কলকাতার তাজমহল
কলকাতার তাজমহল খ্যাত এই স্মৃতিসৌধটির নাম ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’। ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’ মহারানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত হয়েছিল। এটি কলকাতার অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্মৃতিসৌধটিকে কলকাতার একটি ল্যান্ডমার্ক বলা চলে। এটি দেশি-বিদেশী পর্যটকদের সবসময় সমানভাবে আকর্ষণ করে চলেছে। কলকাতা ময়দানের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে সৌধটি অবস্থিত। পুরো সৌধটি একটি সুন্দর উদ্যানে পরিবেষ্টিত রয়েছে। উদ্যানটির মধ্যে দুটি জলাশয় রয়েছে। জলাশয়ে যখন সৌধটির প্রতিচ্ছবি পড়ে তখন এক মোহময়ী রূপ তৈরী হয়।
১৯১১ সাল পর্যন্ত ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল কলকাতা। মহারানী ভিক্টোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানী ছিলেন। তিনি ১৮১৯ সালের ২৪শে মে লন্ডনের কেনসিন্টন রাজপ্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ছিল আলেকজান্দ্রিয়া ভিক্টোরিয়া, তবে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন মহারানী ভিক্টোরিয়া নামে। ১৮৩৭ সালের জুন মাসে যখন ব্রিটেনের রাজা চর্তুর্থ উইলিয়ামের মৃত্যু হয়, তখন ২৮শে জুন ভিক্টোরিয়া ব্রিটেনের রাজ সিংহাসনে বসেন। ভারতে ১৮৫৭ সালে যখন সিপাহী বিদ্রোহ হয়, সেই সময় প্রচুর ব্রিটিশ সৈন্যের মৃত্যু হয়। এই কারণে ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। ১৮৭৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়েল টাইটেল আইন পাশ হয়। এই আইনের মাধ্যমেই রানী ভিক্টোরিয়া ভারতেরও সম্রাজ্ঞী হন।
১৯০১ সালে ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যু হয়। রানীর মৃত্যুর পর বিশ্বের অনেক জায়গাতেই তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ তৈরী করা হয়েছিল। সেই সময় ব্রিটিশ ভারতের ভাইসর ছিলেন লর্ড কার্জন। তিনি রাণীর স্মৃতি রক্ষার্থে কলকাতায় একটি স্মারক প্রাসাদ ও উদ্যান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। কার্জন সাহেব দেশবাসী ও দেশীয় রাজা ও জমিদারদের কাছে মহারানীর স্মৃতি রক্ষার জন্য একটা স্মৃতিসৌধ বানাবার ব্যাপারে তাদের মতামত জানতে চান। তারা সকলেই লর্ড কার্জনের পরিকল্পনায় সহমত প্রকাশ করেন।
১৯০৬ সালের ৪ঠা জানুয়ারী সৌধটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রিন্স অফ ওয়েলস (পঞ্চম জর্জ)। এই ভিত্তিপ্রস্তরটি বতর্মানেও অক্ষত আছে। ১৯২১ সালে এই প্রাসাদ ও উদ্যানটির উদ্বোধন করা হয়। স্মৃতি-প্রাসাদটির প্রধান নকশাকার ছিলেন তদকালীন রয়াল ইনস্টিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিক্টেটস-এর সভাপতি প্রখ্যাত ব্রিটিশ বাস্তুকার স্যার উইলিয়াম এমারসন। তিনি ব্রিটিশ ও মোগল স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে সৌধটির নকশা তৈরী করেন। এই সৌধের গঠনশৈলী অনেকটা আগ্রার তাজমহলের মতো, সেই কারণে অনেকেই এই সৌধটিকে কলকাতার তাজমহল বলে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালটি ইন্দো সারাসোনিক রীতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। এই সৌধটি তৈরী করতে সেই সময় প্রায় এক কোটি পাঁচ লক্ষ ভারতীয় টাকা লেগেছিল। এটির নির্মাণ কাজটি করেছিলেন কলকাতার মেসার্স মার্টিন এন্ড কোম্পানি। সৌধটি সম্পূর্ণ মাকরানা পাথরে নির্মিত এবং এই পাথর আনা হয়েছিল রাজস্থানের যোধপুর অঞ্চল থেকে। এই পাথর দিয়েই আগ্রার তাজমহলটিও তৈরী করা হয়েছিল।
৫৭ একর জায়গার উপর উদ্যান সমেত সম্পূর্ণ স্মৃতি সৌধটি প্রতিষ্ঠিত। সৌধের প্রাসাদটি মাটি থেকে ৮ ফুট উঁচু, ৩৩৮ বর্গফুট লম্বা ও ২২৮ বর্গফুট চওড়া। প্রাসাদটির চারদিকে চারটি টাওয়ার ও মাঝখানে একটা বিশাল গম্বুজ আছে। প্রাসাদটির ভিতরে যাওয়ার জন্য একটি সুন্দর শ্বেতপাথরের সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই কয়েকটি সুন্দর গ্যালারী ও জাদুঘর দেখা যায়। ভিতরে ঢোকার পর নীচে প্রথম যে হল ঘরটি দেখা যায় ওটাকে বলা হয় "কুইন্স হল"। এই প্রাসাদটির মধ্যে মোট ছয়টি গ্যালারী রয়েছে।
এস সি বেলসন, জন ফ্লেমিং,অবনিন্দনাথ ঠাকুর, যামিনী রায় , গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইত্যাদি প্রখ্যাত সব শিল্পীদের বেশ কিছু অঙ্কন চিত্র এখানে সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এছাড়া বেশ কিছু চিঠি, চুক্তিপত্র, বিভিন্ন আমলের মুদ্রা, বার্ন এন্ড শেফার্ডের তোলা কয়েকটি বিরল আলোকচিত্র, পাণ্ডুলিপি, ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজাদের সাথে ব্রিটিশদের যুদ্ধের কিছু সংগৃহিত অস্ত্র, পোশাক, ইত্যাদিও এখানে সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
কুইন্স হল গ্যালারী :-
এই কুইন্স হল গ্যালারীটি সৌধটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল বা গ্যালারী। প্রাসাদটির ঠিক মধ্যস্থলে হলটি অবস্থিত। হলটির ঠিক মাঝখানে স্যার টমাস ব্রোকার নির্মিত মহারানী ভিক্টোরিয়ার পূর্ণ মাপের সম্পূর্ণ পাথরের তৈরী একটা অতীব সুন্দর মূর্তি রয়েছে। প্রাসাদটির মধ্যস্থলে ১৮০ ফুট উচ্চতার যে গম্বুজটি রয়েছে ঠিক তার তলায় এই হলটির অবস্থান। হলটির উপর তলায় ফ্র্যাঙ্ক স্যালিসবারির ক্যানভাসে অঙ্কিত মহারানীর জীবনী রয়েছে। হলটির দ্বিতলে একটা খুবই সুন্দর গোলাকৃতি বারান্দা আছে । এই বারান্দা থেকে হলটির নিচের দৃশ্যটি দেখতে খুব সুন্দর লাগে।
রয়্যাল গ্যালারী :-
এই গ্যালারীতে মহারানী ভিক্টোরিয়ার জীবনের বেশকিছু স্মরণীয় মুহূর্তের তৈলচিত্র এবং তাঁর ব্যৱহৃত টেবিল ও চেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রিন্স অফ ওয়েলসের ১৮৭৬ সালে জয়পুর আগমন দৃশ্যের একটা বিশাল তৈলচিত্র রয়েছে। এই তৈলচিত্রটি অঙ্কন করেছিলেন বিখ্যাত রাশিয়ান শিল্পী ভারেস্ট চ্যাগিন্স। এই তৈলচিত্রটি ভারতের সর্ববৃহৎ তৈলচিত্র হিসেবে পরিগনিত। পঞ্চম জর্জ ও প্রিন্স অফ ওয়েলসের তৈলচিত্রও এখানে রয়েছে।
এন্ট্রান্স হল গ্যালারী :-
এই হলটিতে বা গ্যালারীটিতে সৌধটির নির্মাণকার্য শুরুর সময় থেকে শেষ পর্যন্ত নির্মাণের প্রত্যেকটা ধাপের বেশ কিছু আলোকচিত্র রয়েছে। এছাড়া উদ্বোধনের দিন যেসব দর্শক সৌধটিকে দেখতে এসেছিলেন তাদের সাক্ষরসমেত মন্তব্যও এখানে সংরক্ষিত করে রাখা আছে।
পোর্ট্রেট গ্যালারী :-
এই গ্যালারীটিতে বেশ কিছু ভারতীয় ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের ছবি রাখা আছে।
দরবার হল গ্যালারী :-
এই দরবার হলটি তৈরী করা হয়েছিল ভারত ও ব্রিটেনের সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য। এখানে প্রায় ১৩০ টার মত আঠারো ও উনিশ শতকের বিরল তৈলচিত্র সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
ক্যালকাটা গ্যালারী :-
ক্যালকাটা গ্যালারীটি খুবই সুন্দর। ১৯৭০ সালে তদকালীন ভারতের শিক্ষা মন্ত্রী প্রফেসর নুরুল হাসানের ইচ্ছানুসারে এই ক্যালকাটা গ্যালারীটি তৈরী করা হয়।.জব চার্ণকের আমল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত (যতদিন পর্যন্ত কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল) কলকাতাকে দেখানোর জন্যই এই গ্যালারিটিকে তৈরী করা হয়।কলকাতার ঔপনিবেশিক অতীতের একটি মানানসই সম্মান জ্ঞাপন করে গ্যালারীটি তৈরী করা হয়েছিল। ক্যালকাটা গ্যালারীটিকে কিভাবে আরো সুন্দর করা যায়, সেই কারণে ১৯৮৮ সালের নভেম্বর মাসে তদকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল অধ্যাপক নুরুল হাসান একটা আলোচনা চক্রের ব্যবস্থা করেন। সেই আলোচনা চক্রে উপস্থিত সকলেই অধ্যাপক হাসানের সাথে একমত হন। এই সভায় একটা কমিটি গঠন করা হয় গ্যালারিটির উন্নয়নের জন্য। কমিটির প্রধান হিসেবে বিখ্যাত ঐতিহাসিকদ্বয় শ্রী অনীশ দাসগুপ্ত ও শ্রী বরুন দেকে নিযুক্ত করা হয়। তাঁদের নেতৃত্বে শ্রী বিকাশ সদয়ালকার, শ্রী ত্রিদিবেশ স্যানাল ও শ্রী সিদ্ধার্থ ঘোষকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। গ্যালারীটির উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে রাজী হন বিখ্যাত শিল্পপতি শ্রী বি এম খৈতান।
৫৭ একর জায়গার উপর উদ্যান সমেত সম্পূর্ণ স্মৃতি সৌধটি প্রতিষ্ঠিত। সৌধের প্রাসাদটি মাটি থেকে ৮ ফুট উঁচু, ৩৩৮ বর্গফুট লম্বা ও ২২৮ বর্গফুট চওড়া। প্রাসাদটির চারদিকে চারটি টাওয়ার ও মাঝখানে একটা বিশাল গম্বুজ আছে। প্রাসাদটির ভিতরে যাওয়ার জন্য একটি সুন্দর শ্বেতপাথরের সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই কয়েকটি সুন্দর গ্যালারী ও জাদুঘর দেখা যায়। ভিতরে ঢোকার পর নীচে প্রথম যে হল ঘরটি দেখা যায় ওটাকে বলা হয় "কুইন্স হল"। এই প্রাসাদটির মধ্যে মোট ছয়টি গ্যালারী রয়েছে।
এস সি বেলসন, জন ফ্লেমিং,অবনিন্দনাথ ঠাকুর, যামিনী রায় , গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইত্যাদি প্রখ্যাত সব শিল্পীদের বেশ কিছু অঙ্কন চিত্র এখানে সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এছাড়া বেশ কিছু চিঠি, চুক্তিপত্র, বিভিন্ন আমলের মুদ্রা, বার্ন এন্ড শেফার্ডের তোলা কয়েকটি বিরল আলোকচিত্র, পাণ্ডুলিপি, ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজাদের সাথে ব্রিটিশদের যুদ্ধের কিছু সংগৃহিত অস্ত্র, পোশাক, ইত্যাদিও এখানে সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
কুইন্স হল গ্যালারী :-
এই কুইন্স হল গ্যালারীটি সৌধটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল বা গ্যালারী। প্রাসাদটির ঠিক মধ্যস্থলে হলটি অবস্থিত। হলটির ঠিক মাঝখানে স্যার টমাস ব্রোকার নির্মিত মহারানী ভিক্টোরিয়ার পূর্ণ মাপের সম্পূর্ণ পাথরের তৈরী একটা অতীব সুন্দর মূর্তি রয়েছে। প্রাসাদটির মধ্যস্থলে ১৮০ ফুট উচ্চতার যে গম্বুজটি রয়েছে ঠিক তার তলায় এই হলটির অবস্থান। হলটির উপর তলায় ফ্র্যাঙ্ক স্যালিসবারির ক্যানভাসে অঙ্কিত মহারানীর জীবনী রয়েছে। হলটির দ্বিতলে একটা খুবই সুন্দর গোলাকৃতি বারান্দা আছে । এই বারান্দা থেকে হলটির নিচের দৃশ্যটি দেখতে খুব সুন্দর লাগে।
রয়্যাল গ্যালারী :-
এই গ্যালারীতে মহারানী ভিক্টোরিয়ার জীবনের বেশকিছু স্মরণীয় মুহূর্তের তৈলচিত্র এবং তাঁর ব্যৱহৃত টেবিল ও চেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রিন্স অফ ওয়েলসের ১৮৭৬ সালে জয়পুর আগমন দৃশ্যের একটা বিশাল তৈলচিত্র রয়েছে। এই তৈলচিত্রটি অঙ্কন করেছিলেন বিখ্যাত রাশিয়ান শিল্পী ভারেস্ট চ্যাগিন্স। এই তৈলচিত্রটি ভারতের সর্ববৃহৎ তৈলচিত্র হিসেবে পরিগনিত। পঞ্চম জর্জ ও প্রিন্স অফ ওয়েলসের তৈলচিত্রও এখানে রয়েছে।
এন্ট্রান্স হল গ্যালারী :-
এই হলটিতে বা গ্যালারীটিতে সৌধটির নির্মাণকার্য শুরুর সময় থেকে শেষ পর্যন্ত নির্মাণের প্রত্যেকটা ধাপের বেশ কিছু আলোকচিত্র রয়েছে। এছাড়া উদ্বোধনের দিন যেসব দর্শক সৌধটিকে দেখতে এসেছিলেন তাদের সাক্ষরসমেত মন্তব্যও এখানে সংরক্ষিত করে রাখা আছে।
পোর্ট্রেট গ্যালারী :-
এই গ্যালারীটিতে বেশ কিছু ভারতীয় ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের ছবি রাখা আছে।
দরবার হল গ্যালারী :-
এই দরবার হলটি তৈরী করা হয়েছিল ভারত ও ব্রিটেনের সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য। এখানে প্রায় ১৩০ টার মত আঠারো ও উনিশ শতকের বিরল তৈলচিত্র সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
ক্যালকাটা গ্যালারী :-
ক্যালকাটা গ্যালারীটি খুবই সুন্দর। ১৯৭০ সালে তদকালীন ভারতের শিক্ষা মন্ত্রী প্রফেসর নুরুল হাসানের ইচ্ছানুসারে এই ক্যালকাটা গ্যালারীটি তৈরী করা হয়।.জব চার্ণকের আমল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত (যতদিন পর্যন্ত কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল) কলকাতাকে দেখানোর জন্যই এই গ্যালারিটিকে তৈরী করা হয়।কলকাতার ঔপনিবেশিক অতীতের একটি মানানসই সম্মান জ্ঞাপন করে গ্যালারীটি তৈরী করা হয়েছিল। ক্যালকাটা গ্যালারীটিকে কিভাবে আরো সুন্দর করা যায়, সেই কারণে ১৯৮৮ সালের নভেম্বর মাসে তদকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল অধ্যাপক নুরুল হাসান একটা আলোচনা চক্রের ব্যবস্থা করেন। সেই আলোচনা চক্রে উপস্থিত সকলেই অধ্যাপক হাসানের সাথে একমত হন। এই সভায় একটা কমিটি গঠন করা হয় গ্যালারিটির উন্নয়নের জন্য। কমিটির প্রধান হিসেবে বিখ্যাত ঐতিহাসিকদ্বয় শ্রী অনীশ দাসগুপ্ত ও শ্রী বরুন দেকে নিযুক্ত করা হয়। তাঁদের নেতৃত্বে শ্রী বিকাশ সদয়ালকার, শ্রী ত্রিদিবেশ স্যানাল ও শ্রী সিদ্ধার্থ ঘোষকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। গ্যালারীটির উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে রাজী হন বিখ্যাত শিল্পপতি শ্রী বি এম খৈতান।
ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের সবচাইতে দৃষ্টিনন্দন অংশ হল এই স্থাপত্যের উপরের অংশের ঠিক মধ্যভাগে অবস্থিত ১৮৪ ফুট উচ্চতার বিশাল ডোমটি বা গম্বুজটি। এই গম্বুজটির ঠিক নীচের ঘরটিকেই বলা হয় "কুইন্স হল" আর এই গম্বুজটির মাথার উপরেই মধ্যস্থলে বসানো রয়েছে সেই বিখ্যাত ব্রোঞ্জের তৈরী পরীটি (Figure of Victory)। ষোলো ফুট উচ্চতার উপর তিন টন ওজনের বিউগল হাতে ডানা মেলা ব্রোঞ্জের সেই বিশ্ব বিখ্যাত পরীটি রয়েছে।বহুদূর থেকে দেখলে মনে হয় পরীটি যেন আকাশের দিকে মুখ করে মেঘেদের সাথে গল্পে ব্যস্ত রয়েছে। এই নারী মূর্তি বা পরীটি আগে ঘুরতো বর্তমানে অবশ্য আর ঘোরে না।
প্রাসাদটি ছাড়াও বাকি জায়গা নিয়ে একটি খুব সুন্দর বাগান ও কয়েকটি জলাশয় রয়েছে। জলাশয়গুলিতে পদ্ম ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। জলাশয়গুলোতে ফোয়ারার ব্যবস্থাও আছে।উদ্যানটি সম্পূর্ণ সবুজে মোড়া খুবই মনোরম।জলাশয়গুলির ধারে বসার জন্য অনেকগুলো চেয়ার পাতা রয়েছে। এই চেয়ারগুলোতে বসে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগে।স্মৃতিসৌধ্যের এই উদ্যানটি ডেভিড প্র্রেন ও রেডডেলের পরিকল্পনায় তৈরী করা হয়েছিল। উদ্যানটি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ২১ জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় প্রচুর পুরুষ ও মহিলা এখানে হাঁটতে আসে। সৌধটির উত্তর দিকের দ্বারের কাছে সিংহাসনে উপবিষ্ট রানীর যে ব্রোঞ্জ মূর্তিটি দেখা যায় সেটি স্যার জর্জ ফ্লামটন সাহেব তৈরী করেছিলেন। এছাড়া সপ্তম এডওয়ার্ড ও লর্ড বেন্টিঙ্কের মূর্তি রয়েছে। প্রাসাদটির বাইরের দিকের গাত্রে বেশ কয়েকটা পাথরের মূর্তি খোদাই করা আছে।
বিশেষ বিশেষ দিনে এখানে লেজার শো দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই লেজারের আলোয় প্রাচীন কলকাতার নানারকম ছবি ও কলকাতার বিবর্তনের ইতিহাসকে দেখানো হয়। শোয়ের সাথে ধারাবিবরণীও দেওয়া হয়। এই লেজার শোটি খুবই আকর্ষণীয়।
এই স্মৃতি সৌধটি কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনে একটি স্বশাসিত সংস্থা। সৌধটির সম্পূর্ণ ব্যয়ভার কেন্দ্রীয় সরকার বহন করে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সংস্থাটির পরিচালন পর্ষদের সভাপতি। বিভিন্ন সরকারি বিভাগের প্রতিনিধি, কলকাতার মেয়র, ও কিছু ইতিহাসবিদ এই সৌধটির পরিচালন পর্ষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন ।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল শুধু কলকাতা নয় সমগ্র বিশ্বের গর্ব। কলকাতায় ঘুরতে গেলে অবশ্যই কিছুটা সময় বের করে হাজির হতে হবে মহারানীর এই স্মৃতিস্তম্ভটি দেখতে। শুধু ইতিহাস নয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আক্ষরিক অর্থেই সময়ের অনুষঙ্গে ইতিহাস এবং দর্শনের সঙ্গে মিল ঘটেছে শিল্প এবং স্থাপত্যের। তাই এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গোটা বিশ্বের ভ্রমণ মানচিত্রে বিশেষ একটা জায়গা করে নিয়েছে। কলকাতা ঘুরতে এসে যদি কেউ ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঘেরা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল না দেখে ফিরে যায়,তা হলে তার জীবনে একটা বিরাট আফসোস থেকে যাবে।
ভারতীয় দর্শকদের জন্য ৩০ টাকা আর সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা আর অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা প্রবেশ মূল্য লাগে।
তারিখ : ২৩-০১-২০১৯
ছবি ও লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিগুলো যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
1 comment:
Wonderful post, Nice Information.
Post a Comment