Thursday, September 23, 2021

হাওড়ার বসু পরিবারের পূজা >P

হাওড়ার বসু পরিবারের পূজা 



- সুদীপ্ত মুখার্জী 





হাওড়া-কলকাতা যমজ শহর হিসেবে পরিচিত। কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় শহর। হাওড়া কলকাতার মত  বড় না হলেও অত্যন্ত জনবহুল শহর। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য  জায়গার মতো এখানেও  ধর্মীয় ও সংস্কৃতি চর্চা সুপ্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে।  ধর্মীয় ও  সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা, রথযাত্রা, দোলযাত্রা, পৌষপার্বণ  ইত্যাদি অনুষ্ঠানগুলো বেশ মহাসমারোহে পালিত হয়। হাওড়া ময়দানের  কাছেই শিবপুরে অবস্থিত 'রামকৃষ্ণপুর' বলে একটা খুবই প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু অঞ্চল রয়েছে।  এই অঞ্চলেই বসবাস করে পশ্চিমবঙ্গের একটা সুপরিচিত ও শিক্ষিত পরিবার। বসু পরিবার।  

এই পরিবারের কৃতি সন্তান হলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ নিমাই সাধন বসু।  এছাড়া বংশের সন্তান স্বপন সাধন ( টুটু ) বসুর নাম ও তাঁর সুযোগ্য পুত্র সৃঞ্জয় বসুর নাম  সকলের কাছে সুপরিচিত। পরিবারটি প্রথমে হাওড়ার আমতার কাছে  সিংটি গ্রামে বসবাস করতেন। পূর্বে সেখানেই  পরিবারের দুর্গাপূজাটি শুরু হয়েছিল।  সেখান থেকে হাওড়ার  রামকৃষ্ণপুর অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন  ঈশানচন্দ্র বসু। সালটা ১৮৪০।  ওই বছর তিনি এখানে তাঁদের পারিবারিক দুর্গাপূজাকে নিয়ে আসেন। সেই থেকে পূজাটি  এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে। পারিবারিক পূজাটি বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্মের হাতে রয়েছে। এখন  পরিবারের সদস্য শ্রী গৌতম মোহন বসু পূজাটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।  তিনি জানালেন তাঁদের পারিবারিক পূজাটি  আজও  সেই পুরাতন ঐতিহ্য ও পরম্পরা বজায় রেখে খুবই নিষ্ঠার সাথে করা হয়ে থাকে। এবছরও তাঁরা তাঁদের সেই পুরাতন পারিবারিক রীতি-নীতি বজায় রেখেই পূজা করবেন তবে অবশ্যই করোনার সরকারি বিধি নিষেধ তাঁরা মেনে চলবেন।   

পূজাটি প্রতি বছর বসু বাড়ির ঠাকুরদালানে অনুষ্ঠিত হয়। জন্মাষ্ঠমীর পরদিন নন্দোৎসবের দিন কাঠামো পূজা অনুষ্ঠিত হয়।  সেই দিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে দেবী মূর্তি গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। এখানকার  দেবী একচালা সাবেক  মূর্তিকে  ডাকের সাজে সজ্জিত করা হয়।  তবে সিংহের গাত্রবর্ণ কিন্তু রুপোলি হয়।  বাজারের কেনা চালচিত্র এখানে ব্যবহার করা হয়না। তার পরিবর্তে কোনো শিল্পীকে দিয়ে চালচিত্র আঁকিয়ে নেওয়া হয়। মায়ের হাতের সব অস্ত্রই সম্পূর্ণ রুপার নির্মিত। এখানকার  পূজাটিতে এককালে পশুবলি দেওয়ার নিয়ম ছিল। ১৯৪০ সালে মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা পূজায় পশুবলি বন্ধ করে দেন।  তার বদলে কুমড়ো ইত্যাদি বলি শুরু হয়। এনাদের পুজোয় নবমীর দিন খুব ঘটা করে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে শাক্ত মতে পূজা করা হয়। দেবীর ভোগে সাধারণত থাকে  নানারকম ফল, নারকেল নাড়ু, বহু রকম মিষ্টি  ইত্যাদি।  পূজার সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা নিয়ম করে ঠাকুরদালানে উপস্থিত হন। ঠাকুরদালানে  চলে তাঁদের আড্ডা ও হৈচৈ।

দশমীর দিন দেবীকে গঙ্গার নিকটবর্তী  ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। দেবী মূর্তি বিসর্জনের পর সেই কাঠামো তুলে আনা হয়।  যত্ন সহকারে সেটা পরের বছর প্রতিমা নির্মাণের জন্য তুলে রাখা হয়।  

ছবি : শ্রী গৌতম মোহন বসুর  সৌজন্যে প্রাপ্ত 

তারিখ : ২৩-০৯-২০২১

যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০





 আমার এই লেখাটি ও ছবিটি  যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন। 




1 comment:

Sujit said...

খুব ভালো লাগলো এই দুর্গা পুজোর পুরো ইতিহাস জানতে পেরে ভালো লাগলো। এই রকম আরো পুরনো সব পুজোর ইতিহাস জানার ইচ্ছে রইলো।
অসাধারণ লিখেছেন।