Saturday, February 9, 2019

ফরাসির চোখে শারদোৎসব >

ফরাসির চোখে শারদোৎসব

ভারতের মতো ফ্রান্সও একটা সংস্কৃতি প্রধান দেশ। ভারতের সাথে ফ্রান্সের বন্ধুত্ব সুনিবিড়। ফরাসি ফ্যাশন সারা বিশ্বে সমাদৃত । প্যারিস নিয়ে কত কবির কত কবিতা রয়েছে, কত লেখকের কলমে উঠে এসেছে কত লেখা। আজ আমি ওই দেশের একজন মহিলা চিত্রগ্রাহকের কথা বলবো। যার শারদোৎসবের ছবি নিয়ে ভারতীয় জাদুঘরে এক আলোকচিত্রের প্রদর্শনী ২০১৮ সালের  নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটা তাঁর তৃতীয় প্রদর্শনী, আগে দিল্লিতে ভারতীয় নৃত্য ও গঙ্গা নদীকে নিয়ে দুটো প্রদর্শনী তিনি করেছেন।

মিরেই জোসেফিন গেজেনিক (Mireil Josephine Guezennec) একজন মহিলা চিত্রগ্রাহক। তিনি শুধু ছবি তোলেন না, পেশায় তিনি একজন দর্শনের অধ্যাপিকা । কিন্তু শখে তিনি ছবি তোলেন ও লেখালেখিও করেন। মিরেই ভারত ভ্রমণে এসে এখানকার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভারতীয় নাচের বিভিন্ন ধারা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি চেন্নাইয়ে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে শিক্ষালাভ করেন। ওখানকার গুরুদেব "হিমবিন্দু" নামে একটা হিন্দু নাম তাঁকে দেন । ওডিশার ওডিসি, কেরালার কথাকলি তিনি সেখানে গিয়ে বহু অনুষ্ঠান দেখেছেন এবং এই সম্বন্ধে শিল্পীদের সাথে আলোচনা করেছেন, আরো গভীর জ্ঞানের জন্য বিভিন্ন বইও পড়েছেন।

তিনি হিন্দু ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে আধ্যাত্বিক ও পৌরাণিক বইগুলো পড়ে ফেলেছেন। এই সম্বন্ধে গবেষণা করে ভারতীয় দেব-দেবী সম্বন্ধে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি মা দূর্গা. মা কালী ও অন্যান্য দেবতা ও তাদের শক্তি এবং বিভিন্ন শক্তিপীঠগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন। এই গবেষণার কাজের জন্য বর্তমানে তিনি  কলকাতায় আছেন। তিনি বাংলাদেশের পীঠগুলোও দেখে এসেছেন। 

তিনি ২০০৯ সালে মা গঙ্গার ওপর ও বেনারসের ওপর ফরাসি ভাষায় দুটি বই লেখেন । ২০১৩ সালে "ইন্ডি" নামে তাঁর আরো একটা বই প্রকাশিত হয়।

কলকাতার দুর্গা পুজো দেখে তিনি মোহিত হয়ে যান । প্রতি বছর এই সময়টা তিনি কলকাতায় থাকতে পছন্দ করেন। তিনি শুধু প্যান্ডেল পরিক্রমা করেন না। তিনি দীর্ঘদিন কুমোরটুলিতে গিয়ে মায়ের কাঠামো নির্মাণ, কাঠামোয় খড় বাঁধা, মাটির তাল থেকে কিভাবে মূর্তি তৈরী হচ্ছে তা পরখ করেছেন । এইসব ছবি সংগ্রহ করার জন্য তিনি বিভিন্ন কুমোরদের কাছে দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন। মায়ের চক্ষুদান তাঁকে  অবিভূত করে দিয়েছে। তিনি প্রচুর ঠাকুর ও মণ্ডপে ঘুরেছেন, তাতে যেমন বারোয়ারি পুজো আছে, তেমন বনেদি বাড়ির পুজোও রয়েছে। গঙ্গার ঘাটে গিয়ে নবপত্রিকার স্নান যেমন দেখেছেন, তেমন বনেদি বাড়ীতে গিয়ে কুমারী পুজোও দেখেছেন । মায়ের বোধন থেকে পুষ্পাঞ্জলি, সন্ধিপুজো থেকে সিঁদুরখেলা - শারোৎসবের প্রতিটা মুহূর্তকে লেন্স বন্দি করেছেন।


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনই তাঁর  জীবনের লক্ষ্য।  তাঁর  মতে সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতাই কলকাতার পুজোগুলোকে একটা অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে।  শুধু তাই নয় অসাধারণ একটা রূপও দিয়েছে।  দুর্গাপুজো ও ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে তিনি ফরাসিদের কাছে তুলে ধরছেন। তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতেও বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন।

আমরা আগে ফাদার দ্যতিয়েনকে পেয়েছিলাম, যার মাতৃভাষা ফরাসি কিন্তু তিনি বাংলাকে ভালোবেসে বাংলা ভাষা শেখেন ও বাংলায় অনেক বই লিখে গেছেন। আজ আমরা আর একজন ফরাসি গবেষককে পেলাম, যিনি ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতিকে ভালোবেসে ফেলেছেন এবং তা নতুনভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন













তারিখ : ০৯ - ০২ - ২০১৯

ছবি ও লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী



যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০


 আমার এই লেখাটি ও ছবিগুলো যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 

No comments: