Sunday, February 3, 2019

চমকে ভরা ধনতেরাস Dhonteras >

চমকে ভরা ধনতেরাস



আজ গড়িয়াহাটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, অনেক্ষনই বাসের দেখা নেই। অপেক্ষা করতে করতে সামনে কতগুলো সোনার দোকানের বিজ্ঞাপন ছিল তাই দেখছিলাম । কোথাও লেখা গহনার মজুরির ওপর শতকরা এত ছাড়, কোথাও লাকি ড্র, আবার কোথাও দেখলাম গহনা কিনলেই নিশ্চিত উপহারের কথা লেখা আছে।  এগুলো দেখতে দেখতে একটা বিজ্ঞাপনের শিরোনামে চোখ আটকে গেলো, সেখানে লেখা আছে  "চমকে ভরা ধনতেরাস"  সত্যি ধনতেরাস শব্দটা আমার কাছেও বেশ চমকের বা  কৌতূহলের ব্যাপার।   এই শব্দটা বাংলায় কবে ও কিভাবে ঢুকে পড়েছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই ভাবতে লাগলাম।  আমার স্কুল,-কলেজ জীবনে ফিরে গেলাম, মনে করার চেষ্টা করলাম, শব্দটা ওই সময়ে শুনেছিলাম কিনা। অনেক চেষ্টা করেও শুনেছিলাম বলে মনে করতে ঠিক পারলাম না। যাই হোক, বাস এসে যাওয়ায় বাসে উঠে পড়লাম। বাড়ী ফিরে কম্পুটার পন্ডিতের  স্মরণাপন্ন হলাম।


কম্পিউটার পন্ডিত জানালো যে ধনতেরাস বা ধন ত্রয়োদশী হলো হিন্দুদের একটা জনপ্রিয় উৎসব। "ধন" শব্দের অর্থ হল সম্পত্তি আর ত্রয়োদশী হল কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী অর্থাৎ বাংলার  কার্তিক মাসের ১৩তম দিন। শাস্ত্র মতে ধনতেরাসে সাধারণত লক্ষ্মী ও কুবেরের পুজো করা হয়। বর্তমানে সারা ভারত জুড়ে হিন্দুরা এই উৎসব  প্রতিবছর পালন করে থাকে। উত্তর ভারতের হিন্দুরা বহুদিন থেকেই বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে এই উৎসব পালন করে আসছে।  দীপাবলি ও ধনতেরাস পর পর দুদিন পালিত হয়।  দীপাবলি হল আলোর উৎসব আর ধনতেরাস হল সমৃদ্ধির উৎসব।  ব্যবসায়ীদের কাছেও এই ধনতেরাসের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তারা তাদের ব্যবসাস্থলে এই পুজো করে থাকে।  তাদের কেউ কেউ আবার তাদের বাড়িতেও যথাযথভাবে এই পুজো করে। 

ধনতেরাস নিয়ে লোকমুখে নানা গল্প শোনা যায়।  একটি গল্পের কথা বলি , রাজা হিমার ষোলো বছরের পুত্রের জন্মপঞ্জিতে বলা ছিল তার বিয়ের পর ঠিক চতুর্থ দিনে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। বিয়ের পর ওই নির্দিষ্ট দিনে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রাজকুমারকে ঘুমোতে দেননি এবং তিনিও ঘুমোননি।  তার সমস্ত গহনা ও প্রচুর সোনা-রুপার মুদ্রা তার ঘরের প্রবেশ দ্বারে স্তূপাকৃত করে রেখে দেন।  ঘরের ও আশপাশে প্রচুর আলো সারারাত জ্বেলে রেখে দেন।  তিনি সারারাত তার স্বামীকে নানারকম গল্প ও গান শোনাতে থাকেন, যাতে তার স্বামী ঘুমিয়ে না পড়েন। সেদিন রাতে সাপের ছদ্দবেশে যমরাজ যথাসময়ে ঘরের প্রবেশদ্বারে এসে উপস্থিত হলেন, কিন্তু গহনা ও মুদ্রায় পড়া আলোর প্রতিফলনে যমরাজের চোখ ধাঁধিয়ে গেল।  তিনি দিকভ্রান্ত হয়ে যান , রাজপুত্রের ঘরের প্রবেশদ্বার খুঁজে পেলেন না।  রাজপুত্রের ঘরে তার আর প্রবেশ করা হলো না।  যমরাজ নিঃশব্দে ফিরে গেলেন। স্ত্রীর বুদ্ধির ফলে রাজপুত্রের জীবন বেঁচে গেল।  সেই দিনটা ছিল কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী।  তারপর থেকেই এই কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিনটি ধনতেরাস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।   

ধনতেরাসের দিন সোনা, রুপার গহনা কেনা সংসারের পক্ষে খুব শুভ বলে ধরা হয়।  এই সময় সোনা বা রুপা ঘরে আনা মানে সংসারে সমৃদ্ধির সূচনা হওয়া। গহনার দোকানগুলোও এই সময় কেনাকাটার ওপর বেশ আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে থাকে। দোকানগুলোও নানারকম আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় ক্রেতা আকর্ষণের জন্য।  গহনার দোকানগুলোতেও ভালো ক্রেতা সমাগমও  হতে দেখা যায়।  মেয়েদের যেহেতু গহনার প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ থাকে, তাই তারা সাধারণরত এই সুযোগটা হাতছাড়া করে না।  তাদের সাধ্যের মধ্য়ে সামঞ্জস্য বজায় দেখে কিছু গহনা কিনে থাকে, তা সে সোনার হোক বা রুপার হোক।  যাদের সোনা বা রুপার গহনা কেনার সামর্থ থাকে না তারা কোন বাসন কিনে মনকে শান্তনা দিয়ে থাকে।  লোকে বলে থাকে এই দিন সংসারের প্রয়োজনে কোনো বাসন কেনাও  সংসারের পক্ষে মঙ্গলের হয়।  এই কারণে এই দিনটিতে বাসনের দোকানেও ভালো বিক্রি হয়ে থাকে।  

ধনতেরাস উৎসবটি বাংলায় আগে কখনো পালন করতে দেখিনি।  সম্প্রতি অবাঙালি হিন্দুদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঙালি হিন্দুরাও  এই উৎসবে মেতে উঠছে।  উৎসবটিও ক্রমশ বাংলায় জনপ্রিয় হচ্ছে। ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হল কলকাতা।  কলকাতায় উৎসব বা  অনুষ্ঠানের অন্ত নেই। নগরের নানা প্রান্তে নানা সংস্থা বিভিন্ন সময় নানারকম উৎসবের আয়োজন করে থাকে। আজকাল ধোনতেরাসও একটা উৎসবে পরিগণিত হয়েছে। সময়ের সাথে বাঙালিরাও নিজেদের বদলে ফেলছে। বাঙালির তেরো পার্বনের সাথে ধনতেরাসও একটা পার্বন হিসেবে বর্তমানে যোগ হয়েছে।  




তারিখ : ২০-০১-২০১৯

ছবি : সংগৃহীত লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী



যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০

 আমার এই লেখাটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 





No comments: