স্মরণে মৃণাল সেন
তারিখ : ১০-০২-২০১৯
ছবি : সংগৃহিত
লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া
ত্রয়ী শব্দটা বাংলার সংস্কৃতি জগতে বার বার আলোচিত হয় । সাহিত্যের ত্রয়ী হলেন তিন বন্দ্যোপাধ্যায় - বিভূতিভূষণ, মানিক, তারাশঙ্কর। তেমনি নাট্য জগতে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত, আর অজিতেশ বন্দ্যেপাধ্যায়। চলচ্চিত্র জগতের হলেন তিন দিকপাল পরিচালক সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক আর মৃণাল সেন। এই তিন জনের হাত ধরেই ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্র বিশ্ব দরবারে বার বার উজ্জ্বল হয়েছে । বিশ্ব চলচ্চিত্রের আসরে বরাবরই তাঁদের গৌরবময় অবস্থান ছিল। তাঁরা মোটামুটি একই সময় চলচ্চিত্র শিল্পে পা রাখেন। তাঁরা আজ সবাই চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাঁদিয়ে চলে গেছেন । ৬ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৬ সালে ঋত্বিক ঘটক, ২৩শে এপ্রিল, ১৯৯২ সালে সত্যজিৎ রায় আর আজ অর্থাৎ ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১৮ তে শেষ নক্ষত্রের পতন হলো। তিনি হলেন মৃণাল সেন । তাঁকে আর নীল আকাশের নীচে ধরে রাখা গেলো না । বছরের শেষে এসে মৃণাল সেনের মতো ব্যাক্তিত্বর চলে যাওয়া সবাইকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। শেষ হয়ে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের একটি স্বর্ণযুগের।
যখন সারা দেশে স্বাধীনতার উত্তাল আন্দোলন চলছে, তখন অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর নামে এক ছোট শহরে মৃণাল সেন জন্মগ্রহণ করেন । সালটা ছিল ১৯২৩ এর ১৪ই মে। তাঁর পিতা উকিল হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য আদালতে যুদ্ধ চালাতেন। সেইসূত্রে ছোট্ট বয়স থেকেই মৃণাল সেন সুভাষচন্দ্র বসু, বিপিন পাল থেকে আরো কতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে দেখেছেন । তিনি তাঁর স্কুলের শিক্ষা ফরিদপুরে শেষ করে ,কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পড়তে আসেন। মেসে থাকাকালীন তিনি পদার্থবিদ্যার সাথে কবিতা ও রাজনীতির চর্চ্চা শুরু করেন। আস্তে আস্তে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্কৃতি বিভাগের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।
তিনি তাঁর পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে দু-চারটা টিউশনি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখির মাধ্যমে সামান্য আয় করতে লাগলেন। ১৯৫০ সালে মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভের চাকরি নিয়ে কিছু দিনের জন্য কানপুরে চলে গেলেন। কিন্তু এই কাজে তাঁর মনের শান্তি আসলো না। তিনি চাকরি ছেড়ে আবার কলকাতায় ফিরে এলেন। বেকার অবস্থায় ঘোরা-ঘুরি করতে করতে একদিন এক চায়ের আড্ডায় চলচ্চিত্রের শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্তের সাথে আলাপ হলো। তাঁর হাত ধরে তিনি চলচ্চিত্রের জগতে পা রাখলেন। চিত্রনাট্য লেখা, সহযোগী পরিচালনার কাজ করে নতুনভাবে জীবনটা চলে যাচ্ছিলো ও চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হচ্ছিলো।
এইভাবে চলতে চলতে ১৯৫৫ সালে তিনি "রাত ভোর" নামে একটা ছবি তৈরী করে ফেললেন । কিন্তু ছবিটা সেভাবে দর্শকরা নিলো না । তিনি এই ছবিটা সম্বন্ধে পরবর্তীকালে বলেছিলেন " সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি, পৃথিবী কাঁপানো ছবি, আর আমার প্রথম ছবি আমাকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে"। তারপর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় "নীল আকাশের নিচে" তৈরী করলেন। এই ছবিটার থেকে তিনি আর্থিক দিক দিয়ে শক্ত জমিতে পা রাখতে পেরেছিলেন, কিছুটা পরিচিতিও আনতে পেরেছিলেন। তারপর "বাইশে শ্রাবন" তাঁকে কিছুটা আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। ১৯৬৯ সালে তৈরী করেন "ভুবন সোম"। এই ভুবন সোম সিনেমাতেই অমিতাভ বচ্চন নেপথ্যে তাঁর জীবনের প্রথম কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
তারপর থেকে মৃণাল সেন ইন্টারভিউ, ক্যালকাটা ৭১, পদাতিক, একদিন প্রতিদিন, মৃগয়া, খারিজ ইত্যাদি চলচ্চিত্র তৈরি করেন । এছাড়া তেলেগু ভাষায় " ওকা উড়ি কথা", ওড়িয়ায় "মাটির মনীষা", "জোড়া দিঘির চৌধুরী পরিবার" ও হিন্দিতেও কয়েকটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন। তিনি মোট ২৭টা পূর্ণ দৈঘ্যের কাহিনিচিত্র, ১৬টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ও ৪টি তথ্যচিত্র তৈরি করেন।
সিনেমায় তার অসামান্য অবদানের জন্য বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল -এ সিলভার পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৭৫-এ কোরাস-এর জন্য আর ১৯৭৯ পরশুরামের জন্য। কার্লোভী ভ্যারি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল -এ স্পেশাল জুড়ি পুরস্কার পান ১৯৭৭ সালে ওকা উড়ি কথা ছবির জন্য। বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এ ইন্টারফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পান ১৯৭৯- এ পরশুরাম আর ১৯৮১-তে অকালের সন্ধানের জন্য। ১৯৮১ সালেই তিনি অকালের সন্ধানের জন্য জুড়ি পুরস্কারও পান। কান ফিল্ম ফেস্টিভালে খারিজ সিনেমার জন্য ১৯৮৩ সালে জুরি পুরস্কার পান। ভেনিস ফিল্ম ওসিআইসি অ্যাওয়ার্ডস, অনারেবল মেনশন ১৯৮৯ সালে পায় তার একদিন অচনাক সিনেমাটি।
১৯৮১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রদান করে। ২০০৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার "দাদা সাহেব ফালকে " পান। ১৯৯৮ - ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্বারা নির্বাচিত সংসদের সাম্মানিক সদস্য পদ লাভ করেন। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে "অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ " সম্মানে ভূষিত করেন। ফরাসি সরকার তাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান "কমান্ডার অফ টি আর্টস এন্ড লেটার্স" এ তাকে ভূষিত করেন।
নিয়ম ভেঙে ছবি বানানোতেই মৃনাল সেন সবচেয়ে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। এভাবে চলচ্চিত্র বানাতে তিনি খুব আনন্দ পেতেন । বাংলা ছবির ধারাকে তিনি পাল্টে দিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের আধুনিক রূপরেখাও দিয়েছিলেন তিনি।
তারিখ : ১০-০২-২০১৯
ছবি : সংগৃহিত
লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিগুলো যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
3 comments:
Very nice
Prof. Prem raj Pushpakaran writes -- 2023 marks the birth centenary year of Mrinal Sen and let us celebrate the occasion!!!
https://worldarchitecture.org/profiles/gfhvm/prof-prem-raj-pushpakaran-profile-page.html
Prof. Prem raj Pushpakaran writes -- 2023 marks the birth centenary year of Mrinal Sen and let us celebrate the occasion!!!
https://worldarchitecture.org/profiles/gfhvm/prof-prem-raj-pushpakaran-profile-page.html
Post a Comment