পিকনিকের একান্ত ঠিকানা
ঘিঞ্জি শহর, যানজটের রাস্তা, আবর্জনায় মানুষের অবস্থা কাহিল, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। ছোট বড় হোর্ডিংয়ের দৃশ্যদূষণ, রাস্তার ধারের গাছগুলিও বিজ্ঞাপনে ঢাকা পরে যাচ্ছে, রাস্তার ধারের তারের জটলায়ও ভয়াবহ দৃশ্যদূষণ। শহরের দূষণ বিপদের সীমারেখা ক্রমেই অতিক্রম করে যাচ্ছে । দূষণ নিশ্বাস - প্রশ্বাসের সাথে আমাদের ফুসফুসে গিয়ে বাসা বাঁধছে , রক্তে গিয়ে মিশছে। ধোয়ার চাদর আমাদের শহরটাকে ঢেকে দিচ্ছে, আকাশ তার উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে। উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে। যখন দূষণের ঠেলায় শহরবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। যখন দূষণের ঠেলায় শহরবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। বিশুদ্ধ অক্সিজেন নেওয়ার জায়গার বড়ই অভাব। তখন আপনি একদিন পরিবারকে নিয়ে বেশ কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আসতেই পারেন কলকাতা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এই সুবিশাল উদ্যানে।
আপনি কি জানেন কলকাতা শহরের মধ্যেই ব্রেসব্রিজ অঞ্চলে এমন একটা জায়গা রয়েছে যেখানে আপনি বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারবেন মন-প্রাণ খুলে । ব্রেসব্রিজ অঞ্চল একটা শিল্পাঞ্চল । এই অঞ্চল দিয়ে সব সময়ই ছোট বড় ট্রাক-ট্রেলার যাতায়াত করে থাকে। রাস্তার ধরে বড় বড় হরেকরকমের কারখানা আছে, এইসব কারখানার সাথেই কিউ-১৬৭/১, সন্তোষপুর রোডে এই সুবিশাল উদ্যানটি অবস্থিত। তারাতলা মোড় থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে, ব্রেসব্রিজ স্টেশন থেকে পায়ে পায়ে হেঁটেও আপনি পৌঁছে যেতে পারেন এই উদ্যানে। ১০ই জুলাই, ২০০৫ সালে এই মনোরম উদ্দ্যানটির উদ্বোধন হয়। এইটা ঢোকার মুখে একটা বোর্ডে লেখা আছে উদ্বোধনের তারিখটা, কিন্তু এখনকার লোকেরা বলে এটা ৯০ দশকে তৈরী হয়েছিল।
"Mudiely Fishermens' Co-operative Society Ltd." নামে এক সংস্থা উদ্দ্যানটির দেখাশোনা করে । বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায়না ভিতরের এই সুবিশাল জায়গাটিকে। মাত্র ২৫/- টাকার বিনিময়ে একবার ভিতরে ঢুকলেই বুঝতে পারবেন এর বিশালতা।
২৩ শে জানুয়ারী , ২০১৯ -এ এই উদ্যানে বনভোজন করতে এসে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম। ভিতরে ঢোকার পর দেখলাম বাঁদিকে একটা কার্যালয় আছে। একটা সুন্দর রাস্তা সোজা ঢুকে গেছে, রাস্তাটির শেষটা দেখা যাচ্ছে না। রাস্তার একদিকে সুন্দর ফুলের বাগান আর একদিকে বিশাল জায়গা নিয়ে ফুলকপি ও অন্যান্য সবজির চাষ হচ্ছে। এই বাগানগুলো শেষ হওয়ার পর ডানদিকে বনভোজন করার জন্য বিশাল জায়গা রয়েছে। অনেকগুলো দল বনভোজনে ব্যস্ত রয়েছে, একজনের মুখে শুনলাম প্রায় ৫০ টা দল একসাথে এখানে বনভোজন করতে পারে । এই জায়গার বড় বড় গাছগুলিতে পিকনিক স্পটের নাম্বার লেখা আছে, আমাদের স্পট নম্বর ছিল ১৯। রাস্তার ডানদিকে একটা সুন্দর নার্সারি রয়েছে, এই নার্সারি থেকে গাছ বিক্রি করা হচ্ছে । নার্সারির পাশ থেকেই কয়েকটা খাঁচা রয়েছে, খাঁচাগুলোর কয়েকটা ফাঁকা আর কয়েকটাতে ময়ূরী, খরগোশ আর গিনিপিগ রয়েছে । যাওয়ার আগে শুনেছিলাম এখানে একটা মৃগ উদ্যানও আছে তাতে বেশ কিছু হরিণ আছে । যাওয়ার পর অনেক খোঁজা -খুঁজি করে একটাও হরিণ দেখতে পেলাম না । এখানকার কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম আগে হরিণ ছিল , তবে বর্তমানে কোনো হরিণ আর নেই। আরো জানতে পারলাম আগে প্রতি শীতে এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসত , এখানকার সব জলাশয়গুলো ভর্তি থাকতো পাখিতে। রোজই বহু আলোকচিত্রীরও আনাগোনা ছিল সেই সময় । বর্তমানে পাখিরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারাও আর এ পথ মারায় না । এখানে প্রায়ই বাংলা সিনেমার বা বাংলা সিরিয়ালের শুটিং হয় ।
আর একটু এগোতেই সামনে একটা খাবারের দোকান আছে । দোকানটির বাঁদিকে বাচ্ছাদের খেলার একটা সুন্দর পার্ক করা রয়েছে। পার্কে বাচ্ছাদের খেলার নানারকম সরঞ্জাম আছে। পার্কের পিছনে একটা বড় শৌচালয় আছে। ডানদিকে একটা সুন্দর ফোয়ারা আছে। ফোয়ারার পিছনে একটা বড় জলাশয় আছে যেখানে বোটিং করার সুব্যবস্থা রয়েছে। এখানে বেশ বড় মাপের তিন-চারটি জলাশয় আছে। প্রত্যেকটাতে পশ্চিমঙ্গ সরকারের মৎস্য দপ্তর মাছ চাষ করে। বাচ্ছাদের পার্ক ছাড়াও পিকনিক স্পটগুলোতেও বেশ কয়েকটা দোলনা রয়েছে।
তারিখ : ২৬-০১-২০১৯
ছবি ও লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
তারিখ : ২৬-০১-২০১৯
ছবি ও লেখার স্বত্ব অধিকার : সুদীপ্ত মুখার্জী
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০
➧ আমার এই লেখাটি ও ছবিগুলো যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো পেতে ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।
No comments:
Post a Comment