Wednesday, February 13, 2019

গুপ্তিপাড়া ভ্রমণ Guptipara >

  গুপ্ত গল্পের সন্ধানে গুপ্তিপাড়ায়


                                 "আমি সেই  ভোলানাথ নইরে,  আমি সেই  ভোলানাথ নই  
                                    আমি ময়রা ভোলা ভিয়াই খোলা বাগবাজারে রই "

সেদিন দুপুরবেলায় বাড়িতে বসে ইউটিউবে পুরোনো বাংলা সিনেমা দেখার জন্য বসলাম। ওল্ড  বেঙ্গলী মুভিস লিখতেই "এন্টনি ফিরিঙ্গি" সিনেমাটা প্রথমেই এলো।  যদিও বহুবার দেখা সিনেমাটাই আবার দেখতে বসলাম। সিনেমাটির কবির লড়াইয়ের দৃশ্যে  উত্তমকুমারের সাথে ভোলা ময়রার লড়াই দেখছিলাম। এই লড়াই দেখতে দেখতে ভোলা ময়রার সম্বন্ধে একটু জানতে আগ্রহ হল। তাই  সিনেমাটা শেষ হওয়ার পর উইকিপিডিয়ায় একটু  উঁকি মারলাম।  ওপরের উক্তিটি থেকে আমার ধারণা ছিল ভোলা ময়রার জন্ম-কর্ম সবই কলকাতার বাগবাজারেই। কিন্তু আমার ধারণাটা ভুল প্রমাণিত হলো উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে।  উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে ওনার জন্ম হুগলী  জেলার গুপ্তিপাড়ায় আর কর্ম কলকাতার  বাগবাজারে। যাইহোক, গুপ্তিপাড়ার গল্প বহুবার বহুজনের কাছ থেকে শুনেছিলাম আর ফেসবুকে তো ছবির ছড়াছড়ি।  আগে কখনো গুপ্তিপাড়ায় আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি।  তাই পরের দিন এক বন্ধুকে নিয়ে এই গুপ্ত গল্পের সন্ধানে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম। ৯টার ট্রেন ধরার জন্য যথাসময়ে হাওড়া স্টেশনে  পৌঁছে গেলাম।  টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে পড়লাম। যথাসময়ে ট্রেন ছেড়ে দিল।  ঘন্টা  দুয়েক বাদে আমরা  গুপ্তিপাড়ায় পৌঁছে গেলাম।  

স্টেশন থেকে বাইরে আসার পর দেখলাম কয়েকজন রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীর অপেক্ষায়। একজন যুবক রিক্সাওয়ালার কাছে গিয়ে গুপ্তিপাড়ার সব ঘোরাতে কত নেবে জানতে চাইলাম। সে আমাদের বললো সব দেখিয়ে দেবে  আর সাথে সেইসব জায়গার ইতিহাসও আমাদের জানাবে। যাওয়ার আগে এক বন্ধুর কাছ থেকে জেনেছিলাম রিক্সা ভাড়া মোটামুটি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা নেয়। কিন্তু  যুবকটি ৩০০ টাকা চাইলো। আমি তাকে বললাম ১৫০ টাকা ভাড়া তো, তুমি এতো বেশি  চাইছো কেন ? সে বলল হ্যা আপনি খানিকটা ঠিকই বলেছেন, তবে ওটা  ১৫০ টাকা নয় ২০০ টাকা আর আমি যে আপনাদের ইতিহাস জানাবো তাই ১০০ টাকা বেশি চাইলাম।  আপনারা ২০০ টাকায় শুধু মন্দিরগুলো দেখতে পারবেন কিন্তু  ইতিহাস জানতে পারবেন না।  শুধু দেখার সাথে যদি  ইতিহাসও জানা যায় তবে  মন্দ হয় না।  ইতিহাস জানাটাও জরুরি বলে আর কথা না বাড়িয়ে ওর কথায় রাজি হয়ে গেলাম।  তার নাম জানতে চাইলে সে  জানালো তার নাম গণেশ।
গুপ্তিপাড়ার গ্রাম্য রাস্তা 

যেতে যেতে গণেশ গুপ্তিপাড়ার ইতিহাস বলছিল। গুপ্তিপাড়া হলো হুগলি জেলার একটা প্রাচীন জনপদ। ১৭৭৯ সালের বেনেলের মানচিত্রে দেখানো আছে গুপ্তিপাড়ার পাশ দিয়ে বেহুলা নামে একটা নদী প্রবাহিত হয়ে গঙ্গায় গিয়ে মিশেছিল। এখানে প্রাচীন সংস্কৃত শিক্ষার টোল ছিল। টোলের পন্ডিতরা  বেশিরভাগ  এখানেই বসবাস করতেন।  এই সংক্রান্ত সব নথি  এখানকার সরকারি গ্রন্থাগারে এখনো  সংরক্ষিত আছে। গুপ্তিপাড়ার অলিতে গলিতে ইতিহাসের ছড়াছড়ি। শুধু ভোলা ময়রা নয়  বাংলার শেষ নবাব সিরাজদুল্লার প্রধান সেনাপতি ছিলেন মোহনলাল ও রাজা রামমোহনের সংগীত শিক্ষাগুরু কালী মির্জাও এখানে জন্মেছিলেন। আমরা এখন যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি এই রাস্তাতেই রথের সময় বিরাট মেলা বসে। গণেশ বললো বাবু কলকাতা যাওয়ার সময় একটু গুঁপো  সন্দেশ বাড়ির জন্য নিয়ে যাবেন। সে আমদের রথের সময় একবার আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালো।

 গুপো সন্দেশ গুপ্তিপাড়ার শুধু নয় পশ্চিমবঙ্গের এক  অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টি।  সম্পূর্ণ গরুর দুধ থেকেই এটাকে  তৈরী করা হয়।  পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ব্যান্ডেড মিষ্টিই  হলো এই গুপো সন্দেশটি। এই সন্দেশটির সৃষ্টিকর্তা বা জন্মসাল কারোর জানা নেই। সে আরো জানালো যে গুপ্তিপাড়াতেই প্রথম সন্দেশের জন্ম হয়। তবে এই সন্দেশটিকে অনেকে গুঁফো সন্দেশ বলে থাকে।  খুবই সুস্বাধু মিষ্টি, বাড়ির জন্য নিয়ে গেলে সবাই খুব খুশি হবে। এই অসাধারণ স্বাদের মিষ্টি আপনি কলকাতার কোথাও পাবেন না। আমার বন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি এতো সব শিখলে  কিভাবে? তুমি লেখা-পড়া করেছো? সে বললো বাবু আমি মাধ্যমিক পাশ করেছি। এখানকার সব ইতিহাস আমার এক মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে  জেনেছি।

প্রথমে সে আমাদের দেশ কালী মন্দিরে নিয়ে এলো।  দেখলাম গাছ-গাছালিতে ভরা একটা সুন্দর জায়গা। এখানেই একটা ছোট্ট সুন্দর একটা মন্দির রয়েছে।  মন্দিরটির সামনে আসার পর দেখলাম
দেশ কালী মাতার মন্দির 

একটা অন্ধকার ঘর।  কিন্তু ঘরটির মধ্যে কোনো বিগ্রহ নেই। গণেশ জানালো এখানে শুধু কালীপুজোর দিনটিতেই  মাটির মূর্তি এনে পুজো করা হয়। পুজোর পর শুক্লা  দ্বিতীয়ার দিন মূর্তিটির কেশ ও আরো দু-একটা অংশ কেটে বাকি মূর্তিটিকে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। কাটা অংশগুলোকে অন্ধকারে রেখে তান্ত্রিক মতে সারা বছর পুজো করা হয়।  কোনো মন্দিরে বিগ্রহকে নিয়ে এরকম হতে পারে সে সম্বন্ধে আগে আমার কোনো ধারণা ছিল না।
দেশ কালী মন্দিরটি দেখে সামান্য এগোতেই দেখলাম রাস্তাটি ডানদিকে ঘুরে গেছে। এই ঘোরার মুখেই বাঁদিকে  একটা ছোট মাঠে বেশ উঁচু টিনের একটা মন্দিরের মতো করা আছে।  কিন্তু মিন্দিরটিতে ঢোকার জন্য কোনো দরজা দেখা যাচ্ছে না।  বেশ কৌতূহল নিয়েই গণেশের কাছে জানতে চাইলাম এটা কি? ও জানালো এটাই গুপ্তিপাড়ার বিখ্যাত রথ।   রথটিকে সারা বছর এভাবেই রাখা হয়। সে আরো
দূরের টিনের ঘরটিতেই রথটি রাখা আছে  
জানালো রথের উৎসব গুপ্তিপাড়ার প্রধান উৎসব।  প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন বৃন্দাবনচন্দ্রের এই  রথ উৎসবটি। এখানকার  রথ উৎসবটিই  পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন রথ উৎসব।  রথের সময় প্রায় এক মাইল রাস্তার  দুধারে বেশ জমজমাট মেলা বসে।  দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে এখানকার রথ দেখতে ও রথের দড়ি টানতে। রথের দিন  প্রায় লাখ  খানেক লোকের সমাগম হয় গুপ্তিপাড়ায়।  উল্টো রথের দিন "ভান্ডার লুঠ"  উৎসব হয়। ঠাকুরকে ভোগ নিবেদন করার পর মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয় ভক্তদের জন্য। সেই সময় ভক্তরা ওই নিবেদিত ভোগ লুঠ করে।  এই "ভান্ডার লুঠ" উৎসবটি বেশ ধুমধামের সাথেই পালিত হয়। রথযাত্রা এখানকার প্রধান উৎসব হলেও রাস , দোল, জগদ্বাত্রীর পুজোও বেশ উৎসাহের সাথেই এখানে পালন করা হয়।
দূরের মন্দিরগুলোই গুপ্তিপাড়া মঠ 

এই টিনের ঘরের ঠিক পাশেই গুপ্তিপাড়ার বিখ্যাত "গুপ্তিপাড়া মঠ" রয়েছে। চৈতন্যদেব, কৃষ্ণচন্দ্র, বৃন্দাবনচন্দ্র ও রামচন্দ্রের নামে  চারটি মন্দির একই প্রাঙ্গনে অবস্থিত। এই চারটি মন্দিরের সমষ্টিকেই  "গুপ্তিপাড়ার মঠ " বলা হয়। এরপর গণেশ আমাদের "গুপ্তিপাড়ার মঠের দরজার সামনে এসে রিক্সা দাঁড় করল ।

বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির গুপ্তিপাড়ায় ছোট বড় অনেক মন্দির আছে তার মধ্যে এই মন্দিরটিই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। আটচালা শৈলীর এই মন্দিরটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরী।  মন্দিরটি আকারে বেশ বড়।  মন্দিরটির গঠনের নকশাটি সবাইকে মুগ্ধ  করে।  মন্দিরটির বাইরের দিকে খুব একটা পোড়ামাটির ভাস্কর্য দেখতে পেলাম না। শুধু তিনটি খিলান ও স্তম্ভগুলোতে সামান্য লতা-পাতার ও ফুলের কারুকাজ রয়েছে। প্রায় আট ফুট উঁচু একটা বেদির ওপর মূল মন্দিরটি রয়েছে। গণেশ  জানালো  মন্দিরের  চূড়াগুলো  নাকি গঙ্গার ওপার
বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির

মন্দির মঠের প্রবেশ দ্বার 
অর্থাৎ  শান্তিপুর থেকে  নাকি দেখা যায়।  গর্ভগৃহের কাঠের দরজাটিতেও সুন্দর কাজ করা আছে।  মন্দিরটিতে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ অধিষ্ঠিত আছে।  গণেশ বললো  আগের মন্দিরটি ভগ্ন হয়ে যাওয়ায় এই নতুন মন্দিরটি ১৮৩৮ সালে কলকাতার বাগবাজারের শ্রী গঙ্গানারায়ণ সরকার মহাশয় তৈরী করে দিয়েছিলেন।  বিগ্রহটি মোহান্ত রামানন্দ স্বামী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  রাজা বিশ্বেশ্বর রায় মহাশয়  জমিটি দান করেছিলেন। এই মন্দিরটি তারকেশ্বর মঠের  অধীনে রয়েছে।



চৈতন্যদেবের মন্দির :   এই মন্দিরটি ১৬৫০ সালে তৈরী হয়েছিল।  সেই সময় দেশে আকবরের শাসন চলছিল। মন্দিরটি নির্মাণ করেন রাজা বিশ্বেশ্বর  রায়।  মন্দিরটিতে শ্রী গৌরাঙ্গ ও নিত্যানন্দের মূর্তি রয়েছে।  বিগ্রহ দুটি খুবই সুন্দর দেখতে। প্রাচীন  শৈলীতে তৈরী এই মন্দিরটি এখন প্রায় ভগ্নঅবস্থায় রয়েছে। ভারতীয় পুরাকীর্তি আইনে সমগ্র মঠটি সংরক্ষণ করা হয়, কিন্তু এই মন্দিরটিতে রক্ষনাবেক্ষনের অভাব রয়েছে দেখলাম।  মন্দিরটি এই মঠের সবচেয়ে পুরোনো স্থাপত্য।

রামচন্দ্র  মন্দির 

রামচন্দ্র মন্দির :
এই মন্দিরের গায়ের  পোড়ামাটির কাজকে পশ্চিমবাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ  বলা হয়। এই মন্দিরটিও বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দিরের মত  তারকেশ্বর মঠের অধীনে রয়েছে। অতীতে গুপ্তিপাড়ায় দশমহাবিদ্যার পুজো করা হতো।  কিন্তু বর্তমানে সে পুজো আর করা হয় না।  মন্দিরটি একচূড়া বিশিষ্ট চারচালা শৈলীতে তৈরী।  পাঁচ ফুট উঁচু বেদির ওপর মন্দিরটির অবস্থান। এই মন্দিরের কারুকাজের মতো কাজ হুগলি জেলায় আর কোনো ,মন্দিরে দেখা যায় না।

কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির :  এই মন্দিরটিও তিনটি খিলান বিশিষ্ট আটচালা মন্দির। মন্দিরটি অন্যান্য মন্দিরের মতো উঁচু বেদির উপর স্থাপিত। শ্রী রাধাকৃষ্ণ,  চন্দ্র ও রাধিকার বিগ্রহ রয়েছে গর্ভগৃহে।  দন্ডি মধুসূদন ১৭৪৫ সালে মন্দিরটি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।

গুপ্তিপাড়ার মঠের মন্দিরগুলো দেখানোর পর সে আমাদের প্রাচীন বিন্ধ্যবাসিনীতলায় নিয়ে আসলো। বিন্ধ্যবাসিনীতলা হচ্ছে সেই বিখ্যাত জায়গা যেখান থেকে আমরা কিভাবে সবাই একসাথে মিলেমিশে একটা পুজোর রূপ দিতে হয় শিখেছিলাম। গণেশ আমাদের বেশ গর্বের সাথে এখানকার গল্পটা বলছিলো।  ১৭৭০ সালে এখানকার বর্ধিষ্ণু সেন পরিবারের দুর্গাপুজো চলছিল তাদের বিশাল বাড়িতে।  পাড়ার কতগুলো যুবক এই পুজো দেখতে এসেছিলো।  তারা নিজেদের মধ্যে বেশ উচ্চস্বরে কথা বলছিলো। তাদের কথা বলার আওয়াজে  পুজোমণ্ডপটিতে কোলাহল তৈরী করছিলো, এই অপরাধে সেন বাড়ির দারওয়ান যুবকগুলোকে পুজো মণ্ডপ থেকে বের করে দিয়ে প্রবেশদ্বারটি  বন্ধ করে দিয়েছিল। এই ঘটনায় যুবকগুলো খুব অপমানিত বোধ করে।  তারা বারোজন বন্ধু মিলে মনস্থির করল বৃন্ধ্যবাসিনিতলায় তারা আলাদা করে পুজো করবে। তাদের এই পুজোয় সবার অবাধ যাতায়াত থাকবে। বিন্ধ্যবাসিনীতলার  জঙ্গল পরিষ্কার করে পুজোর জন্য প্রস্তুত করতে লাগলো। যেহেতু তখন দুর্গাপুজো শেষ লগ্নে এসে পৌঁছে গিয়েছিল। তাই তারা ঠিক করলো  দুর্গাপুজো না করে জগদ্ধার্ত্রী পুজো করবে। এই বারো-ইয়ার অর্থাৎ বারোজন বন্ধু একসাথে মিলে  যে জগদ্ধার্ত্রী পুজো করেছিল, সেই পুজোটিই  বাংলার বুকে প্রথম বারোয়ারি  পুজো বা সার্বজনীন পুজো বলে স্বীকৃতি  লাভ করে।

এটা দেখানোর পর গণেশ জানালো আর কিছু দেখানোর নেই, এবার সে আমাদের স্টেশনে পৌছে দেবে।  আমি গণেশকে বললাম সব তো দেখালে কিন্তু ভোলা ময়রার বাড়িটা তো আমাদের দেখালে না।  ওটা একবার দেখিয়ে দাও তাহলে আমাদের  ষোল কলা পূর্ণ হবে যাবে। তখন সে বলল গুপ্তিপাড়ায় ভোলা ময়রার এখন কোনো বাড়ি আর নেই। কোনো একসময় ছিল বলে আপনাদের মত আমিও বড়দের কাছ থেকে শুনেছিলাম । ভোলা ময়রার কোনো স্মৃতি এখন আর এখানে নেই। শুনেছিলাম তিনি নাকি কবিগানের টানে গুপ্তিপাড়ার আদিবাড়ি ছেড়ে কলকাতার বাগবাজারে গিয়ে বসবাস করতেন। সারা জীবন তিনি বাগবাজারেই কাটিয়ে ছিলেন।  

গণেশ নরসিংহ মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে  একটা মিষ্টির দোকানের সামনে তার রিকশাটি দাঁড় করিয়ে দিল এবং বললো এখান থেকে বাড়ির জন্য গুঁপো সন্দেশ কিনে নিয়ে যেতে। আগে  সে আমাদের গুপো সন্দেশের ইতিহাসের কথা বলছিল। সে বলল ভোলা ময়রার কোনও চিহ্ন গুপ্তিপাড়া ধরে রাখতে না পারলেও, গুপ সন্দেশের ঐতিহ্যকে কিন্তু এখনো  ধরে রেখেছে।  





কী ভাবে যাবেন:
হাওড়া থেকে গুপ্তিপাড়া মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে।  কাটোয়া লোকালে উঠে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে গুপ্তিপাড়া স্টেশনে পৌঁছনো যাবে। স্টেশনের বাইরেই  রিক্সা স্ট্যান্ড রয়েছে।  রিক্সা ভাড়া করে সবকটা মন্দির দেখা যাবে।  শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও ট্রেনে গুপ্তিপাড়া আসা যায়।  এছাড়া গাড়িতে জি টি রোড বা দিল্লি রোড ধরে এসে তারপর ৬ নং  জাতীয় রাজ্য সড়ক ধরে গুপ্তিপাড়ার  রথতলায় আসতে পারেন। সব মন্দিরে এই রথতলা অঞ্চলেই  অবস্থিত।  তবে রথের সময় আসলে রথতলাতে কোনো গাড়ি যেতে দেবে না, বেশ কিছুটা আগেই গাড়ি রাখতে হবে।  আরেকভাবেও গুপ্তিপাড়া যাওয়া যায়, ট্রেনে করে শান্তিপুর গিয়ে সেখান থেকে ভেসেলে গঙ্গা পার হয়ে যাওয়া যেতে পারা যায়। শান্তিপুর-গুপ্তিপাড়া গঙ্গা  পারাপারের জন্য নিয়মিত এই ভেসেল চলাচল করে। 

তারিখ : ১৩-০২-২০১৯
ছবি ও লেখার স্বত্ব : সুদীপ্ত মুখার্জী 
যোগাযোগ : ৯৮৩০৪২০৭৫০

 আমার এই লেখাটি ও ছবিগুলো যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান      মতামত কমেন্টের  মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী লেখাগুলো  পেতে  ব্লগটিকে ফলো করে রাখুন।