচার্য Pannalal Bhatacharyya>


আমার সাধ না মিটিল....





আজ কালীপুজো, পাড়ায় পাড়ায় মাইকে বাজছে সেই অতি পরিচিত কণ্ঠের ভক্তিমাখা শ্যামাসংগীত। শ্যামাসংগীত হচ্ছে কালি বিষয়ক বাংলা ভক্তিগীতির এক জনপ্রিয় ধারা। এই ধারায় বাংলার এক সন্তান নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন।

আপনারা নিশ্চয় ধরে ফেলেছেন আমি কার কথা বলতে চাইছি , যার গাওয়া গান ছাড়া বাংলার বুকে শ্যামা মায়ের আরাধনা করার কথা ভাবা যায় না । সেই শিল্পী হলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য । তিনি বিখ্যাত গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কনিষ্ঠ ভ্রাতা। পান্নালালের শৈশব জীবন সম্বন্ধে  খুব একটা কিছুই জানা যায় না। তিনি জন্মগ্রহণ করেন হাওড়া  জেলার বালি অঞ্চলের বরেন্দ্রপাড়ায়।  তার জীবনের বেশিরভাগ সময় এখানেই কেটেছে। ১৯৪৭ সালে আর এক বিখ্যাত গায়ক সনৎ সিংহের সাথে গান গাওয়া শুরু করেন।     মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে শুরু করেন । খুব স্বাদ ছিল দাদার মতো তাঁরও গাওয়া গান রেকর্ড হয়ে বেরোক। তাই তিনি তাঁর  গান রেকর্ড করার জন্য গ্রামোফোন কোম্পানির পরীক্ষায় বসেন, কিন্তু সেই পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হতে পারলেন না । হিস্ মাস্টার্স ভয়েস জানালেন তার কণ্ঠ এখনো অপরিণত রয়েছে। এই ঘটনায় তিনি যথেষ্ট ভেঙে পড়লেন। যাই হোক পরবর্তীকালে মেগাফোন কোম্পানি এগিয়ে এসে তাকে দিয়ে আধুনিক বাংলা গানের রেকর্ড বের করে । প্রথমদিকে পান্নালাল আধুনিক বাংলা গান গাইতেন। সনৎ সিংহের এক বন্ধু পান্নালালকে দিয়ে "আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলি ফুরায়ে যায় মা " শ্যামাসংগীতটি গাওয়ান।  যা আপামর বাঙালিকে চমকে দেয়, তার গায়কিতে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়।এই গানটি বাংলা সঙ্গীত জগতে আজও সমানভাবে সমাদর পায়।  এরপর আরো অনেক গান তিনি রেকর্ড করেন। তার উচ্চারণের মধ্যেই একটা অদ্ভত মায়া জড়ানো থাকতো, তার গান শোনা শেষ হয়ে গেলেও যেন মনের মধ্যে একটা রেশ থেকে যায়।

তিনি বহু বিখ্যাত সব ভক্তিগীতি আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন, যা আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। "মায়ের পায়ে জবা হয়ে", "সকলই তোমারি ইচ্ছা", "আমার চেতনা চৈতন্য করে দে মা" এইসব কালজয়ী গানগুলো অসংখ্য কালীভক্তের মন জয় করে নিয়েছিল । তিনি ভক্তিগীতি গাইতে গাইতে নিজে যে কবে কালীভক্তে পরিণত হয়ে গেছিলেন তা বুঝতে পারেননি।

তিনি গেয়ে গেছেন " আমার সাধ না মিটিল, আশা না ফুরিলো" । সত্যি হয়তো তার নিজের সাধ মেটেনি ও আশাও হয়তো পূর্ণতা লাভ করেনি । জীবনের শেষদিকে তিনি ভীষণ মন মরা হয়ে থাকতেন, সবসময় কোনো চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। দিনের পর দিন তিনি শ্মশানে সময় কাটাতেন। ১৯৬৬ সালের ২৭শে মার্চ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে সব গুনমুগ্ধ শ্রোতাদের কাঁদিয়ে বালিগঞ্জের বাড়িতে তিনি আত্মহত্যা করেন। ‘ও পার আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে’!— এটাই ছিল তাঁর গাওয়া শেষ গান। তিনি তিন কন্যা ও স্ত্রীকে রেখে গিয়েছিলেন । তিনি হয়তো চলে গেছেন কিন্তু তার গান অমরত্ব লাভ করেছে ।


তিনি ও বাঙালির কালীপুজো মিলে মিশে এক হয়ে গেছে ।তার মৃত্যুর ৫২ বছর পরও তার গান, তার গায়কী আমাদের মোহিত করে রাখে।













তারিখ : ১৩-০২-২০১৯

ছবি : সংগৃহীত 

লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০




 আমার এই লেখাটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 

No comments: